‘ভাগ করলেই ভুগতে হবে’ স্লোগান আজকাল বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু কে বিভক্ত করছে, আর কাকে ভুগতে হবে, তা স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না। যদিও কোনও জাতির নাম নেওয়া হচ্ছে না, তবে সবাই জানে যে, দাঙ্গার ভয়ে সবাই কিছুটা সাবধান হয়ে কথা বলছে। তবে প্রচ্ছন্নে কেউ কেউ এই বলে সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, যদি জাতপাতের নিরিখে চিহ্নিত করা হয় এবং বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, তবে সমস্ত দেশবাসী একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হবে, বহিরাগতরাও সুযোগ নেবে। এখন প্রশ্ন হল— কে জাতপাতের ভেদাভেদ করেছিল এবং কবে থেকে শুরু করেছিল?
জন্মের পরেই যদি জাতপাতের নিরিখে শিশুকে চিহ্নিত করা হয়, তাহলে গোটা দেশেরই বিপদ ঘনিয়ে আসবে। আসলে, এর জন্য দায়ী ব্রাহ্মণদের তৈরি পরিকল্পনা। সভ্যতার শুরু থেকেই ব্রাহ্মণদের সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রত্যেককে তাদের জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। অনেক গ্রামে তো জাতপাত নিয়ে এখনও ১৮ শতকের আগের আচার-আচরণ জারি রয়েছে।
জওহরলাল নেহরুর আমলে গৃহীত সংবিধানে সকলের সমান অধিকার থাকলেও, এখনও জাতপাতের ভেদাভেদ চলছেই। নামের পরে পদবি দিয়েই ভালো-খারাপ চিহ্নিত করা হয় এখনও। জাতপাতের ভিত্তিতে বিভাজন এমন যে, যারা বিভাজন করতে জানে, তারা মুখ দেখেই নাকি বলে দিতে পারে কে কোন বর্ণের। আসলে, যারা জাতপাতের নামে বিভাজন করে, তারা শান্তিতে থাকে না। সন্তানের চলাফেরা, লেখাপড়া, মেলামেশার বিষয়টিও জাতপাতের ভিত্তিতে নির্ধারণ করে দেন ওই কুসংস্কারাচ্ছন্ন অভিভাবকরাই। তাই যারা ‘নিম্নবর্ণের’, তারা বাবার নাম, কাজ, বংশ পরিচয়, এমনকী কোন অঞ্চলে থাকেন, তা বলতে চান না কিংবা বলতে কুণ্ঠাবোধ করেন আজও।
এই বিভাজনকারীরা সর্বত্র বিরাজমান এবং তারা দিনে ১০ বার তাদের জাতপাত নিয়ে চর্চা করে। ‘আর্টিকেল ফিফটিন' ছবিটিও তাই হয়তো সাফল্য পেয়েছে। জাতের কৌলিন্য নিয়ে এখনও বড়াই করে বিভাজনকারীরা এবং সামনে থাকা লোকেদের জাতের নিরিখে ‘উচ্চ-নীচ’ তকমা দেয়। অবশ্য, ‘ছোটোজাতের’ নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে কোনও অসুবিধা হয় না জাতপাতের এই বিভাজনকারীদের। কিন্তু সেই জাতপাতের বিভাজনকারীদের বড়ো কষ্ট হয় যখন ‘ছোটোজাতের’ কেউ ঘরের কোনও কিছু স্পর্শ করেন।