শিশুমনে বিদ্বেষ, কুমন্তব্য করার প্রবণতা, অপরকে নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা অথবা বড়োদের কাছে তাদের নামে দোষারোপ করার অভ্যাস সাধারণত তৈরি হয় বাড়ির পরিবেশ থেকেই।
বাড়িতে বড়োদের মধ্যে কোনওরকম মুখরোচক আলোচনা, অপছন্দের মানুষদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা বাচ্চাদের সামনে, ইত্যাদি থেকেই বাচ্চার মন বিষিয়ে Hatred যেতে আরম্ভ করে। তারা এই ধরনের গল্পগুজবের প্রতি একটু বেশিই আকর্ষণবোধ করে।
অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকেরাই বাচ্চার মনে বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের জন্ম দেন। বাড়িতে মা-বাবারাই বাচ্চাকে অনেক সময় শেখান কোনও এক বিশেষ ব্যক্তির উপর নজর রাখতে কিংবা যদি মা-বাবা দুজনেই চাকুরিরতা হন তাহলে বাড়িতে থাকা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের উপর সবসময় নজর রাখতেও অনেক সময় তারা সন্তানদের শিখিয়ে দেন। এর উদ্দেশ্য সবসময় মহৎ হয় না।
এর উলটোটাও ঘটে থাকে। বাড়ির বয়স্ক মানুষরাও ছেলে, ছেলের বউদের বাইরে বেড়াতে যেতে দেখলে, শিশুদেরই তারা বেছে নেন, এটা জানতে যে তারা কোথায় গিয়েছিল, বাইরে কী কী করল সকলে মিলে ইত্যাদি। এই ধরনের দ্বিচারিতার মধ্যে পড়েই শিশু মিথ্যা বলতে শেখে, বিদ্বেষ জন্ম নেয় তার মনে। বড়োদের কাছে নানা অভিসন্ধি লুকিয়ে রাখাটাই তারা শ্রেয় মনে করে। নিজের মনে বানিয়ে বানিয়ে যে-কোনও সাধারণ ঘটনাকে মুখরোচক করে তোলার প্রবৃত্তি ধীরে ধীরে জন্ম নেয় তার ভিতর। এছাড়াও নিজের দোষ ঢাকতে খুব সহজে মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং অপরের সম্পর্কে মনগড়া কাহিনি তৈরি করে ব্যঞ্জনা সহকারে বড়োদের কাছে ঘটনার বিবৃতি দেয়।
বাড়িতে যে-ধরনের আচরণে শিশু অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, সেটারই প্রতিফলন ঘটে বন্ধু মহলেও। সহপাঠীদের নামে মিথ্যা নালিশ করা, টিচারের কাছে গিয়ে সহপাঠীদের সম্পর্কে মিথ্যা অভিযোগ করা, বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের কারণে ক্লাসে সহপাঠীকে হেয় করা, তার ব্যাগে নিজের জিনিস লুকিয়ে রেখে সকলের সামনে তাকে চোর প্রতিপন্ন করা ইত্যাদি নানাবিধ বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করতে দেখা যায়।
সাবধান হন : যদি দেখেন আপনার বাচ্চা বাড়িতে এসে আশেপাশের প্রতিবেশীদের সম্পর্কে রোজ মুখরোচক তথ্য আপনাকে শোনাচ্ছে, তাহলে সাবধান এবং সজাগ হয়ে যান। এই অভ্যাস আপনার সন্তানের সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্ব নষ্ট করে দিতে পারে। এমনকী বাচ্চার কল্পনাশক্তি তাকে অবসাদগ্রস্তও করে তুলতে পারে এবং বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে সরে যেতে পারে তার শিশুমন।