প্রযোজক: একতা কাপুর ও শোভা কাপুর

লিখেছেন: রাজ শান্ডিল্য ও নরেশ কাঠুরিয়া

পরিচালক: রাজ শান্ডিল্য

অভিনয়ে:  আয়ুষ্মান খুরানা, অনন্যা পান্ডে, আন্নু কাপুর, পরেশ রাওয়াল, রাজপাল যাদব, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মনজোত সিং, মনোজ জোশী, সীমা পাহওয়া, বিজয় রাজ, আসরানি প্রমুখ।

সাম্প্রতিক খবরগুলিতে প্রকাশ ‘Dream Girl 2’  ছবিটি রিলিজের ৮ দিনের মধ্যে প্রায় ৭২ কোটি টাকার ব্যাবসা করে ফেলেছে। সানি দেওলের ‘গাদার ২’ যেখানে বলিউডে ধামাকা মাচিয়ে রেখেছে সেখানে আয়ুষ্মান খুরানা অভিনীত ‘ড্রিম গার্ল ২’ নিয়ে সকলের মনেই একটা আশঙ্কা কাজ করছিল। বক্স অফিসে ছবিটির উপার্জন ছবিটির সাফল্যের দিকে ইঙ্গিত করছে ঠিকই কিন্তু তবুও ছবিটিতে অনেক খামতি লক্ষিত হয়। এক টানা আট বছর ধরে টিভি শো ‘কমেডি সার্কাস’-এর জন্য সংলাপ লিখেছিলেন যে ব্যক্তি সেই রাজ শান্ডিল্য পরে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের জন্য সংলাপ লিখেছিলেন যেগুলি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়, তবে লেখক ও পরিচালক হিসাবে তাঁর ২০১৯ সালের ছবি “ড্রিম গার্ল” সফল হয়েছিল। এখন তিনি একই ছবির সিক্যুয়েল ‘ড্রিম গার্ল ২’ তৈরি করেছেন এবং তিনি নিজেই জানিয়েছেন যে তিনি মোটেই ভালো গল্প, চিত্রনাট্য এবং সংলাপ লিখতে জানেন না, এমনকী তিনি ভালো পরিচালকও নন। প্রসঙ্গত, রাজ শান্ডিল্য ‘হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি’র সহায়তায় টিভি পর্বের জন্য কিছু কমেডি এপিসোড লিখেছিলেন।

গল্প:

‘Dream Girl 2’ কে সেই অর্থে ঠিক সিক্যুয়েল বলা যায় না। যদিও ২০১৯ এ মুক্তি পাওয়া প্রথম পর্বের ছবির সঙ্গে সামান্য মিল রয়েছে ছবির প্রেক্ষাপটে। কয়েকজন ছাড়া দ্বিতীয় পর্বের ছবিতেও প্রথম পর্বের অভিনেতাদেরই দেখা গিয়েছে। ছবির প্রেক্ষাপট উত্তরপ্রদেশের মথুরার যমুনা নদীর তীরে বসবাসকারী জগজিৎ(আন্নু কাপুর) এবং তার ছেলে করম(আয়ুষ্মান খুরানা) কে নিয়ে। আগের ছবির মতো এই ছবিতেও বাবার ঋণ শোধ করতে প্রতিদিন হিমশিম খাচ্ছেন বেকার করম। এর মধ্যে করম-এর জীবনে প্রেমিকা রূপে অনন্যা পান্ডে ওরফে পরির প্রবেশ ঘটে। পরির আইনজীবী বাবা শ্রীবাস্তব(মনোজ জোশী) করমের বাড়ির অবস্থা দেখে শর্ত দেন যে করমকে ছয় মাসের মধ্যে একটি ভালো বাড়ি করতে হবে এবং তার অ্যাকাউন্টে ২৫ লক্ষ টাকা থাকতে হবে। এখান থেকেই মোড় নেয় আসল গল্প। প্রেমিকার বাবার শর্তপূরণ করতে গিয়ে মহাফ্যাসাদে পড়তে হয় সেই যুবককে। টাকা রোজগারের জন্য মহিলার বেশভূষা ধারণ করতে হয় তাকে। পরের গল্প সেই মহিলা চরিত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে তৈরি হওয়া একের পর এক জটিলতা আর লুকোচুরিকে কেন্দ্র করে। ছবিটিতে বিশেষ নতুনত্ব কিছু নেই।

রচনা ও পরিচালনা:

