ডায়াবিটিজ-এর মতো ক্রনিক একটি রোগ সব বয়সের মানুষকেই প্রভাবিত করতে পারে। টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিজ সাধারণ ভাবে বাচ্চা এবং কিশোরদের মধ্যে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। তবে বাচ্চারাও এখন টাইপ টু ডায়াবিটিজ-এর শিকার হচ্ছে। শৈশবেই যদি সন্তান ডায়াবিটিজ রোগের শিকার হয়ে পড়ে, তাহলে মুষড়ে না পড়ে অভিভাবকদের উচিত সন্তানের সমস্যার সঠিক সমাধান মেনে চলা।
টাইপ টু ডায়াবিটিজ যুবক বয়সে এবং বয়স্ক মানুষদের মধ্যেই বেশি চোখে পড়ে। যেসব বাচ্চা এই ডায়াবিটিজ-এর শিকার, তাদের অভিভাবকদের পক্ষে বাচ্চার খেয়াল রাখা কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। যখন মা-বাবা জানতে পারেন তাদের আদরের সন্তানকে সারাজীবন এই রোগটি বয়ে বেড়াতে হবে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। মা-বাবার মতো শিশুর মনের উপরেও এই রোগের প্রভাব পড়ে। তারা নিজেদের অন্য বাচ্চাদের থেকে আলাদা ভাবে কারণ, অনেক কিছু করতেই তাদের বারণ করা হয়। এর ফলে শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব ঘটতেও দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞের মতামতের উপর নির্ভর করে কিছু টিপস এখানে দেওয়া হল, যাতে Diabetes-এ পীড়িত বাচ্চাদের সঠিক দেখভাল তাদের অভিভাবকেরা করতে পারেন।
ডায়াবিটিজ-এর শিকার বাচ্চাদের জীবনশৈলী
ডায়াবিটিজ টাইপ-১ একটি ক্রনিক রোগ। এই রোগের শিকার যারা, তাদের প্যানক্রিয়াস-এ ইনসুলিন তৈরি হয় না অথবা তৈরি হওয়ার মাত্রা খুবই কম। তার ফলে বাইরের সোর্স থেকে শরীরকে ইনসুলিন দেওয়ার দরকার পড়ে।
এই রোগে আক্রান্ত বাচ্চারা অবসাদ এবং ক্লান্তি অনুভব করে। ডায়াবিটিজ বার্নআউট এমন একটি স্থিতি যেখানে ব্যক্তি ডায়াবিটিজ নিয়ন্ত্রণ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমনও দাঁড়ায়, যেখানে বাচ্চা নিজের ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল মনিটার করতে, রেকর্ড করতে বা ইনসুলিন নিতে বিরক্ত বোধ করে।
এই ক্ষেত্রে সন্তানের Diabetes ম্যানেজমেন্ট-এ, অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। বাচ্চাকে নিজের পরিস্থিতি নিজেকেই নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দিন এবং সেই সঙ্গে বাচ্চাকে সঠিক পথে গাইড করুন এবং সম্পূর্ণ সহযোগিতা করুন।
ডায়াবিটিজ-এ আক্রান্ত বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া অভিভাবকের একটা বড় দায়িত্ব। ডায়াবিটিজ ম্যানেজমেন্ট-এ সবথেকে জরুরি হল ব্লাড সুগার লেভেলকে সঠিক রেঞ্জে রাখা। এর জন্য বাচ্চাকে ইনসুলিন দেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। এছাড়াও ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট-এর পরিমাণ সীমিত রাখা দরকার এবং বাচ্চার অ্যাক্টিভ থাকাটাও খুব প্রয়োজন।
রোজ ডাক্তারের পরামর্শমতো নির্ধারিত সময়ে ব্লাড সুগার মাপা উচিত। এর জন্য স্মার্টফোন কানেকটেড গ্লুকোমিটার ব্যবহার করা যেতে পারে। এটির ব্যবহারে ব্লাডসুগার মনিটার করা খুবই সহজ হয়ে যায় এবং যখন যেখানে খুশি ব্লাড গ্লুকোজ মাপা সহজতর হয়ে ওঠে।
সন্তানের ডায়াবিটিজ থাকলে অভিভাবকদের যা কর্তব্য
প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত শাসন নয়: জীবনের অপ্রয়োজনীয় জটিলতা থেকে বাচ্চাকে সুরক্ষা দেওয়া অভিভাবকের দায়িত্ব। কিন্তু বাচ্চাকে স্বাধীনতা দেওয়া এবং নিজের জন্য তাকে স্পেস ছাড়াটাও দরকার। বড়োদের সাহায্যেই বাচ্চার নিজের মধ্যে দায়িত্ববোধ বাড়তে পারে এবং সে নিজেই নিজের ডায়াবিটিজ ম্যানেজমেন্ট-এ পারদর্শী হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে বাচ্চার মধ্যেও আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে।
স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে বাচ্চাকে সাহায্য করুন: বড়োদের উচিত বাচ্চার উৎসাহ বাড়ানো। যে-কাজ বাচ্চা করতে ভালোবাসে সেটা করার সুযোগ করে দিন। গান, নাচ, পেইন্টিং বা সুইমিং সবকিছুই বাচ্চাকে শেখার সুযোগ করে দিন। এতেই বুঝে যাবেন বাচ্চার কীসে উৎসাহ আছে।
বাচ্চাকে শেখান, কেউ ওকে বিরক্ত করলে ওর কী করা উচিত: প্রায়শই দেখা যায় ডায়াবিটিজ-এ পীড়িত বাচ্চাকে স্কুলে সহপাঠীরা বিরক্ত করে। এর ফলে বাচ্চার মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাহত হতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার উপর এগুলোর যেন কোনও ক্ষতিকারক প্রভাব না পড়ে। স্কুলে যেন সে ব্লাড গ্লুকোজ মনিটার করা বন্ধ না করে দেয়। বাচ্চাকে ট্রেনিং দিন এ ধরনের পরিস্থিতিতে তার কী করা উচিত এবং অন্য বাচ্চাদেরও বোঝান অন্যের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যাতে তারা আপনার সন্তানকে বিরক্ত না করে। এর জন্য বাচ্চার সহপাঠীদের মা-বাবা, স্কুলের শিক্ষক এবং অন্য সঙ্গীদের সাহায্য নিতে পারেন।
বাচ্চাকে অভ্যাস করান সঠিক পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার: বাচ্চারা ফাস্টফুড, চকোলেট এইসব খেতে বেশি পছন্দ করে। কিন্তু ডায়াবিটিজ-এ পীড়িত বাচ্চার প্রয়োজন খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা। বাচ্চাকে বকার বদলে তাকে ভালো ভাবে বোঝান, পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেলে তারই বেশি উপকার হবে। দানাশস্য, টাটকা সবজি, ফল, লিন প্রোটিন, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ফ্যাট এগুলো ডায়েটে রাখাই তার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
খেয়াল রাখুন: যদি বাচ্চার মধ্যে অবসাদের লক্ষণ চোখে পড়ে যেমন ঔদাসীন্য, বিরক্তি, ক্লান্তি, খিদে ও ঘুমের অভ্যাসে পরিবর্তন তাহলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। নিয়মিত রিমাইনডার্স এবং নোটিফিকেশন-এর সাহায্যে, আরও ভালো ভাবে Diabetes নিয়ন্ত্রিত করা সম্ভব হবে। ডায়াবিটিজ ম্যানেজমেন্টের জন্য বিটো অ্যাপ সবরকম প্রয়োজনীয় সমাধান দিয়ে থাকে।
ডায়াবিটিজ-এ আক্রান্ত শিশুর যত্ন নেওয়া যে-কোনও অভিভাবকের পক্ষেই চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। অভিভাবকেরা যদি কোনও ডায়াবিটিজ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে নিজের নিজের সমস্যা নিয়ে সেখানে আলোচনা করতে পারেন। একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ আদানপ্রদান করতে পারেন। প্রয়োজনে নোটস তৈরি করুন। এছাড়াও পরিবারের সাহায্য নিন। এই বাচ্চাদের জন্য পরিবারের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা গ্রহণ করতে পারে।