বর্তমানে পরিসংখ্যান অনুযায়ী মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। দেশে বয়ঃজ্যেষ্ঠ জনগণের সংখ্যা ২০২১-এ ১৩.৮ কোটি ছাপিয়ে গেছে এবং ২০৩১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ১৯.৩৮ কোটি হওয়ার আশা রয়েছে। ‘ন্যাশনাল স্ট্যাটিক্স অফিস’-এর একটি স্টাডিতে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকায় একটি সমস্যা নতুন করে দেখা দিয়েছে।

আজকাল বেশিরভাগ পরিবারেই একটি করে সন্তান। সন্তানের Responsibility এবং তাদের হায়ার স্টাডি করানো এতটাই খরচাসাপেক্ষ হয়ে পড়েছে যে, একটি সন্তানের বেশি মানুষ করে তোলা বেশিরভাগই অ্যাফোর্ড করতে পারছে না। এছাড়াও কর্মরত মহিলা এবং নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি হওয়ার দরুন বহু মানুষই এখন একটির বেশি সন্তানের কথা চিন্তা করেন না। এই ক্ষেত্র্ক একটাই সমস্যা হয়— যখন সন্তান বড়ো হয়ে যায় এবং মা-বাবার বয়স বার্ধক্যে এসে ঠেকে।

বার্ধক্যে এসে মা-বাবার প্রয়োজন হয় সন্তানকে। কিন্তু তখন মা-বাবার খেয়াল রাখার জন্যে বাড়িতে কেউই থাকে না কারণ পড়াশোনার জন্য অথবা চাকরির সূত্রে সন্তানকে বাড়ি থেকে দূরে হয়তো অন্য শহরে বা অন্য কোনও দেশে চলে যেতে হয়। মেয়ে হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাকে শ্বশুরবাড়ি চলে যেতে হয়। একমাত্র নিজের শহরে চাকরি পেলে কিংবা নিজের ব্যাবসা হলে ছেলের, মা-বাবার সঙ্গে থাকার একটা সম্ভাবনা থাকে। বয়স্ক দম্পতির মধ্যে কোনও একজনের আগে যখন মৃত্যু হয়, তখন অপরজন আরও বেশি একাকী হয়ে পড়েন।

বড়ো দায়িত্ব

একমাত্র সন্তান হলে কেরিয়ার গঠন করার সঙ্গে সঙ্গে মা-বাবার দেখাশোনা করাটাও একটা বড়ো Responsibility হয়ে দাঁড়ায়। এর জন্য অনেক সময় সন্তানকে কিছু স্যাক্রিফাইসও করতে হতে পারে কারণ বৃদ্ধ মা-বাবা তাকে ছাড়া অসহায় হয়ে পড়েন। অভিভাবকেরা নিজেদের অর্জিত সঞ্চয়, নিজেদের ভালোবাসা একমাত্র সন্তানকে উজাড় করে দেন। সুতরাং সন্তানেরও উচিত বয়ঃজ্যেষ্ঠ মা-বাবাকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব নেওয়া। অনেক সময় সন্তান মা-বাবার দায়িত্ব নিতে চাইলেও পরিস্থিতি অনুকূল থাকে না। সুতরাং কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে মা-বাবার দেখাশোনা করা যেতে পারে আসুন জেনে নেওয়া যাক।

যখন আপনার মেয়েই একমাত্র সন্তান

হিয়া বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ওর বয়স এখন ৩৪ বছর। ওর নিজের দুটি সন্তান এবং পেশায় ও শিক্ষিকা। স্বামী বিকাশ খুবই ভালো মানুষ এবং হিয়ার প্রতিও যথেষ্ট যত্নশীল কিন্তু ওর একটাই দোষ শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে খুব একটা মেলামেশা তার পছন্দ নয়। এর ফলে হিয়াও নিজের বয়স্ক মা-বাবাকে নিয়ে সবসময় চিন্তায় থাকে।

হিয়ার বাবার দু’বার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে, মা-ও বয়সের ভারে নিজের স্বামীর খুব ভালো করে দেখাশোনা করে উঠতে পারেন না। স্বামীর পেনশনই একমাত্র তাদের আর্থিক সম্বল। সঞ্চিত অর্থ মেয়ের পড়াশোনা এবং বিয়েতে খরচ হয়ে গেছে। বাড়িতে আর্থিক টানাটানি রয়েছে। হিয়া মাঝেমধ্যে মা-বাবাকে আর্থিক সাহায্য করে ঠিকই কিন্তু বিকাশের সেটা পছন্দ নয়।

হিয়ার মা-বাবা ওর বাড়িতে বেড়াতে এলেও বিকাশ স্বাভাবিক ভাবে ওনাদের সঙ্গে মেশে না, যেটা হিয়াকে খুব কষ্ট দেয়। ও সবসময় মা-বাবার কীভাবে খেয়াল রাখবে ভেবে পায় না। বৃদ্ধ মা-বাবার ওই এক মেয়ে ছাড়া আর কোনও অবলম্বন নেই। হিয়াও নিজের Responsibility খুব ভালো করেই জানে। কিন্তু বিকাশ শ্বশুর-শাশুড়ির দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত নয়। এই কারণে হিয়াও মাঝেমধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের কথা ভাবে! তবে ও জানে মা-বাবার এতে একদমই মত থাকবে না। এছাড়া বাচ্চাদের কথা ভেবেও হিয়া পিছিয়ে যায়।

একদিন ধৈর্য হারিয়ে হিয়া বিকাশকে প্রশ্ন করল, “যদি আমার মা-বাবার জায়গায় তোমার মা-বাবা হতো তাহলেও কি তুমি এই ব্যবহার করতে? তোমার বৃদ্ধ মা-বাবা থাকলে যেমন তাঁদের দেখাশোনা করা আমাদের দু’জনেরই দায়িত্ব হতো, তেমনি আমার মা-বাবার খেয়ালও তো আমাদের দু’জনেরই রাখা উচিত। ওনাদের আমি ছাড়া আর তো কেউ নেই। আমাকে পড়াশোনা করাতে এবং বিয়ে দিতে ওনারা নিজেদের সঞ্চয়টুকুও শেষ করে ফেলেছেন। এখন তারা বৃদ্ধ হয়েছেন, তাহলে তাদের ডাক্তার দেখানোতে বা আর্থিক সাহায্য করতে কেন তুমি বিরক্তি বোধ করো?”

সেই মুহূর্তে বিকাশ উত্তর না দিলেও হিয়ার কথাগুলোর গুরুত্ব দেরি করে হলেও বিকাশ বুঝতে পেরেছিল। তার প্রমাণ হিয়া পেল যখন সে বাবাকে ডাক্তারের কাছে চেক-আপে নিয়ে যাচ্ছিল, বিকাশ নিজে থেকেই হিয়ার সঙ্গে শ্বশুরকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...