জানলার বাইরে একটা দোয়েল শিস দিচ্ছে অনবরত। সেটা কানে আসতেই ভেঙে গেল ঘুমটা। মোবাইলে টাইম দেখে লাফিয়ে উঠলাম। সাড়ে ন’টা বেজে গিয়েছে! দশটা থেকে আমার মিটিং!
মাস চারেক হল কলকাতা শহরে এসেছি একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে আদতে উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা। দক্ষিণ কলকাতার এক এলিট পাড়ায়, কোম্পানি থেকে দেওয়া হয়েছে দু’কামরার ফ্ল্যাট। সারাদিন কাজের চাপ থাকে বিস্তর। সকালে নাকে-মুখে গুঁজে বেরিয়ে যাই, ফিরি রাতে। প্রতিবেশীদের সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই আমার। চিনিও না সেভাবে কাউকে। শুধু আবাসনের সেক্রেটারির সঙ্গে পরিচয় আছে একটু-আধটু।
গত তিনদিন যাবৎ সম্পূর্ণ ঘরবন্দি। প্যান্ডেমিকের ভয়ে সারা দেশে চলছে লকডাউন। অফিসেরও ঝাঁপ বন্ধ। শুরু হয়েছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম। একটু পরেই গুগল-এ মিট করতে হবে এক জাঁদরেল ক্লায়েন্টকে। ঝটপট ফ্রেশ হয়ে রাতের ট্র্যাক প্যান্টের উপরেই পরে ফেললাম একটা আয়রন করা শার্ট। গলায় ঝোলালাম টাই। কফি মাগ হাতে নিয়ে অন করলাম ল্যাপটপ।
পাক্কা এক ঘণ্টা চলল মিটিং। আপাতত কিছুক্ষণ বিরতি, তারপর আবার বসতে হবে কাজ নিয়ে ঘরদোর সাফ-সুতরো করতে হবে এরই মাঝে। ব্যবস্থা করতে হবে খাবারেরও। একজন মাঝবয়সি মহিলা এসে সকালে ঝাড়পোঁছ, রান্না এসব করে দিয়ে যেতেন। কিন্তু কোভিডের কল্যাণে তাঁর আসা বন্ধ। অগত্যা সব কাজ সামলাতে হবে আমাকেই। মা-বাবা অনেক করে বলেছিল বাড়ি ফিরে যেতে। কিন্তু আমিই যাইনি ইচ্ছে করে। ভেবেছিলাম কয়েকটা দিন একাকিত্বের স্বাদ নেব। নিজের সঙ্গে সময় কাটাব কিছুটা।
ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালাম ব্যালকনিতে। আমাদের বিল্ডিং-এর উলটো দিকেই আছে একটা দোতলা বাড়ি। ছাদের উপর সারি সারি টব সাজানো। ফুটে আছে রং-বেরঙের ফুল। হাতে একটা খুরপি জাতীয় কিছু নিয়ে একটা মেয়ে টবে মাটি দিচ্ছে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছিলাম আমি। মেয়েটা একমনে তার কাজ করছে। হ্যাংলার মতো দাঁড়িয়ে আছি ভেবে বিরক্ত লাগল নিজেরই। ঢুকে গেলাম ঘরে। ভাণ্ডারে খাবার বাড়ন্ত। অতএব ছুটতে হল পাড়ার মুদিখানায়। ভাগ্যিস সেটা খোলা ছিল।