বাঙালিরা বরাবরই রান্না নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করতে পছন্দ করেন৷ তাই সাবেক বাঙালি খাবারের পাশাপাশি খাঁটি মোঘল রান্নারও অবাধ যাতায়াত বাঙালির হেঁশেলে৷ রন্ধন শৈলির ইতিহাসে মোঘলদের অবদান অসীম৷এই যুগেই রান্নার ঝোল কে সুস্বাদু ও ঘন করার জন্য তাতে দুধ, দুধের সর, দই মেশানো হতো। রান্নার পর সাজানোর জন্য ফুলের পাপড়ি ছড়ানো হতো আর টাটকা রাখার জন্য সোনার এবং রূপার তবকে মোড়ানো হতো।মুঘল আমলে রান্নায় দেওয়া হতো সুগন্ধি মশলা, বাদাম, শুষ্ক ফল, জাফরান, গোলাপ জল। মুঘল রান্নায় উজবেকিস্থান, পারস্য, আফগানিস্তানের সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়।
আজ আমরা এনেছি দুটি রেসিপি যাতে রয়েছে মুঘল শৈলীর ছোঁয়া৷
পনির রেজালা
উপকরণ : ২০০ গ্রাম পনির (মাঝারি সাইজ কিউব করে কাটা), ১টি মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ, তিন-চার টুকরো ছোটো খণ্ড আদা, ৫-৭ কোয়া রসুন, ৪ টেবিল চামচ টক দই, নুন স্বাদমতো, চিনি পরিমাণমতো, ২টো কাঁচালংকা, ২০টি কাজুবাদাম, ২ টেবিল চামচ সাদা তেল, ১ টেবিল চামচ ঘি, ২টো তেজপাতা, অল্প এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, ১/২ চা চামচ গোলাপজল বা কেওড়া জল, ১/২ চা চামচ গুঁড়ো গরমমশলা।
প্রণালী : কিউব করে কাটা পনিরগুলো সাদা তেলে হালকা করে ভেজে তুলে নিয়ে সেই তেলের মধ্যে ঘি দিয়ে তাতে তেজপাতা, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ ও বাটামশলা (পেঁয়াজ, আদা, রসুন, কাঁচালংকা) দিয়ে নাড়তে হবে। মশলা কষা হলে তার মধ্যে টক দই দিয়ে নাড়তে হবে। এরপর কাজুবাদাম বেটে নিয়ে এতে ঢেলে দিন। নাড়াচাড়া করে পরিমাণমতো নুন, চিনি ও পরিমাণমতো জল দিয়ে ঢিমে আঁচে ১০ মিনিট ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিন।
গ্রেভি ফুটে গেলে তার মধ্যে ভেজে রাখা পনির দিয়ে আবার ১০ থেকে ১৫ মিনিট ঢাকা দিয়ে রান্না করতে হবে। ১৫ মিনিট পর গ্রেভি ঘন হয়ে আসলে নুন-চিনির স্বাদ ঠিক আছে কিনা দেখে গোলাপজল অথবা কেওড়া জল ছড়িয়ে দিন। সামান্য গরমমশলা ছড়িয়ে অল্পক্ষণ ঢাকা দিয়ে রাখুন। ব্যস তৈরি, রুমালি রুটি বা পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করুন পনির রেজালা।
মালাই কোপ্তা কারি
উপকরণ : ১ লিটার দুধের ছানা অথবা পনির, সেদ্ধআলু, ২০০ গ্রাম কাজুবাদাম, নুন ও চিনি পরিমাণমতো, ১ চিমটি এলাচগুঁড়ো, ময়দা, ঘি, খাবার সোডা সামান্য, ১০০ গ্রাম খোয়াক্ষীর, কাজু, কিশমিশ, ২-টো মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ, ১ ইঞ্চি আদার টুকরো, ৩ কোয়া রসুন, ২-টো কাঁচালংকা, ৪ চামচ মিল্কমেড দুধ, ১/২ কাপ দুধ (মিশ্রণের জন্য), দারচিনি, এলাচ, তেজপাতা, লবঙ্গ, ১ চামচ ফুল ক্রিম, ১ চিমটি কসৌরি মেথি, ২ চামচ টক দই, সাদা তেল, কর্নফ্লাওয়ার।
প্রণালী : দুধের ছানা কাটিয়ে জল ঝরিয়ে নিন অথবা পনির গ্রেট করে নিতে হবে। আলু সেদ্ধ করে চটকে নিন, এর মধ্যে ছানা অথবা গ্রেট করা পনির, এক চামচ ময়দা, সামান্য নুন, চিনি, এক চিমটি এলাচগুঁড়ো, এক চামচ ঘি, সামান্য খাবার সোডা, খোয়াক্ষীর দিয়ে ভালো করে চটকে মেখে নিতে হবে। এরপর ছোটো ছোটো লেচি আকারে গড়ে তার মধ্যে একটি করে কিশমিশ দিয়ে বলের মতো গোল বানাতে হবে। তারপর কড়াইতে সাদা তেল দিয়ে সেই তেল গরম হয়ে গেলে, ছানার গোল বলগুলো কর্নফ্লাওয়ার মাখিয়ে গরম তেলে হালকা লাল করে ভেজে নিতে হবে।
গ্রেভি বানানোর জন্য : কড়াইতে সামান্য সাদা তেল দিয়ে ডুমো ডুমো করে কেটে রাখা আদা-রসুন, পেঁয়াজ দিয়ে নাড়তে থাকুন। এর মধ্যে একটা করে এলাচ-দারচিনি-লবঙ্গ দিন। এবার দুটো কাঁচালংকা এবং কাজুবাদাম দিয়ে নাড়তে থাকুন। নুন দিন অল্প পরিমাণে, ভাজা হলে অল্প জল দিয়ে গ্যাস কমিয়ে দিয়ে ঢাকা দিয়ে সেদ্ধ হতে দিন। অর্ধেক সেদ্ধ হলে গ্যাস অফ করে, মিক্সিতে ভালো করে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। আবার কড়াইতে ঘি দিন।
ঘি গরম হয়ে এলে তার মধ্যে তেজপাতা ফোড়ন দিন। এবার মিক্স করা পেস্ট ঢেলে দিন এবং নাড়াচাড়া করতে থাকুন, যাতে না লেগে যায়। টক দই দিন। এবার মিল্ক মেড এবং দুধ দিয়ে মিক্সিতে একটা মিশ্রণ করে নিয়ে কড়াইতে ঢেলে দিতে হবে। ভালো করে নাড়তে থাকুন। এবার সামান্য জল, নুন, চিনি দিয়ে মিশ্রণটি ফুটতে দিন। ফুটে ওঠা মিশ্রণটির মধ্যে ভাজা বলগুলো দিয়ে দিন। গ্যাস কমিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট ঢাকা দিয়ে রাখুন। এবার ঢাকনা সরিয়ে গ্রেভি ঘন হয়ে এলে কসৌরি মেথি, এলাচগুঁড়ো ও হাফ চামচ ঘি দিয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে গ্যাস অফ করে দিন। উপর থেকে ফুলক্রিম ছড়িয়ে গরম গরম নান এবং পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করুন।