রঞ্জনার বয়স যখন মাত্র ষোলো, তার সঙ্গে পরিচয় Relation হল বছর কুড়ির রাতুলের সঙ্গে। রঞ্জনার বাবা কর্পোরেট অফিসে চাকরি করেন আর মা শিক্ষিকা। এদিকে রাতুলের বাবা-মা বস্তিতে ঘরভাড়া নিয়ে থাকেন আর ছেলে ‘গাড়ির মেকানিক’। চেহারাটা সিনেমার নায়কের মতো যা দেখে রঞ্জনা, রাতুলের প্রতি আকর্ষিত হয়। গভীর প্রেম ছিল কিনা জানা নেই, তবে একদিন দুজনে একসঙ্গে পালাল। এরপর রঞ্জনার জীবনে অভাব, অনটন, অবিশ্বাস এবং দোষারোপের অন্ধকার ঘনিয়ে আসতে সময় লাগল না। এক বছরের চেষ্টায় অবশেষে পুলিশ তাদের সন্ধান পায় এবং রাতুলকে গ্রেপ্তার করে রঞ্জনাকে তার মা-বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সম্প্রতি বাড়ির পছন্দেই রঞ্জনার অন্যত্র বিয়ে হয়েছে যথেষ্ট সচ্ছল পরিবারে। বয়ফ্রেন্ড-এর সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা এবং তার সঙ্গে জড়িত অভাব-অনটনের দীর্ঘ একটা সময় পেরিয়ে আসা আজও রঞ্জনাকে যতটা না পীড়া দেয়, তার থেকেও বেশি কষ্ট দেয় রঞ্জনার মা-বাবাকে।

আজকাল যুগটাই এরকম। স্বাধীনতার ভুল অর্থ আজকালকার ছেলেমেয়েদের মনে গভীরভাবে গেঁথে গেছে। এই যুগের মডার্ন, আর্থিক ভাবে স্বাধীন মেয়েরা মনে করে তাদের নিজেদের পছন্দটাই ঠিক। কিছুদিন মেলামেশা করেই তারা সবকিছু যাচাই করে নিতে পারছে। সুতরাং শুধু শুধু মা-বাবার মতামতের কী প্রয়োজন আছে। যেখানে জীবন অতিবাহিত করতে হবে তাদের নিজেদের সেখানে অভিভাবকের দায়িত্বের উপর নির্ভর করার প্রয়োজনীয়তা কোথায়? আজকের মেয়েরা বিশ্বাস করে, পারফেক্ট জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতে তারা নিজেরাই সক্ষম।

কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই দম্পতির ‘প্রেম-বিবাহ’ Relationship ভবিষ্যতে সফল হয়, কিন্তু বেশিরভাগই দেখা যায় বিবাহজনিত নানা সমস্যার জেরে বিবাহিত জুটিতে ভাঙনের কালো ছায়া নেমে আসতে। বিয়ের আগে মেলামেশা পর্যায়ে ছেলে-মেয়ে উভয়েই নিজেদের দুর্বলতা একে-অপরের কাছে লুকোবার চেষ্টা করে, যা বিয়ের পরে একসঙ্গে যখন থাকতে হয়, দোষগুলি চোখের সামনে এক এক করে স্পষ্ট হতে থাকে। সুতরাং ভুল একটা ডিসিশন নেওয়া মানেই তার ফলাফলও কখনও ভালো হতে পারে না, এটা জেনেই এগোনো উচিত।

বিবাহিত পুরুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়া

বিবাহিত পুরুষকে (যার স্ত্রী বর্তমান আছে এবং ডিভোর্সও হয়নি) বিয়ে করে সংসার করা, সমাজ এবং আইনের চোখে গুরুতর অপরাধ। ২৯ বছর বয়সি শর্মিলা অফিসেরই ওর থেকে ৫ বছরের সিনিয়র অভিজিতের সঙ্গে আলাদা একটা ফ্ল্যাটে থাকে। বউয়ের সঙ্গে বনিবনা নেই এবং বউয়ের চরিত্র খারাপ এই অজুহাতে অভিজিৎ শর্মিলার মন জয় করে। এরপর শিগগির ডিভোর্স হয়ে গেলেই শর্মিলাকে বিয়ে করবে এই আছিলায় শর্মিলার বাড়ি থেকে তাকে বার করে নিয়ে এসে একটা ফ্ল্যাটে তোলে। সপ্তাহে দুই-তিনদিন শর্মিলার সঙ্গে কাটায় অভিজিৎ, বাকিদিন নিজের বাড়িতে থাকে। তিন বছর হতে চলল, অভিজিতের ডিভোর্স আজও হয়নি এবং শর্মিলা জানতে পেরেছে অভিজিতের গল্পটা পুরোটাই সাজানো। কিন্তু বাড়ি ফিরে যাওয়ার সমস্ত রাস্তা শর্মিলা নিজেই বন্ধ করে দিয়েছে। সমাজে আজ তার পরিচয় ‘রক্ষিতা’।

