হেলদি ইটিং অর্থাৎ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে গেছে। সিল্ড প্যাক করা খাবার এখন সব জায়গায় সবারই পছন্দের। আমাদের সকলেরই খেয়াল রাখা উচিত, পরিবারকে যেটা আমরা খেতে দিচ্ছি সেটা অবশ্যই যেন পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়। অনাবশ্যক ডায়েটিং না করে, খেয়াল রাখতে হবে খাবার যেন পুষ্টিকর হয় এবং স্বাস্থ্য উপযোগী হয়। খাওয়ার নিয়ম ও খাদ্যসামগ্রী সেই অনুযায়ী সম্পূর্ণ বদলে ফেলতে হবে।
স্মার্ট অথবা হেলদি ইটিং বলতে সবসময়ে কী ধরনের খাবার খাচ্ছি সেটাই শুধু বোঝায় না, আপনি কীভাবে খাচ্ছেন, কী করে রান্না করছেন, কোথায় খাচ্ছেন, তারও কিছু নিয়মনীতি আছে।
কীভাবে আপনি হেলদি খাবার বাছবেন
– এমন খাবার পছন্দ করুন, যাতে আপনার পেট তাড়াতাড়ি ভরে, যেমন আলুর চিপ্স-এর জায়গায় আপেল খান।
– ভাজাভুজি, তেল, ঘি অথবা চিনি ভর্তি খাবার এবং অতিরিক্ত সময় ধরে রান্না হওয়া খাবার না খাওয়াই ভালো। মাঝে মাঝে এই ধরনের খাবার খেতে পারেন।
– বিখ্যাত আমেরিকান লেখক মাইকেল পাওলিন এর কথায় যথাসম্ভব প্রিসারভেটিভ দেওয়া খাবার এড়িয়ে চলুন। বেশি দিন কাটা ফল বা রান্না সবজি ফ্রিজে রেখে খাবেন না।
– কোনওরকম সিল্ড খাবার কেনার সময় উপরের লেবেল দেখে কেনা উচিত। যেটাতে অতিরিক্ত হাইড্রোজেনেটেড তেল, ফ্রুকটোজ, কর্ন সিরাপ, কৃত্রিম রং অথবা কৃত্রিম গন্ধ দেওয়া হয়েছে, সেই খাবার কিনবেন না।
– সোডা, ডায়েট সোডা, এমনকী ফলের রস থেকেও খুব একটা পুষ্টি পাওয়া যায় না, যতটা আপনি তাজা আস্ত ফল খেলে পাবেন। এতে যেমন পৌষ্টিকতত্ত্বও প্রচুর পরিমাণে থাকে তেমনি ফাইবারও থাকে।
– যদি আপনি হাই ক্যালরিযুক্ত খাবার বেশি পছন্দ করেন এবং অভ্যাস সম্পূর্ণ ত্যাগ করতে পারবেন না ভাবেন, তাহলে খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে ফেলুন, যেমন ৪টির বদলে ১টি পান্তুয়া খান এবং সেটাও কখনও কখনও।
কীভাবে রান্না করবেন
– খাবারে তেল, ঘি, মাখন খুব কম পরিমাণে ব্যবহার করুন।
-নুন বেশি মাত্রায় ব্যবহার করবেন না। নানান এক্সপেরিমেন্ট করে দেখুন কোন কোন মশলা ব্যবহার করলে, কম নুনের সঙ্গেও খাবারে স্বাদ আসে।
– একই খাবার রান্না করতে অনেক সময়ে একঘেয়ে মনে হয়, তাই বদলে বদলে রান্না করলে রান্নার আগ্রহ জন্মায়। যে সময়ের যে সবজি, সেটাই নতুন নতুন ভাবে ও বিভিন্ন পদ্ধতিতে রান্না করুন। যেমন ফুলকপির ডালনা বানাতে আমরা কড়াইতে বেশ খানিকটা তেল দিয়ে কপিগুলি ভেজে তুলি। এর বদলে কপিগুলি কাটার সময়ে অল্প তেল মাখিয়ে নিন এবং নিজের পছন্দমতো মশলা ভালো করে কপির গায়ে মাখিয়ে নিয়ে আভেনে অথবা তন্দুরে মুচমুচে করে বেক করে নিন। কম তেলে রান্না করা কপির স্বাদই দেখবেন অপূর্ব।
-পাতিলেবু, কমলালেবুর খোসা ফেলে না দিয়ে, ড্রিংক্স, স্যালাড অথবা নানারকম মিষ্টির গন্ধ তৈরি করতে প্রয়োগ করুন। এতে ক্যালরি ছাড়াও আপনি সুস্বাদু খাবার বানাতে পারবেন।
কেমন করে খাবেন
– খাবার অবশ্যই ধীরে ধীরে, ভালো করে চিবিয়ে খাবেন।
– খাবারের মধ্যে মধ্যে জল ছাড়া অন্যান্য মিষ্টি পানীয় খেয়ে অযথা ক্যালরি বাড়িয়ে তুলবেন না। শুদ্ধ জলই শরীরের জন্য সম্পূর্ণ একটি পানীয়।
