সারপ্রাইজ ভিজিট

সময় কারওর জন্য অপেক্ষা করে না। আর এই ঘড়ির কাঁটার মতো আমরাও ছুটছি দিনরাত, নানা কারণে। সবাই এখন ভীষণ ব্যস্ত। কারও হাতে বাড়তি সময় নেই। কিন্তু আত্মীয়স্বজনের মধ্যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে কিংবা মজবুত করার জন্য সময় দেওয়ার প্রয়োজন। অথচ এই সময়েই বড়ো অভাব। মোবাইল, ইন্টারনেট প্রভৃতির মাধ্যমে এখন সবাই কুশল বিনিময় করেন এবং সম্পর্কগুলোকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু আত্মীয়স্বজনের বাড়ি গিয়ে তাদের মুখোমুখি বসে আড্ডা মারা কিংবা সৌজন্য বিনিময় করার গুরুত্ব আলাদা। অতএব, সারপ্রাইজ ভিজিট দিয়ে সবাইকে আনন্দ দিন এবং সম্পর্কগুলোকে মজবুত করুন। তবে সারপ্রাইজ ভিজিট-এরও কিছু রীতিনীতি আছে, যা মেনে চলা জরুরি।

আত্মীয়স্বজনের সুবিধে-অসুবিধে

সারপ্রাইজ ভিজিট ভালো এবং এতে আনন্দলাভের সুযোগ ঘটে। তবে, ভেবেচিন্তে যাওয়া উচিত। মাথায় রাখবেন, সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভুল সময়ে গেলে, আনন্দের পরিবর্তে আত্মীয়-বন্ধুদের কাছে আপনার উপস্থিতিটা বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে। তাই সপ্তাহের মাঝখানে না গিয়ে সপ্তাহ শেষে ছুটির দিনে যান। এর ফলে কেউ বিরক্ত হবেনও না এবং আনন্দের আবহ তৈরি হবে। সবাই সবাইকে সময়ও দিতে পারবেন।

সঠিক তথ্য নেওয়া জরুরি

যার বাড়িতে যাবেন, তিনি বাড়িতে আছেন কিনা সেই তথ্য সঠিকভাবে নিয়ে তারপর সারপ্রাইজ ভিজিট-এ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিন। খোঁজ নিয়ে জানুন, ওই দিন ওদের অন্য কোনও প্রোগ্রাম ফিক্সড কিনা কিংবা অন্য কোনও অতিথি উপস্থিত কিনা। তাই, প্রথমে ফোন করে কৌশলে সমস্ত তথ্য নিয়ে তারপর যাওয়ার কথা ভাবুন।

আপ্যায়ন প্রসঙ্গে

শুধু নিজে আপ্যায়িত হবেন এমনটা যেন না হয়। কারণ, এক তরফা আপ্যায়নের বিষয়টিও আপনার আত্মীয়কে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। তাই যাওয়ার সময় মিষ্টি কিংবা ওদের প্রিয় কিছু খাবার সঙ্গে নিয়ে যান। এর ফলে খাওয়া এবং আড্ডা দুই-ই বেশ জমে যাবে।

স্মৃতি রোমন্থন করুন

বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ না থাকলে সম্পর্কের বুনিয়াদ কিছুটা হলেও দুর্বল হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে, স্মৃতি রোমন্থনের মাধ্যমে সেই দুর্বল সম্পর্ককে আবার মজবুত করা যেতে পারে। তাই, ছোটোবেলার কথা কিংবা স্কুল-কলেজের মধুর মুহূর্তগুলোর কথা মনে করিয়ে দিন। বিশেষ করে কোনও ইমোশনাল ঘটনার উল্লেখ করুন। দেখবেন, সম্পর্কে আবার সেই ঘনিষ্ঠতা ফিরে আসছে।

সময়ের গুরুত্ব

সারপ্রাইজ ভিজিট-এ গেলে বেশি সময় সেখানে থাকা ঠিক নয়। আধঘণ্টা থেকে বড়োজোর একঘণ্টার বেশি সময় থাকবেন না। কারণ, অল্প সময়ে হইহুল্লোড়ের রেশ থাকে বেশি সময়। অতএব, ওই সময়ের মধ্যে হাসি-মজা করুন চুটিয়ে যদি বন্ধুর সঙ্গে মান-অভিমানের কিছু থাকে, তাহলে তা মিটিয়ে নিন।

উপহার দিন আপনজনকে

উপহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মনের মতো উপহার পেলে মান-অভিমানও ম্লান হয়ে যায়। সম্পর্ক আবার মধুর হয়। তাই কিছু উপহার সঙ্গে নিয়ে যান সারপ্রাইজ ভিজিট-এ। উপহার সামগ্রীর মধ্যে বেছে নিতে পারেন ভালো মানের চা পাতা, কফি, সাবান, ক্রিম, পারফিউম, হেয়ার অ্যান্ড স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট, বেল্ট, রিস্ট ওয়াচ, টয়লেট মিরর প্রভৃতি। আর যে-কোনও একটা উপহারের সঙ্গে রাখতে পারেন কিছু শুকনো খাবার, যা অনেকদিন রেখে খাওয়া যাবে। এর মধ্যে রয়েছে কাজু, পেস্তা, আখরোট, আমসত্ত্ব, ঘিয়ের লাড্ডু, বরফি সন্দেশ প্রভৃতি। আসলে, অনেকদিন ধরে ব্যবহার করা যাবে এমন কিছু উপহার হিসাবে দিলে আপনজন আপনাকে মনে রাখবেন। অতএব, উপহার দেবেন ভেবেচিন্তে।

হঠাৎ পরিকল্পনা

অনেক সময় নানা কারণে কোনও কিছুর আগাম পরিকল্পনা সফল হয়ে ওঠে না। একজোট হয়ে খানাপিনা, বেড়ানো কিংবা আড্ডার পরিকল্পনা ভেস্তে যায় অনেকের নানা অজুহাতে কিংবা অসুবিধার কারণে। তাই, সারপ্রাইজ ভিজিট এর মধ্য দিয়ে সেই প্ল্যান উপভোগ করুন। কারও বাড়িতে খানাপিনার আয়োজন কিংবা বন্ধুরা একজোট হয়ে কাছেপিঠে কোথাও বেড়ানোর ব্যবস্থা করতে পারেন এই হঠাৎ দেখার পরেই।

সারপ্রাইজ ভিজিট-এর সুবিধা

  • অভিমান ম্লান হয় এবং সম্পর্ক পুনরায় মধুর হয়
  • আনন্দের সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া যায়
  • আপনজনকে চমকে দিয়ে খুশি করার সুযোগ
  • সারপ্রাইজ ভিজিট-এ আপনি অন্যকে আনন্দ দিলে, তিনিও সারপ্রাইজ ভিজিট-এ আনন্দ দেবেন আপনাকে
  • বেশি সময় থাকার প্রয়োজন হয় না সারপ্রাইজ ভিজিট-এ
  • হঠাৎ সবাইকে চমকে দেওয়ার মজা-ই আলাদা। এতে, অন্যের প্রতি আপনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়
  • আপনার ইমোশনাল ইনভলভমেন্ট ছোটোদেরও প্রভাবিত করে। ওরাও ভালো কিছু শিখবে।

সারপ্রাইজ ভিজিট-এর অসুবিধা

  • কেউ কেউ সারপ্রাইজ ভিজিট পছন্দ করেন না প্রাইভেসি হারানোর ভয়ে
  • হঠাত্ সময় দিতে বাধ্য হয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজ করতে না পারা
  • টাকাপয়সা কম থাকলে অভ্যর্থনা করার বিড়ম্বনা

কখন সারপ্রাইজ দেবেন

  • মাসের শুরুতে সারপ্রাইজ ভিজিট করুন। তখন সবার হাতে অতিথি আপ্যায়নের জন্য পর্যাপ্ত টাকা থাকে
  • বিয়ে অন্নপ্রাশন, বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন কিংবা শিশুর জন্মগ্রহণকে উপলক্ষ্য করে কিছু উপহার সঙ্গে নিয়ে সারপ্রাইজ ভিজিট করতে পারেন। তবে তার আগে খোঁজখবর রাখাটা জরুরি
  • সবার ছুটি আছে এমন দিনেই সারপ্রাইজ ভিজিট করুন।

বান্ধবী মেনে নিতে পারছে না আমার বয়ফ্রেন্ডকে

আমি আসানসোলের মেয়ে৷ কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকি৷ আমার বয়স ২৫৷ এই শহরে আমি নতুন, কোনও আত্মীয় নেই৷ তাই একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকি৷ এই একই ঘর আমি শেয়ার করি আরেকটি মেয়ের সঙ্গে, এতে আমার খরচ কিছুটা কমে৷ সেই মেয়েটিও জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতায় এসেছে কাজের সুত্রেই৷

আমাদের দু’জনের অন্তরঙ্গতা স্বাভাবিক কারণেই বাড়তে থাকে৷ও আমার চেয়ে দু’বছরের বড়ো হলেও, আমার তুলনায় অনেক বেশি পরিণতমনস্ক৷আমার ওর প্রতি তাই অনেকটাই নির্ভরতা তৈরি হয়েছে৷ অল্প দিনেই ও আমার একরকম Local Guardian হয়ে উঠেছে৷

আমার একাকী জীবনে ওর এই care শুরুতে আমার খারাপ লাগত না৷ কিন্তু সমস্যা শুরু হল তখনই, যখন আমার জীবনে একটি ছেলের প্রবেশ ঘটল৷ আমারই অফিসে এক সহকর্মীরঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে৷ আর-পাঁচটা জিনিসের মত এই ঘটনাটাও আমার রুমমেটকে শেয়ার করি৷একদিন বয়ফ্রেন্ড-এর সঙ্গে ওর আলাপও করিয়ে দিয়েছি৷ আর তাতেই বিপত্তি৷

