সুখের খোঁজেই আমরা সবাই ছুটে চলছি। কখনো ভেবে দেখেছেন এটা আসলে কী? এটা কি একটি আবেগ? জীবনের চাহিদা? মনের সাময়িক অবস্থা? নাকি প্রবৃত্তি? আমরা কীসে সুখী হই? আসলেই সুখ বলে কিছু আছে? প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যায় একটু গভীরভাবে আত্মসমালোচনা করলে।

আমরা আমাদের জীবনকালে সাময়িক সুখের জন্য অর্থ-সম্পত্তি অর্জনের পিছনে ছুটে চলি। সাংসারিক জীবনে সুখের কথা বললে সংসার, আত্মীয়, স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সুখ খুঁজে বেড়াই। পরিবারে Secrets of happiness তাহলে কী ?

বর্তমান সমাজের মানুষ বিত্ত-সম্পত্তিতে সন্তুষ্ট। আবার অন্যরা তা নয়। অন্য কেউ হয়তো সীমিত আয়ের জীবনযাপনে সন্তুষ্ট। কেউবা আবার দারিদ্র্যেও সন্তুষ্ট। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অর্থ কি সুখ দিতে পারে?

তা বোধহয় নয়৷ তাহলে অতি দরিদ্র পরিবারেও সুখের ঘাটতি থাকত না৷ আবার অর্থের অভাব নেই কিন্তু সাংসারিক জীবনে সুখ খুঁজে পাচ্ছে না- এমন মানুষও প্রচুর। বর্তমানে সারা বিশ্বে সাংসারিক জীবনে অশান্তি লেগে থাকে পরকীয়া কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মনের মিল না থাকলে। Family bonding নেই বললেই চলে৷

আমাদের সমাজে ছেলে-মেয়ের সম্বন্ধ করে বিয়ের আগে, ছেলের অর্থবিত্ত দেখে মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। না হলে বিয়ে হওয়ার পর এই অর্থই সাংসারিক জীবনে দুর্ঘটনার কারণ হয়। সুখ নষ্ট হয় সংসারে অর্থাভাব থাকলে৷ ঘটে বিচ্ছেদ।

অতিরিক্ত বিত্তশালী হলেও আবার আরেক সমস্যা৷ আপনি ভাবতে থাকেন আপনার হাতের মুঠোয় পুরো পৃথিবী। টাকা দিয়ে আপনি জাগতিক সুখ কিনতে চাইবেন। আপনার স্ত্রী অথবা আত্মীয়স্বজন এই টাকার জন্যই আপনাকে ভালোবাসবে। যখন টাকা থাকবে না তখন দূরে সরিয়ে দেবে। কারণ টাকা রোজগারের মোহে পড়ে কোনও আত্মিক বন্ধনই আপনি গড়ে তুলতে বিফল হবেন পরিবারের সঙ্গে৷

অথচ দেখা গেছে একজন মধ্যবিত্ত উপার্জনকারী, স্বল্প রোজগারেও সুখে সংসার করছে।কারণ পরিবারে স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা সকলের সঙ্গেই তার মনের বন্ধন খুব দৃঢ্৷ অর্থ এবং টাকার সুখ সাময়িক। একজন মধ্যবিত্ত ঘরের স্বামী-স্ত্রীর চাহিদা থাকে অল্প। কোনও লোভ-লালসা থাকে না সংসারে। শুধু ভালোবাসার খাতিরে গোটা পরিবারের সঙ্গে সারাজীবন আবদ্ধ থাকে সকলে। সুখের ভিত্তি বিশ্বাস, আস্থা, ভরসা, কৃতজ্ঞতা,  সন্তুষ্টি, তৃপ্তি ও ইতিবাচকতা। দেখা গেছে ছোটোখাটো মনোমালিন্য থাকলেও সেটা খুব  সাময়িক৷ আদতে যৌথ পরিবারেই সুখের গোপন চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে৷

জীবনে যা পাওয়া গেছে তা নিয়ে ইতিবাচক ভাবনা, যা পাওয়া যায়নি তা নিয়ে না ভাবা-এটাই হওয়া  উচিত দৃষ্টিভঙ্গী । সব সময় নিজের চেয়ে কম সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণিকে দেখুন, বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, পরিবার ও শ্রেণির সঙ্গে তুলনা করলে, অসন্তষ্টি বাড়বে। আপনার পায়ে জুতো নেই তাই আপনি অসুখী ভাবেন নিজেকে, কিন্তু যার একটি পা নেই তার দিকে তাকালে আপনার অবস্থানটি বুঝতে পারবেন।

আসলে প্রকৃতপক্ষে সুখ হচ্ছে মনের প্রশান্তি। যা চিরসত্য তাই সুন্দর, সেই সত্যের সন্ধানেই থাকুন। সকলের ভালো থাকাতেই সুখ৷ শুধু নিজেরটুকু নিয়ে ভাববেন না৷ কিছু আত্মত্যাগেরও প্রয়োজন আছে৷ গোটা পরিবারটাকে এখসাথে বেঁধে রাখুন৷ সেটাতেই আনন্দ৷ একমাত্র এভাবেই সেই চরম সুখের কাছাকাছি আপনি পৌঁছোতে পারবেন, যা আসলে আপনার মনের ভিতরেই রয়েছে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...