আমাদের ভালো থাকা নির্ভর করে জীবনযাত্রার ধরনের ওপর। মনে রাখবেন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।
লাইফস্টাইলের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ডায়েট। ব্যালান্সড ডায়েট শুধু আপনাকে শারীরিক ভাবে সুস্থ রাখে তা নয়, আপনার ত্বক, চুল ও মনকেও ভালো রাখে। তাই শারদোৎসবের দিনগুলিতে আপনার ডায়েট ও শরীরচর্চার ওপর নজর দিন। তাহলেই উৎসবের দিনগুলোতে খুব সুস্থ ও সুন্দর থাকবেন এবং আনন্দে কাটাতে পারবেন।
কীভাবে শরীরের এক্সট্রা ফ্যাট কমাবেন?
অনেকেই আছেন যারা সারাবছর শরীরের ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখার দিকে নজর দেন না কিন্তু উৎসবের দিনগুলিতে মনে হয়— একটু বাড়তি ফ্যাট যদি কমত, তাহলে বোধহয় ভালো হতো। তবে চিন্তা নেই, নীচের টিপ্সগুলো মেনে, কিছুটা বাড়তি ফ্যাট কমিয়ে নিজেকে হালকা ও ফিট রাখুন।
(১) চিনি ও চিনিযুক্ত খাবার যেমন কেক, প্যাস্ট্রি, আইসক্রিম, মিষ্টি ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
(২) ডুবো তেলে ভাজা খাবার পুরোপুরি বাদ দিন।
(৩) প্রতিদিন অন্তত একটি করে গোটা ফল খান।
(৪) দুপুরের ও রাতের খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন রকম সবজি রাখুন।
(৫) কম ফ্যাট যুক্ত দই খান।
(৬) পেট ভরে সকালের জলখাবার খান। রাতের খাবারে কার্বোহাইড্রেট কম রাখুন। ভাত বা রুটি একটু কম কম খান এবং স্যালাড, সবজি, চিকেন, ডাল রাখুন খাদ্য তালিকায়।
(৭) ডায়েটের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
ত্বক সুন্দর রাখার জন্য কী খাবেন?
শুধু অতিরিক্ত ফ্যাট নয়, ত্বকেরও যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। রূপচর্চার জন্য অনেক কিছুই করে থাকেন অনেকে। স্যালনে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট করেন। কিন্তু শরীরের ভিতর থেকে ত্বককে ভালো না রাখলে, ত্বক ভালো থাকে না। খুব সহজে ব্রণ, বলিরেখা, মেচেতা এবং বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ত্বক প্রাণহীন হয়ে পড়ে। উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ডায়েট-এ সমান ভাবে নজর রাখতে হবে। এই বিষয়ে রইল কিছু পরামর্শ:
(১) জল খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে, যাতে ত্বক থাকে তরতাজা।
(২) ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন লেবু, আমলকী, পেয়ারা, পেঁপে ডায়েট-এ যোগ করুন।
(৩) প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান পর্যাপ্ত পরিমাণে, যেমন— মাছ, ডাল, দুধ বা দই, চিকেন। ত্বক এবং চুল স্বাস্থ্যকর রাখতে হলে, ভালো প্রোটিন জরুরি।
(৪) ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে ভালো ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার যেমন বাদাম, চিয়া সিস, ফ্লাক্স সিডস ডায়েট- এ রাখুন।
(৫) অ্যালকোহল সেবন ও ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
কী খাবেন, কী খাবেন না?
উৎসবের ক’দিন আমরা সমস্ত ডায়েট-এর বেড়াজালের বাইরে থাকি। উৎসবের দিনগুলিতে পেটপুজো সমান গুরুত্বপূর্ণ বাঙালির কাছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, উৎসব চলবে গোটা মরশুম জুড়ে। তাই আনন্দ করার পাশাপাশি, সুস্থ থাকাটাও দরকার। যে-জিনিসগুলো মাথায় রাখলে সুস্থ ভাবে উৎসব কাটাতে পারবেন, তা হল—
(১) যখন বেরোবেন অবশ্যই জলের বোতল সঙ্গে রাখবেন। জল পরিমাণমতো খেতে হবে
(২) জল তেষ্টা পেলে কার্বনেটেড বেভারেজগুলো খাবেন না। ডাবের জল, পুদিনার জল, লস্যি খেতে পারেন।
(৩) সঠিক সময়ে দুপুর ও রাতের খাবার খাবেন।
(৪) রাস্তার পাশের স্নাক্সজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন, হজমের সমস্যা হতে পারে।
(৫) সঙ্গে রাখুন ড্রাই ফ্রুটস, গোটা ফল – যাতে খিদে পেলে হেলদি অপশন হাতের কাছেই থাকে। ভালো ভাবে উৎসব কাটান, সাবধানে থাকুন, সুস্থ থাকুন।
এক নজরে
◌ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ক্যান্সার-সহ সমস্ত ধরনের অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে স্বাস্থ্যকর খাদ্য
◌ জীবনের প্রথম থেকে শুরু করা উচিত স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। যেমন— মা যদি তার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান সঠিক সময়ে, তাহলে খুব ছোটো থেকেই মজবুত হয়ে উঠবে তার সন্তান
◌ প্রতিদিন লবণের পরিমাণ ৫ গ্রামের কম রাখলে, উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে
◌ প্রক্রিয়াজাত খাবারের বর্ধিত উৎপাদন, দ্রুত নগরায়ন এবং পরিবর্তিত জীবনধারা খাদ্যের ধরনেও পরিবর্তন এনেছে। তাই, ভালো থাকার জন্য হেলদি ডায়েট গ্রহণ জরুরি
◌ মাখন এবং ঘি-এর পরিবর্তে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ তেল, যেমন সয়াবিন, ক্যানোলা (রেপসিড), ভুট্টা, কুসুম এবং সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করুন
◌ কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার এবং চর্বিহীন মাংস খাওয়া উচিত
◌ বেকড এবং ভাজা খাবার খাওয়া কমালে সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে
◌ তাজা ফল এবং শাকসবজি খাওয়ার মাধ্যমে পটাশিয়ামের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে
◌ চিনি খাওয়া কমান।
অনুশ্রী মিত্র, ডায়েটিশিয়ান।