দাম্পত্যে আনুন ম্যাজিক টাচ

সুখী দাম্পত্যের চাবিকাঠি কিন্তু আপনার হাতেই আছে। বিয়ের বেশ কটা বছর কেটে যাওয়ার পরে মনে হতেই পারে, দাম্পত্যের শুরুর ম্যাজিক দিনগুলো আর ফিরে আসার নয়। ভুল ভাবছেন। দীর্ঘ সময় কাটিয়ে ফেলার পরেও স্বামী-স্ত্রীর ম্যাজিক রসায়ন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। একটু তলিয়ে ভাবলেই দেখবেন রসায়ন একই আছে শুধু সময়ে ধুলো পড়ে একটু বিবর্ণ হয়েছে মাত্র। দুপক্ষের সামান্য চেষ্টাতেই আবার ফিরিয়ে আনতে পারবেন সম্পর্কের স্ফুলিঙ্গ।

কী ভাবে বুঝবেন সম্পর্কের রসায়ন কমে আসছে  

১)  স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্ক ধীরে ধীরে কমে আসা

২)  ভালোবাসার কথা বলার প্রযোজনীয়তা বোধ না করা

৩)  একসঙ্গে কিছু করার প্রচেষ্টা না করা

৪)  একসঙ্গে নাটক, সিনেমা, রেস্তোরাঁ বা বেড়াতে যেতে অনীহা

৫)  আলাদা আলাদা ঘরে শোওয়ার অভ্যাস

৬)  ছোটো ছোটো কথায় একে অপরের ভুল ধরা

৭)  মিথ্যা কথা বলা এবং চিট করার প্রবণতা

৮)  কখনও প্রশংসা না করা

৯)  শুতে যাওয়ার আলাদা আলাদা সময়

১০) পার্টনারের বদলে বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে বেশি ভালোলাগা

১১) পার্টনারের সঙ্গে কথা বলার থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি ব্যস্ত থাকা

 

ম্যাজিক মোমেন্টস ফিরিয়ে আনতে

একে অপরের কথা শুনুন

মাঝেমধ্যেই আপনার ভালোবাসা মুখে প্রকাশ করুন

শারীরিক নৈকটত্ব দাম্পত্যে জরুরি। চুম্বন তার মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব রাখে

কারণ ছাড়াই উপহার দিন

বেডরুমের বন্ধ দরজার ভিতর স্পাইসি কিছু করুন

বাড়িতেই ক্যান্ডল লাইট ডিনার-এর আয়োজন করুন

আর্থিক সঙ্গতি থাকলে কোনও রোমান্টিক জায়গায় একসঙ্গে বেড়িয়ে আসুন

ফোন-এর থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন

একসঙ্গে কিছু নতুন এক্সারসাইজ করা শুরু করুন

সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ততা কমান।

কখনও কখনও সম্পর্কে দূরত্ব রাখাটাও দরকার। সম্পর্কটার মধ্যে স্পেস রাখুন। এর ফলে পরস্পরের প্রতি নতুন করে ঔৎসূক্য তৈরি হবে। একে অপরের সাহচর্য নতুন করে এনজয় করা শুরু করবেন।

লিভ ইন রিলেশন

বেশিদিনের ঘটনা নয়, মাত্র কদিন আগেই পর্দায় দেখেছি আমরা সেই বেপরোয়া প্রেমের বন্দিশ। ‘বেফিক্রে’। এক যুবক-যুবতির নির্ভার লিভ ইন করার গল্প। দায়-দায়িত্বহীন, ঝরঝরে থাকার নামই লিভ ইন। পরিণয় বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মতো শ্বাসরোধী অনুভূতি নেই যেখানে। নেই দুটো পরিবারকে, তাদের প্রত্যাশা, দাবি আকাঙক্ষাকে অযথা বহন করার মানসিক চাপ। এক কথায় লিভ-ইন যেন এক ঝলক টাটকা খোলা হাওয়া, অর্গলমুক্ত প্রেমই যার সারকথা।

কিন্তু গোল বাধে তখনই যখন লিভ ইন-এও হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে কিছু অযাচিত সমস্যা। যখন দুজন পার্টনারের কোনও একজন, অন্য কাউকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক এমনটাই ঘটতে দেখি আমরা বেফিক্রে ছবিটিতে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে এই খোলামেলা নির্ভার সম্পর্কে দায়বদ্ধতা কি আদৌ আছে নাকি নেই? পরস্পরের সঙ্গে ইমোশনালি জড়িয়ে পড়ার মতো ‘প্যানপেনে’ সেন্টিমেন্টের কোনও মূল্য আছে না কি নেই? প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে আরও একটু গভীরে ঢোকা প্রয়োজন।

বস্তুত মেয়েদের তুলনায় লিভ-ইন-এ আগ্রহী হতে দেখা যায় এই প্রজন্মের তরুণদের। কারণ একটাই। দায়-দায়িত্বহীন সম্পর্কে যৌনতার সুযোগ অবাধ। কারও শাসন বা মতামতের তোয়াক্বা না করে একটা বন্ধনহীন সম্পর্কের স্বাধীনতা উপভোগ করাই উদ্দেশ্য। কিন্তু খুব কম মেয়েই এই সম্পর্কজনিত ইনসিকিউরিটিকে অ্যাকসেপ্ট করার সাহস দেখায়। হয়তো প্রথম কয়েকটা মাস দুজনেই এনজয় করে এই সম্পর্কের সুফল। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই প্রায়শই একটা একঘেয়েমি এবং উত্তাপহীনতা হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ে সম্পর্কটার মধ্যে। কমিটেড থাকার দায় নেই বলেই এরপর পার্টনার চেঞ্জ করার তাগিদ আসতে পারে যে-কোনও পক্ষের থেকে।

আরও একটি সমস্যা হল দুজনের মধ্যে যদি সন্তান এসে পড়ে। ‘সালাম নমস্তে’ ছবিতে যেমনটা আমরা দেখেছিলাম। অবাধ যৌনতার সুযোগ আছে যেমন, তেমন প্রায়শই প্রকৃতির নিয়মে মা হওয়ার তাগিদ এসে পড়তেই পারে মেয়েটির মধ্যে। আর তখন যদি পুরুষটি সেই দায় গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, তার প্রভাব গিয়ে পড়ে নবজাতকটির উপর। অযাচিত সন্তানকে নিয়ে প্রায়শই মা-কে সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে আসতে হয়েছে, এমন দৃষ্টান্তও বিরল নয়।

বিশ্বস্ততার অভাব এই সম্পর্কের আরও একটি দিক। পায়েল ও অনুব্রতর সম্পর্কেও ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। ভিন্ন শহর থেকে পড়তে আসা দুই তরুণ-তরুণী, এ শহরেই ফ্ল্যাট শেয়ার করে। তারা লিভ ইন সম্পর্কে কমিটেড বলে বন্ধু মহলে সকলে জানত। বছর ঘুরে গেল। বাড়ি থেকে ঘুরে আসার পর থেকেই পায়েল, অনুব্রতর মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছিল। ছেলেটি যেন আগের মতো পায়েলের ব্যাপারে ইনভল্ভড নয়। কিছুটা দূরত্ব, এড়িয়ে চলার মানসিকতা দেখে পায়েল তার কাছ থেকে খোলাখুলি জানতে চাইল এই পরিবর্তনের কারণ। তাকে অবাক করে দিয়ে অনুব্রত জানাল, পরিবারের পছন্দ করা একটি মেয়ের সঙ্গে তার বাড়ির লোকেরা তার রেজিস্ট্রি করিয়ে দিয়েছে। অনুব্রত তার পরিবারকে জানাতে পারেনি তার লিভ ইন রিলেশনের কথা। অর্থাৎ কিনা সময়মতো সে সাহাসী হতে পারেনি, সামাজিক ভাবে এই সম্পর্ক অ্যাকসেপ্টেড হবে না এই ভয়ে। এ যেন বাস্তবিক সেই ‘ইজাজত’ ছবির গল্প। এখন পায়েলের সামনে দুটোই পথ। হয় সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে আসা অথবা অনুব্রতর ডিভোর্স না হওয়া অবধি অপেক্ষা করা।

সামাজিক ভাবে স্বীকৃত হলেও অধিকাংশ পরিবারেই এই সম্পর্ককে খোলামনে মেনে নেওয়া হয় না। উভয় পরিবার থেকে দুজনের পরিণয় ঘটানোর জন্য উঠে পড়ে লাগে সকলে। ফলে গোপনে কেউ কেউ লিভ ইন করে ঠিকই, কিন্তু সেখানেও আবার পারস্পরিক বিশ্বাস ভঙ্গের ঘটনাও আকছার ঘটে। এই সম্পর্ক যতটা স্বাধীনতা দেয়, ততটাই অপরাধ মনস্কতার দিকেও ঠেলে দেয়। লিভ ইন রিলেশন-এ থাকতে থাকতেই, একটি মেয়ে তার পরিবারের চাপের কাছে নতিস্বীকার করে অন্য একটি পাত্রকে বিয়ে করতে সম্মত হয়েছে, শুনেই তার বয়ফেন্ড তাকে খুন করে– সংবাদপত্রে এমন ভয়ংকর ঘটনার কথাও আমরা পড়ে থাকি। সম্প্রতি সবচেয়ে চাঞ্চল্য ফেলেছে যে ঘটনা, সেই আকাঙ্খা শর্মা ও উদয়ন দাস লিভ ইন রিলেশনে থাকতে থাকতেই আকাঙ্খা হত্যার জঘন্য অপরাধটি ঘটায় উদয়ন। ফলে লিভ ইন-এর সুফল যেমন আছে, কুফলের বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া চলে না।

লিভ ইন এর আইনি দিক

 সাম্প্রতিক একটি ঘটনায় লিভ ইন-এর আইনি দিক নিয়ে অনেকেই বেশ নড়ে চড়ে বসেছেন। সুপারস্টার রাজেশ খন্নার মৃত্যুর পর তাঁর সঙ্গে লিভ ইন সূত্রে সম্পর্কিত অনিতা আডওয়ানিকে রাজেশের পরিবারের লোকেরা বহিষ্কার করে। গত চার বছর তারা লিভ ইন করা সত্ত্বেও সম্পর্কটার আইনি বৈধতা ছিল না। এমনকী অনিতা এমন কোনও প্রমাণপত্রও দাখিল করতে পারেননি যা আইনত গ্রহণযোগ্য, যা তাঁকে রাজেশের সম্পত্তির অংশীদার বলে প্রমাণ করতে পারে। ফলে অনিতা আডওয়ানি দু’শো কোটির সম্পত্তির ছিটেফোঁটাও পেলেন না রাজেশের মৃত্যুর পর। তাই জেনে রাখা দরকার, সম্পত্তি দাবি করার ক্ষেত্রে, লিভ ইন সম্পর্কটির যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ দরকার। তবেই সম্পর্কটি বৈধ বলে স্বীকৃত হবে। সুপ্রিম কোর্ট লিভ ইন-এর বিষয়ে যে-আইনগুলি প্রণয়ন করেছে, তাতে লিভ ইন সম্পর্ক ভেঙে গেলেও মহিলারা খোরপোশ পেতে পারেন। কিন্তু তার জন্য

