আমের তলায় ঝামুর ঝুমুর কলাতলায় বিয়া...
বাঙালি বিয়েতে আচার অনুষ্ঠানের এই পরম্পরা চিরাচরিত ভাবে চলে আসছে। এতে যেমন নিয়মের কিছু কড়াকড়ি আছে, তেমনি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা স্ত্রীআচারের মধ্যে রয়েছে সমাজেরও একটা সক্রিয় যোগদান।
শাঁখ বাজিয়ে বিয়ের শুভানুষ্ঠান শুরু করা থেকে, মহিলারা একত্রিত হয়ে উলুর মধ্যে দিয়ে বিয়ের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বাঙালি বিয়ের এটা মূল অংশ। বাঙালি বিয়ে অথচ সানাই বাজছে না এমনটাও ভাবা যায় না। সানাইয়ের মধুর আওয়াজের গুঞ্জন অতিথি-অভ্যাগতদের আমন্ত্রণ জানায় যেমন, তেমনি পাড়া-প্রতিবেশীকেও জানান দেয় যে, এই বাড়িটি বিয়ে বাড়ি।
বিয়ে বাড়িতে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় পাত্র এবং কনের আশীর্বাদের অনুষ্ঠান দিয়ে। পাত্র ও পাত্রীর Wedding ঠিক হয়ে যাওয়ার পর ‘পঞ্জিকা’ দেখে একটি বিশেষ দিন ধার্য করা হয়। পাত্রর বাড়ি থেকে পাত্রীকে এবং পাত্রীর বাড়ি থেকে পাত্রকে দূর্বা-ধান চন্দন ইত্যাদি সহযোগে আশীর্বাদ করা হয়। স্বর্ণালংকারও উপহার হিসেবে দুজনকেই দেওয়া হয়। উভয় পরিবারের কাছে তারা যে স্বীকার্য, তারই সিলমোহর হচ্ছে আশীর্বাদ পর্ব।
বিয়ের আগের দিন কনে এবং পাত্রকে আলাদা ভাবে তাদের নিজেদের বাড়িতে আইবুড়ো ভাত খাওয়ানো হয়। এর অর্থ হল তাদের ব্যাচেলার জীবনের ইতি। পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। হাসি, ঠাট্টার মধ্যমে একটা সামাজিক মেলবন্ধনের উপস্থিতির আভাস পাওয়া যায়।
বিয়ের দিন ভোরবেলায় বিজোড় সংখ্যায় এয়ো স্ত্রীয়েরা (বিবাহিত স্ত্রী) মিলে গঙ্গা (নদী)কে নিমন্ত্রণ জানাতে যায়। এরপর কনের হাতে পরিয়ে দেওয়া হয় একজোড়া করে শাঁখা ও পলা। দই দিয়ে চিঁড়ে মেখে কনে এবং পাত্র উভয়কেই খাওয়ানো হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান না-মেটা পর্যন্ত এই খেয়েই দু’জনকে থাকতে হয়। এইজন্য অনুষ্ঠানের নামই হয়েছে দধিমঙ্গল।
বিয়ের দিন সকালেই নান্দীমুখের আয়োজন করা হয়। পাত্রীর বাবা অথবা জেঠু, পুরোহিতের সঙ্গে বসে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল দেওয়ার প্রথা প্রচলিত রয়েছে এই অনুষ্ঠানে। হলুদ কোটা এবং গায়ে হলুদে বিজোড সংখ্যায় বিবাহিত স্ত্রীয়েরা (এয়োস্ত্রী) মিলে হলুদ বেটে সেটা পাত্রের সারা গায়ে মাখায়। এরপর সেই হলুদই তত্ত্বের সঙ্গে কনের বাড়ি পাঠানো হয় যেখানে চারটি কলাগাছে ঘেরা একটি স্থানে কনের গায়ে সেই হলুদ মাখিয়ে এয়োস্ত্রীয়েরা তাকে স্নান করায়। তার আগে কনে পায়ের চাপে ভাঁড় ভেঙে ‘আইবুড়ো’ নাম খণ্ডন করে।