ইংরেজিতে একটা ছড়া আছে, ‘রেন রেন গো অ্যাওয়ে, কাম এগেন অ্যানাদার ডে’। প্রতিবার বর্ষা এলে আমাদের চুলও হয়তো এই একই কথা বলে। বৃষ্টিতে ভেজার ব্যাপারটা বেশ রোমান্টিক। শরীর এতে সজীবতা অনুভব করলেও, চুলে কোনওভাবেই রোমান্সের ছোঁয়া লাগে না। বৃষ্টির ধারা অনেক ক্ষতিকারক পদার্থও পৃথিবীর বুকে নামিয়ে নিয়ে আসে যার দ্বারা চুলের ক্ষতি হয়। এগুলি চুলের গোড়া আলগা করে, ফলে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে।

প্রথমেই প্রয়োজন Hair Care, বর্ষায় নিয়মিত চুলে শ্যাম্পু করা। নিয়মিত চুল পরিষ্কার না রাখলেই তৈলাক্ত স্ক্যাল্প, অত্যধিক চুলপড়া, খুসকি এবং রুক্ষতার সমস্যায় জর্জরিত হতে হয়। বর্ষাকালের আবহাওয়ায় আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায়, চুল ড্যামেজ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। সূর্যের প্রখর তাপ যেমন চুলের পক্ষে ক্ষতিকারক তেমনি হাওয়াতে চুল খোলা রাখলেও চুলের ক্ষতি হয়।

চুলের সমস্যা

বর্ষায় চুলের অনেকরকম প্রবলেমের মধ্যে সব থেকে কমন হল চুলের আঠাভাব, খুসকি এবং তৈলাক্ত চুল। আবহাওয়ায় আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় চুল হয়ে পড়ে প্রাণহীন এবং রুক্ষ। বর্ষায় তাপমাত্রা কমে যায় ঠিকই কিন্তু অসম্ভব হিউমিডিটি বেড়ে যাওয়াতে চুলের অবস্থাও খুব খারাপ হয়ে পড়ে। বর্ষার জলে ক্লোরিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতে চুল ব্লিচ হয়ে যায় এবং এটা চুলের ক্ষতিও করে।

বর্ষার জলে চুল ভিজলে এই প্রবলেমগুলো আরও বেড়ে যায়। তাই বৃষ্টিতে ভিজে গেলে অবশ্যই বাড়িতে এসে প্রথমেই শ্যাম্পু করে নেওয়া দরকার। Hair Care–এর বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত যাতে বৃষ্টিতে চুল সবসময় শুকনো থাকে এবং চুল ভিজে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে নেওয়া উচিত। বর্ষায় লিভ-অন কন্ডিশনার চুলের জন্য ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন ডার্মাটোলজিস্টরা।

বর্ষায় আর-একটি সমস্যা হল প্রাণহীন, তৈলাক্ত, নেতিয়ে পরা চুলের গুচ্ছ। চুল তৈলাক্ত হলে স্বভাবতই তা দেখতে খারাপ লাগে এবং এটি স্ক্যাল্পকেও রুক্ষ করে তোলে। এইরকম প্রাণবিহীন চুলে দরকার প্রতিনিয়ত শ্যাম্পু করা, যা চুলকে দেবে ভলিউম। প্রাকৃতিক তত্ত্বে ভরপুর ‘রোজমেরি’ চুলকে দেয় এক্সট্রা বাউন্স এবং ভাইটালিটি। বর্ষায় সবথেকে জরুরি হল চুল নিয়মিত পরিষ্কার রাখা।

চুল ম্যানেজেবল এবং উজ্জ্বল করে তোলার জন্য প্রত্যেকবার চুল ধোওয়ার পর সিরাম লাগানো প্রয়োজন। রোজ ব্যবহারের জন্য কী শ্যাম্পু বেছে নেবেন বিচার করা খুবই প্রয়োজন। যে-কোনও মাইল্ড পিএইচ ব্যালেন্সড শ্যাম্পু বর্ষাকালের জন্য সব থেকে ভালো। বর্ষায় চুল কীরকম থাকবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে সঠিক শ্যাম্পু নির্বাচনের উপরে।