– একবারে খুব বেশি করে খাবেন না। অল্প অল্প করে এক-একবারে খাবার খাবেন। যদি মধ্যিখানে খুব খিদে পেয়ে যায়, তাহলে যে-কোনও ফল খেয়ে নিতে পারেন।
কোথায় খাবেন
– কখনও টিভি, কম্পিউটারের সামনে বসে খাবেন না যাতে খাবার থেকে দৃষ্টি ওগুলির উপর যায়। খাবার খাওয়ার সময় অবশ্যই লক্ষ্য, কী খাচ্ছেন ও কতটা খাচ্ছেন, তার উপরেই থাকা উচিত।
– বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে খাবার খেলে খাবারের ফ্লেভার ও স্বাদ অনেক বেড়ে যায়।
কতটা খাবেন
– কখনও ভরপেট খাবার খাবেন না। সবসময়ে পেটে অল্প জায়গা রেখে খাবার খাবেন। এতে আপনি ওভারডায়েটিং-এর হাত থেকে বাঁচবেন।
রান্নাঘরের খুঁটিনাটি
রান্নাঘরের বিশেষ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে নজর রাখলে, আপনিও হয়ে উঠতে পারেন ‘কিচেন কুইন’। বিশ্বাস করতে পারছেন না তো! পরখ করে দেখুন।
– পান্তুয়ার মিক্সচারে ময়দার সঙ্গে শুকনো দুধের পাউডার মিশিয়ে নিলে, পান্তুয়ার স্বাদ খুব ভালো হয় এবং ময়দাও বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে পারেন।
– মাখামাখা সবজি বানাবার সময়, মশলার সঙ্গে তাজা দুধের সর মিশিয়ে নিলে তরকারির স্বাদ বৃদ্ধি পায়।
– ছোলার তরকারির রং কালো করার জন্য ছোলা সেদ্ধ করার সময়, চ্টি টি-ব্যাগ কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখলে পছন্দসই রং পেয়ে যাবেন।
– বন্ধ কৌটোতে গরমমশলা রেখে যদি অন্ধকার জায়গায় রেখে দেওয়া যায়, তাহলে অনেকদিন পর্যন্ত গন্ধ থাকে।
– আঁচ থেকে নামাবার আগে দুধের ক্ষীরে, অল্প দুধে গুড় গুলে ক্ষীরের সঙ্গে মিশিয়ে দিলে, রং ও স্বাদ দুটোই বেড়ে যাবে।
– পাঁপড়ে যদি অল্প তেল লাগিয়ে, আগুনে সেঁকেন তাহলে অনেকবেশি সুস্বাদু লাগে।
– অল্প তেলে হিং এবং জিরে ফোড়ন দিয়ে রায়তায় মেশান, স্বাদ ও গন্ধ দুটোই বেড়ে যাবে।
– ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, টমেটোর চাটনিতে, উপর থেকে ৪-৬ ফোঁটা সরষের তেল ঢেলে দিলে, চাটনি অনেকবেশি সুস্বাদু লাগবে।
– পেঁয়াজ তাড়াতাড়ি লাল করার জন্য, কড়াইতে তেল না দিয়েই আগে পেঁয়াজ দিয়ে দিন। তাতে পেঁয়াজের জল খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে। পরে তেল ঢাললে, পেঁয়াজও তাড়াতাড়ি লাল হবে।
– রান্নাঘরের মশলা ও বাসনের তাকে যাতে পোকামাকড় না হয়, তারজন্য নুন দিয়ে মাঝেমধ্যে তাকগুলোকে পরিষ্কার করুন।
– এক বালতি জলে ৪ কাপ ভিনিগার মিশিয়ে ঘর মুছলে, ঘরে কোনওরকম দুর্গন্ধ থাকে না।
– দানাওয়ালা ঘি তৈরির জন্য ৪-৫ বার জলের ছিটে দিন।
– করলা বা ভিন্ডিতে পুর ভরার সময় মশলার সঙ্গে ৪ চামচ আচারের মশলা মিশিয়ে নিন। দেখবেন তরকারি খুবই সুস্বাদু হয়েছে।
– করলার মশলায় দুই চামচ দুধের সর মিশিয়ে নিলে, তেতোভাব অনেকটা দূর হয়।
– রান্নাঘরের চিটেভাব সরাতে গেলে, পেট্রোলে কাপড় ভিজিয়ে সেটা দিয়ে পরিষ্কার করুন।
– বোঁদের লাড্ডু বাড়িতে পড়ে থাকলে, তাতে শুকনো নারকেলকোরা মিশিয়ে, ছোটো ছোটো পরোটা বানিয়ে নিন। সুস্বাদু ‘পুরান পোলি’ প্রস্তুত।
– টম্যাটো কেচ-আপের নতুন স্বাদ পেতে হলে পুদিনাপতা শুকিয়ে ও বেটে, ৪ চামচ চিনেবাদাম ও ১ চামচ জিরে শুকনো কড়ায় নাড়াচাড়া করে এবং পিষে নিয়ে মিশিয়ে দিন। অনেক বেশি সুস্বাদু লাগবে।