ক)   এই যুগলকে সমাজের সামনে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে

খ)   যুগলকে এই সম্পর্কের বৈধতা দিতে সাবালকত্ব প্রাপ্ত হওয়া আবশ্যক

গ)   যুগলের মধ্যে সম্পর্ক বা আত্মীয়তা বিবাহের পক্ষে অনুপযুক্ত হবে না

ঘ)   দুজনে স্বেচ্ছায় অন্তত ছয় মাস একসঙ্গে শারীরিক ও মানসিক সম্পর্কে আবদ্ধ থেকে বসবাস করলে, তবেই তা আইনি ভাবে সিদ্ধ হবে

২৬ নভেম্বর ২০১৩ থেকে লিভ ইন আইনি বৈধতা লাভ করেছে। লিভ ইন সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রেই সফলও হয়। যেখানে সাধারণ বৈবাহিক সম্পর্কে বোঝাপড়ার অভাব দেখা যায়, সেখানে লিভ ইন-এর ক্ষেত্রে সম্পর্কটা বোঝাপড়ার উপরই দাঁড়িয়ে থাকে। অধিকাংশ আত্মনির্ভর মহিলা বিয়ে জনিত ঝক্বি এড়াতে এখন লিভ ইন-এর স্বপক্ষে। তবে কয়েকটা জিনিস খেয়াল করা জরুরি।

উভয়েই পরবর্তীকালে বিবাহ করতে ইচ্ছুক কিনা নিশ্চিত হোন। যদি ছেলেটি একেবারেই এতে রাজি না থাকে তাহলে তার কারণ অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। দুজনের যৌথ আয় একটি জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে রেখে খরচ করুন। যদি একেবারেই বিয়ে না করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন উভয়েই, তাহলে উকিলের মাধ্যমে স্ট্যাম্প পেপারে যে যার অংশ লিখে নিন।

 

 

সঠিক আচরণের অভ্যাস করান সন্তানকে

চলন্ত ট্রেনে ঠিক আমার সামনে একটি পরিবারের চারজন জার্নি করছিল। বাবা, মা এবং তাদের দুটি সন্তান। মেয়েটির বয়স ৮-১০ বছরের মধ্যে হবে এবং ছেলেটি ৬-৭ বছরের। তাদের জামাকাপড় দেখে মনে হচ্ছিল সম্ভ্রান্ত এবং শিক্ষিত পরিবার। বেশ কিছুটা সময় অতিক্রম করে যাওয়ার পর বাচ্চা দুটির মধ্যে মোবাইল নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়ে গেল। ট্রেনের ওই কম্পার্টমেন্টে বাচ্চা দুটি ছাড়া সকলেই প্রায় গুরুজন ব্যক্তি বসেছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই অনেকেরই চোখ পড়ল দুটি বাচ্চার ঝগড়ায়।

ঝগড়া গিয়ে দাঁড়াল মারামারিতে। বোন, ভাইয়ের গালে জোরে থাপ্পড় মারলে ভাইও বোনের চুলের মুঠি ধরে টান দিল। ওদের মা বা বাবা কেউই শাসন করার চেষ্টা করলেন না। শুধু মা নরম সুরে ছেলেকে বকলেন, ‘সোনা এরকম করে না, তুমি তো গুড বয়।’

ছেলে মায়ের মুখের উপরেই উত্তর দিল, ‘নো মম, আই অ্যাম আ ব্যাড বয়।’

‘ছিঃ, এরকম বলে না, তুমি কনভেন্ট স্কুলে পড়ো। ইউ আর সাচ আ গুড বয় আই নো’, শাসনের বদলে মায়ের গলায়  প্রশংসারই সুর বাজল।

বাচ্চা মেয়েটি খেয়াল করলাম মায়ের মোবাইলটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। ‘মা-মা প্লিজ এবার আমার নিজের মোবাইল চাই নয়তো এটাও আমি ভেঙে দেব, তাহলে তুমিও ইউজ করতে পারবে না।’

মা-কে দেখলাম হাসিমুখে মেয়েকে বলছেন, ‘ছিঃ এরকম কথা বলতে নেই। তুমি এখন বড়ো হয়েছ।’

‘টিচারের মতো জ্ঞান দিও না প্লিজ, মেয়ের উত্তর।

এতক্ষণে বাচ্চাদুটির বাবা মুখ খুললেন, ‘এভাবে মায়ের সঙ্গে কথা বলে কেউ?’ মেয়েটি চুপ করলে, ভদ্রলোক নিজের স্ত্রী-কে বললেন, ‘এই সব তোমারই শিক্ষার ফল।’

‘কেন, শুধু শুধু মিথ্যা বলছ? তুমিই তো বাচ্চাদের আদর দিয়ে মাথায় তুলেছ।’

পরিবারটির চারজনের কথোপকথনে এবং আচরণে ততক্ষণে ট্রেনের ওই কামরায় সকলের কাছেই পরিষ্কার হয়ে গেছে, বাচ্চাদের ওইরকম অভদ্র ব্যবহারের আসল কারণটা কী। বাড়িতে অতিরিক্ত তোষামোদ পাওয়া এবং সঙ্গে শাসনের অভাব।

আমরা বড়োরা কোনও রকম ভাবনা-চিন্তা না করেই সাধারণত বাচ্চাদের সামনেই যে-কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিই। এটা ভুলে যাই যে বাচ্চারা খেলতে খেলতেও আমাদের সব আলোচনা শুনছে এবং মাথায় রাখছে। আমরা বড়ো, তাই বাইরের লোকের সামনে ইচ্ছেমতো মুখোশ ব্যবহার করি কিন্তু ওরা বাচ্চা। তাই ভিতরের কথা ওরা লুকোতে পারে না। চট্ করে বাইরের লোকের সামনে নিজের আচরণ বদলে ফেলতে ওরা জানে না। ফলে এমন কথাও ওরা বলে ফেলে যেটা মাঝেমধ্যে বড়োদের লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আজকের এই ব্যস্ততার যুগে বাচ্চাদের আচরণ নিয়ে এই ধরনের সমস্যা প্রায়শই দেখতে পাওয়া যায়। বাচ্চাদের মধ্যে কথা না শোনা, রাগ, জেদ, বদমায়েশি খুব বেশি চোখে পড়ে এখন। অনেক অভিভাবকেরাই বুঝতে পারেন না, কী করে বাচ্চাদের স্বাভাবিক ব্যবহারে অভ্যস্ত করাবেন যাতে অপরের সামনে লজ্জায় না পড়তে হয়। বাচ্চারা খারাপ আচরণ করলে মা বা বাবা বেশিরভাগই ব্যাপারটা এড়িয়ে যান এই কথা বলে যে, তাদের সন্তানের মুড এখন ভালো নেই। অথচ সাইকোলজিস্ট এবং সাইকোথেরাপিস্টদের মতে এটা শুধু বাচ্চার মুড নয়, বাচ্চা নিজের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না বলেই এমন আচরণ করছে।

তাদের মতে ছোটো থেকেই বাচ্চাকে সঠিক আচরণে অভ্যস্ত করাতে হবে অভিভাবকদেরই, যাতে খারাপ-ভালোর সঙ্গে পরিচিত হতে পারে বাচ্চারা। দুটোর মধ্যে পার্থক্য করতে শেখে তারা। এছাড়াও বড়োদের ইচ্ছে বা যুক্তি ছোট্ট শিশুর উপর চাপিয়ে দেওয়াটাও বাচ্চাদের উপর নির্যাতন করারই সমান। এটাও বাচ্চাদের মানসিক উদ্বেগেরই কারণ।

কী করা উচিত

 ১) বাচ্চাদের সামনে বড়োদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করা উচিত নয়। যে-কোনও বিষয়ে কথাবার্তা বলার সময় খুব সাবধান থাকা উচিত কারণ, বাচ্চারা খুব তাড়াতাড়ি বড়োদের বলা প্রতিটা শব্দ অনুকরণ করে।

২) ক্রিয়েটিভ কাজে বাচ্চাদের ব্যস্ত রাখুন যাতে বাচ্চা বোর না হয় এবং মনের মধ্যে জানার একটা ইচ্ছা তৈরি হতে পারে।

৩) বাচ্চাকে ভালোবাসুন, আদর দিন কিন্তু জীবনের মূল্যবোধগুলির সঙ্গেও ওকে পরিচয় করান। খেলার মাধ্যমে, ছোটো ছোটো গল্পের মধ্যে দিয়ে মূল্যবোধের শিক্ষা দিন। শিক্ষামূলক গল্পের বই কিনে দিন পড়ার জন্য।

৪) শিক্ষার মানে এবং গুরুত্ব বাচ্চাকে শেখানো উচিত। বাচ্চাকে গড়ে তোলার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৫) বাচ্চাকে সময় দিন, মন খুলে বাচ্চার সঙ্গে মিশুন তাতে বাচ্চার মনে কী চলছে সেটা বুঝতে আপনার অসুবিধা হবে না। বাচ্চা যদি কোনও অন্যায় করে সেটা সঙ্গে সঙ্গে শুধরে দিতে পারবেন।

৬) বাচ্চা কথা না শুনলে, তাকে মারধর না করে তার পছন্দের অ্যাকটিভিটি থেকে তাকে সরিয়ে দিন। যেমন গল্প বলা বন্ধ করে দিন বা কথা না শুনলে বাইরে গিয়ে খেলা কয়েকদিন বন্ধ করে দিন। বেশি জেদ করলে বলতে পারেন, পছন্দের খেলনা তাকে দেওয়া হবে না যদি সে জেদ করতেই থাকে।

কী করবেন না

 ১) বাচ্চাকেও গুরুত্ব দিতে হবে, বাচ্চা ভেবে ভুল করলে চলবে না। বড়োরা যখন নিজেদের কথায় ব্যস্ত থাকবে তখন বাচ্চা হয়তো খেলছে বা পড়াশোনা করছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সে বড়োদের কথা মন দিয়ে শুনে থাকতে পারে। বাচ্চার মস্তিষ্ক বড়োদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।

২) নিজের ইচ্ছে বাচ্চার উপর চাপাবেন না, তাতে ভালো কথাও বাচ্চার উপর চাপ সৃষ্টি করবে। বাচ্চা নিরাশ হয়ে পড়তে পারে।

৩) সব কাজের ভালো এবং খারাপ দিকটা বাচ্চাকে বোঝাতে হবে। বাচ্চার সব কথা সময় বার করে ধৈর্য নিয়ে শুনতে হবে। ওদের এড়িয়ে যাওয়া বা ইগনোর করা উচিত হবে না।

