মৌমিতাকে কয়েকদিন ধরেই খুব উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল। মনে হয়েছিল মেয়েটা কোনও একটা অসুবিধার মধ্যে রয়েছে। বাড়িতে বসে ল্যাপটপেই ও অফিসের কাজকর্ম করে। শুধু সপ্তাহে একবার ওকে অফিসে হাজিরা দিতে যেতে হয়। জিজ্ঞেস করাতে, জানতে পারলাম দু-তিনদিন ধরে স্যাটেলাইট গণ্ডগোলের জন্য ওর নেটের কানেকশন আসছে না। ওদের গোটা এরিয়াতেই নেটের লাইনের প্রবলেম হয়েছে। তাই সাইবার কাফেতে গিয়েও কোনও লাভ নেই। নেট অ্যাকসেস না করতে পারার দরুন কাজকর্ম সব শিকেয়। অবসাদ যেন গ্রাস করতে আসছে ওকে।
শুধু মৌমিতাই কেন, হাজারে হাজারে ছেলেমেয়ে আজ কম্পিউটারের ইন্টারনেট পরিষেবায় আসক্ত। এতে শঙ্কিত হওয়ার কারণ আছে কি নেই সেটা ব্যক্তিবিশেষে সম্পূর্ণ নির্ভর করে। কিন্তু এই প্রজন্মের এই আন্তর্জাল আসক্তি-কে একটা শব্দ অভিহিত করা হয়েছে, ‘ডিসকমগুগোলেশন’।
যে-কোনও সার্চ ইঞ্জিন খুলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটার স্ক্রিনে আটকে থাকার নেশা। এই নতুন প্রজন্মের মধ্যে এক সর্বনাশা রূপ ধারণ করেছে। ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা দিনও কাটানো এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে, নেটে ‘লগ অন’ না করে। এই নতুন সিনড্রোমটাকে (অসুখের লক্ষণ) বোঝাতেই নতুন শব্দটার উদ্ভব। একার্থে, নেট অ্যাকসেস না করতে পারা জনিত চাপ এবং উদ্বেগ বোঝানোর জন্যই ‘ডিসকমগুগোলেশন’ শব্দটির জন্ম হয়েছে।
‘ডিসকম’ মানে কী?
ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীলতা কতটা আজকের ‘জেন’-কে আকর্ষিত করছে তার উপর এক সমীক্ষা করা হয়েছিল সারা বিশ্বে। এতে দেখা গিয়েছিল প্রায় ছিয়াত্তর শতাংশ জনসাধারণ, একটা দিনও ইন্টারনেটে গুগোল সার্চ না করে থাকতে পারে না। ঊনিশ শতাংশ মানুষ, ফ্যামিলির সঙ্গে সপ্তাহে যতটা-না সময় কাটায় তার থেকে অনেকবেশি সময় অতিবাহিত করে কম্পিউটারে অনলাইনে বসে। এদের মধ্যেই সাতচল্লিশ শতাংশ মানুষই ধর্মে কর্মে মন দেওয়ার পরিবর্তে, নিজেদের জীবনে ইন্টারনেটের প্রাধান্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মানুষ নিজের লাইফ-পার্টনার-এর থেকে অনেকবেশি গুরুত্ব দেন কম্পিউটারকে। যারা কম্পিউটারের উপর এতটা নির্ভরশীল, গুগোল অ্যাকসেস করতে না পারলে তারা সত্যিই অসহিষ্ণু হয়ে ওঠেন। জীবনের অর্থটাই যেন তাদের কাছে হারিয়ে যায়।