শীত এসে গেছে৷ এই সময়ে দুটি জিনিসের প্রলোভন এড়িয়ে যাওয়া কঠিন৷নতুন গুড়ের মোয়া আর নতুন গুড়ের রসগোল্লা৷ প্রসঙ্গ যখন মিষ্টির, আর বিশেষ করে রসগোল্লার — তখন এই নিয়ে কেউ নেতিবাচক কথা মোটেই শুনতে পছন্দ করেন না৷ বিশেষ করে বাঙালির অতি প্রিয় মিষ্টি রসগোল্লা৷এখন তো একেবারে কাগজে-কলমে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে, রসগোল্লা বাঙালিরই নিজস্ব সম্পত্তি৷

এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে শীত এবার ভালোই পড়বে বলে মনে হচ্ছে৷ তার মানেই আর ক’দিন পর থেকেই নতুন গুড়ের মনলোভা গন্ধে ম-ম করবে মিষ্টির দোকানগুলো৷ প্রাণ ভরে নতুন গুড়ের রসগোল্লা খেয়ে শীতটা উদযাপন করার কথা ভাবছেন নিশ্চয়ই?

বাঙালির মিষ্টি খাওয়ার লোভ যেমন আছে, আবার মিষ্টি নিয়ে ইদানীং আমাদের সমাজে একটা অন্যরকম সচেতনতাও তৈরি হয়েছে৷ আগে ফ্যাটের নাম শুনলেই স্বাস্থ্য সচেতনরা পিছু হাঁটতেন, এখন মিষ্টির ক্ষেত্রেও ঠিক তা-ই হয়৷ অতিরিক্ত চিনি ডায়াবেটিস বা ওবেসিটি তো বটেই হাইপারটেনশনেরও কারণ এবং কারও কারও মিষ্টি খাওয়ার জন্য ব্রণ ও নানা ত্বকের সমস্যা হয়৷Sweet Dish -এর বিষয়ে তাই কিছুটা সচেতনতা প্রয়োজন৷

ডাক্তাররাও রোজ মিষ্টি খাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, তবে এক আধদিন মিষ্টি খেলে তেমন কিছু ক্ষতি হয় না৷ অন্য মিষ্টির তুলনায় কিন্তু রসগোল্লা, বিশেষ করে গুড়ের রসগোল্লা বেশি স্বাস্থ্যকর৷ ছানায় প্রচুর প্রোটিন থাকে, গুড় চিনির চেয়ে কম প্রসেসড, সুতরাং স্বাস্থ্যের জন্য ভালো৷ চিনি বা গুড়ের রসটা চিপে বের করে দিলে মিষ্টির ভাগটাও কমে যাবে৷ লাড্ডু, হালুয়া বা পান্তুয়ার মতো মিষ্টিগুলি ভাজা হয় ঘিয়ে, কিন্তু রসগোল্লায়  সেরকম কোনও ফ্যাট থাকে না৷ তাই অন্য ভারতীয় মিষ্টির চেয়ে Rosogolla with jaggery বা গুড়ের রসগোল্লা, অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর৷

গুড়ের নিজস্ব কিছু গুণও আছে৷গুড়ে আছে কার্বোহাইড্রেট, তাই এটি শরীরে তাৎক্ষণিক এনার্জি জোগাতে সক্ষম হয়। শুধু এনার্জির জোগান দেওয়া নয়, গুড় শরীরের পক্ষে নানা দিক দিয়েই ভালো। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও গুড়ের নানা উপযোগিতার কথা বলা আছে। ওষুধের উপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রাকৃতিক ভাবে সুস্থ থাকতে হলে গুড়ই যথেষ্ট। তবে রিফাইন করা চিনির চেয়ে আখ বা খেজুরের রস দিয়ে তৈরি গুড় স্বাস্থ্যের পক্ষে অনেক বেশি উপকারী।তাই শীতের মৌতাত পেতে গুড়ের রসগোল্লা খাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন না৷

Rosogolla made of Sugar

 

সাবধানতা

  • মিষ্টি যেদিন খাবেন, সেদিন বাকি খাওয়াদাওয়াটায় একটু রাশ টানতে পারলে ভালো হয়৷ বিশেষ করে ভাজাভুজি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন৷
  • চেষ্টা করুন বিকেলে সূর্য ডোবার আগে মিষ্টি খেয়ে নিতে৷তারপর শরীরের মেটাবলিজ়মের হার ক্রমশ কমতে থাকে৷
  • বলা হয়, যে কোনও খাবার যখন আমরা প্রথম কামড় খাই, তখন আমাদের জিভ তার স্বাদটা অনুভব করে৷ দ্বিতীয় কামড়ে পরিতৃপ্ত হয় চেতনা৷ তিন নম্বর কামড়টা তাই বসানোর কোনও দরকারই নেই! ভালোবাসার বস্তু কম করে খান, তাতে শরীরে কোনও খারাপ প্রভাব পড়বে না৷
  • ব্রেকফাস্ট-এ প্রোটিন-ধরনের খাবার খাওয়া সারাদিনের শর্করার চাহিদা কমায়।সকালের জলখাবারে প্রোটিন হিসেবে ডিম খাওয়া যেতে পারে।
  • চিনির প্রতি আকর্ষণ কমানোর সহজ উপায় হল পর্যাপ্ত জল পান করা। এতে পেট ভরা থাকে ও অসচেতনতায় মিষ্টি-জাতীয় খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমায়। এছাড়াও, গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করা দৈনিক শর্করা গ্রহণের মাত্রা কমাতে সহায়ক।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...