৪) বাড়ির বা বাইরের কোনও ব্যক্তির সঙ্গে বাচ্চার তুলনা একেবারেই করবেন না এতে সেই ব্যক্তির প্রতি রাগ এবং ঘৃণা বাড়বে আপনার বাচ্চার। সব বাচ্চার মধ্যেই নিজস্ব অনেক গুণ থাকে যেগুলো খেয়াল না করার ভুল করবেন না।

৫) সব অভিভাবকরাই নিজেদের সন্তানকে স্মার্ট এবং ইনটেলিজেন্ট দেখতে চান। কিন্তু স্মার্ট বানাতে গিয়ে বাচ্চাকে বয়সের তুলনায় ম্যাচিওর করে তুলবেন না।

৬) নিজের স্বপ্ন, বাচ্চার মাধ্যমে সাকার করার চেষ্টা করবেন না। বাচ্চাকে নিজের স্বপ্নের উড়ান ওড়াতে, সাহায্য করুন। আপনি জীবনে কী করতে চেয়েছিলেন, কী করতে পারেননি এগুলির প্রভাব বাচ্চার উপর কোনওভাবেই পড়তে দেবেন না।

৭) ভয় দেখিয়ে বাচ্চাকে দিয়ে কাজ করাবেন না। এর ফলে বাচ্চা কাল্পনিক পরিস্থিতি থেকেও ভয় পেতে শুরু করবে। বাচ্চার  মানসিক বিকাশও ঠিকমতো হবে না। বাচ্চার ইচ্ছে না থাকলেও বাচ্চা ভুল করবেই।

 

মা-বাবার ঝগড়ায় বিপর্যস্ত শিশু

সব শিশুর কাছেই মা-বাবা হল রোল মডেল। বাচ্চার কাছে নিজের মা-বাবার থেকে ভালো কেউ হতে পারে না। সুতরাং মা-বাবাকেই অনুসরণ করার চেষ্টা করে বাচ্চা। কিন্তু পরিস্থিতি যখন অনুকূল থাকে না, মা-বাবার ঝগড়ার মুখোমুখি হতে হয় বাচ্চাকে প্রতিনিয়ত। ঠিক তখনই শিশুর মনের মধ্যে আঁকা পারফেক্ট মা-বাবার ছবিটা গুঁড়িয়ে যেতে আরম্ভ করে। সে হয় হিংস্র মনোভাবের হয়ে ওঠে, নয়তো অবসাদে ডুবে যায়। আবার কখনও মা-বাবার দেখানো পথই অনুসরণ করে ঝগড়ুটে বা মারকুটে হয়ে ওঠে।

সামাজিক ব্যবহার কী হওয়া উচিত তার পাঠ বাচ্চারা সাধারণত মা-বাবার কাছ থেকেই পায়। যদিও অভিভাবকেরা সবসময়ই চেষ্টা করেন, নিজেরা ভুল কিছু না করতে, যাতে তার খারাপ প্রভাব বাচ্চার উপর না পড়ে। কিন্তু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো তারা শিশুটির সামনেই এমন ভুল করে বসেন, যার প্রভাব শিশুমনে পড়তে বাধ্য।

চাইল্ড সাইকোলজিস্টদের মতে, তাদের কাছে এমন অনেক কেস আসে, যেখানে বাচ্চার মা-বাবা নিজেদের ঝগড়া শেষ হলে, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার দায় থেকে একে অপরের নামে বাচ্চার কাছে দোষ চাপাবার চেষ্টা করে। ফলে বাচ্চা আরও কনফিউজড হয়ে যায়।

বাচ্চার উপর বড়োদের ঝগড়ার প্রভাব

  • আবসাদ : যে-বাচ্চা বাড়িতে মা-বাবাকে সবসময় ঝগড়া করতে দেখে বড়ো হতে থাকে, তার অবসাদগ্রস্ত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। বাচ্চা ভালোবাসার অভাব বোধ করে, যার ফলে বাচ্চা ডিপ্রেশনে চলে যায়।
  • সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকে : শিশুটির সামনে ঝগড়া বিবাদ, মারামারি, গালিগালাজ করা, বাচ্চাকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে, সেটা অনেক মা-বাবাই ঝগড়া করার সময় ভুলে যান। মা-বাবাকে ঝগড়া করতে দেখলে বাচ্চা ভয় পেয়ে যায়।
  • মানসিক অশান্তিতে ভোগে শিশু : বাড়িতে বড়োদের মধ্যে, বিশেষ করে মা-বাবার মধ্যে অশান্তি দেখলে, শিশুটির মধ্যেও মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। তার ইনোসেন্স নষ্ট হয়ে যায়। জেদি এবং খিটখিটে মেজাজের হয়ে উঠতে থাকে। তার এই সমস্যার কারণ উপলব্ধি করতে করতে, বেশিরভাগ সময়ে মা-বাবা অনেক দেরি করে ফেলেন।
  • জীবনে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলে : যে-বাচ্চার বাড়িতে সবসময় ঝগড়া, অশান্তির পরিবেশ থাকে, সেই বাচ্চার মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। অন্য শিশুদের তুলনায় খেলাধুলো, পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়তে থাকে।
  • নিজেকেই দাযী করে : মা-বাবার মধ্যে রোজ দ্বৈরথ দেখতে দেখতে শিশুর মনে হতে থাকে সে এর জন্য দাযী। শিশুটি ডিপ্রেশনে চলে যায়, চুপচাপ হয়ে পড়ে। অনেক সময় আত্মহননের পথও বেছে নেয়।
  • ভরসা করা ছেড়ে দেয় : ঝগড়ার পরিবেশ বাচ্চাকে হতাশ করে তোলে। কিছুই তার মন ভালো করতে পারে না। কাউকে সে চট করে বিশ্বাস করতে পারে না এবং কেউ ভালোবাসলেও সেটা তার কাছে কৃত্রিম বলে মনে হয়।

খুব ছোটো বয়সের বাচ্চার উপর মা-বাবার বিবাদের প্রভাব একটু অন্য ভাবে পড়ে। শিশুটির, মা-বাবার মধ্যে হওয়া কথোপকথন ঠিক বুঝতে না পারলেও, তাদের মুড পরিষ্কার ধরা পড়ে বাচ্চার কাছে। দেখা যায় যে-পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকে, সেই বাড়ির শিশুটি নিজের মধ্যে গুটিয়ে যায়। তার মনে হয়, এবার মা-বাবা আলাদা হয়ে যাবে। তার সঙ্গে কেউ আর থাকবে না। নিজেকে অসুরক্ষিত মনে করে এবং কারও সঙ্গে মেলামেশা করতে আর কোথাও যেতে আসতেও দ্বিধাবোধ করে।

সন্তান বড়ো হয়ে গেলে মা-বাবা ভেবে নেন, নিজেদের ঝগড়ায় সে কারও একটা পক্ষ অবশ্যই নেবে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বাচ্চার দমবন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়। তার মনে হয়, এখানে সে না চাইতেই জড়িয়ে পড়ছে। কখনও কখনও সে গ্লানির শিকার হয়ে পড়ে এবং বাড়ির ওই পরিবেশের জন্য নিজেকে দোষী ভেবে নেয়।

শুধু মানসিক নয়, ঝগড়াঝাঁটির প্রভাব শরীরের ইমিউন সিস্টেমের উপরেও পড়ে। ফলে যে-কোনও অসুস্থতার সঙ্গে লড়ার শক্তি শরীর হারিয়ে ফেলে। বাড়িতে মা-বাবার মধ্যে অসন্তোষ বা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা ডিভোর্স কেস-এর প্রভাব, সন্তানের কোমল মনের উপর এসে পড়ে। সে শুধু শৈশবেই নয়, এর নেতিবাচক প্রভাবের সঙ্গে সারা জীবন ধরে যুঝতে থাকে।

পড়াশোনায় পর্যন্ত এর প্রভাব এসে পড়ে। এর ফলে শিক্ষার ক্ষেত্রে ভালো রেজাল্ট করতে পারে না বাচ্চা। এই নিয়ে অনেক সমীক্ষা করা হয়েছে। মা-বাবার সম্পর্ক নিয়ে বাচ্চার মনে অনিশ্চয়তা থাকলে, স্বাভাবিক ভাবেই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিশুটির উপর।

এছাড়াও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অপ্রীতিকর সম্পর্ক বাচ্চার শরীরের উপর যেমন খারাপ প্রভাব ফেলে, তেমনি তার মানসিক বিকাশেও বাধা দেয়। নানা ধরনের মানসিক বিকার উৎপন্ন হতে পারে। হয় শিশুটি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে আর নয়তো ভুল পথে পা বাড়ায়। সুতরাং বড়োদেরই খেয়াল রাখতে হবে, তাদের ঝগড়ার প্রভাব কোনও ভাবেই যেন সন্তানের উপর না পড়ে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই অন্যান্য আর-দশটা অভিভাবকদের মতোই, বাচ্চাকে মানুষ করার দাযিত্ব পালন করতে হবে।

 

অভিভাবকদের কী করা উচিত

  • নিজেকে গুরুত্ব না দিয়ে সন্তানের কথা আগে ভাবুন
  • সব স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই ঝগড়া হয়। কিন্তু যখন একজন রেগে রয়েছে তখন আর একজনের চুপ করে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। এতে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে থাকে
  • নিজেদের ঝগড়ায় বাচ্চাকে শামিল করবেন না
  • কোনও কথায় স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য হলেও শিশুটির সামনে একে অপরকে অপমান করবেন না
  • বাচ্চার সামনে খারাপ ভাষা প্রযোগ করবেন না
  • শিশুটির সামনে একে অপরকে গালিগালাজ করবেন না
  • খেয়াল রাখবেন যে-কথা আপনার মনে কষ্ট দিতে পারে, সেটা বাচ্চার কোমল হৃদয়কে কতটা আঘাত করতে পারে
  • স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বন্ধ না হলে অবশ্যই কাউন্সেলর-এর কাছে যান এবং পরামর্শ নিন।

বাচ্চাদের একঘেয়েমি কাটিয়ে তুলুন

গরমের ছুটি বলুন অথবা খ্রিসমাসের সময়, বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ থাকলেও দেওয়া হয় প্রচুর হোমওয়ার্ক, প্রোজেক্ট ওয়ার্ক, এছাড়াও স্কুল খুললেই পরীক্ষার চাপ তো থাকেই। সঙ্গে সঙ্গে চলে নানা অ্যাক্টিভিটির ক্লাসও। যেমন সুইমিং, ডান্সিং, ক্যারাটে ইত্যাদি নানা ধরনের অ্যাক্টিভিটি করার সুযোগ রয়েছে বাচ্চাদের।