বান্ধবী কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না বয়ফ্রেন্ড-এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক৷ ওর আচরণও আমার খুব অস্বাভাবিক লাগছে৷ বান্ধবী বলছে ও আমায় ভালোবাসে, তাই আমার ভালোমন্দ সবটাই ও বোঝে৷ এই ছেলেটির সঙ্গে নাকি আমি সুখী হতে পারব না, তাই অবিলম্বে আমার এই সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসা উচিত৷ আমি এই পদক্ষেপ না করলে ও আত্মহননের হমকিও দিয়েছে৷আমার বান্ধবিকে আমি ভালোবাসি, সম্মান করি কিন্তু কখনওই এমন সম্পর্ক আমার কাঙ্খিত নয়৷আমি আমার প্রেমিককেও এই ঘটনার কথা বলতে পারছি না, পাছে ও কিছু মনে করে৷ কী করব? পথ দেখান৷

 

আপনার বান্ধবী স্বাভাবিক মানসিকতার নন৷ উনি হয়তো আপনার সঙ্গে সম্পর্কটা একটা সমকামিতার সম্পর্ক ধরে নিয়েছেন মনে মনে৷ আপনার উপর ওঁর এই অতিরিক্ত Possessiveness-ই এর মূলে৷ খোঁজ নিলে হয়তো জানতে পারবেন, ওঁর হয়তো এমন কোনও সম্পর্ক আগেও ছিল৷ এখন বাস্তবিকই মেয়েটি একা৷ এই পর্যায়ে আপনার আগমনে বান্ধবী আপনাকেই আঁকড়ে ধরেছেন৷

আপনি দুটি জিনিস করতে পারেন৷ প্রথমত বান্ধবীর কাউন্সেলিং করাতে পারেন৷ হতে পারে কয়েকটা সিটিং-এ ওঁর এই আত্মহননের চিন্তা মাথা থেকে বেরিয়ে যাবে এবং আপনার প্রতি ওভার-পজেসিভ মনোভাব থেকেও উনি বেরোতে পারবেন৷বিকল্প কাজটি হবে আপনার প্রেমিককে সব জানানো৷ তাঁর হেল্প নিয়ে অন্য জায়গায় ঘর ভাড়া নেওয়া৷ বাব্ধবীর সঙ্গে সমস্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা৷

প্রতিকূলতায় সঙ্গীর পাশে থাকুন

আপনার সম্পর্কের মূলমন্ত্র কী? চিরদিন সুখী হয়ে একসঙ্গে বাঁচা নাকি ভাঙনের ভয়ে একে অপরের থেকে গা বাঁচিয়ে কোনও ভাবে সম্পর্ক বয়ে চলা?  জীবনে প্রেম-ভালোবাসা থাকবেই। ভালোবাসার সম্পর্ক নারী-পুরুষকে অনেক বেশি চাঙ্গা করে রাখে। বলা হয়, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ভালোবাসার চেয়ে ভালো উপাদান আর নেই। কিন্তু শুধুমাত্র ভালোবাসা দিয়ে কোনো Relationship টিকিয়ে রাখা যায় না।

সম্পর্কের সাফল্য কীসে আর ব্যর্থতাই বা কীসে- সেটা বিচার করার উৎকৃষ্ট সময় বোধহয় তখনই, যখন আপনার মনে হতে শুরু করবে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে সম্পর্কে কোথাও একটা ভাঙন ধরছে। এই ফাটলটা বড়ো হয়ে, সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ হওয়া অবধি অপেক্ষা করবেন না। তার বদলে মেরামত করার চেষ্টা করুন। একটা বিশ্লেষণী মন নিয়ে ভাবুন ঠিক কোথায় ভুল হচ্ছে। ঠিক কোন জায়গাটায় গরমিল। নিচে দেওয়া হল কিছু Relationship Tips, যা আপনাকে সাহায্য করবে।

একে অন্যকে সমর্থন

পৃথিবীর আর সবার চাইতে আপনি আপনার সঙ্গীর কাছে আলাদা কেউ কেন ? কারণ এই যে,  সে বিশ্বাস করে যে সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে পৃথিবী অন্যদিকে চলে গেলেও আপনি তাকে ছেড়ে যাবেন না। তার পাশে থাকবেন। তাকে সমর্থন করবেন। আর এই বিশ্বাসটুকুই আপনাকে আপনার সঙ্গীর চোখে আলাদা করে তোলে। করে তোলে অনন্য। তাই সেই বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে সঙ্গীর পাশে থাকুন সবসময়।

সঙ্গীকে বদলানোর চেষ্টা করবেন না

আপনি আপনার সঙ্গীকে যখন ভালোবেসেছিলেন তখন আর এখনে কি খুব তফাত? তাহলে হঠাৎ করে কেন আপনার মনে হচ্ছে যে সে বদলে গেলে ভালো হতো ? হতে পারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গী বা আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আপনার সঙ্গীর সেটা না-ও হতে পারে। তার সাথে ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করুন। সে যেমন আছে তেমনই তাকে প্রশংসা করুন। সে যদি পাল্টাতে না চায় তাহলে জোর করতে যাবেন না। সেটা হতে পারে পোশাক কিংবা আচরন। এটির ফলাফল কখনোই শুভ হয় না। বরং জটিলতর হয়ে দাঁড়াবে আপনার সুন্দর সম্পর্কটির পক্ষে।

আপাত দৃষ্টিতে আপনার চোখে না পড়লেও বাস্তবে আরও অনেকের মতনই সম্পর্কের কিছু খুঁটিনাটি বিষয়কে হয়তো আপনিও এড়িয়ে যাচ্ছেন। ব্যাপারগুলো ঠিক চোখে পড়ার মতন না হলেও, একেককটি ছোট্ট ঘটনা কিন্তু আপনাকে আরও সহানুভূতিশীল করে তুলতে পারে। আপনার সম্পর্ককে করে তুলতে পারে সজীব আর প্রাণবন্ত।তাই পিরিয় মানুষটির পছন্দের কিছু জিনিস কিনে নিয়ে গিয়ে উপহার দিন তাকে। পুরো কোনও জায়গায় একসঙ্গে যান বহু বছর পর।দেখবেন এগুলে মেরামতে সহায়তা করবে।

পরিস্থিতির বিশ্লেষণ

দেখা যায়, কোনো কোনো সম্পর্ক বহুবছর টিকে রয়েছে। মনোমালিন্য হলেও ভেঙে যায়নি। আবার এও দেখা যায় কোনো কোনো সম্পর্ক খুব কম সময়ের পরেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এই ভেঙে যাওয়া সম্পর্কগুলোর দিকে আঙুল তুলে অনেকে বলেন, ওটা ভাঙারই ছিল, তাই ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছেন এর পিছনের আসল কারণটা কী?

আসলে একটা সম্পর্কে, দুজন মানুষ একে অপরের সঙ্গে থাকতে চায়। তাই তাদের মধ্যে মানসিক মিলটা খুব জরুরি হয়ে পড়ে। সেই একাত্মতায় যখন অপছন্দের কিছু আসে, তখনই সমস্যা দেখা দেয়। আর তা ভেঙে যায়। তাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য এমন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা উচিত- যার সঙ্গে মনের মিল আছে। যার সঙ্গে পছন্দ-অপছন্দগুলো মেলে।

ব্রেক-আপ নিয়ে অযথা ভয় দেখাবেন না

কোনো বিষয় নিয়ে বিবাদ হলেই ব্রেক-আপের কথা মাথায় আনবেন না, নিতান্তই যদি বাধ্য না হন। কথায় কথায় ব্রেক-আপের ভয় দেখাবেন না,  এতে স্বাভাবিক আস্থা ও বিশ্বাসের অবক্ষয় হয়, যা সম্পর্ককে ঢিলে করে দেয়। ব্রেক-আপের ভয়কে সামনে রেখে কোনও সম্পর্ক সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। একে অপরকে বোঝান- আপনারা একসঙ্গে থাকবেন বলেই একই পথে চলছেন, তাই নিজেদের সব সমস্যাগুলোকে নিজেদেরই সামলে উঠতে হবে। ব্রেক-আপ করলে হয়তো একটি সম্পর্কের অবসান হবে, কিন্তু আদতে কি সুখী হওয়া সম্ভব?

