মদ্যপান করে গাড়ি ড্রাইভ করার কারণে দুর্ঘটনা কিংবা মৃত্যুমিছিল লেগেই আছে। তাই মনে রাখা দরকার, অ্যালকোহল গ্রহণে শুধু উচ্চ রক্তচাপ এবং মনে বিষণ্নতার সৃষ্টি হয় না, বড়ো দুর্ঘটনা এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

দুঃখের বিষয় হল এই যে, অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী সর্বত্র না পাওয়া গেলেও, মদ পাওয়া যায় সর্বত্র এবং এই ‘বিষ’ বিক্রি হয় প্রকাশ্যে। আর এই মদ বিক্রির লাইসেন্সও দেওয়া হয় ঢালাও। আসলে, মদ খাওয়ার ঢালাও অনুমতি দিয়ে সুবিধেবাদীরা মুনাফা লুটছে।

মদের উপর কর আরোপ করা সহজ কিন্তু মদ বিক্রি বন্ধ করা খুব সহজ কাজ নয় এখন। কারণ, রাজ্যগুলি কর আদায় করার জন্য মদের ঢালাও লাইসেন্সও দিয়ে দেয়। তাই, মদ তৈরি এবং বিক্রি বেড়েই চলেছে।

একটা সময় ছিল যখন কোনও-কোনও রাজা তাঁর সৈন্যদেরকে যুদ্ধে পাঠানোর আগে মদ খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন। কারণ, যুদ্ধে আহত হলে যাতে সৈন্যরা ব্যথা অনুভব না করে, তার জন্যই মদ খাইয়ে যুদ্ধে পাঠানো হতো।

আবার অন্যদিকে ধর্মও কখনও মদ্যপানকে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করেনি। কারণ, ভণ্ড ধার্মিকরা ধর্মের আড়ালে নেশাগ্রস্ত হয়ে যৌনখিদে মেটায়। মাতাল পুরুষদের দ্বারাও নারীদের মারধর কিংবা ধর্ষণের ঘটনা আগেও ঘটত এবং এই ‘সভ্য’ সমাজেও ঘটে চলেছে। আসলে জনসংখ্যা যত বাড়ছে, আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সমস্যা ততই বাড়ছে। আর তাই নিরাশা কিংবা বিষণ্ণতা কাটাতে মদ্যপানকে মাধ্যম করছেন অনেকেই। আমাদের দেশেও বর্তমান প্রজন্মের মেয়েরা এখন অনেকেই নিয়মিত মদ্যপান করেন। তাই, কে কাকে মদ্যপান করতে বারণ করবে, সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনেকেই বুঝেও বুঝতে চান না যে, অ্যালকোহল আসলে ‘স্লো পয়জন’। সঙ্গে-সঙ্গে মৃত্যু না হলেও, শারীরিক নানারকম রোগভোগ হবেই। লিভার সিরোসিস, ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক, ওবেসিটি, রোড ট্র্যাফিক অ্যাক্সিডেন্টস, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স প্রভৃতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী মদ্যপানের কুঅভ্যেস। আর যদি রোগভোগ কিংবা মৃত্যু নাও ঘটে, তাহলেও মদ্যপ অবস্থায় মারধর কিংবা খুনখারাপির ঘটনা ঘটাতেও দেখা গেছে।

এখন সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হল এই যে, যে-কোনও বিয়ে, বিবাহবার্ষিকী, এমনকী জন্মদিনের পার্টিতেও অ্যালকোহল রাখা হয় আজকাল। বর্তমানে বেশিরভাগ সিনেমা, সিরিয়াল কিংবা ওয়েবসিরিজ- এও মদ্যপানের দৃশ্য এতটাই বেশি রাখা হচ্ছে যে, যারা মদ্যপান করতেন না, তারাও প্রভাবিত হয়ে এখন মদ্যপান শুরু করেছেন। মদ্যপান না করলে যেন আভিজাত্য বজায় থাকে না, এমনই ধারণা বাড়ছে সমাজে।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, মদ্যপানের ফলে কেউ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা করাতে গেলে, চিকিৎসকরা চিৎকার করে জানাচ্ছেন যে, এক চুমুক মদও বিপজ্জনক হতে পারে শরীরের জন্য। অথচ ট্র্যাজেডি হল এই যে, মেডিকেল কলেজগুলোতে এবং চিকিৎসকদের বাড়িতে অ্যালকোহল মজুত থাকে জলের মতো।

মদের দোকানে যতই বোর্ড লাগিয়ে প্রচার করা হোক না কেন— ‘১৮ বছরের কম বয়সিদের মদ বিক্রি নিষিদ্ধ’, বাস্তবে দেখা যায়, মদের ক্রেতাদের একটা বড়ো অংশের গ্রাহক আসলে ওই ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সিরা। কবে যে আমরা এই ‘বিষ’ পান থেকে বিরত থাকব, তা জানা নেই!

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...