কিন্তু দেশজুড়ে যখন ভয়েতে মানুষ বাধ্য হচ্ছে বাড়িতে থাকতে, যেখানে দেশে অতিমারির ভয়ে শহরে গ্রামে লকডাউনের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি, স্বাভাবিকভাবেই মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বড়োরা যেখানে দিশাহারা, ঘুমিয়ে খেয়ে বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করেও যেখানে মানসিক চাপমুক্ত থাকা যাচ্ছে না, সেখানে বাচ্চাদের অবস্থা আরও সঙ্গীন। স্কুল হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া, পরীক্ষা উঠে যাওয়া, বাড়ি থেকে বেরোতে না পারার স্ট্রেস তাদের কাছে অবাঞ্ছিত হয়ে উঠেছে।

আশেপাশের পরিবেশ বোঝা বা খোলা জানলাগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার তাৎপর্য বোঝার হয়তো অনেকেরই বয়স হয়নি। তত্সত্ত্বেও অলস আগামী দিনগুলো ভারী পাথরের মতো শিশুর মনের ছোট্ট পরিসরে ভার হয়ে বসতে চলেছে।

বাইরে পাড়ার পার্কে বন্ধুদের সঙ্গে খেলে বেড়ানো, মায়ের হাত ধরে সাঁতারে যাওয়া বা ক্যারাটে ক্লাসে গিয়ে বন্ধুকে নিজের শক্তি প্রদর্শন করে দু-ঘা লাগিয়ে দেওয়া সব বন্ধ। সারা সপ্তাহ স্কুল করে সপ্তাহের শেষে দুটো দিন প্রিয়, নাচের টিচারের কাছে নিজের মনের একান্ত ইচ্ছেটাকে, সুপ্ত বাসনাটাকে ঝালিয়ে নেওয়া, সেটাও নির্মম ভাবে বন্ধ।

যেখানে বাড়িতে বন্ধ থাকার এই একঘেয়ে জীবনটা থেকে শৈশব হঠাৎ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে, সেখানে বদ্ধ জীবনে শৈশব ফিরিয়ে আনার উপায় হল বিভিন্ন খেলা এবং নিজস্ব সৃষ্টির নেশায় তাদের ব্যস্ত রাখা।

  • সকালে ঘুম থেকে উঠলে ছোটো ছোটো সহজ ব্যায়াম শেখান বাচ্চাকে এবং নিজেও সেটা বাচ্চার সঙ্গে করুন। নতুন জিনিস শিখলে বাচ্চার আগ্রহ বাড়বে
  • বাড়িতে রাখা টবের গাছগুলোতে মগে করে জল দিতে বলুন, বড়োদের সামনে থাকাটা জরুরি। এতে বাচ্চার প্রকৃতির সঙ্গে সখ্যতা বাড়বে
  • রান্নার সময় সবজিগুলো বড়োদের হাতের কাছে এগিয়ে দিতে বলুন। এতে বিভিন্ন সবজি চেনাও হবে আবার বড়োদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে মনে স্বস্তি অনুভব করবে। এতে বাচ্চার মনে হবে ছোটো হলেও বাড়িতে ওর একটা গুরুত্ব রয়েছে
  • পড়াশোনা করার সময়টুকু বাদ দিয়ে বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে ইনডোর গেমস খেলুন। ক্যারাম, লুডো, তাস, দাবা, বাগাডুলি একসঙ্গে বসে খেলে দেখুন। এই মজা অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না এবং ফ্যামিলি বন্ডিং-টাও বাড়বে
  • বিভিন্ন ক্রসওয়ার্ড, ধাঁধা, সুদোকু ইত্যাদি খেলতে বাচ্চাকে সাহায্য করুন, কীভাবে খেলতে হয় বুঝিয়ে বলুন। এগুলো মস্তিষ্ক সচল রাখতে সাহায্য করবে এবং শিশুমনকে স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি থেকেও দূরে রাখবে। বাইরে বেরোতে না পারার কষ্টকে ভুলে থাকতে অনেকটাই হেল্প করবে
  • সারা দিনের শেষে একটি নির্দিষ্ট খাতায় বাচ্চাকে বলুন সারাদিনে যা যা করেছে সেটা লিখতে। সারাদিনটা কেমন কেটেছে, কী কী ভালো কাজ করেছে মনে করে খাতায় সেটা লিখে রাখতে বলুন। এতে ডায়ারি লেখার অভ্যাস হবে এবং একঘেয়েমি কেটে নতুন কিছু করার আনন্দে বাচ্চা মেতে উঠবে
  • বাচ্চাকে বলুন, ডায়ারিটা ওর নিজস্ব সম্পত্তি এবং ওতে ও যা যা লিখছে সেটা একমাত্র ওই জানবে। বড়োরা ওর এই ডায়ারিতে হাত দেবে না। এতে বাচ্চার আত্মবিশ্বাস বাড়বে
  • বাড়িতে বন্ধ হয়ে থাকার অস্বস্তি বাচ্চার মন থেকে দূর করতে নতুন নতুন কনস্ট্রাকটিভ অ্যাক্টিভিটিতে বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখুন। বাচ্চার কাছে কাগজ, পেনসিল, রং, রঙিন কাগজ ইত্যাদি থাকেই। সেগুলোর সাহায্যে ড্রযিং করে অথবা নেটের সাহায্য নিয়ে নানারকম ক্রাফট বানাতে বাচ্চাকে সাহায্য করুন। পিকচার পোস্টকার্ড, ওয়াল হ্যাঙ্গিং ইত্যাদি বাচ্চা নিজেই বানাতে পারে। নিজস্ব তৈরি জিনিসে বাড়ি সেজে উঠতে দেখলে বাচ্চা আনন্দ পাবে।

এরকমই নানা ইনোভেটিভ অ্যাক্টিভিটিতে বাচ্চাকে ব্যস্ত রেখে বাচ্চার একঘেয়েমি কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করতে পারেন বাচ্চার অভিভাবকেরা। এই সমস্যা আজ শুধু দেশের নয় গোটা বিশ্বের। গৃহবন্দি জীবনই আশীর্বাদ হয়ে উঠুক একটি শিশুর জীবনে।

বাচ্চাকে শেখান ভালো অভ্যাস

ছোটো থেকেই বাচ্চাকে ভালো ব্যবহার এবং অভ্যাস শেখানো উচিত অভিভাবকদের। শৈশবে শিশু যা শেখে, বড়ো হয়ে তার ব্যবহারে সেগুলোই দৈনন্দিন প্রতিফলিত হয়। কী শেখাবেন, কেন শেখাবেন আসুন জেনে নেওয়া যাক।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস

 ছোটোবেলায় বাচ্চাকে যা শেখানো হবে, বড়ো হয়ে সেটাই তার অভ্যাসে পরিণত হবে। তাই শিশুর শৈশবের দিনগুলো থেকেই তার মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তোলা খুব জরুরি। নীচের অভ্যাসগুলির সঙ্গে বাচ্চাদের পরিচয় করিয়ে পরিচ্ছন্নতার প্রতি তাদের সজাগ করে তুলতে পারেন।

১) হাতমুখ ধোওয়া দিয়ে বাচ্চাদের দিন শুরু করতে শেখান।

২) ২ থেকে ৩ মিনিট ঠিক ভাবে নিজের দাঁত ব্রাশ করতে বলুন যাতে শিশুর দাঁত ক্যাভিটিমুক্ত থাকে। দিনে অন্তত ২ বার ব্রাশ করার অভ্যাস করান।

৩) বাচ্চাকে নখ ছোটো রাখতে বলুন কারণ বড়ো নখে নোংরা জমে। এই নোংরা থেকেই সংক্রমণের ভয় থাকে।

৪) সর্দি-কাশি হলে বা হাঁচি পেলে রুমাল বা টিস্যু পেপার মুখ এবং নাকের উপর যাতে ধরে, সেই অভ্যাস বাচ্চার মধ্যে গড়ে তুলুন।

৫) কাচা এবং ইস্তিরি করা পোশাক পরার অভ্যাস করান।

৬) নোংরা বা বর্জ্য পদার্থ ডাস্টবিনে ফেলার অভ্যাস করান।

৭) অভিভাবকদের বাচ্চাকে বোঝানো উচিত, নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ঘর, ঘরের আশপাশ এবং যে-লোকালিটিতে থাকে সেটা পরিষ্কার রাখাও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

৮) বাচ্চাকে নিজের জিনিস যেমন খেলনা, বই ইত্যাদি সঠিক জায়গায় রাখার শিক্ষা দিতে হবে।

৯) পেনসিল, পেন, রাবার, আঙুল ইত্যাদি যেন নাক বা মুখের ভিতর না ঢোকায় সেটাও বাচ্চাকে শেখাতে হবে।

১০) বাচ্চাকে শেখান রাস্তায় বেরিয়ে কোথাও যেন নোংরা না ফেলে। বাইরে যাওয়ার সময় একটা পেপার ব্যাগ নিয়ে যেতে বলুন যাতে রাস্তায় নোংরা ফেলতে না হয়।

শুরু করুন বাড়ি থেকে

 বাড়ি থেকেই বাচ্চাদের অভ্যাস তৈরি করাটা খুব দরকার। অনেক বাচ্চাই খাওয়ার সময় মুখে আওয়াজ করে খায়। কেউ কেউ ন্যাপকিন এবং নাইফ-এর ব্যবহার ঠিকমতো জানে না। সামাজিক কোনও অনুষ্ঠানে অথবা রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে, বাচ্চাকে টেবিল ম্যানার্স শেখানো খুবই দরকার। কীভাবে বসবে, খাবে ইত্যাদি শিষ্টাচার বাড়ি থেকেই শেখানো শুরু করতে হবে।

বাড়ির বাইরে গিয়ে যাতে সকলের সঙ্গে খেতে বসে বাচ্চার অসুবিধা না হয়, তার জন্য আগে থেকেই টেবিল ম্যানার্স বাড়িতেই প্রাক্টিস করানো দরকার। যদি বাচ্চা কারও বাড়ি গিয়ে অথবা রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে কোনওরকম ভুল করে ফেলে, সেই মুহূর্তে ওখানে বকাবকি না করে, বাড়ি ফিরে এসে ভালো করে ধীরেসুস্থে বুঝিয়ে বলুন।

ছোটো থেকেই যদি বাচ্চার টেবিল ম্যানার্স-এর অভ্যাস হয়ে যায় তাহলে বড়ো হয়ে যে-কোনওরকম সোশ্যাল গ্যাদারিং-এ তার আত্মবিশ্বাস অটুট থাকবে।

১) টেবিল ম্যানার্স-এ প্রথমেই শেখান খেতে বসে অল্প করে খাবার তুলে মুখে দিতে এবং ভালো করে খাবার চিবোতে। মুখ বন্ধ করে খাবার চিবোতে বলুন যাতে আওয়াজ না হয়। জল খেতে গিয়েও যেন আওয়াজ না হয়। এই অভ্যাসও করান, সে যতটুকু খেতে পারবে ততটুকুই প্লেটে যেন নেয়, যাতে অযথা খাবার নষ্ট না হয়। প্রয়োজন হলে পরে আবার নিতে বলুন।

