সত্যি সত্যি একজন স্যারের দরকার ছিল। সামনে বাংলা অনার্স ফাইনাল। গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনে মেম্বারশিপ নিলেও পড়াটা যুত্সই হচ্ছিল না। কলেজের বাইরের সব প্রফেসরের মাইনে ভালোই হয়, তাই কলেজের কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব মিলে চেষ্টা করছিল যাতে একটা কলেজের স্যারকে রাজি করানো যায়।
ফোন রেখে কলেজের পথে পা বাড়াতে বাড়াতে বাপি-মায়ের ঘর থেকে কতগুলো কথা কানে এসেছিল ওর।
যাক বাবা, একটু নিশ্চিন্ত হওয়া গেল এবারে।
হুম হাজরা রোডের জমিটা যে ঠিক এই সময়ই ব্যবস্থা করতে পারব, ভাবতে পারিনি জানো! কিছু না হলেও নমো নমো করে ব্যাপারটা সারতে তো হবে।
কস্তুরীর বাপির কথা শুনে ওর মা অনেকটা নিশ্চিন্ত গলায় বলছিল, হ্যাঁ মাপু আর ঋজু আর কতদিন করবে? ওরা যা করছে যথেষ্ট করছে। গায়ে গতরে বল থাকতে থাকতেই তরী পার করে দিতে হবে। আমাদের গলার কাঁটা আমাদেরই তো বের করতে হবে কী বলো?
হ্যাঁ সামনের বৈশাখও দেরি করব না ভাবছি।
এর মানে কী? বাপি মা তাহলে কি ওর অজান্তেই সমস্তটা সেরে ফেলেছেন। ওকে কিছু জানাবার প্রয়োজনই মনে করেনি। দিদির কথাই শুরু, দিদির কথাই শেষ? ওর মতামত, ওর কথার কোনও দাম নেই?
( ১১ )
নিজের দামটা যেন একটু একটু করে হারিয়ে ফেলছিল কস্তুরী। জীবনটা থেকে যাচ্ছিল শুধুমাত্র একটা জড়বস্তু হয়ে ধীমান স্যারের বাড়ির সেই ঘটনাটা ওর স্বপ্নের দরজা জানলাগুলোকে আটকে দিচ্ছিল একের পর এক। শামুকের মতো খোলসের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে রাখা ছাড়া আর উপায় কী। কাচের টুকরোতে ফালা ফালা হয়ে পায়ে চামড়া সরে গেছিল, স্টিচও পড়েছিল বেশ অনেকগুলো। মনের সেলাইও ছিল অজস্র। গোটা ঘটনাটা এতটাই নাটুকে আকার নিয়েছিল, যেখানে হাজার গোপন পর্দায় ঢেকে গেছিল সাদাটে সত্যি।
ধীমান স্যার বাড়িতে ফিরেছিলেন রাত আটটা নাগাদ। তার আগেই কস্তুরীর পায়ে ব্যান্ডেজ থেকে টিটেনাস সমস্তটাই দিয়ে দিয়েছিল বুম্বা স্যার। স্যারের বাড়ি থেকে কস্তুরীকে নিজের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে নিজে দায়িত্ব নিয়ে সবটা করিয়েছিল। কারুর মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয়নি ছেলেটার উপর।