সময়োপযোগী আরামদায়ক পোশাক

বর্ষাকাল শুরু হলেও, মাঝেমধ্যে তাপপ্রবাহের কবলেও পড়তে হচ্ছে। কিন্তু তাতে কী! এরজন্য তো আর জীবন থেমে থাকে না, সে তার নিয়মেই বয়ে চলে। রোজকার বাইরে বেরোনো তো আর থেমে নেই। তাই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে, সব বয়সের মহিলারাই ফ্যাশনেবল অথচ আরামদায়ক পোশাকের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, তাঁত, কোটা, মলমল, ভয়েল, লিনেন। নরম কাপড় আর ডিজাইনারদের অভিনব ডিজাইন– দুইয়ের মিশেলেই ভারতীয় আর ওয়েস্টার্ন পোশাকের ফিউশন সত্যিই অনবদ্য।

টিনএজার-রা তাদের পছন্দের তালিকায় রাখছেন ব্লক প্রিন্ট নয়তো বিভিন্ন রঙের ভ্যারিয়েশনে তৈরি ফুলেল অথবা জ্যামিতিক নকশা করা মলমল কাপড়ের কুর্তি কিংবা টপস্। স্টাইলিশ পোশাক বানাতে শুধুমাত্র টাচ-আপ হিসাবে দেওয়া হচ্ছে সরু পাইপিং। সঙ্গে সামনে কাঠের বড়ো বোতাম। অনেকেই আবার রংচঙে পাতিয়ালা সেটের সঙ্গে একরঙা কুর্তিও বেছে নিচ্ছেন। পাতিয়ালার সঙ্গে শর্ট, লং দুইরকমের কুর্তিই চলতে পারে, তবে শর্ট কুর্তিই বেশি ভালো লাগে। অনেকে ওয়ার্ডরোবে আনারকলি কুর্তিও রাখছেন। এছাড়া জিন্স, লেগিংস, গেঞ্জি কাপড়ের টপস্, সালোয়ার তো চলছেই। জিন্সের সঙ্গে পিনটাক টপস্ বা টিউনিক আজকাল ভীষণভাবে ইন। এই ঋতুতে ফ্যাশনেবল হয়ে উঠতে খান দুয়েক ক্রাশড স্কার্টও কিনে নিতে পারেন। এতে লুকটাও বদলাবে।

যেসব মহিলারা জিন্স এড়িয়ে চলেন বা সেই অর্থে পরতে ভালোবাসেন না, তাদের জন্য তো বাংলার ঐতিহ্যশালী তাঁত রয়েছে। হাইনেক কাটের থ্রি-কোয়ার্টার অথবা স্লিভলেস কলমকারী ব্লাউজের সঙ্গে মানানসই একখানা ফুলিয়ার তাঁত আপনাকে নজরকাড়া করে তুলতে বাধ্য। সঙ্গে যদি থাকে হালকা ডিজাইনের কিছু কস্টিউম জুয়েলারি, তাহলে একেবারে সোনায় সোহাগা। এছাড়া এই মরশুমের জন্য ঢাকাই, পাটোলা, কোটা, শিফন, কেরল কটন একেবারে আদর্শ। শুধু মহিলারাই কেন বর্তমানে টিনএজাররাও এই শাড়িগুলি বেশ পছন্দ করছেন। কলেজ ফেস্ট থেকে অফিস পার্টিতেও এসব পরতে দেখা যায় তাদের। এবারের ফ্যাশনে নিওন কালার অর্থাৎ ডিপ-নীল, ইয়েলো, পিংক, ভীষণভাবে ইন।

সালোয়ার স্যুট, শাড়ি কিংবা কোনও অনুষ্ঠানের জন্য স্পেশাল ড্রেস কেনার সময় ফ্যাব্রিক দেখে তবেই কিনুন। আজকাল কাপড়ে সিন্থেটিক মেটেরিয়াল অত্যধিক পরিমাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ধরনের পোশাক এই ঋতুতে বেমানান তো বটে সেই সঙ্গে কষ্টদায়কও। বরং ঢাকাই, কিংবা তাঁতের মধ্যে লখনউয়ি, কাশ্মিরি, হায়দ্রাবাদি কাজ করা শাড়িতে আপনি হয়ে উঠতে পারেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আপনার পোশাকই আপনাকে করে তুলতে পারে সকলের থেকে আলাদা। তাই পোশাক বাছুন ভেবেচিন্তে।

মনে রাখবেন

  •  এই ঋতুতে সুতির পোশাকই পরুন
  • জর্জেট, ব্যাঙ্গলোর সিল্ক, কাঞ্জিভরম জাতীয় হেভি শাড়ির কথা মনেও আনবেন না
  • জবরজং নকশাদার বা হেভি এমব্রয়ডারির পোশাক একেবারেই পরবেন না
  • দিনের বেলা কালো রং এড়িয়ে চলাই ভালো। চাইলে রাতে পরতে পারেন
  • টাইট পোশাক পরবেন না। বরং ঢিলেঢালা পোশাকই পরুন।

ব্যাগ বটুয়ায় ফ্যাশন স্টেটমেন্ট

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পার্স এখন একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অ্যাক্সেসরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাইরে বেরোবার জন্যে যা-যা কিছু প্রয়োজন যেমন টাকা পয়সা, মেক-আপের প্রোডাক্টস, চাবি, চশমা, সেল ফোন ইত্যাদি আরও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমরা পার্সে ভরে নিয়ে বেরোতে ভুলি না। ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতেও পার্সের অবদান অনেকখানি। নানা ধরনের পোশাক যেমন আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তেমনি পার্স-ও ব্যক্তিত্বের গভীরতাকে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

বহু প্রাচীনকাল থেকেই হাতে ব্যাগ নেওয়ার প্রচলন রয়েছে। পার্স নামটি ইংরেজি শব্দ। আগে বটুয়া, ঝুলি বহু নামেই ব্যাগের ব্যবহার হতো। পুরুষেরা জামা অথবা ফতুয়ায় লুকোনো পকেটে, বটুয়ায় ভরে মূল্যবান সামগ্রী রাখত। মেয়েরা অনেকে টাকা পয়সা বটুয়ায় ভরে কোমরে বেঁধে রাখত।

কাপড়-চোপড় সঙ্গে নেওয়ার জন্যে আগে কাপড়ের মধ্যে একসঙ্গে সব বেঁধে নেওয়া হতো। মুখটাতে গাঁট বাঁধা হতো বলে গাঁটরি বলত লোকে। এটা পিঠে ঝুলিয়ে বা কাঁধে করে নিয়ে বেরিয়ে পড়া যেত। পরে বড়ো থলিতে করে হাতে ঝুলিয়ে, জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া শুরু হল। দেখতে যাতে খারাপ না-লাগে তার জন্যে নানা কারুকার্যে সজ্জিত করে ব্যাগ বা থলিকে সুন্দর দেখাবার চেষ্টা করা হতো।

এরপর ধীরে ধীরে পাশ্চাত্য প্রভাবে সাজের সঙ্গে সঙ্গে অ্যাক্সেসরিস-এও পরিবর্তন আসতে থাকল। হাতে জায়গা করে নিল নানা বাহারের পার্স। আর এখন তো বাজার ছেয়ে গেছে নানা ধরনের ডিজাইনার পার্সে। পোশাকের সঙ্গে মিলমিশ খাইয়ে পার্স নেওয়ার প্রচলন এখন। এছাড়াও কোথায় যাওয়ার জন্যে পার্স ব্যবহার হচ্ছে, সেটা মাথায় রেখেও নানা সাইজের, নানা মেটেরিয়ালের তৈরি পার্স এখন পাওয়া যায় মার্কেটে। লেডিজ শপিং ব্যাগ, বিডেড পার্স, ডিজাইনার ক্লাচ ব্যাগ, ফ্যান্সি ক্লাচ ব্যাগ, স্ট্র্যাপড ক্লাচ ব্যাগ এবং ওয়েডিং ক্লাচ ব্যাগ নানা রঙের এবং স্টাইলের পাওয়া যায়।

কাঁধ থেকে সাইডে ঝোলানো স্লিংগ ব্যাগও এখন অল্প বয়সি মেয়েরা এবং মহিলারা উভয়েই পছন্দ করছেন ব্যবহার করতে। এগুলি দেখতেও যেমন আধুনিক তেমনি ব্যবহার করাও খুব সুবিধা। ব্যাগগুলিতে জায়গাও থাকে যথেষ্ট। বর্তমানে আধুনিকাদের পছন্দের ফ্যাশনে রয়েছে বক্স ক্লাচার্স, নিয়ন ক্লাচার্স এবং বিগ সাইজ ক্লাচার্স।

বক্স ক্লাচার্স – সাধারণত চ্যাপটা এবং বক্সের আকারে হয় এই ক্লাচার্সগুলি। লেদার এবং অনেক ধরনের মেটেরিয়ালেই বক্স ক্লাচার্স পাওয়া যায়। এগুলিতে ক্রেডিট কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, টাকা ক্যারি করা খুব সুবিধে।

নিয়ন ক্লাচার্স – পিংক, ইয়েলো, অরেঞ্জ ইত্যাদি ব্রাইট এবংঞ্জভাইব্র্যান্ট কালারে ব্যাগগুলি কিনতে পওয়া যায়, যা রং অনুযায়ী পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে নিতে অল্পবয়সি মেয়েরা পছন্দ করে। লেদার এবং কাপড়ের তৈরি দুই ধরনেরই পাওয়া যায়।

বিগ সাইজ ক্লাচার্স – এই ব্যাগগুলি আকারে একটু বড়ো হয়। যার মধ্যে মেক-আপের জিনিস, সারাদিনের প্রয়োজীয় কাগজপত্র, জিনিস, বই-খাতা খুব সহজে জায়গা করে নেয়। অফিসে যাঁরা কাজ করেন এবং কলেজ ছাত্রীরা এই ব্যাগগুলি নিতে পছন্দ করেন।

