মা-বাবার উৎসাহ এবং সাকারাত্মক জীবনবোধ বাচ্চার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। বাচ্চার নিজের উপর এবং অন্যান্য সবকিছুর ওপরে একটা ধারণা তৈরি হয়, যেটা ওই ছোটো বয়স থেকেই বাচ্চার Confidence বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। বাচ্চার দুর্বল আত্মবিশ্বাস তাদের নিজের মনের মধ্যে গুটিয়ে থাকা মনোভাব তৈরি করে এবং তাদের, চুপচাপ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। মা-বাবাকে বাচ্চার এই মানসিক পরিস্থিতির সংকেতগুলো বুঝতে হবে এবং সেইমতো পরিস্থিতির মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এভাবে বাচ্চারও Confidence বাড়বে এবং সেইমতো সমস্যার মুখোমুখি হয়ে সেটা সমাধানের সাহস সে খুঁজে পাবে।
কৌতূহলী হতে দিন
বাচ্চা বারবার প্রশ্ন করলে বিরক্ত হবেন না। বাচ্চার মনে কৌতূহল থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তাকে প্রশ্ন করতে উৎসাহ দিন। প্রশ্ন করাটা বাচ্চার মানসিক বিকাশের জন্য খুব জরুরি। এতে তার আত্মবিশ্বাস, অধ্যাবসায় এবং প্রচেষ্টা বাড়বে।
বাচ্চার সঙ্গে ইন্টার্যাক্ট করুন
বাচ্চাকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইন্টার্যাক্ট করবার সুযোগ করে দিন যাতে সম্পর্কের ভ্যালু সে ছোটো থেকেই বুঝতে পারে এবং তার সোশ্যাল লাইফ বিকশিত হতে পারে। বাচ্চার সঙ্গে সহানুভূতিপূর্ণ সহৃদয় ব্যবহার করুন। বাচ্চার প্রতি স্নেহশীল হন। এর ফলে বাচ্চার, সম্পর্ক গড়ে তুলতে সুবিধে হবে এবং মনের কথা খুলে বলার মতো Confidence বাড়বে।
নিজের পছন্দ বাছার সুযোগ দিন
অভিভাবকদেরই সুযোগ করে দিতে হবে বাচ্চাকে নিজের পছন্দ বেছে নিতে। বড়োরা বাছাইয়ের সুবিধা করে দিলেও পুরো ব্যাপারটায় ইন্টারফিয়ার না করে বাচ্চাদের উপর ছেড়ে দেওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। নিজের পছন্দের বিকল্প বেছে নেওয়া এবং নিজের পরিস্থিতি নিজেই সামলে নেওয়ার স্বাধীনতাও বাচ্চার উপর ছেড়ে দেওয়া ভালো। এতে বাচ্চার কনফিডেন্স বাড়বে। ডিসিশন নিতে শিখবে এবং কী বেশি পছন্দ, সেটা ভালো করে বোঝার ক্ষমতা তৈরি হবে।
বাহবা এবং পুরস্কার দিন
প্রতিটি পদক্ষেপে বাচ্চাকে বুঝতে দিন যে তার মা-বাবা তাকে ভালোবাসে। বাচ্চাকে বলুন, প্রত্যেক বাচ্চার মধ্যেই কোনও না কোনও গুণ অবশ্যই থাকে এবং প্রত্যেক ইনডিভিজুয়ালের মধ্যেই বিশেষ ক্ষমতা ও প্রতিভা থাকে। আপনার জীবনে আপনার সন্তানের যে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে সেটা বাচ্চাকে বুঝতে দিন। বাচ্চার সঙ্গে পজিটিভ আলোচনা করুন এবং হাবভাবে অথবা ছোটো ছোটো কথায় বাচ্চার সাফল্যের প্রশংসা করুন। উৎসাহ দেওয়ার জন্য বাচ্চাকে ছোটো ছোটো পুরস্কার দিন, যেটা আপনার বাচ্চা পছন্দ করে। জিনিস দামি হতে হবে এমন কিন্তু নয়। আশা অনুযায়ী ফল না পেলে অযথা বাচ্চাকে বকাবকি করবেন না। পরের বার ভালো করতে উৎসাহ জোগান।
অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না।
