ধুঁয়াধার জলপ্রপাত দেখার জন্য যেখানে গাড়ি থেকে নামলাম, ভিউ পয়েন্ট সেখান থেকে অনেকটা নীচে নেমে যেতে হয়। এখানেও সেই বোটিংঘাটের রাস্তার মতো দু’ধারে মার্বেলের কারুকার্য করা নানা জিনিসের মেলা। আমরা প্রায় চোখ বন্ধ করেই এগোতে লাগলাম আমাদের মূল দ্রষ্টব্যের দিকে। ভিউ পয়েন্টে পৌঁছোবার বেশ কিছুটা আগে থেকেই চোখে ধরা দিল সেই নৈসর্গিক দৃশ্য। ভর দুপুরে মাথার উপর সূর্য। গনগনে তার রোদের তেজ। তবু মাঘ মাসের এই ভেড়াঘাটে কড়া রোদেও হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা। তার মধ্যেই ভারী শীতবস্ত্র জলসিক্ত হয়ে উঠছে জলপ্রপাতের মিহি বাষ্পে। একদম সামনে যেতেই একটা অদ্ভুত সোনার কাঠির পরশ। যেন ছুইয়ে দিল মনের কোণে স্বপ্নে দেখা স্বর্গ।
প্রায় দেড়শো ফুট উপর থেকে নর্মদার বিপুল জলরাশি ঝাঁপিয়ে পড়ছে নীচের গিরিখাতে। তার সফেদ ফেনায় বুদবুদ কাটছে এক সমুদ্র স্বপ্নিল আকর্ষণ। যার দিকে চিরকাল তাকিয়ে থাকলেও যেন সময় ফুরোয় না। চারিদিকে সেই মায়াময় জলকণার গুঁড়ো বাষ্প সকলকে ভিজিয়ে দিচ্ছে আপন করে। অপলক দৃষ্টিতে এক অপরূপ মুগ্ধতা নিয়ে জলপ্রপাতের দিকে তাকিয়ে আছে অগুনতি পর্যটক। এখানে দাঁড়িয়ে একটা কথাই শুধু মনে হচ্ছে, কোন আদি অনন্তকাল ধরে নর্মদা যেন নিজেকে সমর্পণ করে দিচ্ছে শ্বেতপাথরের পাহাড়ের কোলে। সেই নান্দনিক আনন্দের উচ্ছ্বাস যেন এই ছিটকে ওঠা শান্তিজলের বাষ্পকণা। আসলে অতিরিক্ত উচ্চতা থেকে জল পড়ার জন্যই এই জলকণার উৎপত্তি।
এই মনোরম দৃশ্য আরও বেশি উপভোগ করার লোভ ছাড়তে পারলাম না। তাই উঠে পড়লাম রোপওয়েতে। এই রোপওয়ে এক পাহাড়ের মাথা থেকে আর এক পাহাড়ের মাথায় যায় জলপ্রপাতের উপর দিয়ে। আকাশ থেকে পাখির চোখে দেখলাম সেই স্বর্গীয় চলমান মুগ্ধকর চলচ্চিত্র। বেশি উৎসাহীরা আবার জলপ্রপাতের জলে বুকে লাইফ জ্যাকেট বেঁধে উদ্দাম উপভোগে মত্ত। আমার বয়স আমাকে এই জায়গায় পিছুটান দিল। আমি চোখের সুখেই সন্তুষ্ট থাকলাম। মন তো সরতে চাইছে না এখান থেকে। তবু সময় বড়ো বালাই। যেতে হবে আরও দুই দ্রষ্টব্য স্থানে। এই মার্বেল-রক বোটিং ঘাট আর ধুঁয়াধার জলপ্রপাতের মাঝামাঝি হল চৌষট্টি যোগিনী মন্দির। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য।