বিয়ের পর পুরুষ বন্ধু

পুরুষবন্ধু থাকাটা দোষের নয়। অনেক স্ত্রী-ই মনে করেন, স্বামীর বন্ধুবান্ধব অথবা বাইরের পুরুষদের এড়িয়ে চলার কারণ কিছু নেই। পরিচিত হওয়া মানেই অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে, ধারণাটা ভুল। কিন্তু বাইরের পুরুষের মুখে নিজের সুখ্যাতি, সহমর্মিতা, সাহায্য এবং উপহার পেতে থাকলে, অনেক সময়ই আবেগে ভেসে যেতে দেখা যায় বহু মহিলাকেই। এই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক বা অনৈতিক, অসামাজিক সম্পর্কের শিকড় কখনও এতটাই গভীরে বংশ বিস্তার করে যে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটাই বিশাল সঙ্কটের সম্মুখীন হয়ে পড়ে।

বিশ্বাসঘাতকতা

বিশ্বাসঘাতকতা, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অটুট বন্ধনকেও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। মনের মধ্যে শুধু থেকে যায় রাগ, অভিমান, অবিশ্বাস এবং অন্যায়ের রেশ। একে-অপরের প্রতি বিশ্বাস একবার ভেঙে গেলে তা বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত পৌঁছোতে পারে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া এখন ডিভোর্সের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অযৌক্তিক সন্দেহ

সন্দেহ হচ্ছে বিষধর সাপের মতো। একবার ফণা তুললে স্বামী-স্ত্রীয়ের সম্পর্ককে সম্পূর্ণ বিষিয়ে দিতে পারে। স্বামী, বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও গেলে অথবা অফিসের কাজে শহরের বাইরে গেলে অযথা সন্দেহ করা বাঞ্ছনীয় নয়।

অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে সেক্স-কে বেছে নেওয়া

দু’জনের সম্মতিক্রমে অর্থাৎ পুরুষ এবং নারী উভয়ের ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হলে, তবেই যৌন মিলনের পথ প্রশস্ত হয়। কিন্তু তাই বলে পুরুষসঙ্গীর অনুরোধে গ্রুপ সেক্স অথবা পুরুষসঙ্গীর কোনও বন্ধুর সঙ্গে এক রাত্তিরের যৌন আনন্দ গ্রহণ করার ইচ্ছে পোষণ করবেন না। তাতে মুহূর্তের আনন্দ পেলেও এর পরিণতি মারাত্মক হবে।

পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছেদ

পরিবারের বড়োদের সঙ্গে কখনও সম্পর্ক বিচ্ছেদ করা উচিত নয়। অভিভাবক এবং পরিবারের বড়োরা সবসময় বাড়ির ছোটোদের মঙ্গল কামনাই করেন। কখনও মতপার্থক্য অথবা মতবিরোধ ঘটতেই পারে তাই বলে সেটাই সম্পর্কের শেষ বলে ধরে নেবেন না। অনেক সময়, সময়ও প্রমাণ করে বড়োরাই ঠিক, কারণ জীবন সম্পর্কে জ্ঞান তাদের অনেক বেশি।

স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবসময় যে মতের মিল হবে, তার কোনও মানে নেই। দু’জন আলাদা মানুষের আলাদা দৃষ্টিভঙ্গী এবং মত হতেই পারে। কিন্তু ঘুরিয়ে আঘাত দিয়ে কথা বলার অভ্যাস, সাধারণ পরিষ্কার একটা আচরণকে পেঁচিয়ে অন্য অর্থ বার করা, ভুলবোঝাবুঝি, কথা কাটাকাটি এমনকী মাঝেমধ্যে ঝগড়া, অশান্তি ইত্যাদি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা উচিত। মাথা ঠান্ডা করে চিন্তা করলেই দেখা যাবে, যে-কারণে ঝগড়া এবং অশান্তি, তার ৯৯ শতাংশই মাথা ঠান্ডা রেখে খুব সহজে মিটিয়ে ফেলার জিনিস।

ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া

স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে অথবা সন্দেহের বশে, এমনকী স্বামীকে অপর কোনও নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে দেখলেও রাগের মাথায় নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়িতে উঠে যাওয়া সমীচীন নয়। নিজের অধিকারের জন্য স্ত্রীয়ের উচিত লড়া। আর যেখানে স্বামী পুরোপুরি দোষী সেখানে এটাও দেখা কর্তব্য যে, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ছেলের বিবাহিত স্ত্রীয়ের স্বপক্ষে না ছেলে এবং অন্য নারীটির স্বপক্ষে।

সাধারণ কারণে ডিভোর্সের আবেদন

স্বামী-স্ত্রীর শুধুমাত্র একসঙ্গে থাকলেই সম্পর্ক ভালো হয়, এমন নয়। উভয়ে কতটা ভালো ভাবে নিজেদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন তার উপরেই টিকে থাকে সম্পর্ক। আইডিয়াল তিনিই যিনি নিজের পার্টনারকে সম্মান করেন এবং ভালোবাসেন। যে-কোনও দম্পতির জন্যেই বিয়ের শিলমোহর অত্যন্ত শুভ। তাই বিয়ের পর স্বামী, সন্তান এবং স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির সম্মান রক্ষা করাও একটি অবশ্য কর্তব্য যে-কোনও স্ত্রীর। সুতরাং মিথ্যা মামলা সাজিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকেদের আইনের ঘোরপ্যাঁচে ফেলা অথবা মিথ্যাই ডিভোর্সের জন্য আবেদন করা অত্যন্ত অনুচিত একটি কাজ।

সুতরাং সাবধান হতে হবে। যাতে এই মারাত্মক ভুলগুলি থেকে আমরা দূরে থাকতে পারি তাহলেই সম্পর্কের Relationshipবন্ধন আরও দৃঢ় হবে।

 

Tags:
COMMENT