এই ভুলটা তুমি কী করে করলে ইশা?
ভুল! তুমি বলছ এই কথা অমিত? সতর্ক তো তোমারও হওয়া উচিত ছিল।
আচ্ছা বেশ, আমাদের দুজনেরই ভুল। কিন্তু এখন কী করবে?
এই প্রথম অমিতকে এতটা নার্ভাস দেখল ইশা। এতদিন ধরে মিশছে, পরস্পরকে চেনাও প্রায় চার বছর কিন্তু এরকম পারস্পরিক দোষারোপের ঘটনা কখনও ঘটেনি। তাই ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুটা অবাক সে। তবে প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নিয়ে সে অমিতকে বলে সিদ্ধান্তটা আমার একার নয় অমিত। দুজনকেই ভেবে একটা রাস্তা বের করতে হবে।
কেরলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনেই বাযোকেমিস্ট্রি নিয়ে মাস্টার্স করেছে তারা।
ইশা মার্টিন আর অমিত ভট্টাচার্যের প্রেমটা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয ক্যাম্পাসে হয়নি। ক্যাথোলিক ক্রিশ্চান ইশা কেরলেরই মেয়ে, অমিতই ভিনরাজ্য থেকে এসেছে এখানে পড়তে। একা ঘরভাড়া নিয়ে থাকে অচেনা শহরে। একবার ভযংকর অসুস্থ হয়ে পড়ে কলেজ ক্যাম্পাসে। সহপাঠি ইশার মা নার্স হওয়ার সুবাদে ইশাই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। ইশার মায়ের শুশ্রূষায়ে ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠে অমিত। সেই সুবাদেই অন্তরঙ্গতা বাড়ে অমিতের, এই ক্রিশ্চান পরিবারের সঙ্গে। পরিবার বলতে ইশা এবং তার মা। ইশার বাবা ব্যাবসাসূত্রে কুয়েতে রয়েছেন শুনেছে অমিত।
অমিত পুরুলিয়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে। পড়াশোনায ভালো। বাবা ছিলেন শিক্ষক। তাঁর অকাল মৃত্যুর পর মা-ছেলের সংসার চলে বাবার পেনশনে ও কিছু ধানিজমির ফসল তোলা টাকাতে। তাদের ব্রাহ্মণ পরিবারটিকে গ্রামের সকলে খুব মান্য করে। বাবার মাস্টারমশাই হিসেবেও সুনাম ছিল একসময। তাই ভিনরাজ্য হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে হাতছাড়া করেনি অমিত।
ছোটো ছোটো ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে জীবনটা একরকম মসৃণ-ই কাটছিল ইশা ও অমিতের। কিন্তু সেদিন দুপুরের অসতর্ক মুহূর্তে ঘটে যায় ঘটনাটা। যার ফলে অমিতের ভালোবাসার বীজবপন হয়ে যায় ইশার শরীরে। পারস্পরিক সম্মতিতেই মিলিত হয়েছিল দুজনে। আসলে সেদিন ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুজনেই বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিল। হয়তো সেই কারণেই খানিকটা অসতর্ক হয়ে পড়েছিল।