আলু পেঁয়াজ বিক্রি করার ক্ষেত্রে বিরাট কোনও কারিগরির প্রয়োজন হয় না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মলের প্রয়োজন হয় না এর দামের ওঠাপড়াও নিত্যদিনের ঘটনা। এই সাধারণ বিষয়টিতেও এবার যদি রিলায়েন্স, আদানি, গোদরেজ, আমাজন বা ওয়ালমার্ট ঝাঁপিয়ে পড়ে- তাহলে সাধারণ বিক্রেতাদের কী হাল হবে?
যে-সমস্ত দেশে আর্থিক দৈন্য নেই, কিংবা দৈনিক ২০০ টাকা আয় করে পেট ভরানোর মতো মানুষ নেই, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু ভারতের মতো গরিবদের দেশে গত ৬ বছরে যেভাবে অনলাইন ব্যাবসাকে বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে, তাতে সাধারণ বিক্রেতাদের হাঁড়ি চড়া কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে এবার। আপনার যদি ধারণা হয়ে থাকে অনলাইন-এ সস্তায় সবজি মিলবে, বা মল-এ উত্কৃষ্ট মানের এবং সুলভ দামে জিনিস পাবেন-- তাহলে এখনই এই ভুল ভাবনা ত্যাগ করুন।
ধনী ব্যবসাযীরা যদি কৃষিজাত এই সমস্ত ফসলের উপর, তার পরিবহণে এবং সর্বোপরি কৃষকদের উপর নিজের থাবা বসাতে পারে, তাহলে আপনার হাতে বিকল্প থাকবে না অন্য জায়গা থেকে সবজি কেনার। আপনি বাধ্য হবেন চড়া দামে মল বা অনলাইন-এ এই পণ্য কেনার জন্য। সেখানে দুটো জিনিসের পরিবর্তে আপনাকে ৪টে জিনিস গছানোর ব্যবস্থা হবে। এবং কোনও সামগ্রীর দাম কম থাকলে, অন্য দুটির মধ্যে দিয়ে সেই দাম উশুল করে নেওয়া হবে।
দেশের কৃষকরা যে এই লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন, তা অকারণে নয়। তারা এবার বুঝেছেন যে, তাদের পথে বসানোর জন্য ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে ফেলেছে এই সরকার।
প্রথমে নোটবন্দি করে, তারপর জিএসটি জারি করে মানুষকে কপর্দকহীন করা হয়েছে। তারপর নানা আইনি জটিলতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষকে। এবার তার নিত্যদিনের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে চলছে এই লুঠতরাজের খেলা। গ্রাহক ও বিক্রেতা, দুজনেই যে-খেলায় সব খোয়াবেন। লাভ শুধু হবে সেই ধনীদের যারা এই ব্যাবসায় টাকা লাগাবেন, আর তাদের মদতপুষ্ট সরকারের।
সরকার সেই স্পেকট্রাম থেকে বহু অর্থ লাভ করছে যা প্রকৃতির দান। এই স্পেকট্রামের সূত্রেই আপনার জীবন ডিজিটাল করে দেওয়া হচ্ছে যাতে আপনি আরও বেশি অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। সরকারের মোটা কমিশন-ই এই প্রোজেক্টের মূল উদ্দেশ্য।