আজকাল যাঁরা ব্যাগ অথবা ক্লাচ ব্যাগ ডিজাইন করছেন তাঁরা বিশেষ করে অকেশন, পার্টি এবং ওয়েডিং মাথায় রেখে ব্যাগের স্টাইলাইজিং-এর কাজ করছেন। অনেক ডিজাইনার-রা আবার পুরোনো ফ্যাশনকেই মর্ডানাইজ করে তুলতে বেশি আগ্রহী। এদের মধ্যে প্রখ্যাত পার্স ডিজাইনার নিনাদ রাণে-র নাম করতেই হয়।

রাণে-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, পুরোনো ফ্যাশনকেই মডার্ন করার কথা কেন ভাবলেন তিনি? তাঁর উত্তর ছিল, একজন গ্রাহকের চাহিদা মতো লেদারের জায়গায় শাড়ির বর্ডার দিয়ে তিনি পার্স বানিয়ে দিয়েছিলেন। গ্রাহকের পছন্দ তো হয়েইছিল, নিনাদেরও জিনিসটা এতটাই পছন্দ হয়েছিল যে তিনি ওই ধরনের পার্স বানানো শুরু করেন। তবে সবথেকে গ্রাহকরা যেটি বেশি পছন্দ করেন সেগুলি হল ওয়ারলি প্রিন্ট পার্স, ফ্যান্সি পার্স, পৈঠানি বর্ডার (ব্রোকেড) পার্স, বেনারস ফ্যাব্রিক পার্স এবং খণ্ড ফ্যাব্রিক পার্স।

ওয়ারলি প্রিন্ট পার্সঃ  প্রাচীনকালে পাথরের গায়ে খোদাই করা যে-ধরনের আঁকা পাওয়া গেছে তার উপরেই বেস করে এই প্রিন্ট করা হয়। এই ফেব্রিক দিয়ে অফিস ব্যাগ, ক্লাচাস, স্যাক এবং স্মল প্যাকেট পার্স তৈরি করা হয়।

ফ্যান্সি পার্সঃ  এর মধ্যে আছে ক্লাচার্স, শোল্ডার অফিস ব্যাগ, ট্র্যাভলিং এবং স্লিংগ ব্যাগ।

পৈঠানি বর্ডার ক্লাচার্সঃ  পৈঠানি টিসু ফ্যাব্রিক এবং জামেওয়ার ফ্যাব্রিক দিয়ে তৈরি এই পার্সগুলি অনুষ্ঠান এবং বিয়েতে বেশি ব্যবহার হয়। শাড়ি বা ড্রেসের রঙের সঙ্গে ম্যাচ করে এই ব্যাগ ব্যবহৃৎ হয়।

বেনারস ফেব্রিক পার্সঃ  বেনারসি কাপড় দিয়ে তৈরি এই ফ্যান্সি পার্সগুলি সাধারণত অনুষ্ঠান এবং বিয়ের পারপাসেই ব্যবহার করা হয়।

খন্ড ফ্যাব্রিক পার্সঃ  ছোটো ছোটো নানারকমের কাপড় জুড়ে জুড়ে আকর্ষণীয় এই ব্যাগগুলি তৈরি করা হয়। কন্ট্রাস্ট অথবা ম্যাচিং পোশাকের সঙ্গে এই ধরনের ব্যাগ বেশি ব্যবহার হয়।

আপনার সাজগোজ ও ব্যক্তিত্বের অনেকটাই নির্ভর করে আপনার পোশাক ও অ্যাক্সেসরির উপর। তাই পার্স বাছাইয়েও আপনার রুচির পরিচয় দিন এবং তৈরি করুন আপনার ফ্যাশন স্টেটাস।

অভিভাবক হিসেবে দায়িত্বের মাপকাঠি

সন্তানের ভালোমন্দের দায়িত্ব মা-বাবার। তাকে ভালোভাবে মানুষ করা, পড়াশোনা শেখানো, কেরিয়ার গড়ে তুলতে সাহায্য করা, সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করা– এসবই বাবা-মায়ের কর্তব্য। কিন্তু কর্তব্য পালন করতে করতে কখনও কি মনে হয়েছে, আপনার কর্তব্যের অতিরিক্ত বোঝার ভারে আপনার সন্তান ত্রস্ত, নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো জায়গাটুকুর তার প্রয়োজন? সুতরাং আগে না ভাবলেও যুগের আধুনিকতার সঙ্গে নিজেকে এবং সন্তানকে যদি মানানসই করে তুলতে চান তাহলে প্রত্যেক অভিভাবকেরই সচেতন হওয়া উচিত। এই নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের খুব সাবধানে হ্যান্ডল করাই বাঞ্ছনীয়।

দক্ষিণ কলকাতার নামি কলেজের ছাত্র সায়ন। বাড়ি বাগুইহাটিতে। মা-বাবার একমাত্র সন্তান। একমাত্র সন্তান হওয়াতেই হয়তো মা-বাবার চিন্তা বেশি। ছেলে কলেজে কী করছে, বন্ধুত্ব কাদের সঙ্গে করছে, কলেজ শেষ হতেই ছেলে সোজা বাড়ির পথ ধরছে কিনা– এই নিয়ে হাজারো চিন্তা সায়নের বাবা-মায়ের। বড়োদের মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা সায়নের স্বাধীন ভাবনাচিন্তার পথে কিছুটা বাধা হয়েই দাঁড়ায়, ফলে মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে সে মা-কে জানায় এতদূর আসা যাওয়া করতে প্রতিদিন তার যে সময় নষ্ট হচ্ছে সেটা বন্ধ হবে যদি কলেজের কাছাকাছি কোনও থাকার ব্যবস্থা খুঁজে নেয়। এতে সময় বাঁচবে এবং পড়াশোনার জন্যেও সায়ন বেশি সময় দিতে পারবে। মা-বাবা ছেলের এই ইচ্ছে মেনে নেন। কিন্তু সায়ন বাবা-মায়ের বিশ্বাসের অমর্যাদা কোনওদিন হতে দেয়নি। বরাবর ভালোভাবে প্রতিটি পরীক্ষায় সফল হয়েছে সে। তাহলে কেন এই বাড়ি ছেড়ে যাওয়া? কারণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত উঠতে বসতে তার প্রতি তার আচরণের প্রতি বড়োদের শ্যেণ দৃষ্টি রাখাটাই হয়তো তার মনকে সবার অগোচরে বিদ্রোহী করে তুলেছিল। কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক, এই বিচার করার বয়স সায়নের হয়েছিল।

এখন এই নতুন জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা নিজেদের অ্যাকাডেমিক, কেরিয়ার নিয়ে এত বেশি সচেতন যে, কারণ অকারণে তারা খুব সহজে মানসিক শান্তি হারিয়ে ফেলে, টেনশনে ভোগে, সহজে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা আগের তুলনায় বেড়েছে। এক্ষেত্রে কোনও পক্ষকেই দোষ দেওয়া যায় না। আমরা এমনই একটা সমাজে বাস করছি, যেখানে মানুষ স্ট্রেসের ভারে জরাজীর্ণ সুতরাং যে-কোনও মুহূর্তে অঘটন ঘটা আশ্চর্যজনক নয়।

কমপিটিটিভ ওয়ার্ল্ডের আমরা নাগরিক তারপর জায়গাটা ভারতবর্ষ, এটা ভুললে চলবে না। দায়িত্ব এবং সম্পর্কের কোনও সীমাপরিসীমা নেই, কিন্তু সেগুলো এড়াবার রাস্তাগুলোও আমরা বন্ধ রেখে দিই। চারদিক দিয়ে প্রেশার বাড়ছে। এই অবস্থায় বাস্তববাদী হতে পারা ভালো, তাতে চারপাশের অবস্থার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের জীবনের লক্ষ্য, বাস্তব থেকে না সরিয়ে সম্ভাব্য লক্ষ্যে নিশানা স্থির রেখে এগোনো সহজ হবে। লক্ষ্যে পৌঁছোতেও কষ্ট হবে না এবং চাহিদা মতো ফলও পাওয়া যাবে। সুতরাং সন্তানদের থেকে ওভার এক্সপেকটেশন করা মা-বাবার উচিত নয়। টিনএজারদের কার্যক্ষমতা এবং কাজের কোয়ালিটিকে অপরের দৃষ্টিগোচর করে তোলার ইচ্ছে থেকে অনেক অভিভাবকই নিজেদের অজান্তেই ছেলে-মেয়েকে আরও বেশি ক্ষতির মুখে ঠেলে দেন। নিজেদের সংস্কৃতি দিয়ে সবাই সন্তানদের বড়ো করে তুলতে চান। সেক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের দৈনিক রুটিনে, আমাদের সংস্কৃতির অন্তর্গত অনেক ধরনের আচরণ যথাযথ খাপ খায় না। সময়ের অভাব অথবা তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশই সাধারণত খাপ খেতে না পারার জন্য দায়ী হয়। এই সব ক্ষেত্রে মা-বাবার উচিত প্রেশার তৈরি না করে তাদের সুযোগ দেওয়া, সংস্কৃতির মূল অর্থ বুঝে তাকে উপোভোগ করার।

খেয়াল রাখতে হবে, বাড়ির বাচ্চাদের কখনও যেন মনে না হয় তাদের এতটাই বন্ধনের মধ্যে রাখা হয়েছে যে, তারা নিজেদের স্বপ্ন ইচ্ছেমতো পূরণ করতে পারছে না। অথচ পরিবারের সংস্কৃতিটাও তাদের শিক্ষার মধ্যে পড়ে তাই হঠাৎ চেষ্টা না চালিয়ে একদম ছোটো থেকেই অল্প অল্প করে তাকে ফ্যামিলি ভ্যালুজ, এথিক্স এগুলো শেখানো কর্তব্য। এতকিছু সাবধানতা অবলম্বন করার পরেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না, এমনটা বলা যায় না। তাই অহরহ বাক্যবাণে সন্তানকে জর্জরিত না করে, অভিভাবকের উচিত তাদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা।