২) কোন বাসনে খাবে সেটাও বাচ্চাকে ছোটো থেকেই শেখাবার প্রয়াস করুন। যেমন স্যুপের জন্য বড়ো চামচ এবং ডেসার্টের জন্য ছোটো চামচের ব্যবহার, গ্রেভি-যুক্ত খাবারের জন্য বাটির ব্যবহার ইত্যাদি। বাচ্চাকে এও শেখান কারও তৈরি খাবার ভালো লাগলে, যে খাবারটি তৈরি করেছে তার প্রশংসা করতে। খাবার ভালো না লাগলে খারাপ করে না বলে বিনম্রভাবে তাকে জানানো যে ওর ওই খাবারটি ভালো লাগেনি।

৩) নিজের বাড়িতে অথবা কারও বাড়িতে খেতে গেলে, খাওয়ার শেষে নিজের এঁটো প্লেট তুলে নিয়ে সিংক-এ রাখতে শেখান।

৪) রেস্তোরাঁয় গিয়ে ন্যাপকিনের ব্যবহার শেখান যাতে হাত এবং মুখ মুছতে অসুবিধা না হয়। টেবিলে বসে এমন ভাবে হাত রাখা উচিত যাতে পাশে বসা ব্যক্তির অসুবিধা না হয়।

৫) খেতে বসে কথা যেন না বলে, সেটার শিক্ষাও ছোটো থেকেই দেওয়া উচিত। খাবারের সময় বিভিন্ন কাটলারির ব্যবহার বাচ্চা কী করে করবে, সেটাও বাড়িতেই শেখান যেমন নাইফ ডানহাতে এবং ফোর্ক বাঁহাতে ধরতে হয়, এঁটো হাত দিয়ে গেলাস না ধরে, খাওয়ার পর গেলাসের জল দিয়ে হাত না ধোয় ইত্যাদি। এছাড়াও খাবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে, যতক্ষণ না সবাই খেয়ে উঠছে ততক্ষণ সকলের সঙ্গে বসে থাকাটা ম্যানার্স, এটাও বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলতে হবে।

৬) ডাইনিং টেবিলে রাখা কোনও ডিশ খাওয়ার ইচ্ছে হলে পাশের ব্যক্তিকে ডিশটি পাস করতে বলতে শেখান। ডাইনিং টেবিলের উপর যেন উঠে না পড়ে খাবার প্লেটে নেবার জন্য।

বাচ্চা যদি খুব দুষ্টু হয় তাহলে পাবলিক প্লেস-এ নিয়ে গিয়ে অভিভাবকেরা অনেক সময় লজ্জায় পড়ে যান। প্রায়শই দেখা যায় খাওয়ার সময় এক জায়গায় না বসে, বাচ্চা এদিক-ওদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছে। টেবিলে রাখা ক্রকারিতে হাত দিচ্ছে, টেবিলে রাখা জল উলটে ফেলছে, খাবার ফেলে দিচ্ছে। এর ফলে অন্যান্য অতিথিরাও সমস্যায় পড়েন। সুতরাং ছোটো থেকেই বাচ্চাকে ভালো অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে টেবিল ম্যানার্সও শেখাতে থাকুন যাতে বাড়িতে বা বাইরে আপনাকে লজ্জার সম্মুখীন না হতে হয়।

সুপার পেরেন্ট সিন্ড্রোম

ক্লাস সিক্স-এর ছাত্র অর্ণব, তিন দিন হল বাড়ি ফেরেনি। খাতা কিনতে গিয়ে আর ফেরেনি। বাড়ি থেকে পুলিশে জানানো হয়েছে কিন্তু লাভ হয়নি। চতুর্থ দিনে হঠাৎই একজন ভদ্রলোক এসে অর্ণব-কে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায়। উনি জানান মর্নিং ওয়াক করতে গিয়ে লেকের ধারে বেঞ্চিতে ওকে শুয়ে থাকতে দেখেন। পোশাক-আশাক দেখে সন্দেহ হওয়াতে পাশে বসে জিজ্ঞেস করতেই অর্ণবই সবকিছু খুলে বলে। পরীক্ষায় নম্বর কম পাওয়ায় বাবার বকুনি আর মার খাওয়ার ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে।

ছোট্ট রিমা এখন ক্লাস থ্রি-তে পড়ে। কখনও গলায় কিছু আটকেছে বলে দাবি করে তো কখনও পেট ব্যথার ওজর। সবসময় চুপচাপ, ভয়ে ভয়ে থাকে। ঠিক করে খাবারও খায় না, একটু কিছু বললেই কেঁদে ফেলে। অথচ ডাক্তারের পরামর্শে সবকিছু পরীক্ষা করানোর পরে দেখা যায় সবই নর্মাল। আসলে এই দুটি বাচ্চাই নিজের আভিভাবকদের সুপার পেরেন্ট সিন্ড্রোমের শিকার।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের মতে, বহু অভিভাবকই নিজের সাফল্যের জন্য বাচ্চার উপর প্রেশার দেন এবং নিজেদের অজান্তেই বাচ্চাকে স্ট্রেস এবং ডিপ্রেশনের শিকার করে তোলেন। এই সব পেরেন্ট-রা নিজের বাচ্চাকে অপরের বাচ্চাদের থেকে সব ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে দেখতে চান। পড়াশোনা, খেলাধূলা, আরও নানা ধরনের অ্যাক্টিভিটিতে বাচ্চাকে পুশ করতে থাকেন। বাস্তব থেকে সরে গিয়ে যখন এই সন্তানরাই মা-বাবার আশা পূরণ করতে পারে না, তখন বাচ্চাদের মনে দ্বিধা, অবসাদ, দুঃখের পরিস্থিতি তৈরি হয়।

সাইকোলজিস্টদের মতে সাধারণ পরিবারের বাচ্চাদের থেকে ধনী পরিবারের বাচ্চারা ৩ গুণ বেশি চিন্তা এবং ডিপ্রেশনে ভোগে। এই বাচ্চাদের ভুল রাস্তায় পা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অনেকেই ড্রাগ নেওয়া শুরু করে। কখনও কখনও বাচ্চাদের নিজেদের উপরেই ঘৃণা তৈরি হয়। সুস্থ বিকাশের জন্য বাচ্চার যে-ধরনের পরিবেশের দরকার হয় সেটা তারা পায় না। স্কুলের লম্বা সময় কাটানোর পর, কোচিং ক্লাসের পড়া, নানা ধরনের অ্যাক্টিভিটির ক্লাস করার পরে, বাচ্চারা নিজের ক্রিয়েটিভিটি প্রকাশের অথবা লুকোনো ট্যালেন্ট দেখাবার সুযোগ এবং সময়, কোনওটাই পায় না।

সব মা-বাবাই চান তাদের সন্তান শুধু যে ক্লাসের পড়াতেই সব থেকে এগিয়ে থাকবে তা নয়, অন্যান্য অ্যাক্টিভিটিতেও পারদর্শিতা অর্জন করবে। পড়াশোনায় ভালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, কালচারাল ফিল্ডই বলুন বা স্পোর্টস– সব ক্ষেত্রেই বাচ্চাকে টপ্ পজিশনে থাকার জন্য অভিভাবকেরা জোর দিতে থাকেন।

আপনিও যদি সুপার পেরেন্ট সিন্ড্রোম-এর শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে মনোবিদদের দেওয়া এই টিপসগুলির উপর চোখ রাখুন এবং নিজের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করুন।

ভালোবাসা দিয়ে বোঝান

বাচ্চার ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের চিন্তা করাটা খুবই স্বাভাবিক। অনেক সময় মনোবল কম হওয়ার কারণে অনেক অভিভাবক নিজেকে অসুরক্ষিত ভাবে এবং এই মনোভাব বাচ্চার উপরেও প্রয়োগ করা শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে বাচ্চা নিজের উপর বিশ্বাস হারাতে থাকে। সুতরাং অভিভাবকদের উচিত, ভালোবাসার ছত্রছায়ায় বাচ্চাকে রেখে ভরসা দেওয়া যে, সে মা-বাবার কাছে সবদিক থেকে সুরক্ষিত। সব সময় আনন্দে থাকা এবং মুখে হাসি বজায় রাখা হল পজিটিভ মনোভাবের পরিচয়। অভিভাবককে দেখে বাচ্চাও শিখবে হাসিমুখে থাকতে। এতে বাচ্চার মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং অভিভাবকদের উপর ভরসা বাড়বে, যে সে যেমনই হোক, মা-বাবার সে প্রিয় পাত্র।

অপরের সঙ্গে তুলনা নয়

কোনও বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের বাচ্চার সঙ্গে নিজের বাচ্চার তুলনা কখনও করা উচিত নয়। কোনও পরীক্ষা বা প্রতিযোগিতায় যদি বাচ্চা কম নম্বর পায় বা অন্য বাচ্চাদের কাছে হেরে গিয়ে থাকে, তাহলে প্রথম হওয়া বাচ্চা বা জিতে যাওয়া বাচ্চাদের সঙ্গে তার তুলনা কখনওই করা উচিত নয়। বরং আদর করে বোঝানো উচিত, একবার হেরে গেলে কোনও ক্ষতি নেই, পরের বার আবার চেষ্টা করলেই হল। সাফল্য যে তার আসবেই সেই ভরসা বড়োদেরই বাচ্চাকে দিতে হবে। এতে বাচ্চার আত্মসম্মানে আঘাত লাগবে না।

উপদেশ দেওয়া বন্ধ করতে হবে

কথোপকথন অনেক সময় সমস্যার সমাধান করে কিন্তু এমনও হওয়া উচিত নয় যে বড়োরা খালি উপদেশ দেবার নামে চাপ সৃষ্টি করবে আর বাচ্চাকে সব শুনতে হবে। যদি এমনই পরিবেশ বাড়িতে হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, বাচ্চা বড়োদের কোনও কথাই শুনবে না।

বাচ্চার ক্ষমতা এবং সীমা বুঝতে হবে

বাচ্চাকে একের পর এক ক্লাস অথবা টিউশন জয়েন করিয়ে অভিভাবকেরা ঠিক কি ভুল করছেন সেটা বাচ্চার দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিচার করাটা বাঞ্ছনীয়। এমন না হয় যে অন্যের দেখাদেখি বা অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে মা-বাবা বাচ্চার উপর প্রেশার দিয়ে ফেলছেন। বাচ্চার নেওয়ার ক্ষমতা বা বোঝার শক্তি কতটা, সেটা না যাচাই করেই তাকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জোর দিতে গিয়ে অভিভাবকেরা, বাচ্চাদের ক্ষতি করেন। অপরের সন্তানের যোগ্যতা বিচার করে তার সঙ্গে নিজের বাচ্চার তুলনা করা কখনওই সঙ্গত নয়। বরং অপরের বাচ্চাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের বাচ্চার মধ্যে যা যা গুণ আছে সেগুলোই আরও ভালো ভাবে চর্চা করার সুযোগ করে দেওয়া দরকার। ধৈর্য ধরে ধীরে ধীরে যে অগ্রসর হতে পারে, তার জেতার সম্ভাবনাও তত বেশি থাকে।

