চুপচাপ নিঃসঙ্গ ভাবে ক'টাদিন ঘরের মধ্যেই কাটালেন সিদ্ধার্থ। কোভিডের ভয়ে কেউ দেখা করতেও এল না। ভয় আর আতঙ্কে দিশেহারা মানুষ ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য হচ্ছে। উল্লাস নেই, আনন্দ নেই, উৎসব নেই— এ যেন এক অন্য পৃথিবী। অচেনা অজানা৷
কয়েক দিন পর এক রাতে সিদ্ধার্থ ফোন করলেন নিবারণকে। নিবারণ সেনগুপ্ত। লিগাল অ্যাডভাইজার। অনেক জুনিয়র, সদাহাস্যময় অমায়িক মানুষ। কাজের সূত্রে আলাপ হলেও সম্পর্কটা ধীরে ধীরে পারিবারিক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। যথেষ্ট স্নেহ করেন সিদ্ধার্থ।
‘সবই তো শুনেছ, ভাই আর নেই নিবারণ। আমি ভাবছি আমার যা কিছু আছে তার একটা উইল করে রাখব। তোমার সহায়তা চাই। একটা ভিডিও করে আমি ডিটেলসটা ব্যাখ্যা করেছি। তোমাকে পাঠাচ্ছি। তুমি সেই মতো কাগজপত্র তৈরি করবে। এই সিচুয়েশনে একটু অসুবিধা হবে, তবুও করবে। আমার অনুরোধ। পারিশ্রমিক নিয়ে ভেব না। আসলে এই অতিমারিতে কে ক'দিন বাঁচব কোনও গ্যারান্টি নেই। বারো ভূতে খাওয়ার চেয়ে... বুঝতে পারছ নিশ্চয়ই! বয়সও তো কম হল না।'
ভাই মারা যাওয়ার ঠিক দশ দিনের মাথায় নিজের ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলেন সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী। রামের মায়ের চিৎকারে সবাই জানল কিন্তু কেউ ছুটে এল না, ব্যালকনি, জানালা থেকে উঁকি দিয়ে দেখল। পুলিশ এসে লাশ নামাল। পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পরবর্তী সমস্ত প্রোসিডিওর ওরা নিজেদের দায়িত্বেই পালন করল। রিপোর্টে লিখল, একমাত্র ভাইয়ের মৃত্যুর পর চরম অবসাদে ভুগছিলেন, তাতেই এই সিদ্ধান্ত৷ এই ঘটনার কয়েকদিন পর। হরিশ মুখার্জির ছোটো ছেলেকে একদিন ফোন করলেন অ্যাডভোকেট নিবারণ সেনগুপ্ত, তপনবাবু কাল সকালে একবার আমার বাড়িতে আসুন। জরুরি কিছু কথা আছে।
নিবারণ তপনের মুখ চেনা৷ একই পাড়াতে থাকে, তবে দু'জনে দুমাথায়। নিবারণের কী কথা থাকতে পারে তার সঙ্গে? ধন্দে পড়ল তপন। ‘সে না হয় যাব'খন। কিন্তু কারণটা কী?"
‘একটু গোপন৷ ফোনে বলা ঠিক হবে না। তাছাড়া একটু সময়ও লাগবে। তাই সামনাসামনি বলাই বোধহয় ভালো৷”