যে-কোনও নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর, জয়ী দলের মহিলা সমর্থকদের আনন্দানুষ্ঠান করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। তবে হ্যাঁ, এই আনন্দানুষ্ঠান তাদেরই করতে বলা হয়, যাদের মগজ ধোলাই করা সহজ। বিশেষকরে যারা ঘন্টার পর ঘন্টা পূজাপাঠ করেন, ভজনকীর্তন করেন, ব্রত-উপবাস করেন, মাথায় জলের কলসি রেখে শীত, গ্রীষ্ম বর্ষায় ঘুরে-বেড়ান, স্বামীকে পরমেশ্বর ভাবেন—তাদের। কারণ, তাদের যারা মগজ ধোলাই করে পরাধীনতার শৃঙ্খল পরিয়ে রেখেছে, সেই দল এবং দলের জনকের পায়ের নীচের মাটি শক্ত করার এ এক কৌশল।
কিছু মহিলা নিজেদের ধন্য মনে করেন, যখন তারা পূজাপাঠ করেন, মাতৃমন্দিরে প্রসাদ গ্রহণ করেন কিংবা ভণ্ড সাধু- সন্ন্যাসীদের চরণ ধরেন। আসলে, সমাজ যতই আধুনিক হয়েছে বলে দাবী করা হোক না কেন, কিছু মহিলা এখনও স্বেচ্ছায় দাসত্ব করেই খুশি থাকেন। যখন থেকে মন্দিরের সংখ্যা বেড়েছে, তখন থেকেই ধনী, গরিব, শিক্ষিত, অশিক্ষিত বহুসংখ্যক মহিলা ধর্মের শৃঙ্খল পরে নিয়েছেন মনে মনে।
হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার প্রভৃতিকে মাধ্যম করে, মহিলাদের পৌরাণিক যুগের মানসিকতা তৈরি করা শুরু হয়ে গেছে। মর্ডান এডুকেশন কিংবা উন্নত শহরের আবহ বদলে দিয়ে যেন সেই আদিম যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। আসলে চাল-চলন কিংবা পোশাকে নিজেকে আধুনিক প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও, আজও অনেক মহিলা মনে মনে সেই সাবিত্রী, দ্রৌপদী কিংবা শকুন্তলা হয়ে আছেন।
শুধু বাংলা কিংবা হিন্দি ভাষায় নয়, এখন ইংরেজি ভাষায়ও পৌরাণিক কাহিনি প্রচার করে মহিলাদের মনে ধর্মের নামে অধর্মকে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে। মন্দিরকে এমন ভাবে প্রোমোট করা হচ্ছে, যাতে মহিলারা মন্দির লাগোয়া রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাবার খান, নাম-সংকীর্তনে যোগ দেন, মার্বেলের মেঝেতে বসে ধ্যান করেন।
নির্বাচনের আগে একটি দল প্রচার করেছিল, তারা যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে মেয়েদের সুযোগ-সুবিধে বাড়াবে। আর এক দল তুলে ধরেছিল তাদের দেওয়া বিভিন্ন যোজনার বিষয়। কিন্তু মেয়েরা পুরুষদের সমান স্বাধীনতা ভোগ করুক, এমন ইচ্ছের কথা একবারও কোথাও বলেনি কেউ। অবশ্য সমানাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিলেও, সেই প্রতিশ্রুতি যে ওরা রক্ষা করত এমন কোনও নিশ্চয়তা ছিল না। কারণ অনেক বিষয়েই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে ওরা। কিন্তু যাই করুক না কেন, বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আটকাতে পারেনি কোনও দল। যেমন মহিলা কুস্তিগিরদের বিরোধ বন্ধ করতে পারেনি, ঠিক তেমনই মহিলাদের সঠিক মর্যাদাও দেওয়া হয় না।