এক যৌথ পরিবারের সদস্যদের সুপ্ত ভালোবাসা, সম্পর্ক এবং হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার কাহিনিতে সমৃদ্ধ হয়ে মুক্তি পেতে চলেছে ‘রাস’। ছবিটির পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছবির কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে বিস্তারিত ভাবে। জানানো হয়েছে, এই ছবির গল্পে নাতিকে তার ঠাকুমার সঙ্গে পুনরায় মিলিয়ে দেওয়ার মুহূর্ত তুলে ধরবে। শিকড়ের টানে গ্রামে  ফিরে আসবে পুত্র  এবং সৃষ্টি হবে এক সোনালি অধ্যায়।

দেখা যাবে, মানিকপুরের চক্রবর্তী পরিবারে চলছে উৎসবের আবহ। পরিবারটি জমকালো ‘রাস’  উৎসব এবং ঝুলন উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে, বাড়ির ছেলে সোমনাথ ১৮ বছর পর বাড়ি ফিরলে উত্তেজনা দ্বিগুন হবে।

আসলে সোমনাথ তার জীবনের প্রথম  ১২ বছর গ্রামের বাড়িতে কাটিয়েছিলেন। সোমনাথের বাবা দিল্লিতে কাজ করতেন এবং বছরে কয়েকবার পৈতৃক বাড়িতে যেতেন। গ্রামে থাকাকালীন সোমনাথের জীবন রূপকথার থেকে কিছু কম ছিল না। গ্রামের স্কুলে পড়া, পুকুরে মাছ ধরা, আম গাছে ওঠা, বৃষ্টিতে ভিজে  ফুটবল খেলা, ঠাকুমার হাতে তৈরি আচার উপভোগ করা, দূর-দূরান্তের গল্প শোনা, ঝুলনে অংশ নেওয়া, নাটকে অংশগ্রহণ, গ্রামের মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,  ক্যারাম খেলা প্রভৃতিতে বর্ণময় ছিল সোমনাথের শৈশব। সাইক্লিং অ্যাডভেঞ্চার-এও অংশ নিয়েছেন সোমনাথ। সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় ছাদে আড্ডা, পুরো পরিবারের সঙ্গে সিনেমা দেখা এবং রাতে লেখাপড়া শেষ করে ভূতের গল্প শোনা প্রভৃতির মাধ্যমে সোমনাথের গ্রাম্য-জীবনের স্মৃতি আজও অমলিন।

চক্রবর্তী পরিবারের ‘রাস’ ছিল যৌথ পরিবারের বন্ধনে গভীরভাবে সংযুক্ত আনন্দ ও ভালোবাসার উৎসব।  সোমনাথের ঠাকুমা অলকানন্দা দেবী সংবেদনশীল এবং স্পষ্টভাষী মানুষ। পরিবারের  হাল ছিল তার হাতে এবং তিনি ছিলেন সোমনাথের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। এমনকি তার মায়ের থেকেও বেশি। শুধু তাই নয়, সোমনাথের সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য ছিল ঠাকুমার কাছে। গ্রামে সোমনাথের  ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল পাড়ার এক মেয়ে—রাই। যে তার বেশিরভাগ সময় চক্রবর্তী বাড়িতে কাটাত। তাদের বন্ধন এতটাই দৃঢ় ছিল যে, বড়োরা প্রায়ই তাদের ভবিষ্যৎ বিবাহ অনিবার্য হওয়ার বিষয়ে রসিকতা করতেন।

যাইহোক, দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যখন সোমনাথের মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ সত্ত্বেও, তিনি যেতে চাননি। যদিও পরিবারের পুরুষরা এই সিদ্ধান্তে একমত হননি। অবশেষে,  সোমনাথের মা  মারা যান। সোমনাথের বাবা যখন বর্ষার রাস পূর্ণিমায় ফিরে আসেন বাড়িতে, তখন তিনি তার স্ত্রী-কে হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়ার  জন্য পরিবারের সদস্যদের  দোষারোপ করেন এবং কখনও ফিরে না আসার শপথ নিয়ে, ছেলে সোমনাথকে সঙ্গে নিয়ে  বাড়ি ছেড়ে চলে যান।