মনে রাখুন কেউ-ই আমরা পার্ফেক্ট নই। নারী-পুরুষ উভয়েরই স্বাধীনতাবোধ রয়েছে। স্বাধীন চিন্তা ও নিজের একটি স্বতন্ত্র জগৎ রয়েছে প্রতিটি মানুষেরই। ভালোবাসার সম্পর্ক এমনই হওয়া উচিত যা পরস্পরের স্বাধীনতা, মূল্যবোধ ও সম্মানের স্থানগুলোকে অক্ষত ও সুরক্ষিত রাখবে। সম্পর্ক মেরামত করার পরিস্থিতি পর্যন্ত যেতে দেবেন না। তার আগেই যত্নশীল হোন।

এই সময় লক্ষ্য রাখুন শিশুর মানসিক সুস্থতার উপর

দীর্ঘকালব্যাপী কোভিড অতিমারির পরিবেশ সারা বিশ্বজুড়ে সকলের জীবনকেই Mental Health কোনও না কোনও ভাবে প্রভাবিত করেছে। বাচ্চাদের জীবনে করোনা, লকডাউন ইত্যাদির প্রভাব এতটাই গভীর ভাবে ছাপ ফেলেছে, যার ফলে তাদের নিজেদেরকেই প্রতিনিয়ত এক মানসিক যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে।

বাচ্চা মানেই সে স্কুলে যাবে, পড়াশোনা করবে, সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, খেলাধুলায় মাতবে। তাছাড়া স্কুলের ডিসিপ্লিন মেনে চলার ফলে তার নিজের জীবনেও একটা অভ্যাস তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু করোনার প্রভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি একবছর ধরে বন্ধ। বাড়ির বাইরে যে-কোনও সামাজিক মেলামেশা, খেলাধুলা করার জায়গা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার ফলে, প্রতিটি বাচ্চাই আজ গৃহবন্দি এবং এই পরিস্থিতি তাদের Mental Health বজায় রাখবার জন্য যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিংও বটে।

বাড়িতে বসে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার অথবা মোবাইল স্ক্রিনে চালাতে হচ্ছে স্কুলের ক্লাস, পড়াশোনা। কোনও বিকল্প নেই। ক্লাসের মাঝে গ্যাপ থাকলেও বাইরে বেরিয়ে হইহুল্লোড় করার উপায় নেই। ঘরের মধ্যেই সহপাঠীদের ছাড়াই একা সময় কাটানো। ফলে শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতির সঙ্গে সঙ্গে মানসিক চাপেরও মুখে পড়তে হচ্ছে বাচ্চাদের। যার কারণে খুব সহজে বাচ্চাদের Mental Health নষ্ট হচ্ছে, বাচ্চারা ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে, বুদ্ধিও ঠিক ভাবে বিকশিত করার সুযোগ ঘটছে না। স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

সামাজিক মেলামেশা করার এই বিরতি বাচ্চাকে ঠেলে দিচ্ছে একাকিত্বের কবলে। যারা একটু বড়ো, বোঝার বয়স হয়েছে, সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন তারা নিজেদের পড়াশোনা, স্কুলে যেতে না পারার দুশ্চিন্তা, অ্যাকাডেমিক প্রেশার, সঙ্গে কেরিয়ার এবং আর্থিক অনিশ্চয়তার চিন্তায় মানসিক ভারসাম্য হারাতে বসেছে। এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের দাযিত্ব হচ্ছে সন্তানকে সবদিক দিয়ে বিশেষ করে মানসিক দিক থেকে পুরোপুরি সাহায্য করা।

অভিভাবকরা কীভাবে সাহায্য করতে পারেন

চারপাশের পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন সন্তানের সঙ্গে। বাচ্চার মনে সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে সাহায্য করুন। তাদের বোঝান অতিমারির এই পরিস্থিতির ফলে তাদের মনের ভিতর যা অনুভতি হচ্ছে, সেটাতে কোনও অন্যায় নেই। সেটা ভয়, দুশ্চিন্তা, রাগ, দুঃখ যে-কোনও কিছুই হতে পারে। একটা ব্যাপারে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, দীর্ঘসময় সন্তানকে একা থাকতে দেবেন না। তার সঙ্গে নানা ধরনের আলোচনা করুন।

সন্তানের মনে যা-যা প্রশ্ন রয়েছে সেগুলো মন দিয়ে শুনে সন্তানের বয়স অনুযাযী উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন, যাতে তারা আশ্বস্ত বোধ করতে পারে। সব উত্তর আপনারও হয়তো জানা না-ও থাকতে পারে। কথোপকথন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন, যাতে তাদের মন শান্ত হতে পারে।

বাচ্চারা যখন বোর ফিল করবে অথবা দেখবেন অল্পতেই ধৈর্য হারাচ্ছে, তখন তাদের এনকারেজ করুন রুটিন লাইফ-এর থেকে বেরিয়ে এসে, নিজেদের পছন্দমতো কোনও অ্যাক্টিভিটি করতে। সেটা বাচ্চা বিশেষে আলাদা আলাদা হতে পারে। কেউ এক্সারসাইজ করতে ভালোবাসে তো কেউ বাইরে একটু হেঁটে আসতে পারে। পছন্দের সিনেমা দেখা থেকে গল্পের বই পড়া, রান্না বা বেকিং, ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, আঁকা, নাচ, লেখালিখি যে-কোনও কিছুই হতে পারে। এতে বাচ্চার স্ট্রেস লেভেল অনেকটাই কমবে।

বাচ্চাকে নিশ্চিত করুন এই দুঃসময় একদিন কেটে যাবে। ভরসা দিন আপনি সবসময় সন্তানের পাশে আছেন। আপনারা একত্রে এই পরিস্থিতি ঠিক কাটিয়ে উঠবেন। বাড়িতে সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চালাবার চেষ্টা করুন। কোনও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন না, যা আপনার সন্তানকে হতাশার দিকে ঠেলে দিতে পারে। বাচ্চার মনে দুশ্চিন্তা হতে পারে যে, ভালো দিন আর কখনও সে দেখতে পাবে না। তার মনের এই ভয়টাকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে, যেটা কিনা আপনার সন্তানকে অবসাদগ্রস্ত করে তুলতে পারে। অভিভাবক হিসেবে আপনাদেরই বোঝাতে হবে প্যান্ডেমিক-এর কারণে এই পরিস্থিতি বর্তমানে চললেও, ভবিষ্যতে অবশ্যই এর থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

নিজের সঙ্গে নানা ধরনের সৃষ্টিশীল কাজে সন্তানকে ব্যস্ত রাখতে পারেন। এর ফলে চারপাশের নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে সন্তান দূরে থাকতে পারবে। নিজস্ব কিছু সৃষ্টির আনন্দে কিছুটা সময় হলেও বাচ্চার মন দুশ্চিন্তার গ্রাস থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারবে। এছাড়াও সর্বক্ষণ টিভি অথবা মোবাইলে খবর দেখা থেকেও বাচ্চাকে বিরত রাখুন, যাতে ক্রমান্বয়ে দেখতে থাকা নানা অঘটন এবং পরিস্থিতির ত্রাস বাচ্চাকে বিষাদগ্রস্ত করে তুলতে না পারে।

প্যান্ডেমিকের আগে যে-জীবনশৈলীতে আপনারা বাড়িতে অভ্যস্ত ছিলেন, অতিমারি আবহেও সেই নিয়ম যতটা সম্ভব মেনে চলার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এতে বাচ্চা নিজেকে সুরক্ষিত এবং নিরাপদ বোধ করবে। যেমন সময়ে শুতে যাওয়া, ঘুম থেকে ওঠা, খাবার খাওয়া, যার যা শখ তা পূরণ করা ইত্যাদি। এছাড়াও বাচ্চাদের ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি চলাকালীন বাড়ির কাজে বড়োদের সাহায্য করার কথাও বলতে পারেন। এতে ওরা নতুন কিছু শিখতেও পারবে আবার বড়োদের সাহায্য করতে পারছে বলে মনে মনে গর্ববোধও করবে। গার্ডেনিং-এর শখ থাকলে বিকেলে খেলার ছলে সন্তানের কাছে সাহায্য চেয়ে নিতে পারেন। বাচ্চারা গাছ, ফুল ভালোবাসে। সুতরাং তারাও সানন্দে মানসিক যাতনা Mental problems ভুলে গিয়ে নতুন উদ্যমে কাজে লেগে পড়বে।

 

সম্পর্কের ভারসাম্য

ভালোবাসা এক অদ্ভুত শক্তি, যার জোরে গোটা পৃথিবী টিকে আছে। সেটা হতে পারে মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা,  প্রেমিকের প্রতি প্রেমিকার ভালোবাসা, বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা, সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভালোবাসা প্রভৃতি।ভালোবাসা হলো এক ধরনের আবেগ, যা মনকে আবিষ্ট করে। সেই অনুভূতি সেই মুহূর্তকে ভালো লাগায়, সেই ভালো লাগা মানুষ বার বার পেতে চায়।

আসলে ভালোবাসার সম্পর্কের নির্দিষ্ট কোনও নাম নেই। এটির ব্যাপ্তি বিশাল। আপনি যে-নামের সাথেই একে জুড়ে দেবেন, তাকেই সে পূর্ণতা দেবে। তবে ভালোবাসার ক্ষেত্রে সম্পর্কের এই জাদুর কাঠি, সবচেয়ে বেশি কার্যকর নারী ও পুরুষের প্রেমের মধ্যে। শুধু জানা দরকার Balanced relationship রাখা যাবে কী ভাবে?

ভালোবাসার মূল কথা বোঝানো সম্ভব নয়। ছোটো ছোটো অনুভূতিমালা ঘিরেই তৈরি হয় ভালোবাসা। কারো জন্য অপেক্ষা, কারো হাত শক্ত করে ধরে থাকা, ছায়াসঙ্গীর মতো থাকতে পারা, এমনকী খাবার ভাগ করে খাওয়া– সবই তো ভালোবাসা।Love and marital relationships -এর এটাই সবচেয়ে ইতিবাচক দিক৷

ভালোলাগা থেকেই একটি সম্পর্কের শুরু, যার রেশ টেনে তৈরি হয় ভালোবাসা। এর চূড়ান্ত প্রাপ্তি ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করে একসঙ্গে সংসার পাতা। কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, যাকে ভালোবাসা যায় তাকে কখনওই পরিণয় ডোরে বাঁধতে নেই। তাহলে তা খুব একঘেয়ে দাম্পত্যের চেহারা নেয়। এই একঘেয়েমির কারণেই ভালোবাসা এসে তলানিতে ঠেকে।

কেউ কেউ মনে করেন, বিষয়টা মোটেই এমন নয়। বৈবাহিক সম্পর্ক মানুষকে অনেকটাই বদলে দেয়।এই নতুন সম্পর্কে আচরণে পরিবর্তন আসে। অনেক বদঅভ্যাসও দূর হয়। এমনকী মাদকাসক্তরাও আসক্তি-মুক্ত হতে পারে ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে। বিবাহের সম্পর্ক দায়িত্ববোধ তৈরি করে।তখন ভালোবাসা রূপান্তরিত হয় মায়ায়। আপনি আপনার ভবিষ্যৎকে ঠিক কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছেন তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে এই সম্পর্কের ওপর। তাই এই সম্পর্কে থাকা উচিৎ গভীরতা আর একে অপরকে বুঝতে পারার ক্ষমতা।