বাচ্চার ইচ্ছেকে সম্মান করুন

বাচ্চাকে শাসন করা এবং আজ্ঞানুসারী হতে শেখানো খুবই দরকার এতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু কখনও কখনও বাচ্চাদের প্রতি বড়োদের উদারতা দেখানোও খুব প্রয়োজন। বাচ্চা যদি কখনও একলা থাকতে চায়, ইন্টারনেট অথবা মোবাইলে কারও সাথে চ্যাটিং করার ইচ্ছা প্রকাশ করে তাহলে মা-বাবার সেটা করতে দেওয়া উচিত। যদি বড়োরা বোঝেন যে বাচ্চা কিছু অন্যায় করছে তাহলে অতিরিক্ত শাসন বা অত্যাচার করার বদলে, বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলুন। মাঝেমধ্যে তাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে, স্বতন্ত্র ভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে এবং ভরসাও রাখতে হবে তার উপর।

ভালো কাজের প্রশংসা করুন

বাচ্চা ভুল করলে বড়োরা বকাবকি করেন কিন্তু ভালো কাজ করলে প্রশংসা করতে ভুলে যান কী করে? বাচ্চার প্রশংসা খালি ওর স্কুলের রিপোর্ট কার্ড অবধি সীমিত রাখা উচিত নয়। পড়াশোনা ছাড়াও সব ক্ষেত্রেই ওর পারফর্মেন্সের প্রশংসা করুন এবং বাচ্চাকে কিছু না কিছু উপহার দিন। একই সঙ্গে কাছে টেনে নিয়ে আদর করুন।

বাচ্চাটি যদি বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে কোনও ভালো কাজ করে, অপরের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে, অপরের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলেও বাচ্চার প্রশংসা করুন নয়তো সে ভালো কিছু করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারে।

হেরে যাওয়ারও দরকার আছে

বাচ্চাকে এমনভাবে তৈরি করা দরকার যাতে জীবনে শুধুমাত্র জিত হাসিল করার জন্য নয়, বরং ভালো কিছু করার লক্ষ্যে এবং একজন ভালো মানুষ হওয়ার লক্ষ্যে সে যেন কাজ করে যায়। জীবনে সাফল্য সবসময় আসে না, তাই বলে বাচ্চার প্রচেষ্টা-কে হেয় না করে তাকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

অনেক অভিভাবকেরা বাচ্চার সঙ্গে খেলার সময়, বাচ্চাকে খুশি করতে ইচ্ছে করেই হার স্বীকার করে নেন। এটা কখনওই করা উচিত নয়। বাচ্চাকে সবসময় চেষ্টা করার জন্য প্রেরণা দিতে হবে, নয়তো বাচ্চা কষ্ট না করেই সব ব্যাপারে জেতার চেষ্টা করবে। জেতার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের হার-টাকেও সহজ ভাবে যাতে সে মেনে নিতে পারে, সেটা ছোটো থেকেই তাকে শেখাতে হবে।

বাড়ির পরিবেশ দায়ী

বাচ্চার শিক্ষা শুরু হয় বাড়ি থেকেই। বড়োদের মধ্যে থেকেই আত্মবিশ্বাস, বিবেচনাবোধ, সাহস, দৃঢ়তা এবং ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে বেড়ে ওঠে সে। বাড়িতে বড়োদের অসম্মান করা, ঝগড়াঝাঁটি, গালিগালাজ, মা-বাবার মদ-সিগারেটে আসক্তি ইত্যাদি বাচ্চার মনকে প্রভাবিত করে। বাচ্চা যা দেখে তাই শেখে।

বড়োদের ফ্রাসট্রেশন বাচ্চার উপর বার না করা

অফিস এবং বাড়ির টেনশন বাচ্চার সামনে প্রকাশ হওয়া উচিত নয়। এতে সে ওই পরিবেশ এড়ানোর চেষ্টা করবে এবং বাড়িতে সময় না দিয়ে বাইরে থাকাই পছন্দ করবে বেশি। বাচ্চা অভিভাবকদের আনন্দে থাকতে দেখতে চায়, যাতে তারা নিজেদের সমস্যা বড়োদের কাছে খুলে বলতে পারে। বাইরের ঘটনায় হওয়া টেনশন বা রাগের কারণে বাচ্চার উপর হাত তোলা কখনও বাঞ্ছনীয় নয়।

নিজের সঙ্গে তুলনা কখনও করবেন না

নিজের শৈশবে যা কিছুর অভাব ঘটেছে সেগুলো মা-বাবা হয়ে যাওয়ার পর, বাচ্চাকে দিতেই হবে এমন কোনও নিয়ম নেই। মা-বাবা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, গায়ক বা গোল্ড মেডেলিস্ট হতে পারেন, নামি খেলোয়াড় হওয়াও অসম্ভব নয়। তাই বলে বাচ্চাকেও মা-বাবার পেশায় যেতে হবে, এই আশা রাখাটা উচিত নয়। বাচ্চার নিজের শখ এবং সীমাবদ্ধতা আছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। নিজের কর্তব্য শুধু পালন করে যেতে হবে। বাচ্চার প্রতিভা বিকশিত করার জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি করাটার দায়িত্ব অভিভাবকদেরই।

 

 

শিশুকে শেখান সহবত

ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, ‘ওয়েল বিগান ইজ হাফ ডান’। অতএব, শুরুটা ভালো হওয়া চাই। ভিত সুন্দর এবং মজবুত হলে তবেই ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। শিশুরা কাঁচা বাঁশ কিংবা নরম মাটির মতো। তাই নরম থাকা অবস্থায় তাকে ইচ্ছে মতো সুন্দর রূপ দেওয়া যায়। আর শিশুকে সুন্দর ভাবে গড়ে তোলার শিল্পী বা কারিগর কিন্তু শিশুর মা-বাবা। শুধু ভালো স্কুল-এ ভর্তি, ভালো লেখাপড়া কিংবা পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালেই শিশুর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে তোলা সম্ভব নয়। শিশুকে সহবতও শেখাতে হবে। যাতে তার ব্যবহারে ভদ্রতা, নম্রতা এসব বজায় থাকে। যেন সে মিশুকে এবং দয়ালু হয়, স্বার্থপর না হয়, অন্যকে সাহায্য করে, সহানুভূতি দেখায়। কারণ, শিশুরাই সমাজ এবং দশের ভবিষ্যৎ। মনে রাখবেন, সহবত শেখানো এবং দেখানো, দুটি বিশেষ গুণ। এই গুণ-কে ছোটো থেকে লালন করতে পারলে নিজের এবং অন্যের সবার-ই মঙ্গল। মা-বাবা যদি তাদের সন্তানকে ছোটো থেকে সহবত না শেখান, তাহলে যে কী কী হতে পারে, তেমন-ই কিছু ঘটনার উল্লেখ করছি এখানে।

বিয়ের পাকা দেখা চলছে। মেয়ের বাড়ির লোকেরা উপস্থিত ছেলের বাড়িতে। টেবিলে জল, মিষ্টি, চা প্রভৃতি দেওয়া হয়েছে অতিথিদের। এমন সময় ওই বাড়ির একটি বাচ্চা ছেলে নিজের ছোট্টো সাইকেলে চড়ে এ-ঘর, ও-ঘর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ওকে বাড়ির কেউ থামাচ্ছেও না। অতএব, বিপর্যয় ঘটার-ই ছিল! বাচ্চাটি সাইকেলে চড়ে জোরে এসে ধাক্বা মারল টেবিলে। মুহূর্তের মধ্যেই চা, মিষ্টি, জল সমস্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, কাচের বাসনপত্র ভেঙে একাকার। অনেকের গায়ে গরম চা পড়ে সে এক করুণ পরিস্থিতি। ‘বাচ্চা ছেলে কী আর করা যাবে’ বলে হাসিমুখে তাৎক্ষণিক ভালো প্রতিক্রিয়া দিলেও, পরে মেয়ের বাড়ির লোকেরা সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। অতিথিদের সামনে কী সহবত দেখাবে বাচ্চা, তা যে বাড়িতে শেখানো হয় না, সেই বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দিলে মেয়ে সুখী হবে না, এমনটাই ধরে নিয়েছিলেন মেয়ের বাড়ির লোকেরা। কার্যত, বিয়ের সম্বন্ধটা ভেঙে যায়।

স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ছেলে হওয়া সত্ত্বেও, তাকে যে ঠিক মতো সহবত শেখানো হয়নি, তারই প্রমাণ পাওয়া গেল একটি ঘটনায়। প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে তাঁর ছেলে রিন্টু ছাড়াও কয়েকজনকে পড়াতেন এক শিক্ষক। একবার পড়ুয়া এবং শিক্ষককে পায়েস খেতে দিয়েছেন রিন্টুর মা। আর রিন্টুকে বলেছেন পড়া শেষ হলে খেতে দেবেন। এ কথা শুনে রিন্টু হঠাৎ উঠে চলে গেল। খানিক বাদে আবার পড়ার ঘরে ঢুকল হাসতে হাসতে। এর ঠিক এক মিনিট বাদে রিন্টুর মা ভেজা কাকের মতো হয়ে ঢুকলেন পড়ার ঘরে এবং রুটি গড়ার বেলনা দিয়ে রিন্টুকে পেটাতে থাকলেন শিক্ষকের সামনেই। কী হয়েছে শিক্ষক জানতে চাইলে রিন্টুর মা জানালেন, পড়া শেষ হলে খেতে দেব বলায়, গায়ে এক বোতল জল ঢেলে দিয়ে এসেছে। গড়া রুটি, পায়েস সব নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, শীতকালে ফ্রিজে রাখা কনকনে ঠান্ডা জল মাথায় ঢাললে কী কষ্ট হতে পারে, তা বেশ টের পেয়েছিলেন রিন্টুর মা।

বাড়িতে আসা অতিথিদের মুখোমুখি বসে খাচ্ছিল পিঙ্কু। হঠাৎ সজোরে হাঁচি দিল নাকের সামনে হাত না রেখে। ব্যস! নাকের সর্দি গিয়ে পড়ল অতিথির গায়ে এবং খাবারে। খাওয়া পণ্ড হল অতিথির।

এমন আরও অনেক অপ্রিয় ঘটনার খবর আসতে থাকে কানে। কেউ হয়তো হাত দিয়ে মুখ না ঢেকে জোরে জোরে হাই তুলছে, কেউ শব্দ করে খাবার চিবোচ্ছে, বড়োরা যখন কথা বলছে তখন হঠাৎ-ই তাদের মাঝে লাফ দিয়ে পড়ছে, কেউ এলোপাথাড়ি ঢিল ছুঁড়ছে, কেউ অন্য কোনও বাচ্চার খেলনাপত্র কেড়ে নিচ্ছে, কেউ ধারালো কিছু দিয়ে অন্যকে খুঁচিয়ে দিচ্ছে, অন্যের চুল ধরে টানছে, মারছে, জামা-প্যান্ট-এ কালির দাগ কেটে দিচ্ছে। যে-কোনও ডে-কেয়ার বা ক্রেশ-এর এটি পরিচিত দৃশ্য। অর্থাৎ শিশুরা হাজারো অন্যায় করছে সঠিক গাইড-এর অভাবে।