এরপর সময় এগিয়েছে তার নিজস্ব গতিতে। সোমনাথ এখন  একটি  বহুজাতিক কোম্পানির  ইঞ্জিনিয়ার।  অনির্দিষ্টকালের জন্য কানাডা চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। যাওয়ার আগে সোমনাথ তার বাবার বন্ধুর মেয়ে সাঞ্জকে বিয়ে করতে প্রস্তুত ছিলেন কিন্তু ভাগ্য অপ্রত্যাশিত ভাবে সোমনাথকে মানিকপুরে ফিরিয়ে আনে। সোমনাথ তার জন্মভিটে মানিকপুর গ্রামে ফিরে গিয়ে দেখেন, মানিকপুরের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি বদলে গেলেও, গ্রামের  মানুষ ঠিক আগের মতোই পবিত্র হৃদয় নিয়ে অটুট। তরুণ প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল যুগকে গ্রহণ করার সত্ত্বেও, চক্রবর্তী পরিবারের সাংস্কৃতিক সারাংশ অটুট ছিল। রাই, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এবং শহরে একটি উন্নত জীবনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, বেছে নিয়েছিলেন গ্রাম্য-জীবন। তিনি এখন একটি  প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মানুষ আধুনিক হয় অন্তরে, মননে, মানসিকতায়।

আসলে, ‘রাস’ হল  দুটি পরস্পরবিরোধী জগতের গল্প। মূল্যবোধ,  হারানো প্রেম এবং বাঙালিয়ানার নির্যাস। শিকড়ের টান, রক্তের বন্ধন এবং বাঙালি সংস্কৃতির চিরন্তন গর্বের কাহিনি তুলে ধরবে তথাগত মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘রাস’।

বিক্রম চট্টোপাধ্যায় (সোমনাথ) এবং দেবলিনা কুমার (রাই) অন-স্ক্রিন জুটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন ‘রাস’ ছবির মাধ্যমে। এছাড়া, এই ছবিতে অভিনয় করেছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী, অনসূয়া মজুমদার, শঙ্কর দেবনাথ, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, রণজয়, পারিজাত চৌধুরী, দেবাশিস, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, দেবপ্রসাদ হালদার, প্রতিম চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। সেইসঙ্গে জানানো হয়েছে, মোট ৫০-জন অভিনেতা-অভিনেত্রী রূপদান করেছেন বিভিন্ন চরিত্রে। পরিচালক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন, এই সিনেমাটি আংশিক ভাবে তাঁর জীবনীমূলক। কারণ, এই ছবির কাহিনিতে তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর শৈশবের স্মৃতিকে।  পরিচালক এও জানিয়েছেন যে, এই ছবিটি আসলে হারিয়ে যাওয়া বাঙালি জীবনের এমন এক গল্প,  যা আমরা শীর্ষেন্দু কিংবা সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের রচনায় খুঁজে পাই। তাছাড়া, যৌথ পরিবারের আনন্দ উদযাপন এবং দৈনন্দিন জীবনযাপন, যা আমাদের জীবন থেকে ম্লান হয়ে গেছে, তা-ই আসলে এই চলচ্চিত্রের সারাংশ।

ছবিটির কাহিনি লিখেছেন পরিচালক স্বয়ং। শিল্প নির্দেশক আনন্দ আধ্যা। সম্পাদক আমির মণ্ডল। চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন উত্তরণ দে। সাউন্ড ডিজাইন এবং মিক্সিং-এ ছিলেন অদীপ সিং মানকি ও তন্ময় সাহা। ‘ছবির মতো এন্টারটেইনমেন্ট’-এর ব্যানারে তৈরি হওয়া ‘রাস’ ছবিটি চলতি বছরের জুন থেকে জুলাই মাসের মধ্যে মুক্তি পাবে বলে জানানো হয়েছে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে ছবিটির ডিজিটাল পোস্টার।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...