ছেলে-মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধির সময়টা খুব স্পর্শকাতর। বয়ঃসন্ধির এই সময়টায় কতটা অভিভাবকের শাসনের প্রয়োজন রয়েছে এটা নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয়। এটাও ভাবতে হবে সন্তানকে ওভার এক্সপোজ করতেও মা-বাবা কখনওই চাইবেন না। তাই মাঝেমধ্যে কাউন্সেলরের পরামর্শ নিয়ে, সিচুয়েশন বুঝে তবেই কোনও ডিসিশনে আসা উচিত।

টিনএজারদের শেখানো দরকার নিজেদের লাইফকে কনট্রোল কীভাবে তারা করতে পারবে। কনট্রোল করা মানেই কিন্তু ইচ্ছেমতন স্বাধীনতার অপব্যবহার করা নয়। বরং বলা যেতে পারে কতটা সুদক্ষতার সঙ্গে তারা নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারছে স্বাধীনভাবে এবং সুযোগের সঙ্গে নিজেদের স্বপ্নপূরণ করতে পারছে, তারই চয়েস টিনএজারদের সামনে খোলা রাখা। মা-বাবার মনের ইচ্ছেটাও সন্তানের কাছে পরিষ্কার থাকা উচিত।

সন্তানের বয়ঃসন্ধিক্ষণের সময়টা অভিভাবকের কাছেও একটা পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া। এটা সহজ নয়। অতিরিক্ত শাসন যেমন চলবে না তেমনি অতিমাত্রায় স্বাধীনতা দেওয়াও শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে এই বয়সের ছেলেমেয়েরা জীবনকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই চাইলে তাদেরকে বোঝানো যেতে পারে যে অ্যাম্বিশন এবং কঠিন পরিশ্রম জীবনকে সুরক্ষিত করে তুলতে পারে এবং জীবনের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল নিয়ে আসতে পারবে।

মন পরিবর্তন করার সুযোগ যেন পায় এই বয়সের বাচ্চারা। বাবা, মায়েরা পুরোনো প্রতিষ্ঠিত পেশায় বিশ্বাসী যেখানে এখন নতুন নতুন বহু ধরনের পেশা বেছে নেওয়ার সুযোগ এযুগের ছেলেমেয়েদের রয়েছে। কেউ হয়তো এমনই কোনও পেশায় যেতে আগ্রহী যার সঙ্গে চিরাচরিত ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কোনও যোগ নেই। অভিভাবকদের উচিত সেই ক্ষেত্রে সন্তানের মনোভাব বোঝা এবং তার ইচ্ছেকে সম্মান দেওয়া। পড়াশোনার মাঝে খেলাধুলো অথবা অন্য ধরনের হবি থেকে থাকলে বাধা না দিয়ে শুধু একটু খেয়াল রাখলেই চলবে এগুলির কারণে পড়াশোনার কোনও ক্ষতি হচ্ছে কিনা। ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে ধীরে সুস্থে তাদের বোঝাতে হবে, তারা জীবনকে যেভাবে চালাচ্ছে বা চালাবার ইচ্ছে রাখছে তার পরিণাম ভালো হোক কি খারাপ পুরোটাই ভোগ করতে হবে তাদেরকেই। টিনএজারদের অতিরিক্ত অ্যাকাডেমিকস্-এর জন্যে পুশ করাটা আজকাল স্ট্রেসের একটা প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্ট্রেস কিন্তু উভয়পক্ষেরই রয়েছে সে বড়োই হোক কি ছোটো, সুতরাং কোনও পুরোনো অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে ব্রুড না করে এবং ছোটোদের এতে সামিল না করে সুখের, আনন্দের ঘটনাগুলি মনে করুন। ছোটোদের সঙ্গে শেয়ারও করুন। দুঃখের ঘটনা, স্মৃতি বারবার রোমন্থন করে লাভ কী? আপনি কষ্টের সময়টা, দুঃখ, বেদনার মধ্যে দিয়ে ইতিমধ্যেই পেরিয়ে এসেছেন। ছোটোদের সঙ্গে হাসি ঠাট্টায় মাতুন, নিজেদের মধ্যের সম্পর্কটাকে সহজ রাখুন যাতে ছোটোরা নিজেদের ব্যথা আপনার বুকে মাথা রেখে ভুলতে পারে। তাদেরকে বোঝান বিপদের দিনে আপনি তাদের পাশে আছেন। আপনি সন্তানদের ভালোবাসেন, তাদের জন্যে কেয়ার করেন। তাদের প্রয়োজনটা আপনার জীবনে কতখানি মূল্যবান সেটা জানাতে দ্বিধা হওয়া উচিত নয়।

বয়ঃসন্ধির সময়টা বাচ্চারা পেরিয়ে গেলে অনেকটা নিশ্চিন্ত বোধ করতে পারেন অভিভাবকেরা। পূর্ণতার ছোঁয়ায় কৈশোরের অনিশ্চয়তার ঘোর তখন কেটে যায়। পৃথিবীর মাটিটা তখন অনেক শক্ত তাদের কাছে। দৃঢ়তার সঙ্গে পদক্ষেপ ফেলতে তারা তখন প্রস্তুত।

বর্ষায় সঙ্গী হোক ফ্যাশনেবল ছাতা

আকাশে মেঘ জমেছে, বৃষ্টি হতে পারে। মাথার উপর ছাতা না ধরলে ভিজে যেতে পারেন। ভিজে গেলে সৌন্দর্য নষ্ট হবে, ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি, জ্বরও হতে পারে। তাই হাতে রাখা চাই ছাতা। শুধু কালো ছাতা নয়, ছাতা হোক বর্ণময়। ছাতা হোক আপনার রুচি এবং সৌন্দর্যের বাহক। শোভিত হোক পথ এবং পথিক।

এই প্রজন্মের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ছাতা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি বাজারে এনেছে নানারকম গুণমানের বাহারি ছাতা। অনেকে হয়তো জানেনই না, কেমন সেই ছাতা, কী তার বৈচিত্র্য?

সিম্পল প্লেইন কালার্ড ছাতাঃ  আপনার ড্রেস-এর সঙ্গে ম্যাচিং করে কিনুন এই ছাতা। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, গোলাপি প্রভৃতি রং-এর এই সব ছাতা আপনার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলবে।

ইউ হ্যান্ডেল-এর লম্বা দণ্ডযুক্ত ছাতাঃ  শুধু বর্ষায় নয়, যে-কোনও ঋতুতেই এই ছাতা ব্যবহার করা যায়। এই ছাতা আপনার ব্যক্তিত্ব বাড়িয়ে তুলবে। এক কাঁধে এই ছাতা নিয়ে অন্য কাঁধে ব্যাগ রেখে ধীর পায়ে হেঁটে গেলে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই।

লেসযুক্ত ছাতাঃ  কালারফুল স্কার্ট কিংবা প্রিন্টেড সালোয়ার-এর সঙ্গে দারুণ মানাবে লেসযুক্ত ছাতা। এই ছাতা যেমন নানারকম উজ্জ্বল রং-এর হয়, ঠিক তেমনই সুন্দর ঝালর দিয়ে সাজানো থাকে। চলার সময় এই ঝালর দুলতে থাকলে আপনার চলায় একটা ছন্দ যোগ হবে।

স্কেলোপ্ড ছাতাঃ  গোল কিন্তু প্রতিটি খাঁজ ইউ-শেপ-এর এবং ছোটো ঝালরযুক্ত এই ছাতা। কলেজ-পড়ুয়াদের এই ছাতা ভীষণ মানানসই হবে।

ডবল অথবা ট্রিপল ফ্রিল গিগি ছাতাঃ  প্রিন্টেড কিংবা প্লেইন, ডবল কিংবা ট্রিপল ফ্রিল গিগি ছাতা ওয়েস্টার্ন ড্রেস-এর সঙ্গে দারুণ মানাবে।

ক্লাউড এবং রেইনড্রপ ছাতাঃ  ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে আর আপনি যে-ছাতা মাথার উপর রেখে হেঁটে চলেছেন, সেই ছাতার ওপরে যদি মেঘ কিংবা বৃষ্টির অসংখ্য ফোঁটার নকশা শোভিত হয়, তাহলে ব্যাপারটা জমে যাবে। নিমেষে মনটা রোমান্টিক হয়ে উঠবে আর না ভিজেও বৃষ্টির আমেজ অনুভব করবেন সারা গায়ে।

ডেজি ফুললেন্থ ছাতাঃ  ডেজি ফুল মাথায় থাকলে ঠিক যেমন সুন্দর লাগবে আপনাকে, ঠিক তেমনই ডেজি ফুললেন্থ ছাতাও আপনার সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলবে। লাল, নীল, হলুদ সবরকম রং-এ পাওয়া যায় এই ছাতা।

সানফ্লাওয়ার ব্লুম ফুললেন্থ ছাতাঃ  সবুজ রং-এর পোশাকের সঙ্গে সানফ্লাওয়ার ব্লুম ফুললেন্থ ছাতা ব্যবহার করলে মনে হবে, সত্যিই বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যাচ্ছে একটি সূর্যমুখী ফুল।

অ্যাসফল্ট ছাতাঃ  ঘনবৃষ্টির ধারার সঙ্গে অ্যাসফল্ট ছাতা দারুণ জমবে। কিনে আনুন অ্যাসফল্ট ছাতা আর প্রেমিকের সঙ্গে উপভোগ করুন বৃষ্টির আমেজ। বৃষ্টিতে রোমান্স করার জন্য অ্যাসফল্ট-এর জুড়ি নেই।

