( ৪ )

কী করবে? বাড়িতে গেলেই সেই একই প্রশ্ন! খুব দিম্মার বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে। ওখানে গেলে একটু কদিন মানসিক শান্তি তো পাবে। কেউ তো প্রশ্ন করার নেই। কতদিন যায়নি মায়ের কাছে।

মা ওর দিম্মা। ওই নামেই ডেকে এসেছে ছোটো থেকে। ছমাস বয়স থেকে সাত বছর পর‌্যন্ত, একটা সরলরৈখিক শিশুকাল কস্তুরী কাটিয়েছে ওখানে। আচ্ছা ওখানেরই কেউ কি ওর এই হরিণ নামটা রেখেছিল? হতেও তো পারে। জ্ঞান হওয়া ইস্তক যা কিছু আনন্দ কুড়িয়ে বাড়িয়ে ওখানের অভিজ্ঞতাতেই তো জমা হয়ে আছে। কেন যে ওখান থেকে ওকে নিয়ে এল বাপি? আর নিয়ে যদি আসবে তাহলে নিজেদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে কেন?

বেশ মেঘলা করে আসছিল। পুজো মিটতেই ঠান্ডা কাঁপ ধরা হাওয়াও বইতে শুরু করেছিল শহরের বুক বেয়ে ডিসেম্বর মাস। এসময় বৃষ্টি হওয়ার কথাই নয়। কিন্তু পশ্চিম আকাশের মেঘের আকারটা দেখে সন্দেহ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল ঝড় উঠবে। ফুট ধরে হাঁটতে হাঁটতে ও দেখতে পাচ্ছিল আকাশের মেঘটা যেন হাঁ করে গিলতে আসছে পথঘাট। বুকের ভেতরটা দুমড়ে যাচ্ছিল। কাঁপ ধরা হাওয়ায় জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছিল শরীরটাও। কেমন যেন মনে হচ্ছিল খুব ভুল হচ্ছে। সাংঘাতিক রকমের ভুল হচ্ছে কোথাও…!

বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। তিরের মতো বৃষ্টির ফোঁটাগুলো এসে লাগছিল কস্তুরীর কান, মাথা, গায়ে এদিক ওদিক। বুকের ভেতরটা ফালাফালা হয়ে যাচ্ছিল। বাস, ট্রাম, গাড়িগুলো যেন প্রকৃতি সামলে প্রাণপণ ছুটতে শুরু করেছিল রাস্তার এধার থেকে ওধার।

নাহ্ আর কোনও কিছু ভাববে না। গায়ে ওড়নাটাকে ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে রাস্তাটা একদৌড়ে পার হয়। ঠিক এই বিশেষ বাস নাম্বারটাই খুঁজছিল। হঠাৎ করে চোখে পড়ায় খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে বাসের হ্যান্ডেল। এক ধাপ, দু ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠে বসে পড়ে জানলার গা ঘেঁষে। গায়ে ওড়নাটা সরিয়ে দেয়। যত ইচ্ছে বৃষ্টি এসে আছড়ে পড়ুক ওর ওপর। আজ ও ভিজতেই চায়।

নিজের ভয়গুলোকে আলগা করে কাউকে বলতে চায়, দেখো বু তোমাকে ছাড়াও আমি বাঁচতে পারি। বাঁচার চেষ্টা করতে পারি। স্বপ্ন দেখতে পারি। ভালোবাসা পেতে পারি। তোমাকে ছাড়াও আমার জীবনে এমন কেউ আছে যে আমাকে সব দুঃখ ভুলিয়ে দিতে পারে। আমি আর কখনও তোমার কথা ভাবব না। কোনদিনও না…।

( ৫ )

কোনওদিনই তোর পড়াশোনায় মতিগতি ছিল না। সে কী আমি জানি না ভেবেছিস? শুধু আমাকে দেখে হিংসে।

আমি তোকে হিংসে করি?

হ্যাঁ করিস তো। আমি জানি না ভেবেছিস? নাহলে ঋজু চলে যাবার পরেই হাত পা ছুড়ে এমন কাঁদতে বসিস কেন? পুজোয় কত কিছু প্ল্যান করব ভাবলাম, মুডটাই অফ হয়ে গেল। মনে রাখিস, আমি তোর থেকে সাতটা বছরের বড়ো।

না দিদি না…।

দাঁড়া বাপিকে বলে তোর লেখাপড়া ঘোচাচ্ছি আমি। আমার বিয়ে হয়ে গেলেই দেখবি তোর কী হয়। সেই তো প্রদীপ হাতে কালীঘাটেই বসতে হবে। বাপি মা আর কত টানবে? খুব শখ না…।

দিদি…?

আর ওই মুখটা দিয়ে দিদি উচ্চারণটা করিস না। আমার ঘেন্না হচ্ছে। ছিছি এত বড়ো কথা বললি আজ?

কী হল রে মাপু। তোরা দুই বোনে রাত দুপুরে আবার কী শুরু করলি? সারাদিন খেটেখুটে এসে একটু চোখের পাতা এক করতে পারবে না তোদের বাবা!

কী বলি বলো তো মা, ঋজুর নামে যা তা বলছে তোমার এই বাবু। পড়াশোনা না করে সারাদিন মাথায় এই ভেঁজে চলেছে তোমাদের মেয়ে এটাকে তোমরা কোন পাতে দেবে ভেবে দ্যাখো। যেখানেই দেবে ঘরে তুলে দিয়ে চলে যাবে। রেহাই পাবে না তোমরা। মামাবাড়ি থেকে কেন যে আনতে গেলে? এত বড়ো আস্পর্ধা সোমক এলেও এত বাজে ব্যবহার করে ঋজু আর আসতেই চায় না। বলে তোমাদের বাড়ির লোক কি চায় না আমি যাই? বলো মা এর কী উত্তর দেব আমি?

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...