বৃহস্পতিবারের সকাল। চা খাওয়ার পর শুভা তাড়াতাড়ি চান করে ঠাকুরঘরে বসেছিল পূজায়, ঠাকুরের কাজ সেরে রান্না চাপাবে। নির্মল শোবার ঘরে বসে মোবাইল ঘাঁটছিল, কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ চমকে উঠল কারও গর্জনে!
—কী হল? প্রেমালাপ চালিয়ে যাও, ফোন রাখলে কেন? মুখ তুলে দেখে সামনে রণরঙ্গিনী মূর্তিতে দাঁড়িয়ে শুভা।
—কী যা তা বলছ? কারও সঙ্গে প্রেমালাপ করিনি।
—একদম মিথ্যা কথা বলবে না, ঠাকুরঘর থেকে আমি স্পষ্ট শুনলাম তোমাদের রঙ্গরসের কথা।
ভীষণ রাগ হল নির্মলের। ফোনটা রেখে বলে উঠল, 'আজকাল তোমার কী বাতিক হয়েছে বলো তো? খালি আজেবাজে কথা, কেউ কিছু না বললেও তুমি সব শুনতে পেয়ে যাও? মাঝেমাঝে লুকিয়ে আমার ফোন চেক করো। তোমার কি মাথা খারাপ হল?' স্বামীর কথায় রেগে উঠল শুভা, 'হ্যাঁ, একথা বলবেই তো। হাতেনাতে ধরা পড়ে গিয়ে এখন কথা ঘোরানো হচ্ছে। তবে জেনে রেখো, যতই লুকোচুরি করো আমার কানকে ফাঁকি দিতে পারবে না।'
আরও রেগে গেল নির্মল। ‘ধেত্তেরিকা, সবসময় খালি উলটোপালটা কথা, যা বলিনি তাই খালি শুনতে পেয়ে যায়। যত্তো সব।’ বলে তড়াক করে বিছানা থেকে নেমে খবরের কাগজটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।
—চোরের মায়ের বড়ো গলা। দোষ করে আবার রাগ দেখানো হচ্ছে। বলে শুভাও প্রস্থান করল রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে।
—এক রোববারের কথা। ছুটির দিন, স্বভাবতই রান্নাবান্না একটু বেশি আছে, তাই জলখাবার খেয়েই শুভা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে রান্নাঘরে। হঠাৎ কানে এল শোবার ঘর থেকে নির্মলের কথা বলার শব্দ। ধক করে উঠল বুকটা, ঠিক কোনও বান্ধবীর ফোন। অমনি উনুনটা নিভিয়ে হাজির হল ঘরে, দেখল বাবু কথা বলতে বলতে হেসে একেবারে লুটিয়ে পড়ছেন।
—তুমি এমন করে বোলো না তো, লজ্জা লাগে...।' মাথাটা গরম হয়ে গেল শুভার, খেঁকিয়ে উঠল!
—শুয়ে শুয়ে কোন বান্ধবীর সঙ্গে হিহি হোহো হচ্ছে শুনি? নিশ্চয় শ্যামা?
চমকে উঠল নির্মল। মুখ ঘুরিয়ে দেখে সামনে সাক্ষাৎ যমদূত দাঁড়িয়ে। উঠে বসে ফোনে হাত চাপা দিয়ে উত্তর দিল, “কী যা তা বলছ? শ্যামা কেন হবে? ওতো লীলাদি।'