নিউব্রেলা ছাতাঃ  জিনিসপত্র হাতে থাকলে বৃষ্টির মধ্যে হাঁটতে অনেকসময় অসুবিধা হয়। কিন্তু নিউব্রেলা ছাতা কিনলেই সমস্যামুক্তি। এই ছাতা হাতে ধরার প্রয়োজন হয় না, কাঁধে সেঁটে থাকে। অতএব আর কোনও চিন্তা নেই, জিনিসপত্র হাতে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে পথ চলুন নিশ্চিন্তে।

তলোয়ার ছাতাঃ  তলোয়ার ছাতার হ্যান্ডল ঠিক তলোয়ারের শেপ-এর মতো হয়। এটা লম্বা এবং স্ট্যান্ডিং ছাতা। বন্ধ করার পর হাতে ধরলে তলোয়ারের মতো মনে হবে।

গার্ডেন আমব্রেলাঃ  কোনও পিকনিক পার্টিতে রোদবৃষ্টি থেকে বাঁচতে কিংবা খাবার জিনিস ইত্যাদি ঢাকতে ব্যবহার করা হয় গার্ডেন আমব্রেলা। এই ছাতা আকার-আকৃতিতে বড়ো হওয়ার কারণে একসঙ্গে অনেক লোক আশ্রয় নিতে পারে এই ছাতার নীচে। অনেকরকম রং-এ পাওয়া যায় এই মজবুত ছাতা।

পকেট ছাতাঃ  এই পকেট ছাতা হাতে রাখলে চট করে কেউ বুঝতেই পারবে না ছাতা নাকি অন্যকিছু। শুধু একটা বোতাম টিপলেই খুলে যাবে স্বাভাবিক মাপের ছাতা এবং লোকে অবাক হবে। এই ছাতা বৃষ্টিতে বাসে-ট্রামে বহন করতে কিংবা কোথাও রাখতে সুবিধে।

টিউবলাইট ছাতাঃ  এটা খুবই মজাদার ছাতা। বর্ষাকালে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে যখন অন্ধকার রাস্তায় হাঁটতে অসুবিধা হয় এবং বিপদের ঝুঁকি নিতে হয়, তখন আপনাকে বাঁচাবে টিউবলাইট ছাতা। শুধু একটা বোতাম টিপলে যখন খুশি জ্বালাতে পারবেন এই ছাতায় যুক্ত থাকা ছোট্ট টিউবলাইট-এর মতো আলো। রাস্তায় চলার সময় লোকজন বেশ অবাক হয়ে তাকাবে আপনার ছাতার দিকে।

বাচ্চা মা-বাবার সঙ্গে শোবে নাকি একলা?

একটু একটু করে বড়ো হয়ে উঠতে থাকা সন্তানকে নিজেদের সঙ্গে শোওয়াবে নাকি আলাদা শোবে বাচ্চা– এই চিন্তা প্রত্যেক মা-বাবার কাছেই একটি জটিল সমস্যা। আপাতভাবে এটাকে সমস্যা মনে না হলেও এটা সত্যি করেই একটা ভাবার বিষয়। এখন বেশিরভাগই বড়ো বড়ো শহরে এক কিংবা দুই কামরার ফ্ল্যাটে জীবন কেটে যায়। তাই সন্তানের লালনপালনে প্রত্যেক অভিভাবকদেরই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় যে তারা তাদের সন্তানকে আলাদা শুতে দেবেন নাকি নিজেদের সঙ্গে রাখবেন। কোনটা তাদের সন্তানের জন্য মঙ্গলদায়ক?

মনোবিদরা কী বলেন?

মনোবিদ শ্রীতমা ঘোষের মতে, সমস্ত কিছুরই যেমন ভালো এবং খারাপ দুটি দিক আছে, এক্ষেত্রেও তাই। শিশু অবস্থা থেকে একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত শিশুর, মা-কে ভীষণরকম প্রয়োজন হয়। সেটা প্রকৃতিগতভাবে নির্ভরতার কারণেই। মায়ের সঙ্গে শুলে একটা সিকিউরিটি বোধ বাচ্চার মধ্যে কাজ করে। মায়ের ছোঁয়ায় বাচ্চা অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। হঠাৎ করে কোনও কারণবশত মায়ের পাশে শুতে না পারলে বাচ্চা নিজেকে ইনসিকিওর মনে করে যেটা বাচ্চার মানসিক গঠনের ক্ষেত্রে কখনওই কাম্য নয়।

সাধারণভাবে মনে করা হয় অন্ততপক্ষে দশ বছর বয়সটাকে বাচ্চার আত্মনির্ভরতার এবং মানসিকভাবে পরিণত হওয়ার বেঞ্চমার্ক। সেসময় থেকেই তারা নিজেদের একটা স্পেসের বা নিজস্ব গোপনীয়তার একটা জায়গার প্রয়োজনবোধ করতে শুরু করে। তবে যেহেতু এযুগে বাচ্চা বেশ দ্রুত মানসিকভাবে পরিণত হয়ে উঠছে তাই দশ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা না করে তাকে আট বছর বয়স থেকেই একটা প্রাইভেট স্পেস দেওয়া উচিত।

সন্তান এবং মা উভয়ের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখে

প্রথম থেকেই বাচ্চাকে একা শোয়াবার অভ্যাস করানোই বাঞ্ছনীয়। এতে অনেক লাভ আছে। বাচ্চা আলাদা শুলে মায়ের স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। রাত্রে বাচ্চার জন্য উঠতে হলেও মা আরামে শুতে পারেন। বাচ্চাও নিজের মতো করে পুরো বিছানা জুড়ে এপাশ-ওপাশ করার সুযোগ পায়। সীমিত জায়গায় তাকে থাকতে হয় না। এর ফলে দু’জনের স্বাস্থ্যই ভালো থাকে। ডাক্তারের কাছে দৌড়োদৌড়ির পরিস্থিতি তৈরি হয় না।

শিশু অবস্থায় মায়ের স্পর্শ

অনেক ঘটনা এমনও ঘটে থাকে যে গভীর ঘুমের মধ্যে মায়ের সামান্য অসাবধানতায় পাশে শোয়া সদ্যোজাত সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। শিশুর জন্মের পর মায়ের জন্য ঘুমটা খুবই জরুরি। বাচ্চা যদি আলাদা শোয় তবেই সেটা সম্ভব। সারাদিন বাচ্চার এবং সংসারের কাজ সামলাবার পর সুস্থ্য থাকতে হলে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোনো খুব দরকার। এক্ষেত্রে মায়ের সঙ্গে বাবারও উচিত দায়িত্বটা ভাগ করে নেওয়া। তার জন্য অবশ্য তাকে কট-এ শোওয়ানো যেতে পারে। কিন্তু ভুললে চলবে না, সদ্যোজাতদের মায়ের শরীরের স্বাভাবিক উষ্ণতার প্রয়োজন রয়েছে, সেটা মায়ের সঙ্গে শুলেই সে পেতে পারে। বারে বারে বাচ্চার ভিজে বিছানাও বদলাবার দরকার পড়ে। সন্তানকে পাশে নিয়ে শুলে সহজেই মা বুঝতে পারেন বাচ্চা বিছানা ভিজিয়ে ফেললে এবং সঙ্গে সঙ্গে সেটা বদলেও দিতে পারেন। এছাড়াও রাত্রে সদ্যোজাত শিশুর বারবার ক্ষিদে পায় তাই মা পাশে শুলে সহজেই বুঝতে পারেন সন্তানের ক্ষিদে পেয়েছে এবং তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থাও নিতে পারেন।

বেড়ে ওঠা শিশুর অভ্যাসে পরিবর্তন

অনেক মায়েরাই ৭-৮ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের নিজের সঙ্গে শোয়ান। বাড়িতে সব থেকে ছোটো যে সন্তান তাকে অথবা একমাত্র সন্তানকে অতিরিক্ত আদর দেওয়ার বাহানায় ১২-১৩ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চারা মায়ের ইচ্ছেতেই বড়োদের সঙ্গে শুতে থাকে। কিন্তু এই বয়সি বাচ্চাদের একসঙ্গে নিয়ে শোয়া মা এবং বাচ্চা উভয়ের জন্যই ক্ষতিকারক।

বাচ্চার যখন ৮-৯ বছর বয়স হবে তখন নিজের ঘর থেকে অন্য ঘরে আলাদা করে বাচ্চার শোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। অবশ্য সেই ক্ষেত্রে মায়ের সঙ্গে পাশাপাশি ঘর হলেই ভালো হয়। এইভাবে বাচ্চার একা শোয়ার ভয়টাও কেটে যাবে ফলে বড়ো হয়ে বাড়ির বাইরে কোথাও গিয়ে থাকতে হলে সেখানে আর অসুবিধা হবে না।

ওদের স্পেস দিন

বাচ্চার জন্য আলাদা শোয়ার ঘরের ব্যবস্থা করার সঙ্গে সঙ্গে তার পছন্দমতো ঘরটিকেও সাজিয়ে তুলুন যেখানে সে নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে করবে না। তার ঘরের মধ্যেই পড়াশোনা করার জন্য চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা রাখুন। রঙিন সুন্দর ছবি দিয়ে দেয়াল ভরিয়ে তুলুন। যদি আপনার সন্তান কাউকে হিরো ওয়ারশিপ করে তাহলে তাকেও বলতে পারেন পছন্দের ব্যক্তিটির পোস্টার জোগাড় করে দেয়ালে টাঙাতে। রাত্রে যাতে ঘর সম্পূর্ণ অন্ধকার না হয়ে যায় তারজন্য হালকা পাওয়ারের নৈশবাল্বের ব্যবস্থা রাখুন ঘরে। ঘরটি সম্পূর্ণ বাচ্চার হাতে ছেড়ে দিন এবং ওকে নিশ্চিন্ত করুন যে আপনি কোনও ভাবেই ওর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবেন না।

