সমস্ত বড়ো শহরে একই চেহারা। যত্রতত্র জঞ্জালের স্তূপ এবং হতশ্রী নিকাশী ব্যবস্থা। গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে বিদেশের অনুকরণে শপিং মলে বাজার করতে, বিদেশি আদবকায়দায় পোশাক পরতে আমরা যতটা দড় হয়ে উঠেছি, ঠিক ততটা পরিবেশ সচেতনতা কিন্তু আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি পাশ্চাত্য দেশগুলির মতো।
ক্রমবর্ধমান দূষণ, বন্ধ হয়ে যাওয়া ড্রেন দেখে যতই রাগ-বিরক্তি প্রকাশ করুন না কেন ভেবে দেখেছেন এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? আমরাই ঘরের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে যতটা যত্নশীল ঠিক ততটাই উদাসীন বাড়ির আশপাশের পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে৷ অপ্রিয় বিষয়টি হল, বাড়ির মহিলারাই রান্নাবান্নার শেষে জঞ্জাল বাইরে ফেলেন বেশি। সমাজকে পরিচ্ছন্ন করতে গেলে এই প্রকৃতিপাঠ দেওয়া উচিত সংসারের স্তর থেকে। গৃহকর্ত্রীর মধ্যে পরিচ্ছন্নতার বোধ তৈরি করতে হলে, তাকে বোঝানো দরকার বাইরের পরিবেশটাও সুন্দর করা প্রয়োজন। এতে শুধু সমাজ কলুষতামুক্ত হবে না, বাড়ির সকলের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়বে।
কিচেন গ্যাজেটস-এর দৌলতে এখন নানা জিনিস বাড়িতেই বানানো যায়। ফলে মানুষের কেনাকাটার ধূম বেড়েছে। দেশের যে-কোনও বড়ো শহরে মার্কেটের বাইরে গাড়ি দাঁড় করানোর জায়গা থাকে না জনসমুদ্র ঠেলে। মানুষের কেনাকাটা বেড়ে যাওয়ায় বাড়িতেও জিনিসের ঢল নামে। সেসব রাখার জন্য আলমারি কিনতে হয়। ওভারহেড কাবার্ড থেকে লফ্ট-এ সরঞ্জাম রাখার ব্যবস্থা করতে হয় গৃহকর্তাকে।
একসময় বাড়ির অতিরিক্ত জিনিস ফেলে দেওয়া ছাড়া গতি থাকে না। তখন তার জায়গা হয় বাড়ির পাশে রাস্তা বা ড্রেনের ধারে কিংবা আস্তকুঁড়ে।
বাড়ি অর্থাৎ বাসস্থানের মূল উদ্দেশ্য আশ্রয় দেওয়া। সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস ঢুকলে তবেই তা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ হিসাবে গণ্য হয়। সেটাই যদি জিনিসের স্তূপে ভরে দেওয়া হয়, তখন তা আর বাসযোগ্য থাকে না।
আমেরিকান গায়িকা ম্যাডোনা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তিনি আর কিছুই কিনবেন না। জীবনধারণের জন্য পর্যাপ্ত জিনিস তাঁর আছে। আরও কেনা মানেই বোঝা বাড়ানো। কোভিড আমাদের প্রয়োজন কমিয়ে দিয়েছে। বিলাসিতা কমিয়ে দিয়েছে। কয়েক জোড়া জামাকাপড় কেচে ধুয়ে দিব্যি চলেও যাচ্ছে। গান্ধিজি শিখিয়ে গেছেন ঐশ্বর্য নয়, মানুষের মনের রাজত্বে নিজের আসন স্থাপন করতে। অল্পে সন্তুষ্ট থাকতে।