বিকেলের আলো এসে পড়েছে ওর মুখের উপর। হলুদ রঙের জমির উপর কালো রঙের কারুকাজ করা শাড়ি পরেছে। সন্ধ্যাতারা, আমার সন্ধ্যাতারা। একদম অন্যরকম লাগছে ওকে। ওই চিবুকের কালো তিল আর ওর আশ্চর্যরকম সুন্দর সেই টানা টানা চোখ ছাড়া হয়তো চিনতেই পারতাম না। আর পারতামই বা কেন? পেরিয়ে গেছে তো বারোটা বছর! ও কি আমাকে চিনতে পেরেছে? বোধহয় পারেনি। পারবেই বা কী করে?
সেদিনের সেই লাজুক কলেজ পড়ুয়া ছেলেটা তো আজ নামি কর্পোরেট কোম্পানির স্মার্ট অফিসার। চেহারাতেও এসেছে প্রচুর পরিবর্তন। আর ও কী করেই বা জানবে, কলকাতা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে কোন প্রত্যন্ত গাঁয়ের ছেলে এই উত্তর কলকাতার একটা বাসস্ট্যান্ডের শেডের নীচে এখন বসে আছে। কথা বলব ওর সঙ্গে? ভীষণ ইচ্ছে করছে যে! কিন্তু কী বলে শুরু করব? এখন তো আমি সেই আগের মতো লাজুক নই। সারাদিনে কাজের প্রয়োজনে অজস্র সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে স্মার্টলি আলাপ জমিয়ে নিই। এই ব্যাপারে আমার সুনাম আছে কোম্পানিতে। তবু কেন এত জড়তা আসছে!
ওর পাশেই বসে আছেন ওর চেয়ে বছর কয়েক বড়ো আরেকজন ভদ্রমহিলা। দু'জনই গল্প করে চলেছে। ওদের কথাবার্তা থেকে বুঝলাম সন্ধ্যাতারা উত্তর কলকাতার একটি স্কুলের দিদিমণি এখন। পাশের জন ওর কলিগ। প্রতিদিন তারা বাস ধরার জন্য এখানে অপেক্ষা করে। আমি প্রতিদিন পার্সোনাল কারে যাতায়াত করি। কাল ফেরার পথে ইঞ্জিন বিগড়েছে। তাই আজ বাসেই আসা।
সন্ধ্যাতারার সঙ্গে যখন আমার প্রথম দেখা হয়েছিল তখন আমি শিমুলতলা কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ার স্টুডেন্ট। থাকি শিমুলতলাতেই। ‘ছাত্রবন্ধু' বয়েজ হোস্টেল। আমাদের হোস্টেলের খুব কাছেই ছিল ভুবনবালা দেবী গার্লস স্কুল। আমাদের হোস্টেল আর ওই গার্লস স্কুলের মাঝ বরাবর চলে গেছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার একটি পাকা রাস্তা। ওই রাস্তা দিয়ে পশ্চিম দিকে কিছুটা গেলে একটা ফাঁকা মাঠ। কলেজের ক্লাস করে এসে রোজ বিকেলে আমরা হোস্টেলের সমস্ত বন্ধুরা ওখানে গিয়ে আড্ডা মারতাম। আর মাঠের অন্যপাশে ‘বাগদেবী ছাত্রীনিবাস'-এর মেয়েরা এসে বসত।