মা এবং বাচ্চার ঘরের মধ্যে যদি কোনও দরজা থাকে তাহলে রাত্রে দরজা খোলা রাখবেন এবং দরজায় পর্দা দিয়ে রাখবেন। দরজা বন্ধ করে দিলে বাচ্চার মনে নেগেটিভ চিন্তা আসতে পারে যার ফলে মায়ের সঙ্গে বাচ্চার মনের দূরত্ব বাড়তে পারে। এমনও মাঝেমধ্যে দেখা যায় লুকিয়ে লুকিয়ে বাচ্চারা, মা কী করছে দেখার চেষ্টা করে।

যদি শোওয়ার জন্য একটাই ঘর থাকে তাহলে অস্থায়ী বিভাজন করে দুটো আলাদা শয্যা রাখা যেতে পারে। একটা দিকে স্বামী-স্ত্রী এবং অপর দিকে সন্তানের থাকার ব্যবস্থা হতে পারে। এখন নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগ সুতরাং এক বা দুটির বেশি সন্তান খুব কম পরিবারেই হয়। সুতরাং একটি ঘরে বাচ্চাকে আলাদা শোয়ানো অসম্ভব নয়।

সম্পর্কের মাধুর্যের জন্য প্রয়োজন

প্রয়োজন অনুসারে স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকলে পুরুষ-নারী উভয়ের মনেই শান্তি বিরাজ করে এবং দৈহিক পরিশ্রম করারও ক্ষমতা বাড়ে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বামীদের মধ্যে স্ত্রীর সঙ্গসুখ পাওয়ার চাহিদা বাড়তে থাকে। সেইসময় ইচ্ছাপূরণ না হলে পুরুষরা বদমেজাজি হয়ে পড়ে, কথায় কথায় ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। এর প্রভাব স্ত্রী এবং উঠতি বয়সি সন্তানের উপর এসে পড়ে। মাঝেমধ্যে পুরো পরিবারের সুখশান্তি এর জন্য নষ্ট হয়ে যায়।

অনেক স্ত্রীয়েরাই মনে করেন বাচ্চা বড়ো হয়ে গেলে স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক রাখা অন্যায়। কিন্তু এই চিন্তা ভুল। বাচ্চারা বড়ো হয়ে যাওয়া মানে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়া নয়। সুতরাং সঠিক সময়ে বাচ্চাকে আলাদা শোয়াবার ব্যবস্থা করুন। এতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাধুর্য বজায় থাকবে এবং বাচ্চার মধ্যেও কোনও ভুল ধারণা লালিত হবে না।

সন্তানকে করে তুলুন দায়িত্বশীল

অনন্যার দুটি সন্তান। দুই মেয়ে। রিয়ার যখন ১১ বছর বয়স তখন রিমার জন্ম। এত বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হওয়াতে অনন্যা একটু অসুবিধার মুখেই পড়ে। তবুও স্কুলের চাকরি বলে সামান্য স্বস্তি ছিল অনন্যার। মেয়ের ২ বছর মতো বয়স হওয়ার পর অনন্যা নিজের কিছুটা সুবিধা হবে বলে রিয়াকেও রিমার কিছুটা দায়িত্ব দেবে বলে মনে করেছিল।

বিশেষ কিছুই নয়, মাঝেমধ্যে দোকানবাজার করে বাড়ি ফিরতে অনন্যার অল্পস্বল্প দেরি হয়ে যেত। বাচ্চার দেখাশোনার জন্য যে হেল্পিং হ্যান্ড ছিল সে সন্ধে ছটার পর কিছুতেই থাকতে রাজি হচ্ছিল না। অনন্যা চাইছিল, রিয়া যেহেতু একটু বড়ো হয়ে গেছে, আধঘণ্টা মতো যদি ও ছোটো বোনকে একটু সঙ্গ দিতে পারে তাহলে অনন্যাকে তাড়াহুড়ো করে বাজার নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় না। ওর হাতেও একটু সময় থাকে।

এই কথা রিয়াকে বলতে প্রথমে ও কিছুতেই রাজি হয় না বোনকে দেখতে। পড়াশোনার ক্ষতি হবে এই আছিলায় দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চায়। শেষে অনেক বোঝাবার পর অনন্যা রিয়াকে রাজি করাতে পারে। তাও এই দায়িত্ব নেওয়ার বদলে অনন্যাকেও প্রমিস করতে হয় রিয়ার পছন্দের জিনিস কিনে এনে দেবে।

তিন-চার দিন ঠিকঠাক চলার পর একদিন বাড়ি এসে অনন্যা দেখে রিমা একা একা ঘরে বসে খেলা করছে। বাইরের দরজা ভেজানো, রিয়া আশেপাশে কোথাও নেই। প্রায় পঁচিশ মিনিট পর রিয়া বাড়ি ঢুকতে অনন্যা জানতে পারে, ওদের বাড়ির পর ছটা বাড়ি ছেড়ে স্কুলের বন্ধুর বাড়ি থেকে দুটো গল্পের বই কালেক্ট করার জন্য রিয়া বোনকে একা বাড়িতে রেখে চলে গিয়েছিল। পরে কেন যাওয়া গেল না এই প্রশ্নের উত্তরে রিয়া পরিষ্কার মা-কে জানিয়ে দিল ওর পর গেলে বন্ধুকে বাড়িতে পেত না আর বইটা ওর তক্ষুনি দরকার ছিল। এরপর অনন্যা আর, রিয়ার উপর ভরসা করার সাহস করতে পারেনি।

১৬ বছর বয়সি কুনালকে যখনই বাড়ির কোনও কাজ করতে বলা হয়, যেমন দোকান-বাজার থেকে কিছু এনে দেওয়া অথবা ইলেকট্রিক বিলের টাকাটা জমা করে আসা ইত্যাদি, তখনই কোনও না কোনও কারণ দেখিয়ে ও কাজটা করতে অস্বীকার করে।

এই রকম ঘটনা শুধু যে অনন্যা বা কুনালের বাড়িতেই ঘটেছে, এমন নয়। ঘর ঘর কি কাহানি এটা। এই সমস্যা সব বাড়িতেই বেশি-কম আছে। আসল কথা এখনকার জেনারেশন কোনওরকম দায়িত্ব নিতে চায় না। জীবনের চলার পথে দায়িত্ব এসে পড়লেই সেটা থেকে তারা পালিয়ে যেতে চায়। ধীরে ধীরে এই ব্যবহারেই তারা অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। প্রথমে মা-বাবার, তারপর অফিসের এবং বৃহত্তর ক্ষেত্রে অর্থাৎ সমাজের দায়িত্ব থেকে তারা নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে। এই সমস্যা দূর করতে হলে দরকার ছোটো থেকেই বাচ্চাদের মধ্যে দায়িত্ব নেওয়ার অভ্যাস তৈরি করা।

আজকাল নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির দৌলতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে গোনাগুনতি। সন্তান সংখ্যা এক অথবা দুই। সুতরাং মা-বাবারাও প্রয়োজনের বেশি বাচ্চাদের প্যাম্পার করছেন। নিজেদের অসুবিধা করেও বাচ্চাদের পছন্দের জিনিস তাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন।

৪-৫ বছর বয়স থেকে আশেপাশের সবকিছু, বাচ্চারা লক্ষ্য করতে শুরু করে। মা-বাবা, বাড়ির লোকেদের কথা বলার স্টাইল, ওদের ব্যবহার, ভাষা সবকিছুই বাচ্চারা কপি করার চেষ্টা করে। তাই বাচ্চারা ওই বয়সে পৌঁছোবার আগেই মা-বাবার উচিত নিজেদের ব্যবহার শোধরানো যাতে বড়োদের দেখে বাচ্চাদের ব্যবহার খারাপ না হয়।

এই সম্পর্কে কয়েকটা টিপ্স কাজে লাগানো যেতে পারে।

  • বাচ্চারা স্কুলে যেতে আরম্ভ করলে ওদের ওপর ধীরে ধীরে কিছুটা করে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত। যেমন নিজের বই-খাতা ঠিক করে গুছিয়ে একটা জায়গায় রাখা, এদিক-ওদিক কোনও জিনিস ফেলে না রাখা, ক্লাসে যা যা পড়ানো হচ্ছে সব ঠিক করে নোট করে নেওয়া ইত্যাদি। বাচ্চা যদি সেটা না করে তাহলে কাছে বসিয়ে তাকে ধীরে ধীরে বোঝানো দরকার।
  •  টিন এজে পৌঁছোবার পর বাচ্চাদের মধ্যে শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক পরিবর্তনও হতে থাকে। মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন এসে জমা হয়। মা-বাবার উচিত সন্তানকে কাছে বসিয়ে সেগুলির সমাধান করা। সন্তানের সব প্রশ্নকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কোনও প্রশ্নকেই অর্থহীন বলে এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। ওই বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে সম্মানবোধ খুবই তীব্র হয়। যদি তাদের মনে হয় বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে শেয়ার করা মানে তাদের সম্মান ক্ষুণ্ণ হওয়ার ভয় রয়েছে, তাহলে কোনও কিছুই আর তারা বাড়িতে সকলের সঙ্গে শেয়ার করতে চাইবে না। বন্ধুত্বের সম্পর্ক বহাল রাখার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের কাছে তাদের সীমারেখাটাও পরিষ্কার হওয়া উচিত। বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের নিজেদের জিনিসের সঙ্গে অপরের জিনিসের এবং অপরের ভালো লাগা-খারাপ লাগারও খেয়াল রাখতে শেখানো উচিত। বাড়ির কিছু কিছু সহজ কাজের দায়িত্বভার সঁপে দিয়ে তাদেরকে বেশি করে দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন করে তোলা বাঞ্ছনীয়।