অবশ্য এর ঠিক উলটো ছবিও দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে।

নিয়ম-নীতি, উচিত-অনুচিত এসব জেনে-বুঝে কাজ করে অনেকে। হাত না ধুয়ে খাবার খেলে যে অসুখ হতে পারে, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা ছোটো থেকেই শেখাতে হবে। খাবার টেবিল-এ কী সহবত দেখাতে হবে, তাও অত্যন্ত জরুরি বিষয়। হাঁচি, কাশির পর কিংবা বড়োদের গায়ে পা লাগলে যে ‘সরি’ বলতে হবে, এটা বাচ্চাদের অবশ্যই শেখাতে হবে। আস্তে কথা বলা, অন্যের কথার মাঝে কথা না বলা ইত্যাদি শেখানোও আবশ্যক। কেউ কিছু দিলে মা-বাবার অনুমতি নিয়ে খাওয়া, অনুমতি নিয়ে কোথাও কিংবা কারওর সঙ্গে যাওয়ার অভ্যাসও গড়ে তোলাতে হবে। যত্রতত্র ময়লা না ফেলে ওয়েস্টবিন-এ ময়লা ফেলা, যেখানে খুশি মলমূত্র ত্যাগ না করে শৗচালয়ে ত্যাগ করাও শেখাতে হবে ছোটো থেকেই। অনুমতি না নিয়ে কারও ঘরে ঢোকা যে উচিত নয়, তাও যেন শৈশবেই শিখে রাখে বাচ্চারা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ছেলে বাচ্চাদের ছোটো থেকেই শেখাতে হবে, মেয়েদের সম্মান করতে।

নিজের বাড়ির পাশাপাশি রাস্তায়, উৎসব-অনুষ্ঠানে, অন্যের বাড়িতে, শিক্ষাক্ষেত্রেও কী-কী সহবত দেখাতে হবে, তাও ছোটো থেকেই শেখাতে হবে। বাম দিকের ফুটপাথ ধরে হাঁটা, রেড সিগনাল দেখে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হওয়া, অন্যকে ধাক্বা না দিয়ে চলা প্রভৃতি শেখানোও যেমন জরুরি, তেমনই উৎসব অনুষ্ঠানে খাওয়ার জন্য হ্যাংলামো না করে সবার সঙ্গে বসে ঠিকঠাক ভাবে খাওয়া, ভিড়ের মধ্যে লাফালাফি না করে বড়োদের হাত ধরে থাকা, ফুলের গাছে কিংবা সাজানো কোনও কিছুতে অযথা হাত না দেওয়া প্রভৃতি নিয়ম-নীতিগুলি বুঝিয়ে দিতে হবে বাচ্চাদের। শিক্ষাক্ষেত্রে সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করা, অকারণে অন্যের বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে মিথ্যে নালিশ না করা, অন্যের ব্যাগ থেকে কোনও জিনিস তুলে না নেওয়া, অন্যের খাবার জোর করে না খাওয়া, ঝগড়া না করা, লেখাপড়ায় মনযোগ দেওয়া প্রভৃতি শেখানো অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষক-শিক্ষিকার কথা ঠিকমতো শোনা, পরীক্ষার সময় অন্যের খাতা দেখে কিংবা বই দেখে যাতে না লেখে, লিখলে কী শাস্তি হতে পারে তা বন্ধুর মতো বুঝিয়ে দিতে হবে ছোটো থেকেই।

বাচ্চাদের সামনে ঝগড়া-মারামারি-গালমন্দ না করা, অন্যদের এসব করতে না দেওয়ার সহবত দেখাতে হবে মা-বাবাকে। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বাচ্চাদের সামনে ধূমপান, মদ্যপান করা, স্বামী-স্ত্রী-র শারীরিক ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়া প্রভৃতি থেকেও স্ট্রিক্টলি বিরত থাকতে হবে। আর যদি দেখেন বাচ্চা কোনও ভাবে সহবত শিখছে না, কথা না শুনে চিৎকার-চ্যাঁচামেচি করে একরোখা স্বভাবের হয়ে উঠছে, তাহলে ভাববেন সমস্যার শিকড় লুকিয়ে আছে গভীরে। আর নিজেরা যদি সমস্যার সমাধানে অসফল হন বারংবার, তাহলে আর দেরি না করে কোনও ভালো মনোবিদ কিংবা মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে বাচ্চাকে নিয়ে গিয়ে কাউন্সেলিং করাবেন অবশ্যই। নয়তো এর ফল ভুগতে হবে আপনাদের এবং দেশ-বিদেশের সুস্থ নাগরিক সমাজকে।

গড়ে তুলুন সন্তানের ভবিষ্যৎ

অভিভাবকেরা সকলেই চান একটা ধরাবাঁধা রুট ম্যাপ, যেটা ফলো করতে পারলেই সন্তান ভবিষ্যতে সাফল্যের চূড়ায় বসে রাজত্ব চালাতে পারবে। সৎ এবং ভদ্র হিসেবেও সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখতে চান অভিভাবকেরা। এই সব কিছু ইচ্ছা সফল করে তোলার ডেফিনিট ফর্মুলা হয়তো কিছুই নেই কিন্তু বিজ্ঞানভিত্তিক বহু প্রমাণ আছে যার উপর ভিত্তি করে বলা চলে যে অভিভাবকেরা কীভাবে সন্তানকে বড়ো করছেন তার উপরে সন্তানের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে।

বেশিরভাগ মা-বাবাই বিশ্বাস করেন তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ সাফল্য, নির্ভর করে তাদের অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্স-এর উপর। আজকের কমপিটিটিভ ওয়ার্ল্ডে ভালো রেজাল্ট-ই একমাত্র বাচ্চাকে অন্যান্যদের তুলনায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এই ধারণা অনেকেরই আছে। কিন্তু এটা জেনে আশ্চর্য হবেন, পড়াশোনা ছাড়াও আরও অনেক বিষয় আছে যেগুলোর উপর বাচ্চার সাফল্য নির্ভর করছে। বহু রিসার্চ এবং পরীক্ষা চালাবার পর একটাই সিদ্ধান্তে পৌঁছোনো গেছে যে, সব বিষয়ে জোর খাটিয়ে বাচ্চাকে কিছুতেই সঠিক রাস্তায় আনা যায় না উলটে তার প্রতি অবিচারই করা হয়। সুতরাং জানতে হবে অভিভাবক হিসেবে সন্তানের জন্য কী করা উচিত এবং কী নয়।

গৃহকর্মে সহযোগিতা

সেদিন আর নেই যখন বাচ্চারাও বাড়ির কাজে মা-বাবাকে সাহায্য করত যেমন, ময়লা ফেলা, বাগানে জল দেওয়া, এক ছুট্টে দোকান থেকে প্রয়োজনীয় কোনও জিনিস এনে দেওয়া ইত্যাদি। বাচ্চাদের উপর অলরেডি অ্যাকাডেমিক প্রেশার ছাড়াও, টিউশন, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটি ইত্যাদির চাপ তো আছেই সুতরাং বাড়ির কাজে মা-বাবাকে সাহায্য করাটা তার সময়ের অপচয় বলেই ধরে নেওয়া হয়।

কয়েকদিন আগেই স্কুলে মেয়েকে আনতে গিয়ে কয়েকজন অভিভাবকের মধ্যে কিছু কথাবার্তা কানে এল। একজন মা, অপর আর একজনকে বলছিলেন, ‘আমি মেয়েকে বাড়ির কোনও কাজ করতে দিই না। জল ভরা বা আমাদের বাড়ির কুুকুরটাকে একটু বাইরে ঘুরিয়ে নিয়ে আসা মানে সময় নষ্ট করা আর পড়াশোনার ক্ষতি।’

ওনাদের মধ্যে আর এক মহিলার উত্তর কানে এল, ‘ঠিকই বলেছেন, আর মাত্র একমাসই বাকি পরীক্ষার। ছেলে যখন চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাবে তখন  রান্না করতে পারে কিনা বা বিছানা ঠিকমতো করতে পারে কিনা এই নিয়ে কেউ কি মাথা ঘামাবে? আমি তো পড়াশোনার সময় ছেলেকে এক গেলাস জলও নিজেকে নিতে দিই না। আমিই সবকিছু এগিয়ে দিই।’

আজকের দিনে মা-বাবা, সন্তানকে বাড়ির কাজ করতে দেন না এই ভেবে যে, সে পুরো সময়টা পড়াশোনায় দেবে যেটা একমাত্র পারে তাকে সাফল্য এনে দিতে। অথচ বহু প্রমাণ আছে, যেখানে বাড়িতে করা কাজেরও একটা অবদান রয়েছে, ভবিষ্যতে সাক্সেসফুল হয়ে ওঠার পিছনে। মনে রাখতে হবে বাড়ির দৈনন্দিন কর্মসূচি বাচ্চার মধ্যে দায়িত্ববোধের বিকাশ ঘটায় এবং এই শিক্ষাও দেয় যে বাড়ির কাজটাও অন্যান্য প্রয়োজনের মতোই আমাদের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত।

সামাজিক যোগ্যতা

অভিভাবক হিসেবে অনেক সময়েই আমরা বাচ্চার সামাজিক এবং মানসিক দক্ষতার বিকাশ ঘটাবার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিই না।

যে-কোনও সংবেদনশীল বাচ্চা, যে অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে, নিজের সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা রাখে– তাদেরকেই মনে করা হয় সামাজিক যোগ্যতার অধিকারী। এই সব বাচ্চার অভিভাবকেরা চেষ্টা করেন এই গুণগুলিকেই আরও বিকশিত করার এবং বহু অধ্যয়ন করে প্রমাণিত হয়েছে ভবিষ্যতে সাফল্য অর্জন করতে হলে এই গুণগুলিও মস্ত সহায়ক। যে বাচ্চার মধ্যে এই গুণগুলির অভাব থাকে তারা বেশিরভাগই বদ অভ্যাসের শিকার হয়ে পড়ে এবং সময় ও সুযোগের অপব্যবহার করে ফেলে। সুতরাং এক্ষেত্রে অভিভাবকের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়, সন্তানকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। এছাড়াও বাচ্চা নিজে থেকে অগ্রসর হয়ে কোনও সোশ্যাল কাজ করতে চাইলে অথবা কোনও দলগত অ্যাকটিভিটি-তে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়।