কখনও কখনও সঙ্গীকে বুঝতে ভুল হতে পারে। আপনার মনে হতে পারে… নাহ! এভাবে আর চলছে না। মনে হচ্ছে সবকিছুই শেষ। আর হয়তো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না সম্পর্কটাকে। একসঙ্গে চলা যাচ্ছে না জীবনের পথে।ঠিক এমনটাই মনে হতে পারে আপনার। কিন্তু কেন?  খুব বেশি ভালোবাসা নিয়েও হয়তো একটা সময় দাম্পত্য জীবন হয়ে যায় একেবারেই অশান্তির।

আমরা বলি, প্রথমেই হাল ছেড়ে দেবেন না। সঙ্গীকে বোঝার সময় নিন। দু’জনে কয়েকটা দিন একসঙ্গে একান্তে কাটিয়ে আসুন, সব ব্যস্ততা-কে গুড বাই বলে। হতে পারে পরস্পরকে সময় দিতে না পারাই আপনার ও আপনার সঙ্গীর মধ্যে দূরত্বের কারণ।

নিজের কাউন্সেলিং নিজেই করুন। আপনার নিজেকে বদলানোর প্রয়োজন হলে বদলান। আপনার পাশেই থাকা পুরোনো পরিচিত কিছু সম্পর্ককে দেখুন। যুগ যুগ ধরে টিকে রয়েছে সেগুলো। তাহলে কীসের কমতি রয়ে গেল আপনার ভালোবাসার সম্পর্কে? আপনি আপনার সম্পর্ককে যদি টিকিয়ে রাখতে চান, তাহলে এভাবেও কিন্তু একবার ভেবে দেখতে পারেন।

স্বামীর কর্মব্যস্ততায় আপনি কি বিরক্ত?

শ্রেয়সীর বিয়ে হয়েছিল একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির এগজিকিউটিভ এর সঙ্গে কিন্তু দু’বছরও বিয়েটা টিকল না কারণ তিনি হলেন অতিরিক্ত Workaholic husband৷ স্বামীর কর্মব্যস্ততাই সম্পর্কে ফাটল আনল। অনিক এতটাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকত যে শ্রেয়সীকে ১২-১৪ ঘন্টা একাই কাটাতে হতো। বাড়ি ফিরতে অনিকের রাত হয়ে যেত ফলে অনিকের জীবনে উৎসাহ দেখানো বা রোমান্স এর জন্য কোনও সময়ই ছিল না। এর ফলে ওদের যৌন জীবনও প্রভাবিত হয়ে পড়েছিল। শ্রেয়সী স্বামীর সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাবার জন্য ছটফট করত, আর ও নিজের চাকরিও ছেড়ে দিয়েছিল যাতে দুজনেরই অফিসের ব্যস্ততা ওদের বৈবাহিক জীবন কে বিষাক্ত না করে তুলতে পারে। সপ্তাহে ৬টা দিন খুব সামান্যই দুজনের মধ্যে কথা হতো, আর রোববারটা বাড়ির কাজ, অতিথি আপ্যায়ন, কোথাও যাওয়া এই সবেই কেটে যেত বেশিরভাগ। শেষমেশ শ্রেয়সী আর সহ্য করতে না পেরে আইনের দ্বারস্থ হল এবং পরিণাম বিবাহবিচ্ছেদ।

এখানে বলা দরকার যে বিবাহবিচ্ছেদ কিন্তু সমস্যার সমাধান নয়। আজ অধিকাংশ পরিবারেই স্বামীদের কর্মব্যস্ততার Workaholic কারণে স্ত্রীয়েরা মানসিক সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের সংসার ভেঙে যায়। যে সব স্বামীরা কাজ ছাড়া কিছু বোঝেন না তাঁরা নিজেদের কাজকেই অগ্রাধিকার দেন, অন্যান্য সব কিছুই, এমনকী পরিবারের প্রয়োজনও তাঁদের কাছে গৌণ। স্বামীদের এই ব্যবহার স্ত্রীকে মানসিক পীড়া দেয়, স্বামীর সঙ্গ পাওয়ার জন্য স্ত্রী আকুলতা বোধ করেন। অনেক সময় এই ধরনের পুরুষদের স্ত্রীয়েরা অবসাদেও ডুবে যান। স্বামীর সঙ্গ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে খিটখিটে মেজাজের হয়ে ওঠেন, এমনকী অবৈধ সম্পর্কেও অনেকে জড়িয়ে পড়েন। কথায় কথায় লড়াই ঝগড়া অশান্তি সংসারের ভিতটাকেই নড়বড়ে করে দেয়। সংসারে অশান্তির ভয়ে স্বামীরা আরও বেশি করে কাজটাকে আঁকড়ে ধরেন এবং বাড়িতে সময় দেওয়ার কোনও ইচ্ছেই তখন আর তাঁর থাকে না।

আজ ঘরে ঘরে এই ঘটনার সাক্ষ্মী থাকছেন অনেকেই। তাহলে কী ভাবে বাঁচানো যেতে পারে বিয়ের মতো পবিত্র একটা সম্পর্ক কে?

বর্তমান সময়ে আমরা নিজেদের চাহিদাগুলো পূরণ করতে এতটাই ব্যস্ত যে আমাদের সবকিছু চাওয়া পাওয়া, কিছু করার ইচ্ছে, মনের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো সব সেই চাহিদা কে ঘিরেই অবর্তিত হচ্ছে। কাজের প্রতি এতটাই অনুগত হয়ে পড়ি যে সম্পর্কগুলো অবহেলা করতে শুরু করি। কাজ এমন ভাবে মস্তিস্ককে প্রভাবিত করে ফেলে যে স্বামী ভুলে যায় স্ত্রীকেও সঙ্গ এবং সময় দেওয়া দরকার।  ‘ম্যারেড টু ওয়ার্ক’ এর কারণে যে সব দম্পতিদের বৈবাহিক জীবন সমস্যার মুখে পড়ছেন, দিল্লির ফর্টিস হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. স্বাতী কাশ্যপ তাঁদের উদ্দেশ্যে জানাচ্ছেন, ‘আপনার স্বামী যদি ওয়ার্কহোলিক হন তাহলে এটা নিয়ে ওনাকে কথা শোনানো অথবা ঝগড়া করার বদলে ওনার সঙ্গে বসে কথা বলুন। দুজনে একত্রে এমন সমাধান খুঁজুন যা আপনাদের দুজনের জন্যই উপযুক্ত হবে। মুখোমুখি না বসে পাশ ঘেঁষে বসুন এবং ‘আমি ‘ বা ‘তুমি’ শব্দটা ব্যবহার না করে ‘আমরা’ শব্দটা ব্যবহার করুন। কথা বলার সময় স্বামীকে কাজের প্রতি প্রেম নিয়ে দোষারোপ করতে আরম্ভ করবেন না অথবা প্রশ্নবাণে তাঁকে আহত করারও চেষ্টা করবেন না। আপনি বলতে পারেন যে আপনার ওনার সঙ্গ ভালো লাগে এবং ওনার সঙ্গে আরও বেশি সময় আপনি কাটাতে চান।’

পরিস্থিতি জানবার চেষ্টা করুন 

স্বামীর ওয়ার্কহোলিক হওয়ার কারণ জানার চেষ্টা করতে হবে। তাঁর এই অভ্যাস কি স্থায়ী না কি কিছুটা সময়ের জন্য? হতে পারে অফিসে প্রমোশন-এর সময় বেশি কাজ করতে হচ্ছে অথবা কোনও প্রজেক্ট-এর ডেডলাইন রয়েছে বা বস-এর চাপ রয়েছে তাঁর উপরে। অফিসে যাতে বসের কাছে অসম্মানিত না হতে হয় তার জন্য হয়তো আপনার স্বামী কাজের মধ্যে ডুবে থাকেন এমনটাও হওয়া অসম্ভব নয়। কোনও একমাস বা উৎসবের সময় কি তাঁর কাজের প্রেসার বাড়ে? এসব ক্ষেত্রে এই স্থিতি অস্থায়ীও হতে পারে।

বুঝতে হবে কাজের প্রতি তাঁর একাগ্র প্রেম নাকি বাড়ির পরিবেশ এমন যে তাঁর বাড়ি ফেরার ইচ্ছেই হয় না? এগুলি সবকিছুই স্ত্রীকে নজর রাখতে হবে, প্রয়োজনে স্ত্রীয়ের ঝগড়াটে স্বভাব যদি থাকে সেটাও বদলে ফেলতে হবে। আর যদি সত্যি করেই বাড়ির থেকে অফিসের কাজের প্রতি আপনার স্বামী বেশি যত্নবান হন সেক্ষেত্রে এই অভ্যাস বদলানো কঠিন। আপনাকে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। আপনার ব্যবহারে পরবর্তন দেখে আপনার স্বামীর মধ্যেও পরবর্তন এসে যেতে পারে।

স্বামীর কাজকে সম্মান করুন

স্বামী যদি একাই পরিবারে কর্মরত হন এবং তাঁর উপরেই পুরো পরিবারের দায়িত্ব থেকে থাকে তাহলে বোঝা উচিত তাঁর কাছে কাজটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের সকলের প্রয়োজন মেটাতে ও আপনাদের ভালো রাখতেই তিনি সারাদিন পরিশ্রম Workaholic করছেন। যদি কোনও রকম আপনি তাঁর কাজে সাহায্য করতে পারেন তাহলে অবশ্যই করুন। সারাদিনে ১-২ বার ফোন করে তাঁর ভালোমন্দের খবরাখবর করুন। এটাতে আপনার স্বামীও বুঝবেন তাঁকে নিয়ে আপনিও ভাবেন চিন্তা করেন।  তাঁর কাজকেও সম্মান করেন এই বিশ্বাস তাঁর হবে। অফিসের কাজের ব্যস্ততার মধ্যে তাঁর উপর বাড়ির কাজ না চাপিয়ে নিজেই সেটা করার চেষ্টা করুন, এটা তাঁকে নিজের কাজে মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে। বাড়ির যাবতীয় বিল, দোকান-বাজার নিজে নিজে করার চেষ্টা করুন, ছোটোখাটো বাড়ির সমস্যাও নিজেই সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। বাড়ির পরিবেশ শান্তিময় রাখার চেষ্টা করুন। বাড়িতে শান্তির পরিবেশ বজায় থাকলে তাঁরও বাড়ি ফেরার জন্য মন উন্মুখ হবে। বাড়ির সব কাজ সামলিয়েও যদি হাতে যথেষ্ট সময় থেকে যায় তাহলে সময় কাটাবার জন্য নিজের শখ পূরণ করার উপর জোর দিতে পারেন। আঁকা, নাচ, গান, বাগান করার শখ, পড়াশোনা করা বা গল্পের বই পড়া সোশাল ওয়ার্ক ইত্যাদি যা আপনাকে খুশি রাখবে সেগুলো ট্রাই করতেই পারেন। এতে পরিবারে শান্তিও থাকবে আর আপনিও কনস্ট্রাকটিভ কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারবেন। এর পর যতটা সময় দুজনে দুজনকে দিতে পারবেন সেটুকু সময় আশাকরি একে অপরকে দোষারোপ করে অন্তত কাটবে না।

 

 

 

অপরিকল্পিত সেক্স নাকি অ্যাক্সিডেন্ট ?

কেউ বাড়িতে নেই। পরিবারের সবাই আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গেছেন। তাই অসীমা বাড়িতে একা রয়েছে। এমন সময় বাড়িতে এল অসীমার প্রেমিক ভিকি। স্মার্ট ছেলে। দেখা হওয়া মাত্রই ভিকি তার বলিষ্ঠ বাহুযুগল দিয়ে কাছে টেনে নিল অসীমা-কে। শুধু তাই নয়, ভিকি যখন অসীমার কাছ থেকে জানল বাড়িতে কেউ নেই, তখন তার সে কি আনন্দ! ‘ঘরমে কই নেহি হে! থোড়াই না লুডো খেলেঙ্গে, চোলে…’ বলেই অসীমাকে নিয়ে সোজা বিছানায়। অসীমাও ভিকিকে বাধা দেয়নি কিংবা মনে মনে হয়তো এমনটাই চাইছিল। কারণ অসীমা তখন ভিকির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল। সুজিত সরকার পরিচালিত ‘ভিকি ডোনার’ ছবির এমন ঘটনা হয়তো অনেকের জীবনেই ঘটেছে কিংবা ঘটতেও পারে।

আসলে, সমীক্ষা করলে হয়তো দেখা যাবে, আজকের যুগের প্রায় সিংহভাগ মেয়েদেরই বিয়ের আগে আচমকা এই সম্ভোগের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে, দু’ দশক আগেও হয়তো ‘অগ্নিপরীক্ষা’ দিতে হতো ভারতীয় মেয়েদের। অর্থাৎ, ফুলশয্যার রাতে নারীকে দিতে হতো সতীত্বের প্রমাণ। বিয়ের আগে যৌন স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকারী ছিল একমাত্র পুরুষরাই। নারী শুধু তার শরীর ও মনকে সযত্নে তুলে রাখত স্বামীর জন্য।

বিয়ের আগে মেয়েদের অন্য কারওর সঙ্গে শারীরিক মিলনকে ‘পাপ কাজ’ বলে মনে করা হতো। আসলে এমনই সামাজিক অনুশাসনকে মেনে নিতে, বাধ্য করা হতো মেয়েদের। কিন্তু সত্যিই কি সব মেয়েরাই ওই সামাজিক অনুশাসন মানত? নাকি বিয়ের আগেই লুকিয়ে-চুরিয়ে অন্য প্রেমিকের সঙ্গে এক-আধবার শরীরী মিলন ঘটিয়ে ফেলত কেউ কেউ? হয়তো অনেক কিছুই ঘটত কিন্তু সামাজিক চাপের কথা ভেবে কেউ স্বীকার করত না কিংবা ওই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসত না। তবে সময় বদলেছে।

এখন মোবাইল, ইন্টারনেট-এর যুগ। মেয়েরা এখন সামাজিক অনুশাসনের চোখ রাঙানি-কে ভয় না করে, ইচ্ছে মতো ইচ্ছেপূরণ করে। বিবাহ-পূর্ব সম্পর্কে শারীরিক ঘনিষ্ঠতার সাহস দেখাতে পারে এবং তা স্বামীর কাছে নির্দ্বিধায় বলতেও পারে। ছেলেরাও এখন এ ব্যাপারে অনেকটাই উদার। আসলে এই মানসিকতার বদল ঘটেছে খুবই সংগত কারণে। বয়ঃসন্ধিকালে যুবক-যুবতির শরীরে যে প্রবল যৌন ইচ্ছে তৈরি হয়, তা পূরণের জন্য পরস্পর উন্মুখ হয়ে থাকে। ফলে, যুবক-যুবতিরা পরস্পরের কাছাকাছি এলে, কোনও এক ইমোশনাল মুহূর্তে শরীরী মিলন ঘটে যেতেই পারে।

দু’দশক আগেও হয়তো এই সাহস দেখাতে পারত না অনেক মেয়ে, কিন্তু এখন পারে। তাই বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিবাহ-পূর্ব শারীরিক মিলনের ঘটনা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয় বলেই মনে করে তরুণ প্রজন্ম।

আজকের মেয়েরা

মেয়েরা এখন একাই পথ চলে, একাই সিদ্ধান্ত নেয়। পেশাগত কারণে ঘুরে বেড়ায় দেশে-বিদেশে। কাজ করে নাইট শিফটেও। আর্থিকভাবেও স্বনির্ভর। একশো ভাগ না হলেও, সিংহ ভাগ মেয়েরাই এখন স্বাধীনচেতা এবং সচেতন। ‘জলে নামব অথচ গা ভেজাব না’– এমন সনাতন মানসিকতাকেও তাই ঝেড়ে ফেলেছে আজকের মেয়েরা। সেক্স সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণাও এখন মেয়েদের রয়েছে। পুরুষের কাছে কীভাবে নিজেকে আকর্ষণীয় রূপে তুলে ধরতে হয়, তাও জানে মেয়েরা। সঠিক গর্ভনিরোধক কৌশলও রপ্ত করেছে তারা। তাই এ যুগের মেয়েদের হ্যান্ডব্যাগে এখন সাজগোজের উপকরণ ছাড়াও থাকে গর্ভনিরোধক সামগ্রী। অতএব, বিয়ের আগে প্রেমকে চরম উপভোগ করে তুলতে মেয়েরা এখন অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

চাহিদা পূরণ

পুরুষের মতো নারী শরীরেও যৌন চাহিদা তৈরি হয় খুব স্বাভাবিকভাবে। আর খুব সহজ ভাবেই এই যৌন চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে আজকের মেয়েরা। তাই কোনও ইমোশনাল মুহূর্তে যদি শারীরিক মিলন ঘটেও থাকে, তাহলে ‘ভুল করেছি ’ বলে আক্ষেপ করে না আজকের মেয়েরা। আর যার সঙ্গে সেই শারীরিক মিলন ঘটেছিল, অনিবার্য কারণে যদি তার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙেও যায়, তাহলেও এখন আর মেয়েদের জীবন ‘বৃথা’ হয়ে যায় না। সময় বয়ে চলে, পুরোনো সম্পর্কের সুখস্মৃতি সঙ্গে রেখে আজকের মেয়েরা গড়ে তোলে নতুন সম্পর্ক। বিয়ের আগেই হোক কিংবা পরে, প্রেমিকই হোক কিংবা হবু স্বামী, শরীর চাইলে যৌন সম্পর্ক যখন খুশি, যার সঙ্গে খুশি স্থাপন করতে এই প্রজন্মের মেয়েরা বেশ দ্বিধাহীন।

ফিল্মি রিফ্লেকশন

নারীর স্বাধীনতা, প্রি-ম্যারিটাল যৌন ইচ্ছে পূরণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আজকাল প্রচুর ছবি তৈরি হচ্ছে। এইসব ছবি দেখে উদ্বুদ্ধও হচ্ছে আজকের মেয়েরা। তাছাড়া, মেয়েরা এখন মোবাইল কিংবা কম্পিউটার-এর মাধ্যমেও সহজেই ‘নীল ছবি’ দেখছে। আর এরই প্রতিফলন ঘটছে বাস্তব জীবনে। ফলে, মনের মধ্যে যে প্রবল যৌন ইচ্ছে তৈরি হচ্ছে, তা মিটিয়ে নিচ্ছে প্রেমপর্বেই, অর্থাৎ বিয়ের আগেই।

সতীচ্ছদ প্রসঙ্গে

সনাতন রীতি অনুযায়ী, একমাত্র স্বামীরাই পারে মেয়েদের কুমারীত্ব হরণ করতে। অর্থাৎ, নববধূ স্বামীর সঙ্গেই প্রথমবার সেক্স করছে কিনা, তা প্রমাণিত হতো ফুলশয্যার রাতেই। আর এই কুমারীত্ব প্রমাণ করত ‘সতীচ্ছদ’ (স্ত্রী যোনিতে পাতলা পর্দাবিশেষ)। অর্থাৎ, সতীচ্ছদ অক্ষত রাখা বাধ্যতামূলক ছিল সনাতন রীতি অনুযায়ী। অবশ্য যৌনসম্পর্ক ছাড়াও যে সতীচ্ছদ ছিঁড়ে (সাইক্লিং কিংবা আঘাতজনিত কারণে) যেতে পারে, এই জ্ঞানটুকু সবার নেই। তাই, কিছু না করেও, ‘ইউজ্ড’ শব্দটি অজ্ঞ স্বামীর মুখ থেকে শুনতে হয় অনেক মেয়েকেই। তবে আজকের মেয়েরা বিয়ের আগে সেক্স-এর অভিজ্ঞতা নেওয়ার পরও, বিবাহিত জীবনে ‘ইউজ্ড’ বলে গিলটি ফিল করে না। তাছাড়়া, একটা ছোট্ট সার্জারির মাধ্যমে (হাইমেনোপ্লাস্টি), যৌনাঙ্গে কৃত্রিম সতীচ্ছদ তৈরি করে ‘অজ্ঞ’ স্বামীকে যে খুশি করা যায়, এই বিষয়টিও এখন অনেক মেয়েই জানে। অতএব, শরীর, মন চাইলে বিবাহ-পূর্ব সেক্স-এ সমস্যা নেই, অন্তত এমনটাই মনে করে তরুণ প্রজন্ম।

ফিল গুড ফ্যাক্টর

একটা সময় ছিল যখন মেয়েরা নিজের ইচ্ছের কথা মুখ ফুটে বলতে পারত না পুরুষ বন্ধুটিকে। কিন্তু এখন বেশিরভাগ মেয়েই মনের ইচ্ছে প্রকাশ করতে পারে। শুধু তাই নয়, নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে সম্ভোগের সময় অ্যাক্টিভ রোল-ও প্লে করতে পারে আজকের মেয়েরা। অর্থাৎ শুধু পুরুষরাই নয়, মেয়েরাও এখন চরম তৃপ্তিলাভের ব্যবস্থা করে নিতে পারে নিজেরাই।

সতর্কতা

সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে মেয়েরা এখন অনেক বেশি সচেতন। কার সঙ্গে সম্পর্ক করবে, কতটা এগোবে, মানসিক সম্পর্ক থেকে শারীরিক সম্পর্কে যাবে কিনা এসব নিয়ে মেয়েরা এখন উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সেইসঙ্গে নিজের ইচ্ছে মতো সুরক্ষিত যৌনতার জন্য মেডিকেল প্রিকশন সর্বদা সঙ্গে রাখে। তবে শুধু আগাম প্রিকশনই নয়, ইমোশনালি হঠাৎ যদি প্রিকশন ছাড়াও কারও সঙ্গে দৈহিক ঘণিষ্ঠতা হয়েও যায়, তাহলেও ইমারজেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল ব্যবহার করে চাপমুক্ত হতে পারার সহজ ফর্মুলা এখন তাদের হাতের মুঠোয়।

সম্পর্কের বুনিয়াদ

রঞ্জনার বয়স যখন মাত্র ষোলো, তার সঙ্গে পরিচয় Relation হল বছর কুড়ির রাতুলের সঙ্গে। রঞ্জনার বাবা কর্পোরেট অফিসে চাকরি করেন আর মা শিক্ষিকা। এদিকে রাতুলের বাবা-মা বস্তিতে ঘরভাড়া নিয়ে থাকেন আর ছেলে ‘গাড়ির মেকানিক’। চেহারাটা সিনেমার নায়কের মতো যা দেখে রঞ্জনা, রাতুলের প্রতি আকর্ষিত হয়। গভীর প্রেম ছিল কিনা জানা নেই, তবে একদিন দুজনে একসঙ্গে পালাল। এরপর রঞ্জনার জীবনে অভাব, অনটন, অবিশ্বাস এবং দোষারোপের অন্ধকার ঘনিয়ে আসতে সময় লাগল না। এক বছরের চেষ্টায় অবশেষে পুলিশ তাদের সন্ধান পায় এবং রাতুলকে গ্রেপ্তার করে রঞ্জনাকে তার মা-বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সম্প্রতি বাড়ির পছন্দেই রঞ্জনার অন্যত্র বিয়ে হয়েছে যথেষ্ট সচ্ছল পরিবারে। বয়ফ্রেন্ড-এর সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা এবং তার সঙ্গে জড়িত অভাব-অনটনের দীর্ঘ একটা সময় পেরিয়ে আসা আজও রঞ্জনাকে যতটা না পীড়া দেয়, তার থেকেও বেশি কষ্ট দেয় রঞ্জনার মা-বাবাকে।

আজকাল যুগটাই এরকম। স্বাধীনতার ভুল অর্থ আজকালকার ছেলেমেয়েদের মনে গভীরভাবে গেঁথে গেছে। এই যুগের মডার্ন, আর্থিক ভাবে স্বাধীন মেয়েরা মনে করে তাদের নিজেদের পছন্দটাই ঠিক। কিছুদিন মেলামেশা করেই তারা সবকিছু যাচাই করে নিতে পারছে। সুতরাং শুধু শুধু মা-বাবার মতামতের কী প্রয়োজন আছে। যেখানে জীবন অতিবাহিত করতে হবে তাদের নিজেদের সেখানে অভিভাবকের দায়িত্বের উপর নির্ভর করার প্রয়োজনীয়তা কোথায়? আজকের মেয়েরা বিশ্বাস করে, পারফেক্ট জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতে তারা নিজেরাই সক্ষম।

কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই দম্পতির ‘প্রেম-বিবাহ’ Relationship ভবিষ্যতে সফল হয়, কিন্তু বেশিরভাগই দেখা যায় বিবাহজনিত নানা সমস্যার জেরে বিবাহিত জুটিতে ভাঙনের কালো ছায়া নেমে আসতে। বিয়ের আগে মেলামেশা পর্যায়ে ছেলে-মেয়ে উভয়েই নিজেদের দুর্বলতা একে-অপরের কাছে লুকোবার চেষ্টা করে, যা বিয়ের পরে একসঙ্গে যখন থাকতে হয়, দোষগুলি চোখের সামনে এক এক করে স্পষ্ট হতে থাকে। সুতরাং ভুল একটা ডিসিশন নেওয়া মানেই তার ফলাফলও কখনও ভালো হতে পারে না, এটা জেনেই এগোনো উচিত।

বিবাহিত পুরুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়া

বিবাহিত পুরুষকে (যার স্ত্রী বর্তমান আছে এবং ডিভোর্সও হয়নি) বিয়ে করে সংসার করা, সমাজ এবং আইনের চোখে গুরুতর অপরাধ। ২৯ বছর বয়সি শর্মিলা অফিসেরই ওর থেকে ৫ বছরের সিনিয়র অভিজিতের সঙ্গে আলাদা একটা ফ্ল্যাটে থাকে। বউয়ের সঙ্গে বনিবনা নেই এবং বউয়ের চরিত্র খারাপ এই অজুহাতে অভিজিৎ শর্মিলার মন জয় করে। এরপর শিগগির ডিভোর্স হয়ে গেলেই শর্মিলাকে বিয়ে করবে এই আছিলায় শর্মিলার বাড়ি থেকে তাকে বার করে নিয়ে এসে একটা ফ্ল্যাটে তোলে। সপ্তাহে দুই-তিনদিন শর্মিলার সঙ্গে কাটায় অভিজিৎ, বাকিদিন নিজের বাড়িতে থাকে। তিন বছর হতে চলল, অভিজিতের ডিভোর্স আজও হয়নি এবং শর্মিলা জানতে পেরেছে অভিজিতের গল্পটা পুরোটাই সাজানো। কিন্তু বাড়ি ফিরে যাওয়ার সমস্ত রাস্তা শর্মিলা নিজেই বন্ধ করে দিয়েছে। সমাজে আজ তার পরিচয় ‘রক্ষিতা’।

বিয়ের পর পুরুষ বন্ধু

পুরুষবন্ধু থাকাটা দোষের নয়। অনেক স্ত্রী-ই মনে করেন, স্বামীর বন্ধুবান্ধব অথবা বাইরের পুরুষদের এড়িয়ে চলার কারণ কিছু নেই। পরিচিত হওয়া মানেই অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে, ধারণাটা ভুল। কিন্তু বাইরের পুরুষের মুখে নিজের সুখ্যাতি, সহমর্মিতা, সাহায্য এবং উপহার পেতে থাকলে, অনেক সময়ই আবেগে ভেসে যেতে দেখা যায় বহু মহিলাকেই। এই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক বা অনৈতিক, অসামাজিক সম্পর্কের শিকড় কখনও এতটাই গভীরে বংশ বিস্তার করে যে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটাই বিশাল সঙ্কটের সম্মুখীন হয়ে পড়ে।

বিশ্বাসঘাতকতা

বিশ্বাসঘাতকতা, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অটুট বন্ধনকেও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। মনের মধ্যে শুধু থেকে যায় রাগ, অভিমান, অবিশ্বাস এবং অন্যায়ের রেশ। একে-অপরের প্রতি বিশ্বাস একবার ভেঙে গেলে তা বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত পৌঁছোতে পারে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া এখন ডিভোর্সের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অযৌক্তিক সন্দেহ

সন্দেহ হচ্ছে বিষধর সাপের মতো। একবার ফণা তুললে স্বামী-স্ত্রীয়ের সম্পর্ককে সম্পূর্ণ বিষিয়ে দিতে পারে। স্বামী, বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও গেলে অথবা অফিসের কাজে শহরের বাইরে গেলে অযথা সন্দেহ করা বাঞ্ছনীয় নয়।

অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে সেক্স-কে বেছে নেওয়া

দু’জনের সম্মতিক্রমে অর্থাৎ পুরুষ এবং নারী উভয়ের ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হলে, তবেই যৌন মিলনের পথ প্রশস্ত হয়। কিন্তু তাই বলে পুরুষসঙ্গীর অনুরোধে গ্রুপ সেক্স অথবা পুরুষসঙ্গীর কোনও বন্ধুর সঙ্গে এক রাত্তিরের যৌন আনন্দ গ্রহণ করার ইচ্ছে পোষণ করবেন না। তাতে মুহূর্তের আনন্দ পেলেও এর পরিণতি মারাত্মক হবে।

পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছেদ

পরিবারের বড়োদের সঙ্গে কখনও সম্পর্ক বিচ্ছেদ করা উচিত নয়। অভিভাবক এবং পরিবারের বড়োরা সবসময় বাড়ির ছোটোদের মঙ্গল কামনাই করেন। কখনও মতপার্থক্য অথবা মতবিরোধ ঘটতেই পারে তাই বলে সেটাই সম্পর্কের শেষ বলে ধরে নেবেন না। অনেক সময়, সময়ও প্রমাণ করে বড়োরাই ঠিক, কারণ জীবন সম্পর্কে জ্ঞান তাদের অনেক বেশি।

স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবসময় যে মতের মিল হবে, তার কোনও মানে নেই। দু’জন আলাদা মানুষের আলাদা দৃষ্টিভঙ্গী এবং মত হতেই পারে। কিন্তু ঘুরিয়ে আঘাত দিয়ে কথা বলার অভ্যাস, সাধারণ পরিষ্কার একটা আচরণকে পেঁচিয়ে অন্য অর্থ বার করা, ভুলবোঝাবুঝি, কথা কাটাকাটি এমনকী মাঝেমধ্যে ঝগড়া, অশান্তি ইত্যাদি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা উচিত। মাথা ঠান্ডা করে চিন্তা করলেই দেখা যাবে, যে-কারণে ঝগড়া এবং অশান্তি, তার ৯৯ শতাংশই মাথা ঠান্ডা রেখে খুব সহজে মিটিয়ে ফেলার জিনিস।

ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া

স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে অথবা সন্দেহের বশে, এমনকী স্বামীকে অপর কোনও নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে দেখলেও রাগের মাথায় নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়িতে উঠে যাওয়া সমীচীন নয়। নিজের অধিকারের জন্য স্ত্রীয়ের উচিত লড়া। আর যেখানে স্বামী পুরোপুরি দোষী সেখানে এটাও দেখা কর্তব্য যে, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ছেলের বিবাহিত স্ত্রীয়ের স্বপক্ষে না ছেলে এবং অন্য নারীটির স্বপক্ষে।

সাধারণ কারণে ডিভোর্সের আবেদন

স্বামী-স্ত্রীর শুধুমাত্র একসঙ্গে থাকলেই সম্পর্ক ভালো হয়, এমন নয়। উভয়ে কতটা ভালো ভাবে নিজেদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন তার উপরেই টিকে থাকে সম্পর্ক। আইডিয়াল তিনিই যিনি নিজের পার্টনারকে সম্মান করেন এবং ভালোবাসেন। যে-কোনও দম্পতির জন্যেই বিয়ের শিলমোহর অত্যন্ত শুভ। তাই বিয়ের পর স্বামী, সন্তান এবং স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির সম্মান রক্ষা করাও একটি অবশ্য কর্তব্য যে-কোনও স্ত্রীর। সুতরাং মিথ্যা মামলা সাজিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকেদের আইনের ঘোরপ্যাঁচে ফেলা অথবা মিথ্যাই ডিভোর্সের জন্য আবেদন করা অত্যন্ত অনুচিত একটি কাজ।

সুতরাং সাবধান হতে হবে। যাতে এই মারাত্মক ভুলগুলি থেকে আমরা দূরে থাকতে পারি তাহলেই সম্পর্কের Relationshipবন্ধন আরও দৃঢ় হবে।

 

শাসনের কতটা প্রয়োজন

শাসনের দণ্ড থেকে আপনার সন্তানকে সরিয়ে রাখলে স্বাভাবিকভাবেই সন্তানের চরিত্র খারাপ হবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এই বক্তব্য সবসময় সঠিক হয় না। অর্থাৎ যুক্তি ও কারণ দিয়ে মেনে নেওয়া যায় না।

বাড়িতে এবং বাড়ির বাইরে হিংসার অঙ্গ হল বিশৃঙ্খলা এবং গোলযোগ। এসবই হল অনিয়মের বা নিয়মভঙ্গের ফল। মানুষই নিয়ম ভাঙে। নিয়মানুবর্তিতা কতগুলি বিধিনিষেধ স্থির করে যা আমাদের আচরণবিধির মধ্যে কোনগুলি সভ্য এবং হিংসাত্মক এবং কোনগুলি নয়, তা ঠিক করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, বড়ো ভাই বা বোন যখন অগ্রজ হওয়ার সুবাদে বা গায়ের জোরের দরুণ ছোটোভাই-বোনেদের মারে বা rule করে, তা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না কারণ তা অনিয়মানুবর্তিতার সামিল। সময়মতো এইসব নিয়মভঙ্গকারী সন্তানকে শুধরানো প্রয়োজন। এদের শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন নইলে আগামীদিনে এরা শুধরাবে না।

একটি শিশুর মনস্তত্ত্ব বুঝতে হলে তার সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখতে হয় এবং শিশু-শিক্ষার মধ্য দিয়েই শিশুকে বদলানো যায়। মূল কথা হল ‘সংযোগ’ ও ‘শিক্ষা’। কখনও কখনও দেখা যায়, যে শিশুকে মারা হয় সে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠার পরিবর্তে, সে তার ওই ভাই-বোন বা যে তাকে শাস্তি দেয় তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করে। অর্থাৎ বুঝতে হবে এক্ষেত্রে শিশুটির গায়ে হাত তোলার একটি বিরূপ ফল হয়েছে।

শিশুকে মারবেন না

প্রাজ্ঞ ব্যক্তিরা বলেন, না মেরে শান্তভাবেও একটি শিশুর ব্যবহার শুধরানো যায়। এব্যাপারে জনৈকা দিদিমার মত, ‘আমি আমার ছেলেমেয়েদের কখনও মারিনি এবং তারা অনেক নম্র, ভদ্র ও বড়োমাপের মানুষ হয়েছে। যে শিশুর মধ্যে মানসিক সুরক্ষাবোধের অভাব রয়েছে, তাদের কোনও সময়ই মারাটা সমীচীন নয়। শিশুদের পেলব মন অত্যন্ত মূল্যবান, তাদের আঘাত করা উচিত নয়।

শারীরিক বা দৈহিক শাস্তি অনেক সময়ে শিশুর মধ্যে নিয়ে আসে ভয়, সুরক্ষাহীনতা। এক শ্রেণির মানুষজন, বিশেষত পশ্চিমি দেশের মানুষজন দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন যে, শিশুদের মারা বা দৈহিক শাস্তি দিলে তারা আর কিছুই নয়, মানসিক অবসাদের শিকার হয়।

শাসনের rule ক্ষতিকারক দিক

এর থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, শাস্তি পেলে শিশুটি নড়বড়ে হয় এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব নিয়ে বেড়ে ওঠে। উপরন্তু নিরাপত্তার অভাব থেকেই ভীতিচক্রের সূচনা হয়। শিশুটির মনে ভয় জাগে, মানুষকে অবিশ্বাস করতে শেখে এবং সঙ্গীসাথি ত্যাগ করে। এই একই শিশুকে যখন তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়, বড়ো হয়ে যখন উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা চাকরিতে প্রবেশাধিকারের প্রশ্ন ওঠে, তখন সে পিছিয়ে পড়ে। যদি দৈহিক শাস্তি একটি নির্দিষ্ট ‘না’ হয়, তাহলে কীভাবে পড়াশুনোয় অবাধ্য শিশুকে অভিভাবক-শিক্ষকের ‘স্বীকৃত আচরণের’ পথে আনা যায়? শুধুমাত্র যদি, শিশুটি এসবকিছু মেনে না নেয়, তাহলেই তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে আমরা এটাই বলতে পারি তিরস্কার ও পুরস্কারের মধ্য দিয়ে শিশুকে বড়ো করে তোলা, সর্বোত্তম প্রয়াস।

শিশুর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবেন

১)   বারো বছরের পর কোনও শিশুকে মারবেন না।

২)   শিশুকে যুক্তি দিয়ে শেখান।

৩)   ইতিহাস বা লোককথা থেকে ভালো ব্যবহারের দৃষ্টান্ত তুলে ধরুন।

৪)   শিশুর বন্ধুদের দৃষ্টান্ত দেবেন না।

৫)   আপাত বিপথগামী শিশুদের সামনে শিশুর বন্ধুর বেশি প্রশংসা করবেন না।

৬)   রুটিন অভ্যাসে শিশুকে মারবেন না।

৭)   অবশ্যই শিশুকে তার ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করবেন।

৮)   প্রশংসা থেকেই শিশু সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলতে শিখবে।

 

ওকেও আপন করে নিন

কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে সুমনার সঙ্গে আলাপ ঋজুর। তারপর একসঙ্গে তিনটে বছর কলেজে কাটিয়ে মাস্টার্স করতে বিদেশে পাড়ি ঋজুর। এই তিন বছরে বন্ধুত্ব গড়িয়েছে প্রেমে। বিদেশে পড়া শেষ করে চাকরি। ততদিনে ঋজু বিয়ের প্রস্তাব রেখেছে সুমনার কাছে। দুজনের পরিবারই রাজি এই বিয়ের জন্য। কিন্তু বিয়ে বলে কথা। দুটো পরিবারের সামনা-সামনি কথা বলার প্রয়োজন রয়েছে। ছেলে, মেয়েকে একে অপরের পরিবার চেনে না। পরিচয় পর্বটাও সারা দরকার। তবে ঋজুর মায়ের খুব শখ ছিল নিজে মেয়ে দেখে পছন্দ করে একমাত্র ছেলের বিয়ে দেবেন।

