সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা৷ দিল্লির নয়ডায় একজন ১০ বছর বয়সি নাবালিকা যে-বাড়িতে কাজ করত, সেই গৃহকর্ত্রী ছিলেন এয়ারলাইন পাইলট। তিনি ওই নাবালিকা কাজের মেয়েটিকে মারধর করার জন্য কয়েক রাত জেলবন্দি ছিলেন। আর এখন তাই দিল্লিতে যে-সব সংস্থা ডোমেস্টিক হেল্পস-এর জন্য কর্মী সরবরাহ করে, সেইসব সংস্থার রেজিস্ট্রেশন এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন কম্পালসারি হয়ে গেছে। দিল্লি প্রাইভেট প্লেসমেন্ট এজেন্সি রেগুলেশন অ্যাক্ট ২০১৪ এখন বেশ ভালো ভাবে কার্যকর করা হয়েছে। তাই যদি কর্মী সরবরাহকারী কোনও এজেন্সি এই আইন লঙ্ঘন করে, তাহলে তাকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে।এমন ব্যবস্থা কলকাতায় নেই৷
দিল্লির মতো শহরে ব্যস্ততার কারণে এখন প্রায় প্রতিটি পরিবারে কাজের লোক ছাড়া জীবন চলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আর এই প্রয়োজনীয় বিষয়টির অপব্যবহার করছেন কিছু অসাধু লোক। তারা গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েগুলোকে নানারকম প্রলোভন দেখিয়ে কিংবা ধরে নিয়ে এসে বাড়ির কাজে সাপ্লাই করছেন। কাজের লোকজন সরবরাহকারী এজেন্সিগুলি মোটা টাকা কমিশনের লোভে এই সব অবৈধ কাজকর্ম করছে এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সবাইকে কন্ট্রোল করছে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পুলিশ ভেরিফিকেশন। সারা দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়টি এখন আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা হচ্ছে, এই বিষয়টি আমজনতার সুরক্ষার জন্য করা হয়েছে কিন্তু বাস্তবে এ শুধু ভদ্র লোকেদের ডেটা কালেকশন হচ্ছে। আদতে যারা কুকীর্তির সঙ্গে যুক্ত, সেই সব অপরাধীদের সমস্ত ডকুমেন্টস জাল। পুলিশ চাইলেও ওই জাল ডকুমেন্টস ভেরিফাই করার সুযোগ পাচ্ছে না। দিল্লি, মুম্বই কিংবা বেঙ্গালুরুর পুলিশ শুধু সার্ভেন্ট-এর দেওয়া ঠিকানায় একটা চিঠি পাঠিয়ে জানাতে পারে যে, এই লোকটি এখানে কাজ করছে। এর বেশি কিছু নয়।
আসলে, যারা পাক্কা অপরাধী, যেখানে পুলিশ ভেরিফিকেশন-এর বিষয় থাকবে, ওইসব জায়গায় ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজই করবে না– এটাই বাস্তব। কিন্তু যদি সঠিক ভাবে পুলিশ ভেরিফিকেশন হতো, তাহলে সার্ভেন্ট এবং মালিকপক্ষ উভয়েরই ভালো হতো। তা তো আর হয় না! উলটে পুলিশ নিজেদের স্বার্থে পোশাকের ক্ষমতার অপব্যবহার করে যখন কাউকে ধমকানো, চমকানোর প্রয়োজন মনে করে তখন তাই করে। তাই দরজার সামনে পুলিশকে দাঁড়াতে দেখলে সাধারণ মানুষ সুরক্ষা অনুভব করেন না। বরং বলা যায়, মানুষ আতঙ্কে থাকেন। কারণ পুলিশ ভেরিফিকেশন-এর অজুহাতে অর্থ উপার্জনের রাস্তা খোঁজে। দিল্লির ডোমেস্টিক হেল্পস সংগঠনের আধিকারিকরাও মনে করেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন-এর বিষয়টি ভালো হলেও, এর মধ্যে কোরাপশন চলে।
তাই মনে হয়, যদি কোনও ডোমেস্টিক সার্ভেন্ট সাপ্লায়ার্স ফেডারেশন থাকত, যারা সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দিত, তাহলে কী যে ভালো হতো!