কোনও মহিলার গর্ভাধানের জন্য প্রাপ্ত ডিম্বানুর (oocytes) পরিমাণ ও গুণমানকে তার ‘ওভারিয়ান রিজার্ভ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এটি একজন মহিলার প্রজনন ক্ষমতা ও সুস্থ গর্ভাবস্থার সম্ভাবনার পূর্বাভাস রূপে কাজ করে। বংশগত এবং আরও অনেক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে মহিলাদের ‘ওভারিয়ান রিজার্ভ’ পৃথক ধরণের হতে পারে।
ডিম্বাশয়ের বয়ঃবৃদ্ধি হল একটি জৈবিক অবস্থা, যা মহিলাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উপর প্রভাব ফেলে এবং ‘ওভারিয়ান রিজার্ভ’ স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। ডিম্বাশয়ে ডিম্বানুর পরিমাণ ও গুণমান এই বয়ঃবৃদ্ধিজনিত প্রক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়। কোনও নারীর ডিম্বাশয়ে জন্মের সময় উৎপাদিত সমস্ত ডিম্বানু থাকে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ‘নোভা আইভিএফ ফার্টিলিটি’-র ফার্টিলিটি কনসালট্যান্ট ডা. অনিন্দিতা সিং।
‘ওভারিয়ান রিজার্ভ’-এর ঘাটতির কারণ এবং কীভাবে এটি নির্ণয় করা যায়
‘ওভারিয়ান রিজার্ভ’ হ্রাসে বয়স একটি বড়ো ভূমিকা পালন করে, তবে জেনেটিক্স, স্বাস্থ্য সমস্যা এবং কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি-সহ (যেমন কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি) অন্যান্য বিষয়ও ডিম্বাশয়ের কর্মকান্ডকে প্রভাবিত করতে পারে। ফার্টিলিটি বা ‘ওভারিয়ান রিজার্ভ’ সম্পর্কে জানতে চান এমন মহিলাদের কোনও পেশাদার চিকিৎসক বা প্রজনন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে, যিনি প্রতিটি রোগীর বিশেষ অবস্থার ভিত্তিতে উপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারেন।
ডিম্বাশয়ের মাত্রা পরীক্ষা করার সাধারণ পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-মুলারিয়ান হরমোন (Anti-Müllerian Hormone) টেস্ট। ডিম্বাশয়ের ফলিকলগুলি এএমএইচ নামে পরিচিত হরমোন উৎপাদন করে। রক্তে এএমএইচ-এর পরিমাণ দ্বারা এখনও কতগুলি ডিম্বানু পাওয়া যেতে পারে তা অনুমান করতে ব্যবহার করা যায়। ‘ওভারিয়ান রিজার্ভ’ হ্রাস নির্ণয় করা যেতে পারে এএমএইচ লেভেলের স্বল্পতা থেকে। অন্য একটি পদ্ধতি হল অ্যান্ট্রাল ফলিকল কাউন্ট (Antral Follicle Count)। এই আল্ট্রাসাউন্ড-ভিত্তিক পরীক্ষায়, ডিম্বাশয়ে ক্ষুদ্র, বিকাশশীল ফলিকলের সংখ্যা – তরল-ভরা থলিকা যেখানে অপরিণত ডিম্বাণু থাকে – তা গণনা করা হয়। স্বল্পমাত্রার এএফসি ‘ওভারিয়ান রিজার্ভ’-এর স্বল্পতা চিহ্নিত করতে পারে।
এটি প্রতিরোধ করা যায় কীভাবে ?
মহিলাদের বয়ঃবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের ‘ওভারিয়ান রিজার্ভ’ স্বাভাবিকভাবে হ্রাস পায় এবং এই প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে কিছু জীবনযাত্রার ধরণ ডিম্বাণুর গুণমান উন্নত করতে পারে ও সাধারণভাবে ‘রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ’-কে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এইজন্য খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দেওয়া উচিত, আরও বেশিমাত্রায় শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করা উচিত এবং কিছু ‘লাইফস্টাইল হ্যাবিট’ বদলে ফেলা উচিত, যেমন ধূমপান এড়িয়ে চলা ও অ্যালকোহল সেবন সীমিত করা।
এই অবস্থায় আইভিএফ কি একটি সফল বিকল্প পদ্ধতি ?
‘ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ (আইভিএফ) অপসৃয়মান ‘ওভারিয়ান রিজার্ভ’ সমস্যাযুক্ত মহিলাদের জন্য একটি সফল বিকল্প হতে পারে। তবে সাফল্যের হার নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট মহিলার বয়স, তার ডিম্বাণুর গুণমান ও তার ‘রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেম’-এর সামগ্রিক সুস্থতার উপর।