বাচ্চাদের দায়িত্ব দিতে হলে মা-বাবাকেও যথেষ্ট দায়িত্বভার বহন করতে হবে। অনেক সময় টিন এজার্স খারাপ সঙ্গে পড়ে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। মা-বাবার উচিত সবসময় বাচ্চার খেয়াল রাখা যাতে সামান্য অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে সন্তানকে শুধরে দেওয়া হয়।

টিন এজার্স-দের দায়িত্বের সঙ্গে পরিচয় করানোটা খুব সহজ নয়। সবকিছুর জন্যই ওরা তর্ক করতে প্রস্তুত থাকে। কিন্তু বড়োদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে যাতে বড়ো হয়ে তাদের সন্তানরা ভালো নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। তাই ছোটো থেকেই দায়িত্ব নেওয়ার অভ্যাস বাচ্চাদের মধ্যে গড়ে তোলা দরকার। প্রয়োজন পড়লে ইমোশনকেও কাজে লাগানো যায়। এত কিছুর পরেও যদি মনে হয় সন্তানকে ঠিকমতো সঠিক পথে চালিত করা যাচ্ছে না– তাহলে অবশ্যই এক্সপার্ট-এর সাহায্য নেওয়া উচিত।

সবুজে সাজান গৃহস্থালি

আপনার বাড়িটি যতই দামি দামি আসবাব দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখুন, একটু সবুজের ছোঁয়া ছাড়া সব যেন কেমন রুক্ষ লাগে। তাই অন্দরসাজ-কে আকর্ষনীয় করে তুলতে প্রয়োজন কিছু ইন্ডোর প্ল্যান্টস্।

আসলে গাছপালা শুধু সাজানোর কাজেই লাগে না– এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়ে মানুষের মনে। ঘরে অক্সিজেনের যোগান সঠিক মাত্রায় থাকলে মনে প্রশান্তি আসে। মনে আনন্দের অনুভূতি হয়। তাই ড্রয়িংরুম বা বেডরুম সাজানোর সময় অবশ্যই ইন্ডোর প্ল্যান্টস রাখার বিষয়টি মাথায় রাখুন।

ইন্ডোর প্ল্যান্টস্-এর নির্বাচন

ইন্ডোর প্ল্যান্টস্ কেনার সময় সেই ধরনের গাছ নির্বাচন করুন যা সারাবছর সবুজ থাকবে। যেমন মনিপ্ল্যান্ট, ব্যাম্বু বা পাম। এগুলি চিরহরিৎ প্রজাতির গাছ এবং বেশি তদারক করারও দরকার পড়ে না। ঘরের আয়তন অনুযায়ী গাছের ভ্যারাইটি ও উচ্চতা নির্বাচন করুন। যদি ঘরের বদলে ব্যালকনিতে গাছ রাখেন, তাহলে ডিজাইনার পট্স কিনে আনুন। জাপানিজ বা চাইনিজ গার্ডেন করার জন্য নির্বাচন করুন ক্যানাডিয়ান হেমলক, সিডার, কোস্টাল রেডউড, হিমালয়ান হোয়াইট পাইন, জাপানিজ ব্ল্যাক পাইন। ঝুলিয়ে রাখা টবে রাখুন জেড, বাটন ক্যাকটাস প্রভৃতি। সিঁড়িতেও গাছের টব রাখতে পারেন। এতে ঘরের বাইরের চেহারাটাও বদলে যাবে।

আজকাল মাটির গামলা ছাড়াও সেরামিকের সুন্দর সুন্দর পট পাওয়া যায়। সুন্দর নকশা আঁকা পট-এ গাছ রাখলে, এর নান্দনিকতা বহু গুন বেড়ে যায়। চাইলে টেরাকোটা বা পেতলের টবও বাছতে পারেন। সবটাই নির্ভর করছে আপনার ঘরের ডেকর-এর সঙ্গে কী ধরনের শেড এবং মেটেরিয়াল মানানসই হবে– তার উপর।

lifestyle article
Decorated home by green

আর্টিফিশিয়াল ফাউন্টেন

আজকাল ড্রয়িংরুমে আর্টিফিশিয়াল ফাউন্টেন তৈরি করাও বেশ জনপ্রিয়। ঘরের একটা কোণায় মানিপ্ল্যান্ট বা পাতাবাহার, নুড়ি দিয়ে সাজিয়ে আর্টিফিশিয়াল ফাউন্টেন বসিয়ে ডেকোরেট করতে পারেন। কেউ কেউ ড্রয়িংরুমে আর্টিফিশিয়াল গ্রাস কারপেটও লাগাচ্ছেন ঘরে সবুজের ছোঁয়া দিতে।

ইন্ডোর প্ল্যান্টস কেন?

ইন্ডোর প্ল্যান্টস্ ঘরের শোভা বর্ধনের পাশাপাশি, ঘরের বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে। ঘরে উপস্থিত কার্বন ডাই -অক্সাইডকে শুষে নিয়ে, বিশুদ্ধ অক্সিজেন দেয়। ঘরের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। মানিপ্ল্যান্ট, ফার্ন, পাম, বনসাই প্রভৃতি ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। নানা গাছের বনসাই এখন কিনতে পাওয়া যায়। টেবিলে রাখা বনসাইটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। চাইলে চাইনিজ ব্যাম্বু দিয়েও ঘর সাজাতে পারেন। এই অনুচ্চ গাছগুলি ঘরের সবুজায়নে যেমন সহায়ক, তেমন বেশি যত্নেরও প্রয়োজন পড়ে না। স্টাডি ডেস্ক বা বেডরুমের একটি কোণায় অনায়াসে রাখা যায় এই গাছ। কিচেন-এ গাছ রাখলে, রান্নাঘরের ভ্যাপসাভাব থেকে অনেকটাই মুক্ত হতে পারবেন। কিচেনের জানালায় ক্রিপার রাখুন বা একটি সুন্দর কোণ দেখে পাতাবাহারের টব। গাছ লাগানোর জন্য বর্ষাকালই আদর্শ। তবে একটু যত্ন নেবেন, যাতে অতিরিক্ত জল বা তাপ কোনওটির দ্বারাই গাছ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

মরশুমি গাছ নয়

ইন্টিরিয়র সাজানোর জন্য কিনবেন না মরশুমি গাছ। কারণ একটাই– এগুলি সারা বছর থাকবে না। ফাইবস্ পাম, ফিনিক্স পাম, ইউনিপ্রাস, জুকা, লোলিনা, ইউফোর্বিয়া, মিলি, বোগেনভিলিয়া, গসফ্রিং, সানফ্লাওয়ার, গিনি কোশিয়া, পর্তুলকা, ওরসকম, ভিনকা মেরিগোল্ড বা ব্লসম-এর মতো গাছ নির্বাচন করুন, কারণ প্রচণ্ড গরমেও এগুলির উপর তেমন প্রভাব পড়বে না।

গাছের যত্নআত্তি

ইন্ডোর প্ল্যান্ট্স-এর দেখাশোনা করার জন্য অবশ্যই কোনও নার্সারি এক্সপার্ট-এর পরামর্শ নিন। ভালো সার, প্রয়োজনমতো জল আর সময়ে সময়ে পাতা ছেঁটে দেওয়ার পরিচর্যা জরুরি।

ঘর রাখুন ফ্রেশ ফ্রেশ

ইন্টিরিয়র-এর লুক্স বদলানোর প্রয়োজন হলেই, অনেকে ভাবেন বিষয়টা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। তা কিন্তু একেবারেই নয়। একটু বুদ্ধিমত্তা আর আপনার নান্দনিক বোধ– দুইয়ে মিলে আপনিই ভোল বদলে ফেলতে পারেন ঘরের অভ্যন্তরের। স্বল্প পরিসরে আজকাল বেশিরভাগ মানুষকেই মানিয়ে নিতে হয়। কিন্তু ছোটো ফ্ল্যাটও যদি সুন্দর করে সাজানো যায়, তাহলে আপনার বাসস্থানটি অচিরেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।

ঘরের পেইন্ট-এর তো একটা ভূমিকা আছেই। রং ঘরকে মোহময় করে তোলে। সেই সঙ্গে রুচিশীল জিনিস দিয়ে ঘর সাজিয়ে তোলাও জরুরি। জিনিসপত্র দিয়ে সাজানোর আগে, আসবাবগুলির স্থান পরিবর্তন করুন। এতেও বেশ খানিকটা তারতম্য ঘটবে দৃশ্যপটে।

ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে এখন ফিউশন লুক খুব ইন। অর্থাৎ ট্র্যাডিশনাল অ্যান্টিক জিনিসপত্রের সঙ্গে আধুনিক ক্রিস্টালও অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। মুম্বইয়ের নামি ইন্টিরিয়র ডিজাইনার সোনালি মোহাদিকার, গৃহশোভার সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে বললেন, আজকাল অন্দরসজ্জার তিন রকম ট্রেন্ড চলছে। ড্রাই ডেকোরেশন, ইকো-ফ্রেন্ডলি ডেকোরেশন ও থিম ডেকোরেশন।

ড্রাই ডেকোরেশন

এই ডেকোরেশনের জন্য লাগে ড্রাই ফ্লাওয়ার্স, ব্যাম্বু প্ল্যান্টস্, স্টোন, ডেকোরেটিভ শো-পিস প্রভৃতি। এগুলি আপনি নিজেই সাজাতে পারবেন, কোনও প্রফেশনাল হেল্প লাগবে না।