নিজের বাচ্চার ক্ষমতার তুলনা অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে কখনও করবেন না। প্রত্যেক বাচ্চার আলাদা আলাদা গুণ থাকে। মানসিক গঠনও আলাদা হয়। সন্তানের সঙ্গে অন্য বাচ্চাদের তুলনা করা হলে বাচ্চার মনে হীনম্মন্যতা জন্ম নিতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মনোভাবও তৈরি হয়। ফলে বাচ্চারা ঈর্ষাপরায়ণ এবং বিদ্বেষপ্রবণ হয়ে ওঠে। বাচ্চার শরীরের জন্যও এটি যথেষ্ট ক্ষতিকারক।
দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কাজ করার সাহস জোগান
বাচ্চা যখন কারও দেওয়া কাজ নিজে নিজে শেষ করে তখন বাচ্চার মন আত্মবিশ্বাসে ভরে ওঠে। কাজের প্রতি তার উৎসাহ বেড়ে যায়। রাহুল কিছুতেই নিজের জুতোর ফিতে বাঁধতে পারত না। কিন্তু ওর মা-বাবা সবসময় ওকে বলত যে চেষ্টা করতে করতেই একদিন ওই কাজটা ও নিশ্চয়ই করতে সফল হবে। শেষ পর্যন্ত রাহুল সত্যিই কাজটা করতে সফল হয়। এই ভাবে বাচ্চাকে সব কাজে এনকারেজ করা উচিত যাতে বাচ্চা নিজের উদ্যমেই লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারে।
শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলুন
বাচ্চা নিজের বন্ধু এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কী ধরনের ব্যবহার করে সেটা অভিভাবকদের খোঁজ রাখা একান্ত কর্তব্য। এতে বাচ্চার সামাজিক জীবন বুঝতে মা-বাবার অনেকটা সুবিধা হবে। অনাত্মীয়দের প্রতিও বাচ্চার কী ব্যবহার সেটা লক্ষ্য রাখা উচিত বড়োদের।
এ ছাড়া যদি বাচ্চার কোনও কিছুতে সমস্যা হয় অথবা শেখার পথে কিছু অন্তরায় দেখা দেয়, তাহলে সেটা বুঝতেও অভিভাবকদের অনেকটা সুবিধা হবে। সেইমতো প্রয়োজন অনুযায়ী বাচ্চার খেয়ালও তারা রাখতে পারবেন। সুতরাং বাচ্চার বন্ধু এবং শিক্ষকদের সঙ্গে সময়ে সময়ে কথা বলুন এবং বাচ্চার পছন্দ জানার চেষ্টা করুন।
কাল্পনিক খেলাকে মাধ্যম করুন
সাধারণত বাচ্চারা আশেপাশের মানুষদের এবং জিনিসপত্রের সঙ্গে মনে মনে একটা কাল্পনিক খেলার পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে সেই কল্পলোকে বাচ্চা নিজেকে একটা প্রধান ভূমিকায় দেখতে চায়। এই ধরনের কাল্পনিক খেলার মাধ্যমে বাচ্চারা বড়ো কিছু নিয়ে ভাবতে শেখে এবং জীবনে সেটা হয়ে ওঠার স্বপ্নই দেখে। বড়োরাও বাচ্চাদের সঙ্গে এই ধরনের খেলায় যদি অংশগ্রহণ করেন, তাহলে বাচ্চা কল্পনার মাধ্যমে কী ভাবনাচিন্তা করছে সেটা বুঝতে পারবেন এবং বাচ্চার Confidence বাড়াতে সাহায্য করতে পারবেন।
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল সম্পর্কের ভিত হচ্ছে ভরসা। বাচ্চাকে ভালোবাসুন, সম্পর্কের ভিত শক্ত করুন। বাচ্চার বোঝা উচিত, যখনই তার আত্মবিশ্বাস কমতে থাকবে তখনই সাহায্যের জন্য আপনি ওর পাশে থাকবেন।
সম্পর্কের ভিত যদি ভরসার হয়, তাহলে সমস্যা এলে স্বাভাবিক ভাবেই বাচ্চা, মা-বাবার কাছেই আগে আসবে। মা-বাবার উপদেশ শুনবে এবং সেই কথার সম্মানও করবে। বাচ্চার নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়লে বাচ্চা অপরের সঙ্গে যেমন সহজে মিশে নিজের মত প্রকাশ করতে পারবে, তেমনি অপরের কথাও মন দিয়ে শুনবে এবং অপরের কথাকেও সম্মান দিতে শিখবে। সহজে সকলের মাঝে নিজের একটা জায়গা তৈরি করে নিতে সক্ষম হবে বাচ্চারা।