এমনিতেই বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল, তাই একটা খালি ট্যাক্সি দেখতে পেয়ে শুভা তাতেই উঠে বসল। কিন্তু মিনিট পঁচিশ বাদেও ট্যাক্সি হিন্দুস্তান না পৌঁছাতে শুভার কেমন যেন সন্দেহ হল। ড্রাইভারটার ভাবগতিকও সুবিধের মনে হল না। ভয় পেয়ে তাকে ট্যাক্সি দাঁড় করাতে বলতে সে তার কথায় কর্ণপাত না করতে শুভা ভয়ে চেঁচিয়ে উঠল।
ড্রাইভার তাকে ধমক দিয়ে বলল— চুপচাপ ব্যায়ঠিয়ে, আপকো ঠিক পহুঁচা দুঙ্গা। তার ধমকে আরও ভয় পেয়ে গেল শুভা। সামনের একটা মোড়ে ঘোরার সময় গাড়ির গতি একটু কমতেই শুভা দরজা খুলে লাফিয়ে পড়ল নীচে। অমনি আশপাশ থেকে পথচলতি দু-একজন লোক ছুটে আসতেই ট্যাক্সিটা জোরে বেরিয়ে গেল।
রাস্তায় পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল শুভা। জ্ঞান ফিরতে চোখ মেলে দেখে সে শুয়ে আছে হাসপাতালের বেড়ে, পাশে দাঁড়িয়ে একজন নার্স। অমনি মনে পড়ে গেল ট্যাক্সির ঘটনার কথা, বড্ড বাঁচা বেঁচে গিয়েছে একটা বড়ো বিপদের হাত থেকে। লাফিয়ে না নামলে ট্যাক্সি ড্রাইভারটা তার কী যে দুর্গতি করত কে জানে। আপশোসও হল ওদের দু'জনকে হাতেনাতে ধরার এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায়। কিন্তু সে হাসপাতালে কী করে এল? কে নিয়ে এসেছে তাকে এখানে?
—এখন কেমন লাগছে?
হঠাৎ চেনা কণ্ঠস্বর শুনে শুভা মুখ ঘুরিয়ে দেখে নির্মল, কখন ভিতরে এসেছে বুঝতে পারেনি। 'ভালো' বলে তাকিয়ে রইল তার মুখের দিকে। ও কীভাবে খবর পেল? নিশ্চয় কেউ তার মোবাইল থেকে নম্বর নিয়ে ওকে জানিয়েছে।
—কাল সন্ধ্যায় বাইপাসে কেন গিয়েছিলে? আমাকে ফলো করতে? ধন্যি মেয়ে তুমি !
শুভার মুখে উত্তর নেই।
—কিন্তু তোমাকে কে বলল আমি ওখানে যাব?
–কেন, তুমিই তো কাল রাতে ফোনে একটা শাকচুন্নিকে বললে সন্ধ্যায় ওকে নিয়ে পাটুলি থেকে হিন্দুস্তানে উকিলের বাড়ি যাবে।
—আরে বাবা শাঁকচুন্নি নয়, কবীর ফোন করেছিল। আজ ও ছুটি নিয়েছে, তাই অফিসের একটা জরুরি ফাইল নিয়ে কালই উকিলের সাথে পরামর্শ করতে যাওয়ার কথা বলছিল। তোমার ঘুমের ব্যাঘাত হবে, তাই পাশের ঘরে গিয়ে কথা বলছিলাম। আর তুমি কিনা শুনতে পেলে আমি কোনও মেয়ের সঙ্গে পাটুলিতে উকিলের কাছে যাওয়ার মতলব করছি? কী মানুষ তুমি বলো তো? তোমার এই উলটোপালটা শোনার রোগ কবে বন্ধ হবে ?