সপ্তাহে একদিন অন্তত হট অয়েল মাসাজ চুলের জন্য উপকারী। এতে, স্ক্যাল্পে তেল ঢুকে চুলে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। রুক্ষ এবং ভঙ্গুর চুলকে তেল নতুন করে প্রাণোজ্জ্বল করে তোলে। চুল পড়ে যাওয়া অথবা ভেঙে যাওয়া আটকাতে তেলের অবদান অনেকটা। মন এবং নার্ভাস সিসটেম-কে রিল্যাক্স রাখতে এবং Hair Care-এর জন্য তেল লাগানো খুবই প্রয়োজন।

এইক্ষেত্রে বাড়ির রূপচর্চাও কার্যকরী। যাদের চুল সাধারণ, তারা চুলে আম এবং মিন্ট একসঙ্গে পেস্ট বানিয়ে লাগালে উপকার পাবেন। এটা চুলে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে এবং চুলকেও মসৃণ করে।

যাদের চুল খুব শুকনো, তাদের ৩টি পাকাকলা এবং মধু মিশিয়ে চুলে লাগালে এবং ৫০ মিনিট মতো চুলে লাগিয়ে রাখলে চুলের রুক্ষ ভাব চলে যাবে এবং চুল নরম হবে। যাদের চুল খুব তৈলাক্ত, তারা যদি স্ক্যাল্পে পুদিনার পেস্ট লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রাখতে পারেন এবং তারপর শ্যাম্পু করে নেন তাহলে তৎক্ষণাৎ উপকার পাওয়া যাবে।

নিজেই পছন্দ করুন স্টাইল

নিজেই বেছে নিন কী ধরনের হেয়ার স্টাইল আপনাকে মানাবে এবং সঙ্গে আরামও দেবে। যদিও ছোটো চুলই বর্ষাকালের জন্য উপযুক্ত, তাও বেছে নেওয়া উচিত এমন স্টাইল, যেখানে চুল শুকিয়ে যাওয়ার পর যেন নিজের জায়গায় সহজেই সেট করে যেতে পারে। বর্ষায় চুল স্ট্রেট করা, অতিরিক্ত গরম তাপ দিয়ে চুল কোঁচকানো অথবা কার্ল করানো উচিত নয় কারণ আবহাওয়ায় অতিরিক্ত আর্দ্রতা চুলকে প্রাণহীন করে তোলে। শহরের একজন নামি হেয়ার-স্পেশালিস্ট জানালেন, ‘বর্ষাকাল, চুলের জন্য খুব খারাপ সময়। যতরকম চুলের সমস্যা সব এই সময় বেশি হয়ে থাকে। উচিত হচ্ছে চুল ছোটো রাখা, যাতে চুল শুকোতে এবং চুলের যত্ন নেওয়া সহজ হয়। কাঁধ অবধি লম্বা চুল পর্যন্ত যত্ন করা সম্ভব হয়।’

প্রয়োজনীয় টিপস

মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে নিয়মিত শ্যাম্পু করুন যখনই চুল বৃষ্টিতে ভিজে যাবে। ভেজা অবস্থায় চুল বাঁধবেন না। ভেজা চুলে ব্রাশ ব্যবহার করবেন না।

সীমিত সংখ্যায়, চুলে লাগাবার উপকরণ ব্যবহার করুন বিশেষত শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনিং করার সময়। একটাই কোম্পানির প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। হেয়ার-স্প্রে-র ব্যবহার না করলেই ভালো।

চুল শ্যাম্পু করার অন্তত দু-তিন ঘণ্টা আগে চুলে তেল লাগিয়ে রাখতে পারলে উপকার পাওয়া যাবে। চুল ড্রাই করার জন্য ব্লো-ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না।

সপ্তাহে একবার করে অবশ্যই হট-অয়েল মাসাজ করুন। এতে চুল শক্ত এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হবে। ভিটামিন ‘ই’-যুক্ত খাবার খান এবং প্রচুর পরিমাণে জল খান। চুলে জেল লাগানো অথবা আর্টিফিশিয়াল পার্মিং কিংবা চুল স্ট্রেট করাবেন না। চুল একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...