বেশ গরম পড়েছে, মনটা ঠান্ডা কিছু খাওয়ার জন্য আনচান করছে। চট করে পাশের দোকানে গিয়ে এক গেলাস শরবত অথবা ফলের রস খেয়ে নিলেই আত্মার তৃপ্তি। তা না হলে কোল্ড ড্রিংক অথবা আইসক্রিম খেয়ে নিতে পারলেও ভালো হয়।
শীতে অথবা বৃষ্টির সময়ে গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ে একটু বেশি মিষ্টি দিয়ে একটা চুমুক। আহা! আর সঙ্গে যদি মশলা ছড়িয়ে গরম গরম পকোড়া থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। মন রইল প্রফুল্ল কিন্তু শরীরের যা ক্ষতি হল তা জানল শুধু শরীর-ই।
এইভাবে আমরা সময়-অসময়ের খাওয়ার প্রলোভনটাকে তৃপ্ত করার জন্য অথবা জিভের স্বাদকে ইন্ধন দেওয়ার তাগিদে খাদ্য-পানীয় ইত্যাদির সঙ্গে নুন, চিনি, মশলার পরিমাণও কমাতে বাড়াতে থাকি। অনেক সময় না জেনেই পরিমাণ একটু বেশি-ই হয়ে যায়। এতে হয়তো খাবারের স্বাদ অনেকটাই ভালো হয় কিন্তু এর অপকারিতা অনেক পরে বোঝা যায়। এমনও হতে পারে এটাই গভীর শারীরিক অথবা মানসিক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের আভ্যন্তরীণ সামগ্রিক মানসিক বিকাশের জন্য চিনি, নুন এবং মশলার একটা গুরুত্ব অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু সীমিত মাত্রায় এর প্রয়োগ করলে তবেই শরীরের উপকার হয়। প্রয়োজনের থেকে বেশি Sugar ব্যবহারে, উপকারের থেকে অপকারই হয় বেশি। গবেষণায় জানা গেছে, এখন খাবারে নুন, চিনি অথবা মশলা দেওয়ার পরিমাণ স্বাদ অনুযায়ী অনেক বেড়ে গেছে।
আমাদের গতানুগতিক জীবনচর্যায়, এই তিনটে জিনিসকে কম মাত্রায় ব্যবহার করার কথা কিছুতেই ভাবা যায় না। এর একটা প্রধান কারণ ‘রেডি টু কুক’ খাবার অথবা প্যাকেট করা ফাস্ট ফুড- যেগুলি দোকান বাজারে সহজলভ্য। অথচ আগে এই সিলড খাবারের চলন একেবারেই ছিল না। প্যাকেটের খাবার বহুদিন পর্যন্ত সুরক্ষিত এবং টাটকা রাখার জন্য সোডিয়াম এবং চিনি একটু বেশি পরিমাণেই দিতে হয়। ফলে মানুষের ব্যস্ত জীবনে ‘রেডি টু কুক ফুড’, জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও এর অপকারী পরিণাম হল, রক্তচাপ বৃদ্ধি, অ্যাজমা, ওবেসিটি, কোমরের স্থূলতা বৃদ্ধি ইত্যাদি শারীরিক অসুস্থতা।
সুতরাং জেনে নেওয়া উচিত খাবারে কতটা চিনি দেওয়া উচিত এবং কীভাবে? Balancing sugar content খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়৷
বেশি মিষ্টি মানেই বিপদ সংকেত
চিনি অথবা মিষ্টি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। এর থেকে আমরা শক্তি এবং এনার্জি লাভ করি। কিন্তু বেশি মিষ্টি খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিনিতে ক্যালোরি অনেক বেশি থাকে।
চিনিতে কোনওরকম ভিটামিন, মিনারেল অথবা পুষ্টিকর তত্ত্ব থাকে না। খালি এনার্জি এবং শক্তি বাড়াবার জন্যই মিষ্টির প্রয়োজন হয়। ১ গ্রাম চিনিতে প্রায় ৪ ক্যালোরি থাকে। এই জন্য খুব বেশি মিষ্টি, ঠান্ডা আইসক্রিম জাতীয় খাবার অথবা ডেসার্ট, বিস্কুট, চকোলেট খেলে শরীরের স্থূলতা বৃদ্ধি হয় এবং এতে খাবারের পুষ্টির ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশেষজ্ঞের মতে, প্রত্যেকদিন যে -সুস্থ ব্যক্তি ১,৬০০ ক্যালোরি-যুক্ত খাবার খান, তিনি সাধারণভাবে প্রাকৃতিক পদার্থ থেকে প্রাপ্ত চিনি ছাড়াও অতিরিক্ত ৬ ছোটো চামচ অথবা ২৪ গ্রাম চিনি অনায়াসে নিজের ডায়েটে রাখতে পারেন। যিনি ২,২০০ক্যালোরি-যুক্ত খাবার খান তিনি ১২ চামচ অথবা ৪৮ গ্রাম চিনি খেতে পারেন। মিষ্টির পরিবর্তে আমরা অনেক সময়েই কোল্ড ড্রিংক, আইসক্রিম ইত্যাদি বেশি খাই। এগুলি শরীরে কোনও পুষ্টি প্রদান করে না উপরন্তু এগুলি শরীরের ক্ষতি করে বেশি। শরীরে ক্যালোরির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। কোল্ড ড্রিংক-এর বদলে সাদা জল, সিল্ড ফ্রুট জুসের জায়গায় তাজা ফলের রস এবং খাবারের পর মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে হলে ক্ষীর, হালুয়া ইত্যাদির বদলে টাটকা ফল খাওয়া উচিত।
প্রয়োজনের তুলনায় কম অথবা বেশি চিনি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে গেলে খিদে ও পিপাসা অনেক বেশি বেড়ে যায়। আবার খাবারের সময়ের মধ্যেও যদি অনেকখানি গ্যাপ হয়ে যায় অথবা কম খেলে, অত্যধিক ব্যায়াম করলে এবং খালি পেটে অ্যালকোহল সেবন করলেও রক্তে চিনির স্তর কমে যায়। ফলে শরীরের কর্মক্ষমতা কমতে থাকে, এনার্জি লেভেল দারণ ভাবে ড্রপ করে।