কথাটা ঋজুকে জানিয়েও ছিলেন এই ভেবে যে, যদি ছেলে বিয়ের ডিসিশন-টা বদলায়। কিন্তু সুমনা ছাড়া ঋজু অন্য কোনও মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি নয়।

সুমনার বাড়িতে, বিয়ের প্রস্তাবটা জানাতে ঋজু পুজোর ছুটিতে ভারতে আসে। মা-বাবাকে সঙ্গে করে সুমনার বাড়ি গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব রাখে সুমনার মা-বাবার কাছে। বাঙালি মাত্রই এই সময়টা খুশির মেজাজে থাকে। তাই দুটো পরিবারেও তেমনি উৎসবের মেজাজটা থাকতে থাকতেই নতুন একটা সম্পর্ক গড়ে তোলার আনন্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। ঋজু আর সুমনা দুজনের পরিবারই সানন্দে এই বিয়ের জন্য সম্মত হল। দুটো সম্পর্ক যেমন প্রেম-ভালোবাসার সিঞ্চনে এক হতে পারল তেমনি উৎসবের গুরুত্বটাও কিন্তু এক্ষেত্রে অবহেলা করার ছিল না।

কিন্তু এমন ভাগ্য সকলের হয় না। উৎসবের মেজাজে গা ভাসালেও দুটো পরিবারের সামান্য ভুল, ত্রুটিও সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগেই ভাঙ্গার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে উভয়েরই উচিত নিজেদের পরিবারকে অন্য পরিবারটির সম্পর্কে অবহিত করানো। মা-বাবা ও পরিবারের সকলকে কিছুটা ট্রেনিং দিয়ে রাখা, যাতে অন্য পরিবারটির সম্মুখীন হয়ে তাদের কোনওরকম অস্বস্তির মধ্যে যেন না পড়তে হয়। তবে সম্পর্ক গড়তে উৎসবের দিনগুলো হল সবথেকে ভালো সময় কারণ মানুষের আনন্দ এবং মনস্কামনা পূরণ করার এর চেয়ে উপযুক্ত সময় আর হতে পারে না। এই সময় মানুষ নেতিবাচক মনোভাব দূরে সরিয়ে রেখে পজিটিভ চিন্তা-ভাবনায় নিজেকে মগ্ন রাখে।

কাউন্সেলিং

সবাই মনে মনে চায়, বাড়ির লোক যখন প্রথম তার বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডকে দেখবে তখন তাদের ফার্স্ট ইম্প্রেশন ভালো হোক। বাড়ির বড়োদের এবিষয়ে জ্ঞান অনেক বেশি সন্দেহ নেই কিন্তু মাঝেমধ্যে মুখ থেকে বেরোনো সামান্য একটা শব্দও সামনে থাকা মানুষটার মনকে আঘাত করতে পারে। তার আত্মসম্মান হানি করতে পারে।

জীবনসঙ্গী বাছা হয়ে গেলে তাকে মা-বাবা, বাড়ির বড়োদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া দরকার। কিন্তু সেটা করার আগে সঙ্গীর সম্পর্কে সবকিছু মা-বাবাকে জানিয়ে রাখা উচিত। এরফলে মা-বাবাও এমন প্রশ্ন অপর পক্ষকে করবে না যাতে তারা বিব্রত বোধ করতে পারে। উত্তর দিতে গিয়ে তারাও যাতে ভয় বা সংকোচ বোধ না করে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই যেন দুই পক্ষ পারস্পরিক আলোচনা চালাতে পারে।

যদি অন্য পরিবারে কোনও সংবেদনশীল ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে প্রথমেই মা-বাবাকে সেটা বলে দেওয়া উচিত। ওই ঘটনার কথা প্রথম দিনই আলোচনা হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। ওই ঘটনার উল্লেখ সেই পরিবারের লোকজনকে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে যে পরিবারে ঘটনাটি ঘটেছে। যেমন হয়তো পরিবারে কোনও বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে অথবা পরিবারে কেউ বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে লিভ্ টুগেদার করছে– এই ঘটনাগুলি এখনও সমাজের চোখে অন্যায় বলে মানা হয়। এই ধরনের প্রসঙ্গ উত্থাপন, অস্বস্তিকর হতে পারে। প্রথম পরিচয়েই যেন এই ধরনের কথাবার্তা না ওঠে।

এগুলো ছাড়াও যাকে জীবনসঙ্গী করতে চলেছেন তার কোনওরকম অ্যালার্জি, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা অথবা সে আমিষ কি নিরামিষাশী সেটাও নিজের বাড়িতে আগে জানিয়ে রাখা বাঞ্ছনীয়। এর ফলে কোনও পক্ষকেই অপ্রিয় পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না।

জীবনসঙ্গীরও ট্রেনিং দরকার

জীবনসঙ্গী হিসেবে যাকে বেছেছেন, তার সঙ্গে নিজের পরিবারের পরিচয় করাবার আগে তাকে নিজের পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত খুলে বলা উচিত। যাতে প্রথমবার সে যখন আপনার বাড়িতে আসবে, সহজেই আপনার বাড়ির লোকেদের মন জিতে নিতে পারে। তবে পরিবারের ভিতরে কোনও ঝগড়া, বিবাদ থাকলে সেটা গোপন রাখাই ভালো কারণ ভবিষ্যতে এই ধরনের রেষারেষির কারণে, সম্পর্কে বিঘ্ন পর্যন্ত ঘটতে পারে।

কমন বিষয়গুলি আলোচনা করুন

অনেকেই এমন লোকজন পছন্দ করে যাদের শখের সঙ্গে নিজেদের শখ মিলে যায়। এই মানসিকতার সুযোগ নিন। জীবনসঙ্গী হিসেবে যাকে বেছেছেন তার সঙ্গে নিজের বাড়ির লোকেদের কোন শখটা অথবা অভ্যাসটা মেলে, সেটা নিজের প্রেমিক, প্রেমিকাকে জানিয়ে রাখুন। বাড়িতে এসে তাহলে আলোচনায় বিষয়টি কমন পড়লে দুই পক্ষই মনে মনে খুশি হবেন নিজেদের পছন্দের বিষয়টা এক জেনে। যেমন হয়তো দুই পক্ষই বাগান করতে ভালোবাসেন অথবা দুজনেরই বিজ্ঞান অথবা খেলাধূলায় রুচি রয়েছে।

বাড়িতে অতিথি এলে সকলেরই জানা আছে তাদের মা-বাবার কী প্রতিক্রিয়া হয়। কেউ হাত বাড়িয়ে অতিথিকে আপ্যায়ন করেন, আবার কেউ বা প্রথম সাক্ষাতেই গলা জড়িয়ে ধরেন। অনেকে হাত তুলে নমষ্কারও করেন। ছোটোরা প্রথম এসে বাড়ির বড়োদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে সম্মান জানাবে এই ইচ্ছেও অনেকের মনেই সুপ্ত থাকে। মা-বাবার মনের ইচ্ছেটা সঙ্গীকে আগে থেকে জানিয়ে রাখলে জানবেন প্রথম সাক্ষাতেই সঙ্গীটি আপনার অভিভাবকদের গুড বুকে স্থান পেতে চলেছে।

বাড়ির নিয়মগুলোর সঙ্গে পরিচয়

সব বাড়িরই কিছু নিয়ম থাকে যেগুলো ওই বাড়ির সদস্যরা মেনে চলেন। কোনওরকম নিয়ম লঙঘন হলে বাড়িতে অশান্তি লেগে যায়। সেজন্য নতুন কাউকে বাড়িতে পরিচয় করাতে নিয়ে আসার আগে বাড়ির নিয়মগুলো তাকে আগে জানিয়ে রাখা উচিত। যেমন বাইরে জুতো খুলে ঘরে ঢোকা, শালীনতা বজায় রেখে কথা বলা, স্লঁটো খাবার প্লেটে ছেড়ে দেওয়া অথবা স্লঁটো হাতে জলের গেলাস ধরা বাড়ির কেউ পছন্দ করে না। এই জিনিসগুলো আগে থেকে জানিয়ে রাখা কর্তব্য।

নিজস্ব কর্তব্য

সকলেই জানেন তার নিজের বাড়িতে সকলে কী পছন্দ করে। বাড়ির বড়োদের পছন্দ, অপছন্দ সবকিছুই তাদের জানা। তাই নতুন অতিথিকে প্রথমবার যখন বাড়ির সকলের সঙ্গে পরিচয় করাবার জন্য আনবেন, তার সঙ্গে সঙ্গে থাকাটা আপনার কর্তব্য। তাতে সে অনেক সহজ বোধ করবে।

মা-বাবার সামনে ওকে সহজ করে তোলার চেষ্টা আপনাকে করতে হবে। সঙ্গীটির প্রশংসা করুন যাতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে। একলা ছেড়ে দিলে মা-বাবার সঙ্গে কথাবার্তা চলাকালীন কোনও অপ্রিয় প্রসঙ্গ উত্থাপিত হতে পারে, ফলে সম্পর্কেও ফাটল ধরতে পারে। সম্পর্ক গড়তে এই নিয়মগুলো মেনে চললেই, বন্ধন অটুট হবে একথা জোর দিয়ে বলা যায়। তাই সম্পর্ক গড়ে তুলতে বেছে নিন উৎসব মুখরিত দিনগুলিকে।

পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব