নবমীর সকাল যতটা আনন্দে মাখামাখি হয়ে থাকে, তেমনটা হয় না নবমীর রাত পেরোলে। নবমী নিশিথে উৎসবের রাত শেষ হয়। নবমী রাত তাই বিদায়ের অমোঘ পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয়। নবমী নিশি নিয়ে সেকালে গান লিখে গিয়েছেন রূপচাঁদ পক্ষী। হুতোম তাঁর দুর্গোৎসব শীর্ষক রচনায় নবমীপুজোর দিনের অনবদ্য বিবরণ রেখে গিয়েছেন। নবমীর দিনে আধ্যাত্মিকতার চেয়ে অনেক বেশি লোকায়ত ভাবনায় ভাবিত থাকে মন।

কিন্তু বাঙালি, উৎসবকে আনন্দময় করে তুলতে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করে নবমীর সকালে৷ কী সেই মহাভোজের মেনু? আসুন জেনে নেওয়া যাক৷

কলকাতা স্পেশাল মাটন বিরিয়ানি

উপকরণ (বিরিয়ানি মশলার জন্য): ৬-৭টা ছোটো এলাচ, ১-২টো বড়ো এলাচ, ১ ছোটো চামচ লবঙ্গ, ১ ইঞ্চি টুকরোয় কাটা ২টি দারচিনি, ১টা স্টার আনিস, ১/৪ চামচ জায়ফল, ১টা গোলাপের পাপড়ি গুঁড়ো করা, ১ ছোটো চামচ শাহজিরে, ১ ছোটো চামচ মউরি গুঁড়ো, ১ ছোটো চামচ গোলমরিচের গুঁড়ো।

উপকরণ (মাটনের জন্য) : ৫০০ গ্রাম হাড়যুক্ত মাটন, ২-৩ ছেটো চামচ টক দই, ১ ছোটো চামচ রসুনবাটা, ১ ছোটো চামচ আদাবাটা, ১ ছোটো চামচ লংকাগুঁড়ো, ১/২ ছোটো চামচ কাশ্মীরি লংকাগুঁড়ো, ১/৩ ছোটো চামচ গোলমরিচগুঁড়ো, ১ বড়ো চামচ বিরিয়ানি মশলা, নুন স্বাদমতো।

উপকরণ (বিরিয়ানি ভাতের জন্য) : ২ কাপ বাসমতী চাল, ১টা তেজপাতা, ৬-৭টা ছোটো এলাচ, ১-২টো বড়ো এলাচ, ১ ছোটো চামচ লবঙ্গ, ১ ইঞ্চি টুকরো করা ২টি দারচিনি, ১টা গোলাপের পাপড়িগুঁড়ো করা, ১/৪ ছোটো চামচ জায়ফল, ১ ছোটো চামচ শাহজিরে, ১ ছোটো চামচ মউরিগুঁড়ো, ১ ছোটো চামচ গোলমরিচের গুঁড়ো, অল্প ঘি, ৪ কাপ জল, নুন স্বাদমতো, ২ টো বড়ো পেঁয়াজ, ২-৩টি বড়ো আলু, ৩টে সেদ্ধ ডিম, ৮-১০টা কেসর, ১/৩ কাপ ঈষদুষ্ণ দুধ, ২-৩ ফোঁটা গোলাপের এসেন্স, ১/২ ছোটো চামচ কেওড়ার জল, ৫-৬ বড়ো চামচ ঘি।

প্রণালী: প্রথমেই শুকনো খোলায় বিরিয়ানি মশলার সমস্ত উপকরণ ভেজে নিন। এগুলি গুঁড়ো করে মশলা তৈরি করে নিন। এবার একটা বড়ো পাত্রে দইটা ফেটিয়ে এতে নুন মিশিয়ে নিন। তারপর মাটনের টুকরোগুলো এই দইয়ের সঙ্গে ম্যারিনেট করার আগে দইয়ে সঙ্গে মশলাটা ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। ৪-৫ ঘন্টা এই মশলা আর দইয়ে মিশ্রণে মাটনটা মজবে।

এর মাঝে চাল ধুয়ে ৩০ মিনিট জলে ভিজিয়ে রাখুন। এবার বিরিয়ানির ভাত তৈরির সমস্ত উপকরণ একটা কাপড়ের পুঁটুলির মধ্যে ভরে নিন। শুধু চাল, নুন, ঘি আর তেজপাতা বাদ দিয়ে বাকি মশলার পুঁটুলিটা এমনভাবে বাঁধুন, যাতে খুলে না যায়। বড়ো হাঁড়িতে জল ফুটতে দিন। এতে দিন তেজপাতা, নুন, ঘি আর মশলার পুঁটুলিটা। এবার চাল দিয়ে দিন হাঁড়িতে। ফুটতে দিন আধসিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত। এবার এই শক্ত থাকা ভাত ফ্যান ঝরিয়ে একটা পাত্রে চারিয়ে দিন।

আঁচে এবার কড়া বসান। ৩ বড়ো চামচ ঘি গরম করে, এতে পেঁয়াজ বাদামি করে ভেজে নিন। মশলা মাখানো মাটন দিয়ে কষতে থাকুন। আলু টুকরো করে এতে দিয়ে ভালো ভাবে কষুন। একটা ছোটো বাটিতে উষ্ণ দুধে কেসর ভিজিয়ে রাখুন। কেসর ভালো ভাবে দুধে মিশে গেলে, কেওড়া জল, গোলাপের এসেন্স মিশিয়ে দিন। ১৫ মিনিট রেখে দিন।

এবার একটা বড়ো হাঁড়িতে আধসেদ্ধ ভাতের খানিকটা নিয়ে একটা লেয়ার তৈরি করুন। বাকি ভাতে কেসরের মিশ্রণ মিশিয়ে রাখুন। হাঁড়িতে রাখা ভাতের উপর মাটন, আলু, ডিমের লেয়ার তৈরি করুন। উপর থেকে কেসর মেশানো ভাতের লেয়ার দিয়ে ঢেকে দিন। ভালো করে ঘি ছড়িয়ে হাঁড়ির মুখ বন্ধ করে ভাপান। কিছুক্ষণ পর হাঁড়িটার ভাত উপর-নীচ করে দিন, যাতে নীচেটা ধরে না যায়। মিনিট দশেক পর সার্ভ করুন।

কষা মাংস

Kosha mangsho recipe

 

উপকরণ : ৫০০ গ্রাম মাটন টুকরো করা, ১/৪ কাপ সরষের তেল, ৪-টে লবঙ্গ, অল্প ছোটো এলাচ ও দারচিনি, ১/২ কাপ পেঁয়াজ গ্রেট করা, ১ বড়ো চামচ আদা-রসুন পেস্ট, লংকাগুঁড়ো স্বাদমতো, ১/২ বড়ো চামচ হলুদগুঁড়ো, ১ বড়ো চামচ গোটা জিরে ভাজা, ৫০০ গ্রাম টক দই, নুন স্বাদমতো।

প্রণালী: কড়ায় তেল গরম করুন। লবঙ্গ, এলাচ ও দারচিনি দিয়ে দিন। এবার পেঁয়াজ দিয়ে ভাজতে থাকুন। পেঁয়াজ বাদামি হলে, এই তেলের উপরেই আদা-রসুন পেস্ট দিয়ে দিন। হলুদগুঁড়ো ও লংকাগুঁড়ো দিয়ে কষতে থাকুন। এবার মাটনের টুকরোগুলো দিয়ে ভালো ভাবে নাড়তে থাকুন। ঢিমে আঁচে কষতে থাকুন যাতে তেল ছেড়ে আসে। এবার ভাজা জিরেটা গুঁড়ো করে নিন। কষানো মাংসের উপর ছড়িয়ে নাড়তে থাকুন। দই আলাদা বাটিতে ফেটিয়ে মাংসের উপর ঢেলে দিন। নুন দিয়ে ভালো ভাবে মাংসটা কষাতে থাকুন। তারপর ঢিমে আঁচে মাংসটা ঢাকা দিয়ে সেদ্ধ হতে দিন। এতে জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই, দইয়ের মধ্যে মাংসটা রান্না হবে। মাংস সেদ্ধ হয়েছে দেখলে গ্রেভি গা মাখা অবস্থায় নামিয়ে নিন। গরম গরম পরিবেশন করুন।

সন্দেশ

 

উপকরণ: ১৫০ গ্রাম ছানা, ১/২ কাপ খোয়া ক্ষীর, ৪-টে ছোটো এলাচের দানা গুঁড়ো করা, ২ চিমটে কেসর, ৬ বড়ো চামচ চিনি, ৬ টুকরো বাদাম।

প্রণালী: খোয়া ক্ষীর আর চিনি মসৃণ করে চটকে নিন। এতে এলাচগুঁড়ো মেশান। এবার ছানাটাকে এই মিশ্রণের সঙ্গে মেখে মোলায়েম করে নিন। বাদামের কুচি দিয়ে দিন। একটা বারকোষে সামান্য ঘি বুলিয়ে মোটা করে ছানা-ক্ষীরের মিশ্রণ চারিয়ে দিন। এবার ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিন সেট হবার জন্য। ঘন্টাখানেক পর বের করে পছন্দের আকারে গড়ে নিন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...