সুমনা কথাগুলো শুনে কোনও উত্তর না দিয়ে কিছু সময় চুপ করে বসে থাকে। এই সময় অলোকা সুমনার ফ্ল্যাটের চারদিকটা চোখ ঘুরিয়ে দেখে নেন। টু’বিএইচকে, তবে বসবার জায়গাটা এক্কেবারেই ছোটো নয়, একটা সোফা আর টি’টেবিলের পর আরও কিছুটা জায়গা থাকছে। একদিকের দেয়ালে একটা বাচ্চার ছবি টাঙানো আছে।
কফি করি? এই প্রথম আমার ফ্ল্যাটে এলে। আমার বিয়েতেও তুমি আসতে পারোনি।
—না, কার একটা বিয়ে ছিল। তুমি বরং একটু বোসো, আমাকে দেখিয়ে দাও, আমি করে নিচ্ছি। আবার হেসে উঠল সুমনা। —আজ এখন করবে, তারপর কাল, পরশু? ছাড়ো এই সব টুকটাক কাজ আমি করে নিতে পারব। সব কিছু ঠিক থাকলে ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলে সামনের সপ্তাহ থেকেই অফিস জয়েন করব।
—অফিস! তোমাকে দেখেই তো সবাই অবাক হয়ে যাবে।
—হতো। কিন্তু টিভিতে দেখানোর পর সবাই জেনে গেছে। কয়েকটা ম্যাগাজিনেও ফিচার বেরোবে। অফিসের অনেকেই ফোন করে জিজ্ঞেস করল। তমালবাবুকে চেনো? অ্যাকাউন্টসে বসেন, উনি নিজে ফোন করেছিলেন, পরে বউদিও ফোন করেছিলেন। ওনাদেরও মনে হয় কোন ইস্যু নেই না?
—না। অনেক টাকা খরচ করেছেন। কিছু টাকা লোনও হয়েছে।
—আমিও তো ওই জন্যেই এসেছি।
—তোমার তো মেয়ে আছে।
—মেয়ের তো কেউ নেই।
শেষের এই কথাগুলোর পরে ফ্ল্যাটের ভেতরটা একটা চাপা শূন্যতা গ্রাস করে নিল। কিছু সময় দুটো মানুষ শুধু দু'জনের শ্বাসের শব্দ শুনেই কাটিয়ে দিল।
—তুমি নিজে তো আবার বিয়ে করতে পারতে। কিছু সময় চুপ থেকে অলোকাদি জিজ্ঞেস করলেন।
—আর সম্ভব নয় দিদি। একটা মানুষকে ভালোবেসে বিয়ে করলাম। প্রথমে তো আমার বাড়ি থেকে মেনে নেয়নি, আমি কিন্তু বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। মানুষটা তো কোনও কষ্ট দেয়নি। আমার ভাগ্যে সুখ নেই, কী আর করা যাবে! এখন বিয়ে করলে শরীর আর মন মেশাতে পারব না। তাতে একজনের সাথে বেইমানি করা হবে। এটা অবশ্য আমার নিজের বিশ্বাস। অনেকেই এখন এই সব ছেঁদো সেন্টিমেন্ট-কে বিশেষ পাত্তা দেয় না।