ইকো-ফ্রেন্ডলি ডেকোরেশন

এই ডেকোরেশন-এ কাগজ, থার্মোকল, কাচের বোতল, মাটির জিনিসপত্র প্রভৃতি দিয়ে সাজানো হয়। এগুলো সবই পরিবেশবান্ধব জিনিসপত্র। ঘরের আয়তন যদি কিছুটা বড়ো হয়, তাহলে জুটের ওয়াল হ্যাঙ্গিং, ফ্লাওয়ার পট বা নানা ধরনের লাইট দিয়েও ডেকোরেশন করা যায়। নানারকম বাহারি ল্যাম্পশেডস্, সুগন্ধী মোমবাতি, টেরাকোটা পট্স, সেরামিক ভাস প্রভৃতি দিয়ে চমৎকার সাজানো যায় ঘরটিকে।

থিম ডেকোরেশন

ঘরের আসবাবের ধরন বুঝে আজকাল অনেকেই থিম ডেকর-এর দিকে ঝুঁকছেন। এটা অবশ্য শুধু বাসস্থানের ক্ষেত্রেই নয়, অফিস ডেকোরেশন-এর ক্ষেত্রেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। যেমন ঘরের আসবাব যদি অ্যান্টিক ধরনের হয়, তাহলে ঘরের রং থেকে সাজসজ্জায় সেই অ্যান্টিক লুকটাই বজায় রাখা উচিত। কেউ কেউ কালার থিম পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে ঘরে একই ধরনের রঙের সামঞ্জস্য রাখা হয়। আবার সমুদ্রকে যদি থিম করেন, তাহলে ঘরের পেইন্ট এমন হবে, যেন মনে হবে আপনি সমুদ্রতটে বসে আছেন।

ঘর সাজানোর টিপ্স

  •   রো থিম যদি পছন্দ করেন, তাহলে কিচেনের হাতা, খুন্তি, ঝাঁঝরি প্রভৃতি সারি দিয়ে দেয়ালে ঝুলিয়ে ডেকোরেশন করতে পারেন। কালার্ড চামচ বা প্লেটও এভাবে সাজাতে পারেন দেয়ালে।
  •   হ্যান্ডমেড ল্যাম্পশেড-এ রঙিন বাল্ব ঝোলাতে পারেন। ঘরের কোণে স্ট্যান্ডিং ল্যাম্প-ও রাখা যেতে পারে।
  •   কালার থিম যদি আপনার সাজানোর বিষয় হয়ে থাকে, তাহলে রঙিন কাগজের ফুল দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন। ছোটোদের ঘরের জন্য বাছুন চড়া, উজ্জ্বল রঙের ফুল। বেডরুম আর ড্রয়িংরুমের জন্য হালকা রঙের ফুল নির্বাচন করুন।
  •   বেডশিট বা পর্দার রঙেও যেন পেইন্ট-এর শেডের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে।
  •   দেয়ালে সুন্দর পেইন্টিং বা ওয়াল হ্যাঙ্গিং ঝোলাতে ভুলবেন না।
  •   ঘরে অ্যারোমা অয়েল ক্যান্ডেল্স জ্বালিয়ে ঘরের পরিবেশ সুগন্ধী করে তুলতে পারেন, সঙ্গে হালকা মিউজিক। এতে সহজেই শরীরের ক্লান্তি নিবারণ হবে।

ঘর সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখুন। নিয়মিত পেস্ট কন্ট্রোল করান। কার্পেট পরিষ্কার করুন ভ্যাকুম ক্লিনারের সাহায্যে। মাঝেমধ্যে ফার্নিচার অ্যারেঞ্জমেন্ট চেঞ্জ করে অন্দরসাজে পরিবর্তন আনুন।

দূষণ রুখতে ইন্ডোর প্ল্যান্টস

সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে এবং শরীরকে চাঙ্গা রাখতে টানা ঘুম একান্তই দরকার। সুতরাং সারা বাড়িতে শোবার ঘরের আলাদা প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। বাড়ি সাজাবার সময় সকলেই শোবার ঘরের সজ্জায় একটু বিশেষ তদারকি করেন। নরম মোলায়েম পরিষ্কার বিছানা, দেয়ালের রঙের সঙ্গে পর্দার সামঞ্জস্য বজায় রাখা, হালকা স্নিগ্ধ আলোর ব্যবহার, মানানসই আসবাব ইত্যাদি। অথচ এত সু-ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময়ই এত আরামেও নিশ্চিন্ত ঘুম অধরাই থেকে যায়। অনেক সময়েই এর কারণ হয় ঘরের ভিতরের অপরিশুদ্ধ বাতাস।

এখন প্রায় সকলেই ব্যস্ত জীবনযাপনে অভ্যস্ত। সুতরাং ব্যস্ততার স্ট্রেস কমাতে, অবসাদমুক্ত থাকতে এবং নিশ্চিন্ত আরামদায়ক ঘুমের জন্য দরকার শুদ্ধ ও পরিষ্কার বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়া। রাস্তার পলিউশন যাতে বাড়ির ভিতরে ঢুকে না পড়ে এবং বাড়ির ভিতরের বাতাস যাতে দূষণমুক্ত থাকতে পারে তার জন্য বাড়িতে কিছু গাছ রাখা যেতে পারে।

বাথরুম থেকে বেরোনো অ্যামোনিয়া গ্যাস, ডাস্টবিনের ফর্মালডিহাইড গ্যাস, ডিটারজেন্ট-এর বেনজিন, আসবাব থেকে বেরোনো ট্রাইক্লোরোইথিলিন, গ্যাস স্টোভের কার্বন মোনোঅক্সাইড এবং অপরিষ্কার জামাকাপড়ের দুর্গন্ধ ইত্যাদির প্রভাবকে নিষি্্ক্রয় করার জন্য এই ধরনের বিশেষ কিছু গাছ এয়ার পিউরিফায়ার-এর কাজ করে।

আমরা সকলেই জানি গাছ, রাত্রে কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়ে, কিন্তু আমাদের দরকার অক্সিজেন। সূর্যের আলোয় গাছে ফোটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়া চলতে থাকে যার ফলে গাছ, পরিবেশে থাকা কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস টেনে নিয়ে অক্সিজেন ছাড়তে থাকে। কিন্তু রাত্রে এর ঠিক উলটোটাই ঘটে।

কিন্তু বৈজ্ঞানিকদের মতে এমন কিছু গাছগাছড়া রয়েছে যেগুলি সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেও অনেকক্ষণ পর্যন্ত অক্সিজেন ছাড়তে থাকে বাতাসে। বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাব থেকে এই গাছগুলি মানুষকে সুরক্ষা প্রদান করে।

তবে আমাদের, কোন গাছটা কোথায় রাখলে উপকার পাওয়া যাবে, এই জ্ঞানের অভাব আছে। সুতরাং, আসুন জানা যাক কোন গাছগুলি দূষণযুক্ত বাতাসকে প্রভাবিত করে পরিবেশ দূষণমুক্ত করতে সক্ষম।

স্নেক প্লান্টঃ  এই গাছ দিনে রাতে সবসময়ই অক্সিজেন ছাড়তে থাকে বাতাসে। গাছ-গাছড়ার জগতে এই ধরনের প্লান্টকে স্যানসেভিয়েরিয়া ট্রাইফাসিয়াটা নামেই সকলে জানে। যারা বাগান করতে ভালোবাসেন, তারা এটিকে স্নেক প্লান্ট বলেই জানেন। দিনে রাতে অক্সিজেন ছাড়ার ফলে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে দূষণ রোধ করতে সাহায্য করে। বাথরুমে অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাব নিষি্্ক্রয় করতে এই ধরনের গাছ খুবই কার্যকারী। তাছাড়াও মাটিতে অথবা জানালায় এই গাছ রাখলে ডাস্টবিনের দুর্গন্ধও দূর করে এই ধরনের প্লান্ট। বাথরুমে যদি ফুলের সুগন্ধ কেউ চান তাহলে ক্রিসানথেমাম প্লান্ট রাখতে পারেন।

গোল্ডেন পোথোসঃ  বাড়ির ভিতর ছায়াতে অথবা সূর্যের রশ্মির তেজ যে-জায়গায় কম পড়ে সেখানে এই ধরনের চওড়া পাতার (মানি প্লান্ট) প্লান্ট বাতাসে দূষণ রোধ করার ক্ষেত্রে সহায়ক। বাল্ব অথবা টিউবের আলোতেও এই গাছ জীবিত থাকে। বাতাসে প্রচণ্ড পরিমাণ আর্দ্রতাও এর কোনও ক্ষতি করতে পারে না। মস্ স্টিকের সাহায্যে কম জলে এই প্লান্ট বেশি ভালো ভাবে কাজ করে। অ্যালোভেরা প্লান্টের মতোই ডাস্টবিনের দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাসের প্রভাব, এই গোল্ডেন পোরোস প্লান্টও রোধ করতে সাহায্য করে। অন্ধকারে হ্যাংগিং পটেও যদি এই প্ল্যান্ট রেখে দেওয়া যায় তাহলেও এটি এয়ার পিউরিফায়ারের কাজ করবে। সাধারণ দুর্গন্ধের সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস স্টোভ থেকে নির্গত কার্বন মোনোঅক্সাইড গ্যাসকেও এই প্লান্ট দূর করতে সাহায্য করে।

উইপিং ফিগঃ  বাড়ির ভিতর ভারী পর্দা, কার্পেট, আসবাব ইত্যাদি থেকেও গন্ধ নির্গত হয় যা ধীরে ধীরে বাতাসে শুদ্ধতার স্তরকে প্রভাবিত করে। উইপিং ফিগ এই ধরনের গন্ধকে শুদ্ধ করতে সাহায্য করে। অনেক সময় আসবাবপত্র থেকে রঙের একটা গন্ধ আসে। ওয়ারনক ড্র্যাসিনা নামের প্লান্ট এই গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। ঘরের জানালায় রাখা রোডোডেনড্রন সিমসি, প্লাইউড এবং ফোমের গদির গন্ধ শুষে নিয়ে ঘরের বাতাস গন্ধমুক্ত রাখে।

