প্রফুল্লনগর উদ্বাস্তু কলোনির নাম পালটানোর প্রস্তাব হল মিটিং-এ। একটা কলোনি কমিটি আছে ঠিকই, কিন্তু আজকাল কাজকর্ম কিছু নেই। তবু ঘরটা আছে পুকুরের পাশে। ওখানে কয়েকজন বুড়ো মানুষ জড়ো হয়। পুকুরের পাশে সিমেন্টের চেয়ার আছে কয়েকটা, ওখানে সকালে প্রাতর্ভ্রমণকারীরা, দুপুরে কাক ও কুকুর, সন্ধের সময় চ্যাংড়াগুলো বসে। চ্যাংড়া ছেলেছোকরাদের সঙ্গে আজকাল দু’-একটা মেয়েও এসে আড্ডা মারে। একদিন একটি কিশোরীকে সিগারেট খেতে দেখলেন কালীপদবাবু। কিশোরীটি একটি ছেলের ঠোঁট থেকে সিগারেট ছিনিয়ে নিয়ে টানতে লাগল। কলোনির কমিটি রুম থেকে দেখলেন। কয়েকবছর আগে হলে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে ঠাস করে চড় মারতেন। এখন চোখ সরিয়ে নিলেন। একটা দোকান হয়েছে কলোনিতে ঢুকতেই, নাম মোমো-চোমো। মোমো নাকি সিঙাড়া জাতীয় একটি খাবার, ওটা নাকি ভাপে সেদ্ধ হয়। কিন্তু চোমোটা কী? এইগুলি বদমায়েশি। অশ্লীল ইঙ্গিত যা নামের মধ্যেই প্রচ্ছন্ন। কালীপদ চক্রবর্তী ইস্কুলের মাস্টার ছিলেন। এখন বয়েস আশির কাছাকাছি। কলোনির জন্য লড়েছেন প্রচুর।

প্রাইমারি স্কুল, ব্যায়ামাগার, এইসব ছাড়াও লেখালিখির কাজটা কালীপদবাবুই করতেন। এই যে এখন কলোনিগুলোর হাল ফিরে গেছে, এটা তো পাট্টা পাওয়ার জন্যই হয়েছে। এই পাট্টা পাওয়ার জন্য কম লড়াই করতে হয়েছে নাকি! সেই নেহরু-লিয়াকত চুক্তি। নেহরু পঞ্জাবে জন-বিনিময়ে রাজি হলেন, কিন্তু বাংলার জন্য রাজি হলেন না। সে সময় হেমেন ঘোষ লিখেছিলেন, লিয়াকত-র সঙ্গে দিয়াকত-র চুক্তি হইল। নেহরু তো সবই মেনে নিলেন– দিয়ে দিলেন লিয়াকত যা চেয়েছিল। ওপার থেকে আসা লোকগুলি ভারত সরকারের কাছে অনভিপ্রেত হয়েই রইল। সম্পূর্ণ পুনর্বাসন হল না, ফলে জবরদখল। এটাই জবরদখল কলোনিই ছিল। সবাই ছিল বেআইনি দখলদার। সরকার বলেছিল ওদের দখলদার শব্দটা থেকে মুক্ত করবে। করেও ছিল। কিন্তু আইনের জট খোলা সহজ নাকি? শেষ পর্যন্ত হয়েছিল। এবং এরপরই পালটে গেল কলোনি।

বছর কুড়ি আগেও রাস্তার একপাশে ছিল মাছি ভনভন ড্রেন। টিন আর টালির ঘর। তেলেভাজার দোকান, রাস্তার ছাগলের ভ্যাঁ, কুকুরের ঝগড়া, আর কুকুরের গু। সারমেয় বিষ্ঠা এখনও থাকে, তবে ওসব বিলাতি কুকুরের। বাবুরা কুত্তা হাগাতে নিয়ে আসে সকালে। এখন কতরকমের বাবু। টালির ঘরের মালিকরা প্রোমোটারদের দিয়ে বড়ো বড়ো ফ্ল্যাট করিয়েছে। সব জবরদখলকারী উদ্বাস্তুরা এখন ফ্ল্যাটের মালিক। এমনকী কালীপদ চক্রবর্তী নিজেও। ভেবেছিল কখনও যে জবরদখল করা চার কাঠা জমির বিনিময়ে একটা ফ্ল্যাট-সহ কয়েক লক্ষ টাকা পাবে? এখন ওইসব ফ্ল্যাটে অনেক বাইরের লোকজন থাকে। পুরোনো লোকের তুলনায় নতুন আসা মানুষজনই বেশি। ঠেলায় করে সবজি বিক্রি হয়, সবজিওয়ালারা হাঁকে টমট্টর... লাউকি... পরবল...। বোঝাই যাচ্ছে প্রচুর অবাঙালির বাস। হনুমান মন্দির হয়েছে একটা। হরিপদ চক্রবর্তী আগে এদিকের পুজো-আচ্চা করতেন। ওঁর নাতি সংস্কৃতে অনার্স। সে নাকি হনুমান পুজো করতে পারে। ও কিন্তু কম্পিউটার জানে, বাইক চালায়। জিন্সের প্যান্ট পরে, আবার পুজো-আচ্চাও করে। পাড়ায় তিনটে ভ্রূ ওঠাবার দোকান– বিউটি পার্লার যারে কয়। তেলেভাজার দোকান আর নাই। চাট-রোল এইসব। পুকুরটা এখনও আছে, তবে বক-পানকৌড়ি এইসব আসে না। পুকুরঘাটে বাসন ধুতে আসে না ঘরের বউরা। দুপুরবেলায় পুঁটি মাছ ধরার জন্য ছিপ হাতেও বসে না কেউ। পুকুরপাড়ের এই কলোনি অফিসটুকু আছে, এই অঞ্চলে টিনের চালের ঘর এখন একটাই। সঙ্গে ছিল একটা কুস্তির আখড়া। ওইখানে এখন জঙ্গল। অফিস ঘরের পাশেই ছিল ব্যায়াম স্থান। পরে ওটা হল ক্যারাম স্থান, এখন ব্যারাম স্থান।

आगे की कहानी पढ़ने के लिए सब्सक्राइब करें

ডিজিটাল

(1 साल)
USD10
 
সাবস্ক্রাইব করুন

ডিজিটাল + 12 প্রিন্ট ম্যাগাজিন

(1 साल)
USD79
 
সাবস্ক্রাইব করুন
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...