‘ড্রিমগার্ল’-এর মতোই ‘ড্রিমগার্ল ২’ ছবি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন রাজ শাণ্ডিল্য। এবার লিখিতভাবে নরেশ কাঠুরিয়ার সাহায্য নিয়েছেন রাজ শান্ডিল্য। তা সত্ত্বেও চিত্রনাট্য ও সংলাপ খুবই দুর্বল। শ্রীলংকার অর্থনৈতিক সংকট থেকে শুরু করে একজন বরিষ্ঠ ব্যক্তির বয়স নিয়ে যে ধরনের সস্তা রসিকতা করা হয়েছে, তাতে মনে হয় রাজ শান্ডিল্য ভারতীয় সংস্কৃতিকে উপহাস করেছেন। মনে হয়েছে তিনি ভারতের বাসিন্দা নন, বরং এমন একটি দেশে তিনি থাকেন  যেখানে সম্পর্ক ও মানবতার কোনও মূল্য নেই। অনেক দৃশ্যে লেখক ও পরিচালকের অসংবেদনশীলতা দেখা যায়। চিত্রনাট্যের দুর্বলতা আড়াল করার জন্য পরেশ রাওয়াল, অন্নু কাপুর এবং রাজপাল যাদব থেকে শুরু করে মনোজ জোশী, সীমা পাহওয়া, বিজয় রাজ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মনজোত সিং-এর মতো কৌতুক অভিনেতার পুরো পল্টন জোগাড় করলেও ছবিটি ভালো ভাবে তৈরি করতে তাঁরা অসফল হয়েছেন। ছবির ক্লাইম্যাক্সে পরি যখন যমুনা নদীতে নৌকায় করে নিজের বিয়ের শোভাযাত্রা নিয়ে পৌছায়, সেই দৃশ্যটি অবশ্যই সুন্দর এবং মনে দাগ কাটে। ছবির গানও মনে রাখার মতো নয়। মজার ব্যাপার হল, এই ছবিতেও ‘গদর ২’-এর ‘মে গাদ্দি লেকে নিকলা’ গানটি…’ ব্যাকগ্রাউন্ডে রাখা হয়েছে। কেন এটা শুধু প্রযোজক ও পরিচালকই বলতে পারবেন!

অভিনয়:

আয়ুষ্মানের এই ছবির হিরো, ‘অভিনয় এবং সংলাপ’। এই দুইকে হাতিয়ার করেই বক্স অফিসের বৈতরণী পার করার চেষ্টা করেছেন ছবির নির্মাতারা। আয়ুষ্মান যে ভালো অভিনেতা তা নিয়ে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে এই ধরনের বোকা বোকা চরিত্রে অভিনয় করার ক্ষেত্রে তিনি অনবদ্য। শুরু থেকেই বিভিন্ন ধরনের সিনেমায় অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর ছবি ব্যর্থ হচ্ছে এবং তাঁর অভিনয়তেও দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। আয়ুষ্মানকেও ছাপিয়ে অভিনয় করেছেন অনু কপূর, পরেশ রাওয়াল, বিজয় রাজ এবং সীমা পাহওয়া। মনজোত সিংহ এবং রাজপাল যাদবও ভালো অভিনয় করেছেন। দু’ঘণ্টা ধরে পর্দায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন আয়ুষ্মান এবং তাঁর সহ-অভিনেতারা। যদিও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর অভিনয় ক্ষমতাকে আরও ব্যবহার করা যেত। ‘ড্রিম গার্ল’ ছবিতে আয়ুষ্মান, কল সেন্টারে শুধু মেয়ের কণ্ঠে পূজা হিসেবে কথা বলতেন। কিন্তু ‘Dream Girl 2’-এ তিনি পূজা নামে একটি মেয়ে হয়ে উঠেছেন এবং এখানে মনে হয়েছে দ্বিতীয় ছবিটি করতে গিয়ে তাঁর একমাত্র ধ্যান ছিল যে দর্শকদের সামনে তাঁকে মেয়ে হয়ে উঠতে হবে, সেই ভাবে অভিনয় করতে হবে। ছবিতে যদিও আয়ুষ্মান খুরানাকে তাঁর নারীসুলভ অভিব্যক্তি দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে দেখা যায়, তবু বলতেই হবে তিনি শাস্ত্রীয় নৃত্য সম্পর্কে অবগত নন। এ ছাড়াও চিত্রনাট্য ও সংলাপের প্রত্যাশিত সমর্থন না পাওয়ায় চরিত্রটি প্রস্ফুটিত হতে ব্যর্থ হয়েছে। আয়ুষ্মান খুরানার মনে রাখা উচিত ছিল যে তাঁকে ‘চাচি ৪২০’ এর কমল হাসানের সাথেও তুলনা করা হতে পারে।

এই ছবিতে পরির চরিত্রে যে অভিনেত্রী অভিনয় করেছেন তিনি হলেন অনন্যা পান্ডে। কিন্তু পর্দায় তাঁর অভিনয়ের জাদু দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। অনন্যাকে পর্দায় দেখে মনে হয়েছে যে, ছবির সংলাপগুলি মনে রাখার জন্য তিনি অভিনয় থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিচ্ছেন। একজন শিল্পী হিসাবে, তিনি দৃশ্যের প্রয়োজনীয়তা এবং তাঁর সংলাপের গভীরতা বোঝেননি। এমনকী পরিচালকরাও হয়তো তাঁকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন। গোটা ছবির মধ্যে মেরেকেটে ২০-২৫ মিনিট পর্দায় মুখ দেখানোর সুযোগ পেয়েছেন তিনি। অনন্যা পান্ডেকে এখনও তাঁর অভিনয়ের উন্নতির জন্য খুব কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। অন্নু কাপুর, রাজপাল যাদব, সীমা পাহওয়া, বিজয় রাজ, পরেশ রাওয়াল, মনোজ জোশী, মনজোত সিং এবং অভিষেক ব্যানার্জি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু স্ক্রিপ্ট এবং সংলাপ যদি দুর্বল হয় তাহলে তাঁরা কী করবেন?

 

 

 

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...