শোবার ঘরের পরদা এবং ড্রাই ক্লিন করা জামাকাপড়ের গন্ধ দূর করার জন্য, গরবেরা ডেজি প্লান্ট খুবই কার্যকরী। কিন্তু এই গাছ রাখতে গেলে খুবই যত্নের প্রয়োজন হয়। অ্যালোভেরা, স্নেক প্লান্টের মতোই রাতেও এই গাছ অক্সিজেন সাপ্লাই করে বাতাসে।

পিস লিলিঃ  বাড়ির ভিতরে সবুজের সমারোহ যাদের পছন্দ, তারা বিভিন্ন ধরনের প্লান্ট দিয়ে ঘর সাজান ঠিকই– তবে অনেকেই চান এর সঙ্গে যোগ হোক সুগন্ধ যা ক্লান্ত মনকে আবেশে ভরে দেবে। বসন্ত ঋতুতে প্রস্ফুটিত সাদা পিস লিলি মনের এই সাধ অনায়াসেই পূরণ করতে পারবে। ছায়াঘেরা জায়গায় সপ্তাহে একবার মাত্র জল পেয়েই এই প্লান্ট বেঁচে থাকতে পারে এবং বাতাসে দূষণ প্রতিরোধ করার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে প্লান্ট-টির। ঘরের ভিতর সাবান, ডিটারজেন্ট-এর গন্ধ, ডাস্টবিনের দুর্গন্ধ সহজেই শুষে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সুতরাং বাড়িতে এয়ার পিউরিফায়ার হিসেবে এর চাহিদা বিপুল।

এছাড়াও ফুলগাছ লাগাতে চাইলে, শোবার ঘরের জানালায় অ্যানথুরিয়াম অ্যানড্রিয়ানাম গোত্রের প্লান্ট-ও রাখা যেতে পারে যেগুলি স্বাভাবিক ভাবে একটু দামি।

রেড এজেড ড্র্যাসিনাঃ  (ম্যাডাগাসকার ড্রাগন ট্রি) এই প্লান্ট বাড়ির ভিতর রাখলে বাতাসে দূষণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

গ্রেপ আইভিঃ  মাঝারি সূর্যের আলো, অল্প জল এবং সামান্য যত্নেই এই প্লান্ট বাতাসকে দূষণমুক্ত রাখতে সক্ষম। সুস্থ গ্রেপ আইভি প্লান্ট যদি বাড়িতে শয়নকক্ষে খাটের পাশে রাখা হয় তাহলে ঘরের বাতাস শুদ্ধ থাকবে। গাছ বাড়তে থাকলে প্রচুর জল দিতে হবে। যাদের ত্বক সংবেদনশীল এবং অ্যালার্জির প্রবণতা আছে, তারা এই গাছ রাখলে উপকার পাবে। এই প্লান্ট অনেক ধরনের গ্যাস নিষি্্ক্রয় করতে সক্ষম।

রান্নাঘরে কার্বন মোনোঅক্সাইড গ্যাস থেকে অথবা বাড়ির বাইরে আগুন জ্বালালে যে-দুর্গন্ধ হয়, তার প্রভাব রোধ করতে রাবার প্লান্ট, ঘরে-বাইরে দু’জায়গায়ই খুব কার্যকরী।

ব্যাম্বু পামঃ  এই প্লান্ট বাড়িতে থাকলে মাকড়সার জাল থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়। এই গাছ অন্দরসজ্জার জন্য সকলের পছন্দ ঠিকই কিন্তু ঘরের ভিতরের আর্দ্রতা শোষণ করার ক্ষমতা রয়েছে এদের। তাই যেখানে সোজাসুজি রোদ্দুর পড়ে, সেখানে এই গাছ না রাখাই ভালো। রান্নাঘর, ডাস্টবিন এমনকী সাবানের গন্ধও এই গাছ শুষে নিতে পারে।

বাড়িতে যদি লম্বা বারান্দা থাকে, তাহলে বাতাসে সুগন্ধ ছড়াবার জন্য ল্যাভেন্ডার প্লান্ট রাখা যেতে পারে।

স্পাইডার প্লান্টঃ  টবে রেখে ঘরের ভিতর এই গাছ রাখলে জঞ্জালের গন্ধ দূর করবে সঙ্গে ঘরের বাতাসকেও দূষণমুক্ত রাখবে। প্রত্যেকটি এয়ার পিউরিফায়ার প্লান্ট যেমন অন্দরসজ্জার কাজে লাগে, তেমনি পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতেও সাহায্য করে।

মনে লাগুক অ্যারোমা টাচ

আমরা বেশিটাই বাঁচি মনে-মনে। তাই মন ভালো রাখার দায়িত্বও নিতে হবে নিজেকেই। এরজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল– গন্ধ এবং বর্ণ। অর্থাৎ,যা-কিছু দৃশ্যমান, তা দৃষ্টিনন্দন হওয়া চাই এবং চারপাশের আবহে যেন বজায় থাকে সুগন্ধ। আর উৎসবের দিন হলে তো কথাই নেই, উৎসবকে কেন্দ্র করেই ঘরের ভোল বদলে দিন।

এমন অনেকেই আছেন, যারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করলেও, বাড়িঘরে পরিচ্ছন্ন আবহ বজায় রাখার বিষয়ে মাথা ঘামান না। গা-ঘিনঘিনে পরিবেশে থাকার অভ্যাস তৈরি হয়ে যায় তাদের। আর এর প্রভাব পড়ে তাদের শরীরে ও মনে। পেটখারাপ, শ্বাসকষ্ট, ত্বক সমস্যা এমন নানারকম অসুখে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি, মেজাজ থাকে খিটখিটে। শুধু তাই নয়, বাড়িতে অতিথি এলে তারাও থাকেন অখুশি এবং দ্বিতীয়বার আসার আগ্রহ দেখান না।

পুরোনো খেলার সামগ্রী, অব্যবহৃৎ অপ্রয়োজনীয় ধুলোপড়া আসবাব, পুরোনো খবরের কাগজ, অর্ধশুকানো জামাকাপড়, ভেজা ছাতা, নোংরা বেডকভার, ডাস্টবিনে জমিয়ে রাখা উচ্ছিষ্ট প্রভৃতি ঘরে রাখলে দুর্গন্ধ তো বেরোবেই! বর্ষাকালে এই দুর্গন্ধ আরও দ্বিগুন হয়। তাই  যে কোনও ঋতুতেই ঘরের নিয়মিত ঝাড়পোঁছ থেকে শুরু করে, আবহ সুবাসিত রাখার সুবন্দোবস্ত করতে হবে।

কখনও আবার এমনও হয়– ঘর পরিষ্কার রাখলেও, শৌচালয় কিংবা আশপাশের এলাকা থেকে ঘরের আবহ দূষিত হয়। তখন, ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি, দুর্গন্ধমুক্ত করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে অ্যারোমা-যুক্ত মোমবাতি, ধূপ প্রভৃতি জ্বালিয়ে সুগন্ধ ছড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া, বাজারে নানারকম স্প্রে পাওয়া যায়, যা ব্যবহার করেও দুর্গন্ধের সমস্যা দূর করা যায়। তবে ওইসব কেমিক্যাল স্প্রে বেশি ব্যবহার করা ক্ষতিকারক। তাই অ্যারোমা-যুক্ত ক্যান্ডেল এবং ধূপ জ্বালানোই ভালো।

দুর্গন্ধ দূর করার উপায়

  •   ঘরের দুর্গন্ধ বাইরে যাতে বেরিয়ে যায়, তারজন্য ভেন্টিলেশন-এর ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এগজস্ট ফ্যান ব্যবহার ছাড়াও, মাঝেমধ্যে ঘরের দরজা-জানালা খুলে রাখা প্রয়োজন
  •   সুগন্ধি ধূপ, রুম ফ্রেশনার প্রভৃতি নিয়মিত ব্যবহার করুন
  •   ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে প্রতিদিন কার্পেট পরিষ্কার করুন
  •   জামাকাপড় কাচাধোয়ার সময় ডেটল কিংবা সুদলজাতীয় তরল মিশিয়ে ধুয়ে, ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন। এতে জামাকাপড় যেমন জীবাণুমুক্ত হবে, ঠিক তেমনই ঘরে রাখলে দুর্গন্ধের পরিবর্তে সুগন্ধ বেরোবে
  •   ঘরে কাঠের আসবাব থাকলে, ধুলো ঝেড়ে পরিষ্কার রাখা উচিত এবং মাঝেমধ্যে পালিশ করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন
  •   জীবাণুনাশক হার্বাল লিকুইড দিয়ে ঘরের মেঝে ক্লিন করুন
  •   আট থেকে দশ বছরের ব্যবধানে ঘর রং করুন নতুন করে

ঘরোয়া উপায়

  •   নিম পাতা শুকিয়ে আলমারিতে রাখুন। এতে জামাকাপড় পোকায় কাটবে না এবং দুর্গন্ধ দূর হবে
  •   প্রতিটি ঘরের কোণায় লেবু কেটে রাখুন। ফ্রিজেও লেবুর টুকরো রাখতে ভুলবেন না। এই কাটা লেবু ঘরের আবহকে সুগন্ধযুক্ত করে তুলবে
  •   বাজার থেকে টাটকা ফুল এনে ফুলদানিতে রাখুন। এতে ফুলের সুন্দর গন্ধে ভরে থাকবে ঘর এবং মনও থাকবে ফুরফুরে।
পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব