সন্তোষবাবু ক্ষুণ্ন মনে বললেন— তোমার যখন বলতে আপত্তি আছে তাহলে থাক। তোমাকে জোর করব না। তবে মনে রেখো এক মাঘে শীত যায় না। তোমাকে আমি মাঝেমধ্যেই শেষটুকু জানার জন্যে বিরক্ত করব।
খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকে যাওয়ার পর আর কিছুই করণীয় থাকে না, একমাত্র স্বস্থানে ফিরে যাওয়া ছাড়া। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অর্পণ একসময় অনুমতি চায়, আমি তাহলে রওনা দিই কেমন?
সন্তোষবাবু জানতে চান— তুমি ফিরবে কীভাবে?
—কেন? যেমন এসেছিলাম ঠিক তেমনি ভাবে। অর্পণের সংক্ষিপ্ত জবাব।
—রাতেরবেলায় এত দূরে তুমি একা একা যাবে? সন্তোষবাবু পরামর্শ দেন তার চেয়ে একসঙ্গে বাসে গেলেই পারতে। ওরা সকলেই তো তোমার চেনা। এতে তোমার লজ্জা কীসের?
—যখন ওরা ডেকেছিল তখন আসিনি। তাই এখন ওদের সাহায্য নেওয়াটা কোনও মতেই যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় না। তারপর একটু নীরবতা পালনের পর অর্পণ বলে, আপনি আমার জন্যে একটুও চিন্তা করবেন না। কাল ভোরবেলায় আপনি ঘুম থেকে ওঠার পরেই আপনাকে আমার দেখা স্বপ্নের শেষ দৃশ্যের বিষয়টা জানাব। দেখবেন কী রোমাঞ্চকর ঘটনা! আমি জানি আপনি ভীষণ উতলা হয়ে আছেন। শুধুমাত্র রাতটুকু আপনি অপেক্ষা করুন। নমস্কার কাকাবাবু। এবার আমি তাহলে চলি কেমন?
শীতের দিনের সকাল। তখনও ভালো করে সূর্য ওঠেনি। কুয়াশাভরা মেঘলা আকাশ। ফোনটা হঠাৎ কর্কশ শব্দে সকলকে সচকিত করে তোলে। রিসিভারটা হাতে না তোলা পর্যন্ত রেহাই নেই। ক্রমাগত বেজেই যাবে। একেবারেই সহবত শূন্য, কাণ্ডজ্ঞান হীন। তাই একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও আদর করে হাতে নিতে হয় সে যতই অবাধ্য হোক না কেন।
সন্তোষবাবুর হঠাৎ অর্পণের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। ভোরবেলায় তার স্বপ্নের শেষ দৃশ্যের বিষয়ে জানানোর কথা ছিল। সে নয় তো? যদিও এত ভোরে সেই খবর পরিবেশন করার কী প্রয়োজন ছিল? কাল রাত্রেই সে জানাতে পারত। অৰ্পণ কী এমন রোমাঞ্চকর খবর জানাতে ইচ্ছুক?
—হ্যালো। সন্তোষবাবুর কণ্ঠস্বর ভেসে ওঠে ওপারে।