ঘুমের প্রয়োজনীয়তা

রাত্রে দেরি অবধি জোর করে বাচ্চাকে পড়ানো অথবা ভোরবেলায় ঘুমন্ত বাচ্চাকে জোর করে ঘুম ভাঙিয়ে পড়তে বসানো কখনওই উচিত কাজ নয়। ঘুম পর্যাপ্ত না হলে বাচ্চারা অমনোযোগী হয়ে পড়ে, কোনও কিছু শিখতে দেরি করে এবং লক্ষ্য স্থির করতে পারে না। ঘুমটাকে সময়ের অপচয় ভাবা ঠিক নয়। বরং টাইম ম্যানেজমেন্ট ঠিক মতো করতে পারলে, বাচ্চা নিজে থেকে যতটা সময় জেগে থাকবে তার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করতে তাকে সাহায্য করুন। বাচ্চার ব্রেন এবং শরীর যতটা আরাম চায় তাকে ততটা দেওয়া একান্ত দরকার।

অত্যধিক প্রেশার দেওয়ার অভ্যাস

অভিভাবকেরা অনেক সময় ভয়ে থাকেন, স্কুলে সহপাঠীদের কতটা চাপ তাদের সন্তানকে সহ্য করতে হচ্ছে এবং এটার কোনও খারাপ প্রভাব তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের উপর পড়বে না তো, এই চিন্তাও ক্রমাগত তাদের মনের শান্তি ব্যহত করে। এটা জানেন কি, অভিভাবক হিসেবে আপনার প্রভাবও নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে আপনার সন্তানের ভবিষ্যতের উপর। যেমন সন্তানকে ছোটোখাটো সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেওয়া, কী করলে তাদের জীবন আরামদায়ক হবে সেটা সব সময় পয়েন্ট আউট করা ইত্যাদি।

যে-মুহূর্তে সন্তানকে স্ট্রাগল করতে দেখেন মা-বাবা, তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন তারা। এর ফলে বাচ্চা নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়া শিখতে পারে না এবং বড়ো হয়ে সর্বগুণসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারে না।

স্বাভাবিক ভাবেই মা-বাবা চাইবেন, সন্তানকে অসাফল্যের বিপদ থেকে সবসময় গার্ড করতে। কিন্তু মা-বাবার আসল দায়িত্ব হল সন্তানকে ডানা মেলে উড়তে সাহায্য করা, তাদের ডানা দুটো কেটে দেওয়া নয়। নিজেদের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা দিতে হবে যেমন, ছোটোদের তেমনি তাদের স্বাধীনতাও দিতে হবে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। ওভারবিয়ারিং পেরেন্টদের বাচ্চার উপর প্রতিনিয়ত নিয়ন্ত্রণ, বাচ্চার জীবনভরের জন্য মানসিক ক্ষতি করে দিতে পারে। ফলে বাচ্চার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থেকে যায় এবং বড়ো হয়েও তার মধ্যে এই অভাব রয়েই যায়। পেরেন্ট হিসেবে বাচ্চাকে শুধুমাত্র গাইড করা উচিত। কীসে বিপদ হতে পারে তার একটা পরিষ্কার ছবি বাচ্চার সামনে তুলে ধরা দরকার এবং  সে যেটা করবে তার কী কী পরিণতি এবং প্রভাব পড়বে সেটাও বুঝিয়ে বলা উচিত।

অভিভাবকদের অত্যধিক চাপ

মাঝেমধ্যেই বড়োদের বলতে শোনা যায় ‘আমি চাই আমার সন্তান এই করবে’। কিন্তু তারা যেটা চান তাদের সন্তানও কি ওই একই জিনিস করতে আগ্রহী? মা-বাবা চান, তাদের সন্তানের মাধ্যমে নিজেদের স্বপ্ন সাকার করতে। নিজেরা জীবনে যেটা করতে পারেননি, সেটাকেই সাকার করে তোলার ইচ্ছেটা তারা বাচ্চার ঘাড়ে তুলে দিতে চেষ্টা করেন। এতেই বোঝা যায় কেন অনেক সময় বাচ্চারা, মা-বাবার বেছে দেওয়া রাস্তায় চলতে বাধ্য হয়, নিজেদের আগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও।

সেল্ফ ডিসিপ্লিন

সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রা নানাভাবে সাহায্য করে মানুষের জীবনে সাফল্য এনে দিতে। সেল্ফ ডিসিপ্লিনড বাচ্চা জীবনে একটা লক্ষ্য স্থির করে নেয় এবং সেটাকেই সাকার করার চেষ্টা করতে থাকে। এরা নিজেদের রাগ কন্ট্রোল করার ক্ষমতা রাখে, পথের দিশা সঠিক রাখে, ভুল ধরিয়ে দিলে নিজেকে ঠিক করে নিতে লজ্জা বোধ করে না। এই ধরনের মানুষ নিজের পরিবারের সংস্কারও মেনে চলে। এদের এই মানসিকতার জন্য এদের মা-বাবাও জীবনের কিছু মূল্যবান শিক্ষা এদের প্রথমেই শিখিয়ে রাখেন সুতরাং এরাই যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে তখন জীবনের যে-কোনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে এরা ভয় পায় না।

অভিভাবকদের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক

আমরা সকলেই ভালো করে জানি মা-বাবার মধ্যে সম্পর্ক অনেকটাই বাচ্চাকে প্রভাবিত করে। মা-বাবার সুখী দাম্পত্য ইমোশনালি সাউন্ড রাখে বাচ্চাকে। মা-বাবার মধ্যে ভালো সম্পর্ক এবং তাদের নিজস্ব শৈশবের স্মৃতি বাচ্চাকে যেমন সুস্থ ভবিষ্যৎ প্রদান করে তেমনি ইমোশনালি, অ্যাকাডেমিকালি ও সোশ্যালি তাকে হেলদি এবং স্ট্রং হতেও সাহায্য করে। বাড়ির পরিবেশে বাচ্চার প্রথম শিক্ষার হাতেখড়ি সুতরাং সেটাই সবথেকে হেলদি হওয়া আগে প্রয়োজন যাতে বাচ্চা সম্পর্কের গুরুত্ব বুঝতে শেখে। ভবিষ্যতে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও যাতে বিভিন্ন সম্পর্কের আনাগোনার মধ্যেও সে সম্পর্ককে সম্মান দিতে পারে।

অভিভাবক হিসেবে বাচ্চাদের রোল মডেল মা-বাবাকেই হতে হবে। কারণ, অনুপ্রেরণার প্রয়োজন পড়লে বাচ্চা, মা-বাবার দিকেই প্রথম দৃষ্টিপাত করবে, সাপোর্টের প্রয়োজন হলে তাদের পাশে পাবে এবং সাফল্যে খুশি হলে মা-বাবার সঙ্গেই আগে শেয়ার করবে।

 

জীবনসঙ্গী হিসেবে পুরুষের মধ্যে কী দেখতে পছন্দ করে মেয়েরা?

স্বাভাবিক ভাবেই নারী পুরুষ একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরা পুরুষদের মধ্যে বিশেষ কিছু গুণের সন্ধান করে যেটার পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েরা নিজেদের সুরক্ষিত বলে মনে করতে পারে।

১) লম্বা পুরুষ মেয়েদের বেশি পছন্দ। স্বাভাবিক পুরুষদের যা হাইট হয়, তার থেকে কিছুটা বেশি লম্বা হলে মেয়ে্দের দৃষ্টি সহজেই আকর্ষিত হয়।

২) পুরুষদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজের উপর বরাবর মেয়েদের দৃষ্টি থাকে। তার চলাফেরা কেমন, গলার স্বর কেমন, কথাবার্তার ধরন কেমন, কাঁধ সোজা করে কনফিডেন্টলি হাঁটাচলা করেন কিনা সে বিষয় মেযেরা বিশেষ খেয়াল রাখে। মেয়েলি পুরুষ, কোনও মেয়ে সে ভাবে পছন্দ করে না।

৩) পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেয়েদের আকর্ষণ বেশি করে। ছেলেদের শরীর থেকে কোনও রকম দুর্গন্ধ বেরোলে মেযেরা বরদাস্ত করতে পারে না। চুল, দাড়ি মেইনটেন করাটা খুব প্রযোজন। হাত ও পায়ের নখ পরিষ্কার রাখা এবং সময়ে সময়ে নখ কাটার ব্যাপারেও খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়। এছাড়াও পরিষ্কার, ইস্তিরি করা পোশাকে পুরুষদের দেখতে চায় মেযেরা।

৪) দাযিত্ববান এবং ম্যাচিওরিটি আছে এমন পুরুষকেই পছন্দ মেয়েদের। বেশি কথা বললে বা না ভেবেচিন্তে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানসিকতা মেয়েদের খুবই অপছন্দের। ছোটো ছোটো কথায় য়ে-সব পুরুষ ধৈর্য হারিয়ে ফেলে, মেযেরা তাদের থেকে দূরত্ব রাখতেই পছন্দ করে।

৫) য়ে-পুরুষ মেয়েদের পিছনে পিছনে ঘোরে নিজের সম্মানের পরোয়া না করে, তেমন পুরুষ মেয়েদের কাছে বিশেষ অপছন্দের। রিজার্ভ কিন্তু কম অ্যাটিটিউড-যুক্ত ছেলেদেরকেই বেশি পছন্দ করে মেযেরা।

৬) ছেলেদের মধ্যে সেন্স অফ হিউমার থাকাটা মেয়েদের চোখে অন্য মাত্রা এনে দেয়। বোরিং পার্সোনালিটি একেবারেই পছন্দ নয় মেয়েদের। সিরিয়াস আবহাওয়াকে মুহূর্তে হালকা করে দিতে পারে, এমন গুণের প্রতি মেযেরা বেশি আকর্ষণ বোধ করে।

৭) যাদের পার্সোনালিটি কম, নিজের ব্যাপারে সব কিছু বাড়িয়ে বলতে ভালোবাসে মেয়েদের ইমপ্রেস করার জন্য, তাদের থেকে মেযো শত হাত দূরে থাকতে পছন্দ করে। পুরুষের মধ্যে তার নিজস্ব গুণটাকেই মেযেরা দেখতে চায়, কোনও রকম নকল ব্যবহার মেযেরা অত্যন্ত অপছন্দ করে।

৮) মেযেরা চায় য়ে-ছেলেটি তার জীবনসঙ্গী হবে, সে য়েন তাকে সম্মান করে। মেয়েটির বাড়ির লোকেদের প্রতিও সম্মান রাখাটা জরুরি।

৯) শারীরিক ভাবে ফিট এবং স্মার্ট পুরুষদের মেযেরা পছন্দ করে। শরীরে কোথাও মেদ অথবা স্থলতা মেযেরা দেখতে চায় না। স্থল শরীরে মেয়েটির সামনে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আপনি তার রিজেকশন লিস্টে চলে য়েতে পারেন।

১০) অহংকারী পুরুষ মেযেরা পছন্দ করে না। তারা চায় পছন্দের মানুষটির সঙ্গে কমফোর্টেবল ফিল করতে। সম্পর্কে সংকোচ যদি থাকে সেই সম্পর্ক বেশি দূর গড়াতে পারে না।

 

পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব