শ্রাবণ মাস। ঘন কালো মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ। সামযিক বিরতির পর আবার শুরু হয়েছে হালকা চালে। প্রায় সারাদিন ধরেই লাগাতার বৃষ্টি হয়ে চলেছে। মাঝে মাঝে একটু বিরতি নিলেও সেটা দীর্ঘস্থাযী হচ্ছে না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল শান্তা, আটটা বাজে। রাত বেশি না হলেও চারপাশটা ঝিমিয়ে আছে। সেটা অতিবৃষ্টির কারণে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই দুর্যোগের মধ্যে কে আর সাধ করে বাইরে বেরুবে!
চিপস আর কফির কাপ হাতে টিভি খুলে বসল শান্তা। শান্তা কুলকার্নি। মারাঠি মেয়ে বাঙালি ছেলে সুমিত সেনকে বিয়ে করে এখন পুরোদস্তুর বাঙালি বউ। দুজনেই সফটওয্যার ইঞ্জিনিয়ার। বেঙ্গালুরুতে পড়ার সময় আলাপ, আলাপ থেকে প্রেম, তারপর বিয়ে। এখন শুনতে সহজ মনে হলেও, বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দুজনকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল।
শান্তার পরিবার বেশ গোঁড়া। প্রথমে যথেষ্ট আপত্তি তুলেছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়। তার পিছনে ছিল শান্তার অদম্য জেদ আর ছোটোমামা সুনীল আপ্তের ফুল সাপোর্ট।
সুমিতদের আদি নিবাস কৃষ্ণনগরে। ওখানেই থাকে পুরো ফ্যামিলি। সুমিতরা কর্মসূত্রে কলকাতাতেই থাকে। উইকএন্ডে চলে যায় বাড়িতে। দুএকদিন খুব হই-হুল্লোড় করে কাটিয়ে আসে। প্রথমে একটু অসুবিধা হলেও এখন বাংলাটা বেশ ভালোই বলে শান্তা।
ফোন বেজে উঠল চেনা রিং টোনে। টিভির সাউন্ড মিউট করে দিল শান্তা। প্রথমে ভেবেছিল সুমিতের ফোন। সুমিত এই মুহূর্তে দিল্লিতে। বিশেষ একটা কনফারেন্সে যোগ দিতে গিয়েছে, অফিস থেকেই পাঠিয়েছে। অচেনা নম্বর দেখে ভ্রু-টা ঈষৎ কোঁচকাল শান্তার। এই সময় আবার কে ফোন করল?
রিসিভ করে বলল, হ্যালো... কে বলছেন?
ওপার থেকে ভেসে এল গম্ভীর পুরুষ কন্ঠ, আপনি কী শান্তা কুলকার্নি বলছেন?
শান্তা অবাক হয়ে বলল, হ্যাঁ বলছি... আপনি কে বলছেন বলুন তো, ঠিক চিনতে পারছি না।
মাইসেল্ফ অবিনাশ রুদ্র। আপনি আমাকে চিনবেন না কিন্তু আমি আপনাকে চিনি। আমি কয়েকটা জরুরি কথা বলার জন্য আপনাকে ফোন করেছি। কথাগুলো আপনার পক্ষে খুবই ইম্পর্ট্যান্ট। হয়তো আপনার শুনতে খুব একটা ভালো লাগবে না, তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ আমার মনে হয়েছে কথাগুলো আপনাকে বলা দরকার।